চুপকথা পর্ব-১১ ১২

0
1259

#চুপকথা-(১১+১২)
Zannatul Eva

আমি তিয়াশের ফোনটা রিসিভ না করে কেটে দিলাম। দ্রুত বড় আপাকে রেডি করে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে গেলাম। পাত্র দেখতে শুনতে ভালো৷ তবে শুধু দেখাশোনায় ভালো হলেই তো হলো না৷ তার আচার-আচরণ, চরিত্র কেমন, মানুষ হিসেবে কেমন সেটা আগে দেখতে হবে। তিয়াশ বারবার ফোন করছিলো৷ আমি বারবার কেটে দিচ্ছি। আগে এই ঝামেলাটা মিটে যাক তারপর ফ্রি হয়ে ওকে ফোন করে নিবো।

পাত্রের মা বলল, মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আগে যেহেতু বিয়ে হয়েছিলো সেই হিসেব করতে গেলে বিয়ের সময় আপনাদেরকে কিছু খরচাপাতি করতে হবে।

মা বলল, বিয়েশাদিতে তো খরচাপাতি করতেই হবে।

পাত্রের মা আস্ত একটা মিষ্টি মুখের মধ্যে পুড়ে নিয়ে চিবোতে চিবোতে বলল, আপনি বোধহয় বুঝতে পারেন নি আমি কোন খরচাপাতির কথা বলেছি। আমি বলেছি খুশি হয়ে আপনারা আপনাদের মেয়েকে লাখ খানেক টাকা দিবেন। এই টাকা আপনার মেয়েরই থাকবে। না মানে আপনার মেয়ে আর মেয়ে জামায়েরই থাকবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা যেটা, সেটা আগেই বলে নেয়া ভালো। বিয়ের পর ছেলেকে সাথে করে নিয়ে যেতে পারবে না। কারন আমার ছেলেরও তো বাচ্চাকাচ্চা আছে। ওদেরকে তো ওকেই দেখতে হবে।

বড় আপা বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। আপার চোখের ভাষা আমি বুঝতে পারি। এই বিয়েতে আপার মত নেই বেশ বুঝতে পারছি। শুধু আপা কেন, আমারও মত নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মা। কোনোদিক না ভেবেই মা সম্মতি জানাতে যাচ্ছিলো, ঠিক তখনই আমি বললাম, দেখুন এসব শর্ত মেনে আমরা আপনাদের ছেলের সাথে আপার বিয়ে দিতে রাজি নই। প্লিজ আপনারা আসতে পারেন।

মা আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল, এসব কী বলছিস! চুপ কর তুই।

তুমি চুপ করো মা। আপা ডাব্বুকে ছেড়ে কী করে থাকবে ওখানে! তাছাড়া ওনারও তো বাচ্চা আছে। তাহলে ডাব্বুকে নিয়ে সমস্যা কেন? আর টাকা! আমরা কেন টাকা দিতে যাবো? ওনাদের ছেলেরও তো আগে বিয়ে হয়েছিলো। তাহলে তাকে কেন শর্ত দেয়া হচ্ছে না? শর্ত কি কেবল মেয়েদের জন্যই?

পাত্রের মা বড়বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বলল, তোমার বোন তো ডিভোর্সি। কে নেবে একে ঘরের বউ করে? আমরা তো তাও নিতে চাইছি। আমার ছেলের জন্য অবিবাহিত পাত্রীদের ঘর থেকে সম্বোন্ধ আসে। আর তুমি কিনা আমার ছেলেকে এসব শোনাচ্ছো!

আমি জোরালো গলায় বললাম, আপনারা বরং সেখান থেকেই আপনাদের ছেলের জন্য পাত্রী পছন্দ করুন। আমরা এখানে সম্বোন্ধ করবো না। আপনারা আসতে পারেন। ধন্যবাদ।

এরপর পাত্রপক্ষরা সবাই উঠে চলে গেল। মা কাঁদতে কাঁদতে আমাকে অনেক গুলো কথা শুনিয়ে দিলো। বড় আপা ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। ডাব্বু তখন ঘুমোচ্ছিলো। আমি মাকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। মা কেঁদেই যাচ্ছে। থামছেই না। শুধু বলছে, এভাবে শর্ত ছাড়া কেউ বিয়ে করবে না আমার পিহুকে। একবার সংসার ভেঙ্গে যাওয়া মেয়েদের এত সহজে বিয়ে হয় না রে। তুই কেন সম্বোন্ধটা ভেঙ্গে দিলি! কেন?

মাকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই। তাই আর কোনো কথা না বলে আমি সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। ফোনটা হাতে নিতেই তিয়াশের কথা মনে পড়লো৷ আমি ওর নাম্বারটা ডায়াল করলাম। রিং হওয়ার সাথে সাথেই তিয়াশ ফোন রিসিভ করলো।

খুব ব্যস্ত?

একটু। বড় আপাকে দেখতে এসেছিলো। তা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম।

বিয়ে ঠিক হলো?

না।

কেন?

ওসব ছাড়ুন। আপনি হঠাৎ ফোন করলেন!

কেন! ফোন করতে পারি না?

তা কখন বললাম! মানে আমাকে ফোন করার কোনো বিশেষ কারন তো নেই। তাই বলছিলাম আর কী।

শুধু বিশেষ কারন থাকলেই ফোন দেয়া যাবে?

আমি সেভাবে বলিনি। আপনি ভুল বুঝছেন।

আচ্ছা ছাড়ো। তোমার মাথার ব্যথাটা কমেছে?

আগের থেকে অনেকটা কম। আপনার?

এখন ঠিক বুঝতে পারছি না।

কেন?

কিছু কিছু মুহুর্ত থাকে যা আমাদের অনেক কিছুর যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দেয়।

ঠিক বুঝলাম না। আপনি এতো কঠিন করে কথা বলেন কেন?

সহজ করেই বলেছি। তুমি বোঝার চেষ্টা করোনি তাই বুঝতে পারছো না। আচ্ছা তোমার বসের কী খবর? চাকরিটা আছে না গেছে?

এখনও ফোন করিনি। ভীষণ ভয় করছে।

চাকরি গেলেই বা কী আসে যায়।

মানে! কী বলছেন আপনি! এই চাকরিটা আমার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ আপনি জানেন না৷ অন্য আরেকটা চাকরি না হওয়া পর্যন্ত এটাকে আকড়েই থাকতে হবে।

তুমি যখন খুশি আমার অফিসে মানে আমার বাবার অফিসে জয়েন করতে পারো। তোমার জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা থাকবে।

আমার এরকম শুভাকাঙ্ক্ষী আছে জেনে ভালো লাগলো। তবে আমি চাকরিটা নিজের যোগ্যতায় পেতে চাই৷

আচ্ছা সেসব ছাড়ো। তোমাকে বলে লাভ নেই।

হ্যাঁ সেই ভালো।

আচ্ছা, তোমার বাসায় কে কে আছে?

মা, বড় আপা, ডাব্বু আর আমি।

ডাব্বু কে?

বড় আপার ছেলে। আমাদের পরিবারের সবচেয়ে ছোটো, সবচেয়ে দুষ্ট সদস্য, ডাব্বু সোনা।

তবে যে বললে তোমার আপাকে দেখতে এসেছে৷ বুঝলাম না ব্যাপারটা।

আমি কিছু বলবো ঠিক তখনই বড় আপার রুম থেকে ডাব্বুর কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। অনেক জোরে চিৎকার করে কাঁদছে ডাব্বু। মনে হচ্ছে ভীষণ ভয় পেয়েছে। আমি দৌড়ে ফোন রেখে তাড়াতাড়ি আপার রুমের দিকে গেলাম। দরজা বন্ধ। জানালা দিয়ে তাকাতেই আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
_____________

১২.
বড় আপা গায়ে কেরোসিন ঢালছে। এই দৃশ্য দেখার পর আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো। ডাব্বু ভয়ে একটা কোনায় চুপটি করে বসে বসে কাঁদছে। আমি কী করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না৷ জোরে একটা চিৎকার দিতেই মা চলে এলো। দরজা ধাক্কাচ্ছি কিন্তু বন্ধ দরজা খোলা তো এতো সহজ কাজ না৷ জানালা দিয়ে ডাব্বুকে বললাম, দরজা খুলতে। কিন্তু ডাব্বু ভয়ে একদম শক্ত হয়ে আছে। এতটুকু একটা বাচ্চা কিভাবে কী বুঝবে যেখানে আমাদেরই মাথা ঠিক নেই। আমি তাড়াতাড়ি দৌড়ে বাইরে গেলাম। পাশের ফ্ল্যাটের সজল ভাইকে ডেকে নিয়ে এলাম। সবাই মিলে দরজা ভাঙ্গার আপ্রান চেষ্টা করছি। আপা তখন দিয়াশলাই খুঁজছে। ভাগ্যিস ও দিয়াশলাই নিতে ভুলে গিয়েছিলো। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন৷ কিছুটা স্বস্তি পেলেও পরোক্ষণে আবারও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে লাগলো। আপা ফ্যানের সাথে গলায় দরি দিতে যাচ্ছে। আমরা সবাই মিলে দরজা ভাঙ্গছি। সজল ভাই সাবল দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করে শেষ পর্যন্ত দরজা ভাঙ্গতে পারলো। তাড়াতাড়ি ভেতরে গিয়ে আপাকে উপর থেকে নামালাম। মা আপাকে কয়েকটা চড়থাপ্পড় দিয়ে বসলো।

আমি সজল ভাইকে বললাম, ডাব্বুকে নিয়ে বাইরে যেতে। ছেলেটা ভয়ে কুকড়ে আছে। আপাও প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। প্রথমে মাকে শান্ত করলাম। তারপর আপাকে গোসল করিয়ে, জামাকাপড় বদলে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিলাম। পরিবেশ এখন অনেকটা শান্ত৷ আপাকে নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছি, এভাবে নিজের জীবন শেষ করে দিলেই কোনো সমস্যার সমাধান হয় না।

আপা বলল, কেন বাঁচালি আমাকে! মরে গেলেই তো সব সমস্যা দূর হয়ে যেত। তোর আর মায়ের ঘাড় থেকে একটা বড় বোঝা দূর হতো। কেন বাঁচালি!

আমি আপার হাত দুটো শক্ত করে ধরে বললাম, মরে যাবি! তোর ডাব্বুর কী হবে? বাবা-মা ছাড়া তখন ওর জগৎ টা কেমন হবে একবার ভাবতে পারছিস?

ডাব্বুর জন্য তুই আছিস। আমার এটুকু ভরসা আছে তোর উপর। কিন্তু আমি? আমাকে কতদিন বয়ে বেড়াবি তোরা?

আমি বললাম, যতদিন আমি বেঁচে থাকবো ততদিন।

আপা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, যখন মরতে যাচ্ছিলাম তখন ডাব্বুটার জন্য আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো রে কুহু। আমার ভেতরে কী চলে আমি কাউকে বোঝাতে পারি না। একটার পর একটা সম্বোন্ধ আসলেই আমাকে, তোদের সবাইকে কত কথা শুনিয়ে দিয়ে যায়৷ আমি এসব সহ্য করতে পারি না।

লোকে কী বলল তাতে কী যায় আসে আপা? জীবনটা তোর৷ ডাব্বুর জন্য তোকে বাঁচতে হবে। জীবনটা নতুন করে শুরু করতে হবে। আর কোনোদিনও এসব চিন্তা ভাবনা মাথায় আনবি না। চল ঘুমিয়ে পড় এখন৷ ডাব্বু মায়ের কাছে আছে। তুই ঘুমা। ঘুমোলে ভালো লাগবে।

আপাকে শুইয়ে দিয়ে আমি নিজের রুমে গেলাম। বসের ফোন এলো। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে বস বলল, হোয়্যার আর ইউ কুহু? আর ইউ ম্যাড? ইউ নো হোয়াট তোমাকে ছাড়া আমার অফিস চলে না! এভাবে কিছু না বলে কয়ে কোথায় বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলে? কাজের চাপে আমি চ্যাপ্টা হয়ে আছি। কাল সকাল সকাল অফিস আসবে।

আসলে স্যার……

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে ফোনটা কেটে দিলো। না জানি কাল কী কী ভাষন অপেক্ষা করছে আমার জন্য। চাকরিটা থাকলেই হলো। কিচ্ছু ভালো লাগছে না৷ বাসায়ও কী সব ঘটে গেল। এখন আবার বসের ঝাড়িও শুনতে হলো। হঠাৎ করে তিয়াশের কথা মনে পড়লো। তখন ডাব্বুর চিৎকার শুনে ফোন কেটে দিয়েছিলাম কিছু না বলে কয়ে। কী ভাবলো ও! একটা কল দিয়ে দেখি।

নাম্বারটা ডায়াল করেও কেটে দিলাম। তারপর আবারও ডায়াল করলাম। এবার না কেটে ফোন ধরার অপেক্ষা করতে লাগলাম। কয়েকবার রিং হওয়ার পর তিয়াশ ফোন রিসিভ করলো।

হ্যালো বিজি উইমেন।

আসলে তখন একটা ঝামেলা হয়েছিলে তাই ফোন রাখতে হয়েছে। সরি। কিছু মনে করবেন না।

মনে তো করবো অবশ্যই। আপনি আপনি বললে মনে করবো। আমি কিন্তু অতো টাও বয়স্ক নই যে আমাকে আপনি করে সম্বোধন করতে হবে।

আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো।

আচ্ছা, কী ঝামেলা হয়েছিলো বলছিলে?

সেসব ছাড়ো। অনেক কাহিনি। এসব বলে তোমার মুড অফ করতে চাই না।

মনের জমানো কথা শেয়ার করলে মন হালকা লাগে। তুমি আমাকে বলতে পারো। বন্ধু ভেবেই না হয় বললে।

সবটা বলার পর তিয়াশ একদম চুপ হয়ে গেল। আমি বললাম, দেখলে বলেছিলাম না তোমারও মুড অফ হয়ে যাবে।

না মুড অফ হয়নি৷ ভাবছি।

কী ভাবছো?

অনেক কিছু।

কী সেটা?

তুমি বরং কাল একবার তোমার বড় আপাকে নিয়ে বের হও। আমরা কোথাও একটা মিট করি৷ কিছুটা সময় বাইরে কাটালে হয়তো তার ভালো লাগবে। আর অবশ্যই ডাব্বুকে নিয়ে আসবে।

আমরা দেখা করবো? আপু তোমার কথা জিজ্ঞেস করলে কী বলবো?

কী বলবে? যেটা সত্যি সেটাই বলবে।

কোনটা সত্যি?

আমাদের কিভাবে পরিচয় হয়েছিলো তারপর আমরা ট্যুরে একসাথে ছিলাম সেসব। কেন এছাড়া আর কোনো আলাদা পরিচয় আছে নাকি আমার?

আমি তা বলিনি। আমাকে কাল সকাল সকাল অফিস যেতে হবে। বস ভীষণ রেগে রয়েছে। না জানি কী হবে কাল।

চাকরিটা গেলেই বাঁচি।

কিছু বললে?

না, বললাম, অফিস শেষ করে তারপর না হয় এসো। ওই রেঁস্তোরাটায়, যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো।

দেখি, আই উইল ট্রাই।

ওকে।

রাখছি।

দাঁড়াও দাঁড়াও। গান শুনবে?

গান! হ্যাঁ শোনা যায়। কিন্তু কে গাইবে? তুমি?

ওয়েট একটু।

কিছুুক্ষণ পর একটা মিষ্টি কন্ঠস্বর ভেসে এলো। কেউ একজন রবীন্দ্র সংগীত গাইছে। কে? আমি সেসব ভাবনা বাদ দিয়ে মন গিয়ে গানটা শুনতে লাগলাম।

আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাইনি তোমায়
দেখতে আমি পাইনি।
বাহির পানে চোখ মেলেছি
বাহির পানে,
আমার হ্রদয় পানে
চাইনি আমি।
আমার সকল ভালোবাসায়
সকল আঘাত, সকল আশায়
তুমি ছিলে আমার কাছে
তুমি ছিলে
আমি তোমার কাছে যাইনি।
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
তুমি মোর আনন্দ হয়ে
ছিলে আমার খেলায়।
আনন্দে তাই ভুলে ছিলেম
কেটেছে দিন হেলায়।
গোপন রহি গভীর প্রানে
আমার দুঃখ সুখের গানে
সুর দিয়েছ তুমি,
আমি তোমার গান তো গাই নি।
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাইনি,
আমি দেখতে আমি পাইনি।

বাহ এতো সুন্দর গানের গলায়! কে গাইলো গানটা?

আমার মা।

আপনার মা এতো ভালো গান করে!

করতো একসময়। আজকাল ভুলেই গেছে গান কী জিনিস। জাস্ট কাজ করতে করতে একটু গুনগুন করে গায় আর কী।

পাশ থেকে তিয়াশের মা বলল, কে রে মেয়েটা? কাকে গান শোনাচ্ছিস?

তিয়াশ কী বলল সেটা আর শুনতে পেলাম না।

আচ্ছা এখন রাখছি। সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। ডোন্ট মাইন্ড।

ইট’স ওকে। ইট’স টোটালি ওকে। গুড নাইট।
_______________________

তিয়াশ.
সকালটা যে কখন হবে! আর হলেই বা কী! মায়াবতী তো সেই অফিস শেষ করে তারপর আসবে দেখা করতে। তবে এক্ষুনি আমাকে জাহিদ ভাইয়াকে একটা কল করতে হবে৷ কাল যেন আমার সাথে রেস্তোরাঁয় যায় এটা বলার জন্য। এখনি কিছু বলবো না। যেতে যেতে সব আলাপ সেরে নিবো৷

জাহিদ ভাইয়াকে ফোন করে কথা বলে নিলাম৷ ইতোমধ্যেই বাবার আগমন হলো। বাবা গম্ভীর স্বরে বললেন, তুমি যেটা করেছো একদম ঠিক করো নি। তুমি আমার পারমিশন ছাড়া কক্সবাজার চলে গেলে! আমাকে বললে আমি তোমার সাথে সিকিউরিটি পাঠাতাম। দেখলে তো এখন কী বিপদটা হলো! যেই ছেলের জামা জুতা থেকে শুরু করে এভরিথিং আমি চুজ করে দেই সেই ছেলে আমাকে লুকিয়ে বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার চলে গেল। এতটা অবাধ্য তুমি কবে হলে তিয়াশ?

আমি একদম চুপ। এখন উত্তর দেয়ার সময় নয়। তাই এখন চুপ করেই রইলাম। বাবাও বকাঝকা করে চলে গেলেন। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুমিয়ে পড়লাম।
_________________

সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। রিয়াকে আমার সামনে দেখে প্রথমে ভাবলাম আমি স্বপ্ন দেখছি না তো! নিজের হাতে একটা চিমটি কাটলাম। না স্বপ্ন নয়, সত্যি। কিন্তু ও এখানে কী করছে? ওকে দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। ও এভাবে টলছে কেন! খুব সম্ভবত ও ড্রিংক করেছে৷ অবশ্য আমি ওকে এই অবস্থায় দেখে খুব বেশি অবাকও হচ্ছি না। প্রথম দিনই ওকে দেখে মনে হয়েছিলো, বড়লোক বাবার উচ্ছনে যাওয়া একটা মেয়ে।

আমি ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এ কী রিয়া! তুমি এখানে?

রিয়া টলতে টলতে বলল, ও আমায় চিট করেছে তিয়াশ। ও আমাকে ভালোবাসে না। আমি থাকতেও ও অন্য একটা মেয়ের সাথে! আমি এই অপমানটা মেনে নিতে পারছি না। ওকে আমি শিক্ষা দিতে চাই। শালা একটা খারাপ। ওকে আমি এমন ভাবে টাইট দিবো যে ও বুঝতে পারবে ও কী হারিয়েছে। ও আমাকে ডিজার্বই করে না। উইল ইউ ম্যারি মি তিয়াশ? প্লিজ তিয়াশ প্লিজ।

এই মুহুর্তে আমার কী করা উচিত! আমি কুহুকে কথা দিয়েছি আজ আমি ওর সাথে দেখা করবো। কত প্ল্যানিং সবটা না ভেস্তে যায় এই উগরো চণ্ডী মেয়েটার জন্য। বাবা যদি একবার জানতে পারে রিয়া আমাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে আবারও একটা ঝামেলা করবে বিয়ে নিয়ে। অনেক বড় একটা ঝড় আসতে চলেছে, অনেক বড় ঝড়।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here