চুপকথা পর্ব- ২৩

0
947

#চুপকথা-২৩
Zannatul Eva

সরি একটু দেরি হয়ে গেল আসতে। আসলে রাস্তায় এতো জ্যাম ছিল কী করবো বলো। এক্সট্রিমলি সরি। তুমি নিশ্চয়ই অনেকক্ষণ যাবত বসে আছো!

তিয়াশের গিল্টি কমানোর জন্য বললাম, ইট’স ওকে খুব বেশি সময় হয় নি এসেছি। এতো সরি বলতে হবে না।

তিয়াশ ঘামছে। ওকে একটু বিচলিত মনে হচ্ছে। কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে আছে মনে হয়। প্রপোজ করার আগে সব ছেলেদেরই বোধহয় এমনটা হয়। এমনিতেও তিয়াশ যেরকম একটা ছেলে ওর তো নার্ভাস হওয়ারই কথা। আমি কী ভাববো সেটা ভেবেই হয়তো ও টেনশন করছে। কিন্তু ও তো আসলে এটা জানে না যে একটু একটু করে ও আমার মনে অনেকটা জায়গা করে নিয়েছে। কিছু কিছু মানুষ থাকে যাদেরকে প্রথম দেখাতেই খুব একটা ভালো না লাগলেও ধীরে ধীরে যখন ঐ মানুষটার সান্নিধ্যে এসে তাকে অল্প অল্প করে জানতে শুরু করে তখন তার প্রতি একটা ভালো লাগা তেরি হয়। তখন ঐ মানুষটার ব্যক্তিত্ব, তার কথা বলার ধরন, তার হাঁটাচলা সব কিছুই ভালো লাগতে শুরু করে। তিয়াশ হচ্ছে তেমন মানুষ।

কিছুক্ষণ পর্যন্ত দু’জনই চুপচাপ রইলাম।

তিয়াশ.
কিভাবে বলবো মায়াবতীকে পিয়াশের কথা বুঝতে পারছি না। এভাবে নিজের সমস্ত অনুভূতিকে বিসর্জন দিয়ে মায়াবতীকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বাইরের ঝড়তুফান সবাই দেখতে পায় কিন্তু মনের ভেতরে ওঠা ঝড়তুফানের আওয়াজ কারো কান অবধি পৌঁছায় না। ভেতরে দুমড়েমুচড়ে সবটা ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়। ভাইকে কষ্ট দিয়ে কুহুকে নিজের ভালোবাসার কথা বলার র্দুসাহসও আমার নেই। নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে। কিন্তু তাও ছোটো ভাইয়ের জন্য এটুকু কষ্ট আমাকে সহ্য করে নিতেই হবে। আমি কুহুকে ভালোবাসি কিন্তু কুহু তো আর আমাকে ভালোবাসে না। ও কখনো আমাকে এরকম কিছু বলেও নি। আমি না বললে ও কখনও জানতেও পারবে না যে আমি ওকে ভালোবাসি। যে করেই হোক আমাকে আজ বলতেই হবে। কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই কুহু বলল, আমি জানি তুমি আমাকে এখানে কেন ডেকেছো।

আমি কিছুটা অবাক হয়েই ওর দিকে তাকালাম।
কুহু বলল, এটা অস্বীকার করবো না যে আমার তোমাকে ভালো লাগে না। তোমাকে আমার ভালো লাগে। তোমার মতো ছেলেকে কার না ভালো লাগবে বলো? তুমি আমাকে ভালোবাসো এটাও যে আমি বুঝতে পারি নি তা কিন্তু নয়। আমি সবটাই বুঝতে পেরেছি। ইনফ্যাক্ট আপাও বলেছে আমাকে। তোমার আমার প্রতি যত্ন নেয়া, আমার জন্য চিন্তা এ সব কিছুই আমাকে তোমাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে।

কুহুর মুখে এসব কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ আগের ঝড়তুফান কাল বৈশাখী ঝড়ে পরিনত হলো। এই ঝড় কিভাবে থামাবো আমি! কুহু আমাকে……! ওদিকে পিয়াশ গাড়িতে অপেক্ষা করে আছে। আমি কুহুকে ওর কথা বললে তবেই ও আসবে কুহুকে প্রপোজ করতে। কিন্তু কুহুর কথা শুনে আমার এখন সবটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমার সমস্ত শব্দেরা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, কিন্তু কুহু আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে……….
পুরো কথাটা বলার আগেই কুহু বলল, আমি জানি তুমিও আমার মতো আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছো। তোমার আর আমার পরিবারের মাঝে একটা দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। আপাকে মেনে নিলেও তোমার বাবা তার নিজের ছেলের জন্য কখনও একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েকে মেনে নেবে না। আমি জানি এই পথ চলা খুব সহজ হবে না আমাদের জন্য। কিন্তু আমি অনেক ভেবে দেখলাম যে ভালোবাসার জন্য কত মানুষই তো কত কষ্ট সহ্য করে নেয়। আমিও না হয় সহ্য করে নেবো। তোমার মতো একটা ভালো মানুষকে আমি হারাতে চাই না। পেছনের সব কথা আমি ভুলে যেতে চাই। নিজের জীবনটা আবার নতুন করে শুরু করতে চাই। তুমি আমার পাশে থাকলে আমি সব কষ্ট সহ্য করে নিতে পারবো। শুধু তুমি সারাজীবন আমার পাশে থেকো। রাফসানের মতো হারিয়ে যেও না। দ্বিতীয় বার আর হারানোর যন্ত্রণাটা সহ্য করতে পারবো না আমি।

আমার রীতিমতো চোখ ঝাপসা হতে শুরু করেছে। চারদিকটা কেমন অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। ঠিক এই মুহুর্তে যদি আমি কুহুকে পিয়াশের কথাটা বলি তাহলে ও কিভাবে রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমাকে তো বলতে হবে। নিজের মনের কথা চেপে রেখে এই কথাগুলো আমাকে বলতেই হবে। আমি পিয়াশের মনে আঘাত দিতে পারবো না। জীবনে প্রথম পিয়াশ কাউকে মন থেকে ভালোবেসেছে। ভাই হয়ে ভাইয়ের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিতে পারি না আমি৷ আমি বড়ো করে একটা নিঃশ্বাস নিলাম। চোখ দুটো বন্ধ করে কুহুকে পিয়াশের কথা বলতে যাব ঠিক এমন সময় পিয়াশের মেসেজ এলো______
ভাই তাড়াতাড়ি চলে আসো ছোটো মার ভীষণ বুকে ব্যাথা হচ্ছে। আমাদের এক্ষুনি যেতে হবে।

মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে আমি সবটা ভুলে গেলাম। কুহুকে বললাম, আজ উঠতে হবে। মায়ের শরীরটা ভালো নেই। পিয়াশ মেসেজ করেছে। তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে কুহু কিন্তু আজ নয়। সরি তোমাকে সময় দিতে পারলাম না। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড।

কুহু বলল, আরে না না। তোমার যখন ইচ্ছে তুমি আমাকে ডাকতে পারো। তাছাড়া ফোনেও চাইলে আমরা কথা বলে নিতে পারবো কিন্তু এখন তোমার দ্রুত আন্টির কাছে যাওয়া উচিত। আর হ্যাঁ বাসায় গিয়ে আমাকে একটু জানিও। আমি চিন্তায় থাকবো।

আচ্ছা।

আমি তড়িঘড়ি করে কফিশপ থেকে বেরিয়ে গেলাম। পিয়াশ গাড়িতে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। বাসায় গিয়ে মাকে নিয়ে হসপিটাল গেলাম। মা এখন একটু সুস্থ আছে। কিছুক্ষণ পরেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবো বলেছেন ডাক্তার।

আমি কুহুকে ফোন করে জানালাম। কুহু বলল, আন্টির খেয়াল রেখো আর নিজেরও।

আমি হুম বলেই ফোন রেখে দিলাম। আগে হলে হয়তো আমার প্রতি কুহুর এই নতুন করে ভাবনা আর এতোটা যত্নশীল হতে দেখে আমি খুব খুশি হতাম। কিন্তু এখন কেন জানিনা আমার ভীষণ ভয় করছে। যেভাবেই হোক কুহুকে বোঝাতে হবে আমি না, পিয়াশ ওকে ভালোবাসে। এটা না বলা পর্যন্ত আমার কিচ্ছু ঠিক লাগছে না।

মাকে নিয়ে বাসায় আসার পর নিরিবিলি কুহুকে ফোন করলাম।

কুহু ফোন রিসিভ করেই বলল, আমি এখন তোমার কথাই ভাবছিলাম আরই তোমার ফোন চলে এলো। কী মিল আমাদের তাই না?

আমি ভারী গলায় বললাম, তোমাকে এখন কিছু কথা বলবো। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবে।

কুহু হেসে বলল, তোমার কথা শুনবো বলেই তো কফিশপে ছুটে গিয়েছিলাম। বলো না কী বলবে।

আমি বুকে পাথর চেপে বললাম, তুমি যেটা ভাবছো সেটা ভুল। আমি তোমাকে ভালোবাসি না।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here