চিঠি দিও ১১

চিঠি দিও
১১
_____________

“তুমি সেদিন মিথ্যে বলেছিলে কেন?”
ঠান্ডা দৃষ্টি যোগে উপমার পানে চেয়ে রইল রওনক। ওর ঠিক সামনে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে
উপমা। আঁড়চোখে সেও রওনকের মুখমণ্ডলে চোখ বুলিয়ে নিলো একবার। উপমা আসলে অজুহাত খুঁজছে কিছু বলার। কিন্তু মাথা কাজ করছে না ওর। আজ আবারও কলেজ গেট থেকে ডেকে আনা হয়েছে ওকে। হুট করে হয়ে এসেছে তো, ভাবনাচিন্তার সময় পায়নি। এছাড়া গতকালের আশিনের বিষয়টা নিয়েও একটা টেনশন কাজ করছিল। সব মিলিয়ে এই বিষয়টা আউট অফ মাইন্ড হয়ে গেছে। চোখ বুঁজে লম্বা শ্বাস টেনে নিলো উপমা। সত্যই বলবে ও রওনককে।
— কি, উত্তর দিচ্ছ না যে!
কড়া ধমক ভেসে এলো রওনকের দিক থেকে। দুহাতে কামিজের দু সাইড চেপে ধরল উপমা৷ মুখ তুলে পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে রওনকের চোখে চোখ রাখল। নির্ভীকচিত্তে বলল,
— আপনাকে গান শোনাতে ইচ্ছে করছিল না আমার।
রওনক জানতো এমন বাঁকা কোনো উত্তর পেতে চলেছে ও। মুচকি হেসে কিং সাইজের চেয়ারটায় মাথা এলিয়ে দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল,
— কেন? ইচ্ছে করছিল না কেন? আমি কি গান শোনার অযোগ্য?

একবার জবাব দিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে নিলো উপমা। কেবল নিষ্পলক তাকিয়ে রইল নিশ্চুপভাবে। রওনকও মাথা কাত করে ওকে পর্যবেক্ষণ করছে। যেন ছোট্ট গোলাগাল মুখখানার ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে নিচ্ছে। কঠোর চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। বজ্র দৃষ্টিখানা ঢেকে দিলে পুরো মুখমণ্ডল ভীষণ আদুরে। ফোলা ফোলা মেঘমেদুর কপলদ্বয় ঈষৎ রক্তিম। রেগে গেলে কি ওর গাল লাল হয়? ভাবনার মধ্যে হেসে উঠল রওনক। ওকে হাসতে দেখে ভ্রু জোড়া সংকুচিত করে ফেলল উপমা। চোখ সরু করে রওনকের হাসির অর্থ বোঝার চেষ্টা করল। রওনক অবশ্য খেয়াল করল ওর দৃষ্টি। সঙ্গে সঙ্গে ভাবনা সকলে ফুলস্টপ লাগিয়ে সোজা হয়ে বসল। খানিক কেশে পরিবেশে গাম্ভীর্য ফেরানোর চেষ্টাও করল। এরপর গমগমে স্বরে বলল,
— তোমাকে দেখে আমি সত্যিকার অবাক হয়ে যাচ্ছি। একজন সিনিয়রের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সে সম্বন্ধে মিনিমাম জ্ঞান তোমার নেই। একে তো বেয়াদবি করো, মুখে মুখে কথা বলো আবার মিথ্যেও বলো।
— আমি..
প্রতিবাদ করতে চাইছিল উপমা। তৎক্ষনাৎ হাত উঁচিয়ে ওকে থামিয়ে দিলো রওনক।
— আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। তোমার এত ফল্ট পাওয়ার পর আমি চাইলেই কঠিন কোনো শাস্তি দিতে পারতাম। কিন্তু আমি মানুষটা অতটাও খারাপ নই। জুনিয়রদের সাথে অকারণ কঠোর হতে খারাপ লাগে আমার। অপরাধ বেশি হয়ে গেলে অন্য কথা।
একটু থেমে আবারও বলল,
— তুমি যেহেতু প্রথম স্টেজে আছো তাই তোমার অপরাধ এবারের মতো মাফ করা হলো। তবে, বিনা সাজায় নয়। লঘু সাজা তোমার প্রাপ্য। সেই সাজাটা হলো। আজ এই মুহুর্ত থেকে আগামী যে ক’বছর এই কলেজে তুমি পড়াশোনা করছো। প্রতিদিন কলেজে ঢোকার পূর্ব মুহুর্তে আমাকে একটা করে গান শুনিয়ে যাবে।
— যদি না শোনাই।
চোখ সরু করেই বলল উপমা। জবাবে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে কোমরের পেছন থেকে ধূসর বর্ণের পিস্তল বের করে টেবিলের ওপর রাখল রওনক৷
— অন্যথায় আমার ছেলেপেলেরা ঢুকতে দেবে না তোমায় কলেজে।
একবার রওনকের দিকে, আরেকবার টেবিলের ওপর রাখা পি”স্তলটার দিকে চোখ বুলিয়ে প্রলম্বিত শ্বাস ফেলল উপমা। ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে মাস্তানটা ওকে। আদৌ সফল হয়েছে কি? ভয় তো পাচ্ছে না উপমার। কেন পাচ্ছে না কে জানে!
এত কাছে থেকে পিস্তল দেখা এই প্রথম। সেজো ভাইয়ের কাছেও পিস্তল আছে জানে। কিন্তু দেখায়নি কখনো সেজো ভাই।
— আপনি কি আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন?
ঠান্ডা স্বরে জানতে চাইল উপমা। রওনক সেই তখন থেকে কাঁধ বাঁকিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ঠোঁট কামড়ে পুনরায় হাসার চেষ্টা করল।
— চেষ্টা করছি না। ভয় দেখাচ্ছি। ভয় পাচ্ছ না তুমি?
— বিরক্তবোধ করছি। মানুষ গান শোনার জন্য পিস্তল দেখায় প্রথম দেখলাম কোথাও।
— ঠিক গান শোনার জন্য বলব না। পিস্তলটা দেখিয়েছি এ কারণে আমার কথার অবাধ্য যেন না হও। না শোনা আমার ধাতে নেই।
— যদি আমি রাজি না হই?
— রাজি না হলে এমন অনেক কিছুই ফেস করতে হতে পারে যা তোমার জন্য সুখকর হবে না। কলেজ শুরু করলে চারমাসও হলো না। বাকি দিন তো পড়ে। এর মধ্যেই অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হলে ভালো লাগবে?

রওনকের কথায় মেজাজ খারাপের দিকে যেতে লাগল উপমার। দাঁতে দাঁত চেপে নিয়ন্ত্রণ করে নিলো সে নিজেকে। তবুও ভেতর থেকে ছোট্ট একটা বাক্য জোর কদমে বেরিয়ে এলো,
— দিস ইয নট ফেয়ার।
গা জ্বালানো হাসিটা প্রগাঢ় হলো রওনকের ঠোঁটের কোনে। আপনমনে সে বলে উঠল,
— তোমার সাথে আরও কত কত আনফেয়ার করতে ইচ্ছে করে আমার! দুষ্টু দুষ্টু আনফেয়ার। কিন্তু তোমাকে তো সব বলা যাবে না। ডাকু সর্দারনী তুমি। আগুন চোখের আগুন দৃষ্টি দিয়েই ভস্ম করে দেবে আমাকে।

রওনককে নিশ্চুপ থাকতে দেখে হাল ছেড়ে দিলো উপমা। প্রায় প্রায় রওনক ওকে ডেকে পাঠায়, এটা-ওটা কাজে সাহায্য নেয়। কয়েকদিন আগে তো ওর পুরো বন্ধুগ্রুপ নিয়ে কি একটা কাজে সাহায্য করতে হলো। এসব নিয়ে ইদানীং বেশ কথা ছড়ানো শুরু হয়েছে কলেজে। ননসেন্স কথা। কে বানাচ্ছে, কে ছড়াচ্ছে বুঝতে পারছে না উপমা। কিন্তু বিব্রতবোধ করছে ভীষণ। ঝামেলা না বাড়ুক সেজন্যই ও রওনককে এড়িয়ে যেতে চাইছিল। কিন্তু মা’স্তানটা এসবের ধার ধারবে কেন? দাঁত কিড়মিড় করে রওনকের উদ্দেশ্যে গালি পাস করে দম নিলো উপমা। উদ্বেলিত নিজের মনটাকেও বজ্র আঁটুনিতে বেঁধে নিজেকে বোঝালো আগলছাড়া হওয়া যাবে না। এখন থেকে রোজ রোজ হ্যান্ডসাম মাস্তানটার মুখোমুখি হতে হবে। সামলে রাখতে হবে নিজেকে। অস্থিরতা কোনোক্রমেই প্রকাশ করা যাবে না। বেহায়া তার মনটা যে স্বেচ্ছা চিতায় ঝাঁপ দেয়া পতঙ্গে পরিণত হয়ে গেছে এ গোপন কথাটি কিছুতেই মাস্তানটার সামনে প্রকাশিত হতে দেয়া যাবে না;কিছুতেই না।
— ক্লাসের সময় কিন্তু পেরিয়ে যাচ্ছে জিদ করে করে।
উপমার নিজেও বুঝতে পেরেছে দেরি হচ্ছে। নাছোড়বান্দা লোকটার সাথে তো পেরে ওঠা সম্ভব নয় এ মুহুর্তে। সমঝোতা তাকেই করতে হবে। নিজের জিদ তাই ছেড়ে দিলো উপমা।
এবং রওনককে গান শুনিয়ে তবে ছুটি মিলল ওর। কলেজ পৌঁছুতে রিকশা রেডি করে রেখেছিল রওনক। গরু মেরে জুতো দান!
নিজ প্রয়োজনটাই বেশি। উচ্চবাচ্য না করে তাই সেই রিকশা করেই সাইন্স বিল্ডিংয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো উপমা।
নির্দিষ্ট ক্লাসরুম নেই ওদের। একেকদিন একেক ফ্লোরে ক্লাস হয়। আজকের ক্লাস কোথায় কে জানে! সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে হাত ঘড়িতে বার বার চোখ চলে যাচ্ছিল। আজও প্রথম ক্লাস মিস হয়ে গেছে তার। রোলকলে যদিও সমস্যা নেই। ডালিয়া অথবা মিতালি করে দেবে। কিন্তু রুটিন অনুযায়ী আজ আবারও ফিজিক্স ম্যামের ক্লাস আছে। পরের ক্লাসে থার্টি মার্ক্সের একটা পরীক্ষা।তাই ক্লাস মিসও দেয়া যাবে না। নিজেকে প্রস্তুত করে তবেই যেতে হবে ম্যামের সামনে।
ক্লাসরুম খুঁজতে খুঁজতে অজুহাত একটা তৈরি করে ফেলল উপমা।
চার তলায় সর্বদক্ষিণের রুমটায় তাদের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। ঘুরতে ঘুরতে একসময় উপমা উপস্থিত হলো সেখানে। ক্লাস পুরোদমে চলছে। ছাত্রছাত্রীরা সব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে। শান্ত দৃষ্টিতে পুরো ক্লাসে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো উপমা। বান্ধবীরা তার জন্য জায়গা রেখেছে ঠিক। এখানে দাঁড়িয়ে সরাসরি দেখা যাচ্ছে ওদের। ওরাও ভীষণ মনোযোগী ক্লাসে। ম্যাম ছাড়া আর কোনোদিকে তাকাচ্ছে না। ভরা ক্লাসের সামনে কি বেইজ্জতিটাই না হবে! ভেবেই অসহায়বোধ করল উপমা। কিন্তু কি করার৷ এই ছিল তার কপালে। চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে সাহস সঞ্চয়ের চেষ্টা করল। এরপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
— মে আই কাম ইন ম্যাম?
এক বাক্যেই ম্যামসহ ফিরে তাকাল ক্লাসের সবাই। এরপর কি হতে চলেছে সকলের জানা। আতঙ্কিত মুখে ওরা একবার উপমার দিকে, একবার শিক্ষকের দিকে তাকাতে লাগল। উপমাদের ফিজিক্স ম্যামের নাম হলো মিস.খাওলা। বেঁটেমতো স্থুলকায় একজন মানুষ। যিনি সবসময় কটকটে রঙের কাপড়চোপড় আর চড়া সাজ প্রেফার করেন। যেকেউ নামখানা শোনামাত্র অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় ওনার দিকে। হয়তো ভাবে উনি নিজে যেমন অদ্ভুত, নামটাও রেখেছে তেমনই অদ্ভুত। উপমাকে দেখে মিস.খাওলা হাতের বইটা ডেস্কের ওপর নামিয়ে রাখলেন। চশমা নাকের ডগায় নামিয়ে খালি চোখে পর্যবেক্ষণ করলেন উপমাকে। এরপর পিছু ঘুরে দেয়াল ঘড়িতে চোখ বোলালেন। অতিরিক্ত কোনো জিজ্ঞাসাবাদ নেই, কিছু নেই চিৎকার করে কড়া শব্দে কেবল বলে উঠলেন,
— বাইরে দাঁড়িয়ে থাকো।
— ম্যাম প্লিজ..
অনুনয়ের চেষ্টা করল উপমা। কাজ অবশ্যি হলো না। গলায় দ্বিগুণ জোর লাগিয়ে এক ধমকে মিস.খাওলা বললেন,
— জাস্ট স্ট্যান্ড দেয়ার, লাইক আ পিলার।
আর হ্যাঁ কান ধরো। আজ পুরো ক্লাস কান ধরে দাঁড়িয়ে করবে তুমি।
অতিরিক্ত একটা বাক্য বিনিময় না করে পুনরায় বইয়ে মনোযোগী হয়ে উঠলেন এরপর। বেচারি উপমা টু শব্দটি করতে পারল না। চুপচাপ মাথা নীচু করে শিক্ষকের আদেশ মেনে কানে ধরে দাঁড়িয়ে রইল দরজার সামনে পিলারের মতো৷ অল্প সময়ে কি সুন্দর মিথ্যে অজুহাত তৈরি করে ফেলেছিল সে। কই শোনানো হলো।

সহপাঠিকে নাস্তানাবুদ হতে দেখা মজার বৈকি! কিন্তু এ ঘটনা মজার হলেও খাওলা ম্যামের সামনে কেউ হাসতে পারল না। ম্যামের যে রাগ! কেউ ঠোঁট প্রসারিত করেছে মানে উপমার সাজা তার ওপরও বর্তেছে। তারচেয়ে ক্লাসে মনোযোগী হওয়াই সমীচীন। অন্যান্যরা ঘটনা এড়ালেও উপমার দু বান্ধবী এড়াতে পারল না।
প্রিয় বান্ধবীটিট সাজা তাদের বেশ কষ্টই দিলো। চটপট তারা ভেবে ফেলল সকলের সামনে ওকে একা অপমানিত হতে দেবে না। ওর দলে শরিক হয়ে বরং সাজা ভাগ করে নেবে। যেই ভাবা সেই কাজ। যুক্তি করে নিজেদের মধ্যে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর শুরু করে দিলো দুটিতে। ডান সারিতে প্রথম দিকেই বসা ওরা। মিস.খাওলার চোখ সহজেই আকর্ষণ করে গেল।
বই হাতে ধরে রেখেই বড়বড় চোখ করে তাকালেন মিস.খাওলা বদমাশ দুটোর দিকে। সেকেন্ড ব্যয় হলো না,ডালিয়া আর মিতালিকেও ক্লাস থেকে বের করে দরজার কাছে পৌঁছে দিলেন। এবার তিন বান্ধবী পাশাপাশি কান ধরে দাঁড়ানো।
পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে জন্য তাদের আনন্দ আর ধরে না। উপমা প্রথমে অবাক হলেও ওদের মিটিমিটি হাসতে দেখে যা বোঝার বুঝে গেল। পাগলগুলোর পাগলামি দেখে খুশি হবে নাকি দুঃখ প্রকাশ করবে কিছুই বুঝতে পারল না ও। কতক নির্বিকার থেকে নিজেও মাথা নামিয়ে হেসে ফেলল। ওদিকে ডালিয়া। তার কথাবার্তা, হাসি-কান্না সব লাগাম ছাড়া। একবার শুরু হলে থামার নাম নেই। ঠোঁট চেপে মুচকি হাসি সেই কখন সরে গেছে তার থেকে। বিনিময়ে দাঁত কেলিয়ে হাসতে শুরু করেছে সে। হাসতে হাসতে যেন পড়েই যাবে ডালিয়া। মিতালি আর উপমা তো ভয়েই শেষ। ম্যাম না দেখে নেয়! ভাগ্যটা ভালো বলা যায়। ম্যাম দেখলেন না। ওরাও চট করে ডালিয়াকে আড়াল করে দাঁড়াল। বাকি বিশ মিনিট ওভাবেই ওদের কেটে গেল ক্লাসে।

টিফিন পিরিয়ডে বান্ধবীদের খাবার আনতে পাঠিয়ে একা একা বসে রইল উপমা। সকালের ঘটনাটা তখনও ওর মন থেকে মুছে যায়নি। পিস্তল দেখানোর ঘটনাটা মনে পড়লে হাসিও আসছিল আবার বিরক্তও লাগছিল। দুরকম ভাবনায় একসময় সে ব্যাগ থেকে খাতা বের করে ঘষঘষ কলম চালিয়ে রওনকের উদ্দেশ্যে লিখল,

“শোনরে মাস্তান,
এই যে তুই কথা নেই বার্তা নেই প্যান্টের পেছন থেকে পিস্তল বের করে দেখালি। তোর কি মনে হয় আমি ভয় পেয়েছি? খুব ভয় পেয়েছি? নাহ্ একটুও না। তুই বোধহয় জানিস না পিস্তলের গোডাউন আছে আমাদের বাড়িতে। সকাল বিকেল পিস্তলের ওপর গড়াগড়ি খাই আমরা। কি দামি দামি চকচকে সে পিস্তল! এখন তুই যদি ভেবে থাকিস তোর ঐ দু টাকার খেলনা পিস্তল দেখে ভয় পেয়ে গান শুনিয়েছি তাহলে ভুল ভাবছিস। ভয় পেয়ে নয়, দয়া করে গান শুনিয়েছি তোকে। গান গান করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলি। তাই আমার একনিষ্ঠ ভক্ত ভেবে শুনিয়েছি। পরবর্তীতে যতবার গান শুনতে চাইবি ভক্ত ভেবেই শুনিয়ে দেব। বুঝলি?”

লেখা শেষে লাইন বাই লাইন কয়েকবার পড়ে ফেলল উপমা। এখন শান্তি লাগছে। কিছু কথা মুখ ফুটে বলা যায় না। চেপে রাখতে রাখতে বোঝায় পরিণত হয়। লেখার মাধ্যমে বোঝাটা নামানো যায় খানিক। হালকা করা যায় নিজেকে। উপমার এখন হালকা লাগছে। রওনক ওর জীবনের অন্যতম গোপনীয় সত্য হয়ে উঠছে দিনকে দিন। এই গোপনীয়তা কারোর সামনে উন্মোচিত করতে ইচ্ছে করে না ওর। কিছু গোপন কথা নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাই শ্রেয়। এতেই সকলের মঙ্গল।
চলবে,
Sinin Tasnim Sara

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here