#চুপকথা-১৩
Zannatul Eva
প্লিজ তিয়াশ তুমি আমাকে বিয়ে করো। আমি ওকে একটা শিক্ষা দিতে চাই। এই অপমানের শোধ তুলতে চাই।
আমি রিয়াকে ধরে সোজা করে বসিয়ে বললাম, কাম ডাউন রিয়া। বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা নয়। হার জিতের খেলায় মেতে তুমি আমাকে এখন বিয়ে করতে চাইতো! আমার মনে হয় তোমার এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম হলে তোমার ভালো লাগবে। তুমি চলো, আমার সাথে। আমি আমাদের ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেবে।
না না তিয়াশ, না। আমি বাসায় যেতে চাই না। আমি তোমাকে বিয়ে করবো। এক্ষুনি, এই মুহুর্তে।
আমি রিয়ার কথা পাত্তা না দিয়ে ওকে ধরে বাইরে নিয়ে গেলাম। গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে ড্রাইভারকে বললাম, ওকে পৌঁছে দিতে। ভাগ্যিস বাবা টের পায় নি। আপাতত এই মেয়ের হাত থেকে বাঁচা তো গেল। পরেরটা পরে দেখা যাবে।
মা বলল, এই অসভ্য মেয়েটা কেন এসেছিলো রে? সকাল সকাল এসে কী সব বকছিলো। এমন একটা মেয়েকে পছন্দ করেছিলো তোর বাবা তোর জন্য! বন্ধুর মেয়ে বলে কী মাথা কিনে নিয়েছে নাকি! আমার ছেলের জন্য তো একটা ফুটফুটে সুন্দর বউ লাগবে। যার মনটা খুব সুন্দর হবে। যে আমার ছেলেটাকে বুঝবে। তোর বাবা তো কোনোদিন আমাকে বুঝলো না। তোকেও বোঝে না। শুধু নিজের ইচ্ছে মতো সবাইকে চালনা করে গেল। এমন একটা মেয়ে আসুক এই বাড়িতে যে, বাড়ির হালচালটাই একদম পাল্টে দেবে। কবে আসবে কে জানে!
কথা গুলো বলেই মা রান্নাঘরে চলে গেল। আমি মনে মনে বললাম, এমন মেয়ে তোমার ছেলের জীবনে অলরেডি চলে এসেছে মা। এখন শুধু বলার অপেক্ষা। কবে বলতে পারবো জানিনা। তবে খুব শীঘ্রই বলবো মায়াবতীকে আমার মনের কথা।
_________________
কুহু অফিস শেষ করে ওর বোন আর ডাব্বুকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় চলে এসেছে। আমি জাহিদ ভাইয়াকে নিয়ে ভেতরে গেলাম। কুহুর বোন আমাদের দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। জাহিদ ভাইয়া বলল, হ্যালো এভরি ওয়ান। তুমি তো কুহু। এ্যাম আই রাইট?
কুহু বলল, হ্যাঁ আমি কুহু। আপনি কী করে চিনলেন?
গাড়িতে আসতে আসতে তোমার এতো গল্প শুনেছি যে, দেখেই বুঝে গেছি তুমিই সেই। যে আমার ভাইয়ের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
একথা শুনে কুহু আর ওর বোন দুজনেই ভীষণ লজ্জা পেলো। একটু অবাকও হলো।
আমি জাহিদ ভাইয়াকে খোঁচা মেরে বললাম, কী হচ্ছে টা কী! এখনি এসব কেন বলছো! তুমি এতো ঠোঁট কাটা কেন বলতো। চুপ করে থাকো এখন৷ আগে পরিচয়টা হোক সবার সাথে।
জাহিদ ভাইয়া জিভে দাঁত কেঁটে বলল, ওহহো সরি ব্রো।
আচ্ছা উনি তো তোমার বোন পিহু। এ্যাম আই রাইট? আর ইনি হচ্ছেন ডাব্বু সাহেব। আই মিন আমাদের মুন্না বাবু।
পিহু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি তো দেখছি ভালোই বর্ননা দিয়েছেন সবার। উনি এক দেখাতেই চিনে ফেললো সবাইকে।
আমি বললাম, আচ্ছা তাহলে কী খাবে বলো তোমরা? আমি অর্ডার করে আসছি। জাস্ট এ মিনিট।
আমি খাবার অর্ডার করার নাম করে দূরে সরে গিয়ে কুহুকে মেসেজ করলাম, তুমি ওখান থেকে চলে এসো। ওরা দুজন বসে কথাবার্তা বলুক। একে অপরকে চিনুক জানুক। উঠে এসো।
পিহু মেসেজটা পড়ে আড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, আপা তোরা কথা বল আমি ডাব্বুকে নিয়ে একটু বাইরে যাচ্ছি। ও আসলে চকলেট খেতে চাইছে তখন থেকে।
পিহু বলল, এর মধ্যেই তোমার চকলেট খাওয়ার বায়না শুরু হয়ে গেল ডাব্বু! দাঁড়াও বাসায় যাই আজকে। খুব পিটুনি খাবে।
কুহু বলল, বকছিস কেন ওকে? আমি যাচ্ছি ওকে নিয়ে। নয়তো আবার কান্নাকাটি শুরু করে দেবে।
এই তোর আশকারা পেয়েই ও দিনদিন বাদর হচ্ছে। যেমন খালামনি তেমন তার ভাগনে। যাও তবে খালামনিকে একদম বিরক্ত করবে না। আর বেশি কিছু কেনার বায়না করবে না কিন্তু। ঠিক আছে?
ডাব্বু খুশি হয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
কুহু ডাব্বুকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। আমিও ওদের জন্য খাবার অর্ডার করে দিয়ে তারপর বাইরে চলে এলাম।
কুহু ডাব্বুর জন্য চকলেট কিনছে। ইয়েলো শেডের সেলোয়ার-কামিজে কুহুকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে। হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। কপালে স্টোনের টিপ। এই সাজ সবসময় একই রকম থাকে। কুহুর এই নিজস্বতাই আমাকে বারবার মুগ্ধ করে। হাজারটা নারীর মাঝে হারিয়ে গেলেও ওর এই নিজস্বতার জন্য খুব সহজেই যে কেউ ওকে খুঁজে নিতে পারবে। তুমি কি জানো মায়াবতী, খোলা চুলে তোমাকে কতটা সুন্দর লাগে! তোমাকে কবে মনের কথা গুলো বলতে পারবো জানিনা। আমি সবসময় তোমাকে খুশি দেখতে চাই। তার জন্য আমাকে যা করতে হয় আমি করবো। ওই চাঁদ মুখে কখনও কোনোদিন মেঘের ছায়াও পড়তে দেবো না আমি। আই প্রমিস কুহু।
আচ্ছা আপনি কী করতে চাইছেন বলুন তো? হুট করে এভাবে আমাকে আপাকে নিয়ে বেড়োতে বললেন।
কুহুর কথায় আমার ঘোর কাটলো। কুহু আবারো প্রশ্ন করলো, আপনার মনে কী চলছে বলুন তো?
চলছে তো কত কিছুই। কিন্তু বলবো না।
কেন!! বলবেন না কেন?
কথায় কথায় আমাকে যে বয়স্ক লোক বানিয়ে দেয় তার সাথে কথাই বলা উচিত না।
কুহু হাসলো। সেই টোল পড়া হাসি। যেই হাসিতে আমি বারবার ফাঁস খাই।
কী করবো বলুন তো! মুখ থেকে বেরিয়ে আসে। আচ্ছা তুমি করে বলছি। এবার তো বলুন। না মানে বলো।
জাহিদ ভাইয়া ছেলে হিসেবে ভীষণ ভালো। আমার একমাত্র ফুপুর ছেলে। ফুপু মারা যাওয়ার পর বেশির ভাগ সময়ই ভাইয়া বিদেশে থাকে। বাবা-মা নেই তাই দেশে বেশি একটা আসে না। মা অনেক বার বলেছে আমাদের বাসায় থেকে যেতে। কিন্তু তার একই কথা, দেশে থাকলে বাবা-মার কথা মনে পড়বে বেশি তাই সে বিদেশেই থাকবে। এবারও দেশে এসে আমাদের বাসায় উঠেনি। হোটেলে উঠেছে। আমি জোর করে ব্যাগপত্রসহ ধরে নিয়ে এসেছি এবার। বলেছি যতদিন দেশে আছো ততদিন আমাদের কাছেই থাকবে৷ মাও খুব কড়া করে বলে দিয়েছে। তাই এবার আর না করতে পারেনি৷
আচ্ছা সবই বুঝলাম। কিন্তু উনি কী আপার সম্পর্কে সবটা জানেন?
আমি যতটুকু জানি বলেছি। তোমার আপার অতীত নিয়ে ভাইয়ার কোনো সমস্যা নেই। ভাইয়া শুধু একটা ভালো মনের মানুষ চায়। আর তোমার বোনের মতো ভালো মেয়ে আর কোথায় পাবে বলো?
আমার বোন বলেই ভালো? কেন মনে হলো এটা?
যার বোনের মন এতো বড়ো। তার বোন নিশ্চয়ই ছোট মনের হবে না। আর আমি মানুষ চিনতে একদম ভুল করি না।
আপনার ধারনাটা ভুল। একই বাবা-মায়ের সন্তান হয়েও অনেকে কিন্তু এক রকম হয় না। তবে আমার বোন বলে বলছি না। আপার মতো মেয়েকে যে হারাবে সে অনেক বড় ভুল করবে। অনেকের ধারনা ডিভোর্সি মানেই সে খারাপ। খারাপ মেয়ে বলেই তার ডিভোর্স হয়েছে। পুরুষদের দোষ গুলো সমাজ কেন জানি দেখতেই পায় না। অবশ্য পায় না বললে ভুল হবে। দেখতে চায় না।
সেই জন্যই তো জাহিদ ভাইয়াকে নিয়ে এলাম। এবার নিজেদের মধ্যে কথা বলে বাকিটা ওরাই বুঝে নিক।
আচ্ছা আপনি আমার জন্য এতো কিছু কেন করছেন?
সত্যি বলবো?
তবে কি মিথ্যে বলবেন?
আচ্ছা তাহলে সত্যিটাই বলছি।
চলবে…….