#চুপকথা-২৪
Zannatul Eva
তুমি নিশ্চয়ই আমার সাথে মজা করছো? সে তুমি মজা করতেই পারো। কিন্তু আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। ভালো না বাসলে কি কেউ কারো এতো খেয়াল রাখে! সেই প্রথম দিন থেকে তুমি ছায়ার মতো আমার পাশে পাশে হেঁটে চলেছো। তোমার মনে আছে আমাদের সেই প্রথম দেখা হওয়া? আমি পার্স ফেলে চলে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনই তুমি আমাকে পেছন থেকে ডাক দিয়েছিলে। সেই আমাদের প্রথম দেখা। এরপর তো আরও কতবার দেখা হয়েছিলো। তারপর একসাথে ট্যুর দেয়া। আর ট্যুরের সেই ঘটনা আর কী বলবো! সে তো একদম সিনেমার কাহিনিকেও হার মানাবে। দু’জন একসাথে কিডন্যাপ হয়ে গেলাম। ওখান থেকে যে ফিরে আসতে পারবো ভাবিনি। তুমি ছিলে বলে সম্ভব হয়েছে। আর তারপর তো দু’জন পরম আত্মীয় হয়ে গেলাম। আর এখন আমার পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের মানুষটা তুমি। কিভাবে যে তোমার এতোটা কাছে চলে এলাম বুঝতেই পারছি না।
কুহুর কথা গুলো শোনার পর আমার ভেতরে তুমুল বেগে তুফান বইতে শুরু করলো। কুহু কখনো আমাকে নিয়ে এতোটা সিরিয়াস হবে ভাবি নি। কিন্তু এখন খুশি হওয়ার বদলে উল্টো দ্বিগুণ কষ্ট হচ্ছে। ঠিক একই কষ্ট পিয়াশেরও হবে। যদি ও জানতে পারে কুহু ওকে না, আমাকে ভালোবাসে। এটা কিছুতেই হতে দিতে পারিনা আমি। নিজেকে সামলে নিয়ে ভারী গলায় বললাম, তুমি বুঝতে পারছো না কুহু আমি তোমাকে ভালোবাসি না। তুমি ভুল করছো।
কুহু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, মানে? তুমি আমাকে ভালোবাসো না? তাহলে সেদিন আমার জন্য ওষুধ নিয়ে এসেছিলে কেন? আমার জন্য ফেভারিট চা, রুটি কেন এনেছিলে? আমাকে নিয়ে এতোটা ভেবেছিলে কেন?
এসব কিছুই আমি করি নি।
তুমি করো নি তো কে করেছে? বলো!
পিয়াশ।
পিয়াশ!!
হ্যাঁ পিয়াশ করেছে। পিয়াশ তোমাকে খুব ভালোবাসে। ও আমার কাছে জানতে চেয়েছিলো তুমি কী খেতে পছন্দ করো। আর আমি তো জানতাম তোমার প্রিয় খাবার কী। তাই বলেছিলাম ওকে। ব্যাস ও তোমার জন্য নিয়ে এলো। এসব কিছু পিয়াশই করেছে। ও তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে।
তাহলে আপা যে সেদিন বলেছিলো, তুমি আমার জন্য সাদা গোলাপ নিয়ে এসেছিলে! তুমি আমাকে ভালোবাসো।
হঠাৎ করে আমার মনে পড়লো সেদিন মুখ ফসকে ভাবিকে বলে ফেলেছিলাম কথাটা। ইশশ! কী ভুলটাই না করেছি। কিন্তু যেভাবেই হোক ব্যাপারটা কুহুকে বুঝতে দিলে চলবে না।
ভাবি ভুল শুনেছে হয়তো। আমি ভাবিকে পিয়াশের কথা বলেছিলাম। আমার কথা নয়। দেখো কুহু, পিয়াশ ভীষণ ভালো ছেলে। আমার ভাই বলে বলছিনা। ও একটু চটপটে, বেশি কথা বলে কিন্তু মনটা ভীষণ ভালো। আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েকে ও মন থেকে ভালোবাসেনি। তুমিই প্রথম কোনো মেয়ে যাকে ও ভালোবেসেছে। তুমি ওর ব্যাপারে কী ভাবো সেটা জানার জন্য ও আমাকে তোমার সাথে দেখা করতে পাঠিয়েছিলো কফিশপে। ভীষণ নার্ভাস হয়ে পড়েছে বেচারা। তুমি প্লিজ ওকে না করে দিও না। ভীষণ কষ্ট পাবে ছেলেটা।
কুহু গম্ভীর স্বরে বলল, আর তুমি?
আমি কী! আমি তো ভীষণ খুশি হবো। আমার ভাই তোমার মতো এতো ভালো একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবে এটা ভাবলেই তো আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। আমার ভাইও কিন্তু তোমার থেকে কম না। একদম পারফেক্ট জুটি হবে তোমাদের।
জানিনা কুহুর হঠাৎ কী হলো। প্রচন্ড রাগি স্বরে বলল, নিজের ভালোবাসার কথা নিজের মুখে বলতে হয়। আমি ভীতু ছেলেদের পছন্দ করি না।
আমিও তো ভীতু আমাকে কেন পছন্দ করলে?
কারণ তুমি মানুষটাই আলাদা। তোমাকে আমি হুট করেই পছন্দ করিনি। একটু একটু করে তুমি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছো। বাধ্য করেছো আমাকে তোমাকে ভালোবাসতে। আর এখন বলছো তুমি আমাকে ভালোবাসো না!! ভালোবাসা কী বললেই হয়ে যায়! যে এসে বলবে তাকেই আমার ভালোবাসতে হবে?
যে কেউ কেন হবে? পিয়াশ আমার ভাই। আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিচ্ছি ও তোমাকে ভীষণ ভালো রাখবে। অনেক ভালোবাসবে।
আর আমি যে তোমাকে ভালোবেসেছি তার কী হবে?
কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না।
মিথ্যে। মিথ্যে বলছো তুমি। আমি তোমার চোখ দেখেছি। সেই চোখ কখনও মিথ্যে হতে পারে না। তুমি কেন আমার সাথে এমন করছো? আমাকে কেন অন্য কাউকে ভালোবাসতে বলছো?
আমি তোমাকে ভালোবাসি না এটাই সবচেয়ে বড়ো সত্যি কুহু। এরপর আর কোনো সত্যি নেই।
কুহু নিচু স্বরে বলল, আমাকে টিউশন যেতে হবে। রাখছি।
ইতোমধ্যেই পিয়াশ চলে এলো। আমার পাশে বসে বলল, ভাই কাদাবতীকে কি বলতে পারছিলা? কী বলছে ও? সারাদিন ধরে ভীষণ ছটফট করে কাটিয়েছি সব কথা শুনবো বলে। বলো না ভাই কুহু কী বলেছে?
আমি ইতস্তত হয়ে পড়লাম। পিয়াশকে কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। মুখে হাসি ধরে রেখেই বললাম, কী আবার বলবে! বাঙালি মেয়েরা এসব কথা শুনলে লজ্জা পায়। লন্ডনের মেয়েরা তো এমন না তাই তুই বুঝতে পারছিস না। শোন তোকে একটা সাজেশন দেই৷
তুমি সাজেশন দিলে তো ব্যাপারটা আরও সহজ হয়ে যাবে। বলো বলো কী সাজেশন!
তুই নিজে গিয়ে ওকে প্রপোজ কর। নিজের মনের কথা ওকে খুলে বল। মেয়েরা ভীতু ছেলেদের একদম পছন্দ করে না। তুই কনফিডেন্টলি গিয়ে ওকে ডিরেক্ট বলে দে কথাটা।
তাহলে আমি আজকেই যাব মিস কাদাবতীর কাছে। ও অফিস থেকে বেরোনো পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো ওর জন্য। এলেই সোজা গিয়ে বলে দিবো।
পিয়াশ কুহুর কাছে যাওয়া আগে আমি কুহুকে মেসেজ করলাম, তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো তাহলে তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না আমি কষ্ট পাই। আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবো আমি। প্লিজ ওকে ফিরিয়ে দিও না।
_____________________
কুহু.
অফিস থেকে বেরোতেই দেখলাম পিয়াশ দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলাম এমন সময় ও আমাকে ডেকে বলল, মিস কাদাবতী! তোমার সাথে আমার কিছু কথা বলার ছিল।
আমি পেছন ফিরে বললাম, বলুন কী বলবেন।
আমি জানি ও কী বলতে এসেছে আমাকে। আর আমি এ-ও জানি ওকে ফিরিয়ে দিলে তিয়াশ ভীষণ কষ্ট পাবে। অদ্ভুত এক দোটানায় পড়ে গেছি আমি। জানিনা এর শেষটা কী হতে চলেছে।
চলবে………