চুপকথা পর্ব- ২৯ ৩০

0
2366

#চুপকথা-(২৯+৩০ শেষ পর্ব)
Zannatul Eva

শুনলাম কুহুর বরকে নাকি কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না! বিয়ের দিনই একদম নিরুদ্দেশ হয়ে গেল! এই মেয়ের তো আসলেই কপাল পোড়া। প্রথম একবার বিয়ের আগে বরটা মরে গেল। এখন আবার বিয়ের দিন বর পালিয়ে গেল। এই মেয়ে তো সত্যিই একটা অপয়া।

লোকজনের নানান কথা আমার কানে এসে বাজতে লাগলো। মা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। আপা একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ও বাড়ি থেকে যাদের আসার কথা ছিল তারা সবাই-ই এসেছে শুধু পিয়াস ছাড়া। তিয়াসের মা আমার কাছে এসে মাথায় হাত রেখে বলল, এমনটা হবে আমরা কেউই বুঝতে পারিনি৷ পিয়াস কেন কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে গেল জানিনা। ওর মতেই তো বিয়েটা ঠিক হয়েছিল। তাহলে কেন এমনটা করলো পিয়াস! তুমি কি কিছু জানো?

আমি দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে পারছি না৷ আবার কিছুটা আন্দাজও করতে পারছি। পিয়াস কি কোনো ভাবে আমার আর তিয়াসের কথা জেনে গেল! নয়তো এভাবে বিয়ের দিন কেন নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে! আর কোথায়ই বা যাবে? কিছু বুঝতে পারছি না। হঠাৎ করে আমার মনে পড়লো, সেদিন শপিং করে আসার সময় আমি তিয়াসের ডায়েরিটা গাড়ির ভেতরে রেখে এসেছিলাম যাতে তিয়াস বুঝতে পারে ডায়েরি পড়ে আমি সবটা জেনে গেছি। কিন্তু তখন তো পিয়াস ছিল না! তবে কি কোনোভাবে পিয়াসের হাতে পড়ে গিয়েছিলো ডায়েরিটা? ইশশ! আমার জন্য যদি ওদের দুই ভাইয়ের সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরে তবে আমি নিজেকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারবো না৷ কিন্তু তিয়াস কোথায়! ওকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।

বিয়ে বাড়ির সমস্ত আত্মীয়-স্বজনরা ও বাড়ির সবাইকে কোথা শোনাতে ছাড়ে নি। তিয়াসের মা খুবই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন লোকজনদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়ে। মা একনাগাড়ে কেঁদেই যাচ্ছে। তার কথা আজ যদি বিয়ে না হয় তাহলে এরপর আমার মেয়েকে আর কে বিয়ে করবে! সারাজীবন মেয়েটাকে মানুষের কটু কথা শুনে বাঁচতে হবে।

তিয়াসের মা বলল, চিন্তা করবেন না আপা। ফয়সালা একটা হবেই। তিয়াসকে পাঠিয়েছি। ও ঠিক একটা খবর নিয়ে আসবে।

আপা তিয়াসকে ফোন করে বলল, পিয়াসকে পেলে?

তিয়াস বলল, এসে সবটা জানাবে।

সবাই তিয়াসের জন্য অপেক্ষা করছে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর তিয়াস এলো। সবাই তিয়াসের দিকে প্রশ্ন ছুড়লো, কোনো খবর পাওয়া গেল পিয়াসের?

তিয়াস মাথা নিচু করে বলল, না। কেউই ওর কোনো খোঁজ দিতে পারলো না। কোথায় আছে সেটাও বুঝতে পারছি না। সিমকার্ডও নষ্ট করে ফেলেছে যেন ট্র্যাক করে ওকে খুঁজতে না পারি আমরা।

এসব কথা শুনে মা আবারও কেঁদে উঠলো। বলল, এখন আমার মেয়েটার কী হবে! ওর জীবনটা তো নষ্ট হয়ে যাবে। পাড়াপ্রতিবেশিরা সারাজীবন ওকে কথা শোনাবে। এই অপবাদ নিয়ে কিভাবে জীবন কাটাবে আমার মেয়েটা?

ইতোমধ্যেই তিয়াসের বাবাও চলে এলো। সমস্ত ঘটনা শুনে তিনি একদম গম্ভীর হয়ে রইলেন।

বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি বললেন, পিয়াস যে এরকম একটা কাজ করতে পারে সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আমাদের বাড়ির ছেলে হয়ে ও এভাবে সবার মুখে চুনকালি মাখিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে এটা তো মেনে নেয়া যায় না। ওর জন্য এখন আমাদেরকে বিপদে পড়তে হচ্ছে। লোকজনদের মুখ কী করে বন্ধ করবো আমরা!!

মার কান্না কিছুতেই থামছে না। পাড়াপ্রতিবেশিরাও নানান কথা বলছে। আমি মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছি। আমার চোখ দিয়ে একফোঁটা পানিও বেরোচ্ছে না। আমার জীবনে কিছুই পাওয়ার নেই। যে আমার না সে চলে যাওয়ায় আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না। বরং মায়ের কথা ভেবে কষ্ট হচ্ছে। এই মানুষটা আর কত কষ্ট পাবে আমার জন্য! এবারও মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারলাম না৷ মেয়ে হিসেবে আমি সত্যিই অযোগ্য। না তিয়াসের ভালোবাসা পেলাম না মায়ের চিন্তা দূর করতে পারলাম। উল্টো এখন সারাটা জীবন মা আমাকে বয়ে বেড়াবে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। অনেক কিছুই হওয়ার ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার সাথে আবারও খারাপটাই হলো। ভাগ্য বারবার আমার সাথে এভাবে খেলা করছে।

এরমধ্যেই তিয়াসের বাবা বলে উঠলেন, বিয়ে হবে। আজকেই বিয়ে হবে। শরীফ আহমেদ কখনো কারো কাছে মাথা নত করে না। আমার এক ছেলে ভুল করেছে। আরেক ছেলে সেই ভুল শুধরে নেবে। কুহুর বিয়ে তিয়াসের সাথে হবে। এখন এই মুহুর্তে।

কথাটা শুনে তিয়াস একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। আপা ভীষণ খুশি হয়েছে। মাও শান্ত হয়েছে। কিন্তু তিয়াসের মুখে হাসি নেই। ওর চোখে মুখ জুড়ে শুধু ওর ভাইয়েরই চিন্তা। এরকম অবস্থায় ও চট করে বিয়েটা করতে চাইছে না। যদি পিয়াস ফিরে আসে! যদি পিয়াস কোনো বিপদে পড়ে এই কাজটা করতে বাধ্য হয়ে থাকে? কখনও যদি ও ফিরে আসে তাহলে ও পিয়াসকে কী উত্তর দিবে সেটা ভেবে ও বিয়েটা করতে চাইছে না। তিয়াস আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছে না। আমি জানি ও আমার দিকে তাকালে দুর্বল হয়ে পড়বে তাই নিজেকে এখনও আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। কোনো ভাই তার ভাইয়ের জন্য এতোটা সেক্রিফাইস করতে পারে সেটা তোমাকে না দেখলে আমি বুঝতাম না তিয়াস।

সবাই মিলে অনেক কষ্টে তিয়াসকে রাজি করালো বিয়ের জন্য। যে গেছে তার জন্য আর ভাববে না কেউ। কারণ সে ফিরে আসার জন্য যায় নি। কিন্তু এখন এই বিয়েটা হওয়া জরুরি বলে জানালেন তিয়াসের বাবা।

অতঃপর সমস্ত বাঁধা পেরিয়ে এতো ঝড়ঝাপটার পর আমি পুরোপুরি ভাবে তিয়াসের হয়ে গেলাম। তিয়াসকে পেয়ে আমার সব পাওয়া পরিপূর্ণ হয়ে গেল। জীবনে আর কিছু চাওয়ার নেই আমার৷ ভালোবাসা সত্যি হলে মানুষটা হারিয়ে যায় না। এই কথাটা আজ খুব করে সত্যি মনে হচ্ছে৷

বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর আমাদেরকে নিয়ে তিয়াসের পরিবার বেরিয়ে পড়লো। বাড়িতে ফেরার পর আমরা সবাই ভীষণ চমকে গেলাম৷
_________
৩০(শেষ পর্ব)

পিয়াস বাসায় এসে বসে আছে। ওকে দেখে আমাদের সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। তিয়াস প্রচন্ড অবাক এবং কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। তবে আমি আরেকটা বিষয় খেয়াল করলাম, পিয়াসের পাশে একটা সুন্দরী মেয়ে বসে আছে। ছোটো ছোটো চুল, ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা একটা মেয়ে। আমি এই মেয়েটিকে আগে কখনও দেখিনি।

তিয়াস বলল, পিয়াস তুই কখন বাসায় এলি!! কাউকে কিচ্ছু না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই? আর রিয়া! তুমি এখানে পিয়াসের সাথে কী করছো? কেউ আমাকে বলবে প্লিজ এখানে ঠিক কী হচ্ছে?

বাবা মানে আমার শ্বশুর প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন, এসব কী হচ্ছে পিয়াস! তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে? তোমার আমরা কোথায় কোথায় খুঁজেছি। বিয়ের দিন এভাবে কাউকে কিছু না বলে তুমি কিন্তু একদম ঠিক করোনি। সবার সামনে আমার মানসম্মান সব ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছো। আমার সম্মান নিয়ে এভাবে ফুটবল খেলার অধিকার কোথায় পেলে তুমি? চুপ করে আছো কেন? উত্তর দাও।

মা বলল, আহ আপনি একটু চুপ করেন। পিয়াস বাবা তুই বল তো কী এমন হয়েছিলো? যার জন্য তোকে বিয়ে না করে চলে যেতে হয়েছে।

রিয়া বলল, আমি বলছি। সবটা আমার জন্যই হয়েছে। কিছুদিন আগে আমার সাথে পিয়াসের দেখা হয় এন্ড ওকে দেখার পর আমার মনে হয় যে, আই এম ইন লাভ ইউথ পিয়াস। লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইড যাকে বলে। আমি অনেক ভাবে পিয়াসের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি। অন্য কারো সাথে ওর বিয়ে হয়ে যাবে আমি এটা মানতে পারছিলাম না। তাই বাধ্য হয়ে ওকে বলি, তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো তাহলে আমি উল্টোপাল্টা কিছু একটা করে বসবো। আর তারপর পিয়াসও রিয়েলাইজ করে যে কুহুর প্রতি ওর যেটা ছিল সেটা একটা এট্রাক্টশন। ইনফ্যাক্ট ও যখন পালিয়ে আমার কাছে চলে যাচ্ছিলো তখনও ওর কুহুর জন্য খারাপ লাগেনি৷ তারপর ও সত্যিই রিয়েলাইজ করলো যে, কুহুকে ও ভালোবাসে না৷ এটা শুধুই একটা ভালোলাগা। ক্ষনিকের ভালোলাগা। কিন্তু ও আমার জন্য সব ছেড়ে ছুঁড়ে চলে এসেছিলো। এটাই তো ভালোবাসা তাই না? আমাদের ভুলের জন্য আমরা ক্ষমা চাইছি।

তিয়াস বলল, তুই আমাকে বলতে পারতি! তুই তো আমার কাছে কিচ্ছু গোপন করতি না!

আমি ভীষণ দোটানায় পড়ে গিয়েছিলাম ভাই। কী করবো আমার মাথা কাজ করছিলো না। আই এম রিয়েলি সরি কুহু। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার ভাই অনেক ভালো ছেলে। তোমাকে অনেক ভালো রাখবে। অনেক ভালোবাসবে। আই প্রমিজ ইউ।

আমি তিয়াসের দিকে আড় চোখে তাকাতেই পিয়াস ওর চোখ সরিয়ে নিলো। বলল, কিন্তু তুই……..

আর কোনো কিন্তু না। চলো নতুন ভাবিকে নিয়ে ভেতরে এসো। তোমাদের নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো। অনেক ভালো থেকো তোমরা।

আমি বললাম, আর তোমরা?

পিয়াস আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। বলল, আমরাও তো ভালো থাকবো। আগে দুজনে একটু জমিয়ে প্রেম করে নিই তারপর একেবারে বিয়ে করবো। তুমি তো আমাকে প্রেম করার পারমিশন দাও নি। কিন্তু রিয়া পুরোপুরিভাবে পারমিশন দিয়ে দিয়েছে।

সরি ছোটো বাবা। আমার জন্য তোমাদের অনেক অসম্মানিত হতো হয়েছে। অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করো, একটা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের সবাইকে একদিন পস্তাতে হতো। আমি সেই ভুলটা শুধরে নিয়েছি।

কিন্তু তিয়াস কি কুহুর সাথে ভালো থাকবে?

ভালো থাকবে না মানে! আমার ভাইয়ের সাথে যে ভালো থাকতে পারবে না সে দুনিয়ার আর কারো সাথেই ভালো থাকতে পারবে না। আই প্রমিজ ইউ ছোট বাবা। কুহু আর ভাই অনেক ভালো থাকবে দেখো।

মা বলল, তোরা ভালো থাক সেটাই তো আমরা চাই। কিন্তু কোনো কিছু করার আগে একবার অন্তত ভালো করে সবদিক ভেবে দেখিস। এটাই অনুরোধ। তোর মামা নিজের রাগ, জেদ সবটা বিসর্জন দিয়ে কুহু আর তিয়াসের বিয়েটা দিয়েছে। দেখিস দ্বিতীয় বার যেন আর মানুষটাকে বাইরের কারো সামনে মাথা নত না করতে হয়। বড় বউ ওদেরকে ভেতরে নিয়ে যাও।
_________________

শরীফ আহমেদ.
সারাজীবন নিজের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছি জাহানারা। কখনও কারো সিদ্ধান্ত জানতে চাইনি। কিন্তু আজ বুঝতে পারছি ভালো থাকার জন্য নিজের সিদ্ধান্তকে সবসময় গুরুত্ব দিতে হয় ঠিকই কিন্তু সেটা অন্যের উপর নিজের সিদ্ধান্তকে চাপিয়ে দিয়ে নয়। আমি রিয়ার সাথে তিয়াসের বিয়ে ঠিক করেছিলাম কিন্তু কখনও জানতে চাই নি ওরা ঠিক কী চায়। ওদের পছন্দ কী। পিয়াস একদম ঠিক করেছে। শেষ সময়ে হলেও ও নিজের সঠিক পছন্দকেই বেছে নিয়েছে। সবার কথা ভেবে জোর করে বিয়েটা করেনি। যদিও অনেক আগেই ওর এটা বোঝা উচিত ছিল যে, ও ঠিক কাকে ভালোবাসে। তাহলে আর এতো ঝামেলা পোহাতে হতো না।

আপনিও যে এতোদিনে এই কথাটা বুঝতে পেরেছেন তাতেই আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। ওরা ভালো থাকুক এটুকুই চাওয়া।
_______________

গভীর রাত। আমাকে আর তিয়াসকে একটা রুমে আটকে দেয়া হয়েছে। পুরো ঘরটা রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সাজানো। এই ফুলের ঘ্রানে অদ্ভুত এক নেশা আছে। তিয়াস কোনো কথা বলছে না। আমিও চুপ। চারদিক নিস্তব্ধ। কিছুক্ষণ পর আমি বললাম, খুব তো ডায়েরি লেখা হতো আমাকে নিয়ে। ভাইয়ের কাছে খুব মহান সাজা হয়েছে নিজের ভালোবাসা সেক্রিফাইস করে। নিজের মনের কথা গুলো লুকিয়ে রাখা হয়েছে আমার কাছ থেকে। কিন্তু আমি তো সবটা জেনে গেছি আরও অনেক আগেই। দেখছিলাম কতটা সহ্য ক্ষমতা আছে তার। এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে। এখন চুপ কেন তাহলে? মনের কথা বলার সৎ সাহস নেই। ভীতু একটা। এরকম ছেলের সাথে আমারও কোনো কথা নেই।

তিয়াস বলল, নিজের ভাইয়ের মুখে ওসব শোনার পর কী করে তোমাকে নিয়ে সুখে থাকার কথা ভাবতাম বলো? এতোটা স্বার্থপর তো নই আমি। সব ভালোবাসা তো পূর্ণতা পায় না। কিন্তু তা বলে তো ভালোবাসাটা মিথ্যে হয়ে যায় না।
তুমি কী জানো তোমায় না পেলে আমি গোটা জীবন একা একাই কাটিয়ে দিতাম। তুমি কি জানো তোমার জন্য আমি রোজ কতশত গান লিখতাম! ভেবেছিলাম আর কখনো বোধহয় সেই গান গুলো গেয়ে শোনাতে পারবো না। কিন্তু পিয়াস সবটাই বদলে দিলো। আচ্ছা তুমি কী আমাকে রোজ রাতে তোমাকে গান গেয়ে শোনানোর দায়িত্ব দেবে? তুমি কি আমার হবে মায়াবতী?

তুমি তো আচ্ছা বোকা! আগে ভাবতাম তুমি ভীষণ চালাক। কিন্তু না এখন দেখছি তুমি সত্যিই একটা বোকা। নিজের বিয়ে করা বউয়ের কাছ থেকে আবার কেউ এভাবে পারমিশন নেয়! বরং প্রতি রাতে আমাকে গিটার বাজিয়ে গান না শোনালে শাস্তি পেতে হবে তোমার। কঠিন শাস্তি।

কী সেই শাস্তি?

শাস্তিটা আজ রাতেও কি পেতে চায় সে? একজন কিন্তু এখনও আমাকে প্রপোজটাই করলো না। অথচ আমি তার বউ হয়ে বসে আছি। শাস্তিটা বোধহয় দিতেই হবে।

তিয়াস মৃদু হেসে গিটারে গান ধরলো,

অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন
পেলাম খুঁজে এ ভুবনে আমার আপনজন।
তুমি বুকে টেনে নাও না প্রিয় আমাকে
আমি ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমাকে……..

আমি তিয়াসের কাঁধে মাথা রেখে চোখ দুটো বন্ধ করে অন্য এক জগতে হারিয়ে গেলাম।
______________

কেটে গেল দুইটি বছর। আমাদের ভালোবাসার সংসার কেটে যাচ্ছে খুনসুটি আর হাসিখুশিতে। পিয়াস লন্ডনে ফিরে গেছে রিয়াকে সাথে নিয়ে। রিয়ার পড়াশোনা পুরো কমপ্লিট হলে দেশে ফিরে তারপর ওরা বিয়ে করবে। দুই পরিবারের মধ্যে তেমনটাই কথা হয়ে রয়েছে।
______________


অক্টোবরের সময়টা ভীষণ সুন্দর তাই না পিয়াস?

আমি রিয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম, হ্যাঁ খুব সুন্দর।

আচ্ছা তুমি কী এখনও কুহুকে ভালোবাসো?

ভালোবাসি কী না জানিনা। তবে ওর জায়গায় অন্য আর কাউকে বসাতে পারবো না।

তুমি সেদিন তোমার ভাইয়ের জন্য যেভাবে নিজের ভালোবাসা সেক্রিফাইস করেছো এটা কিন্তু কেউ করে না আজকাল।

কে বলেছে তোমাকে করে না? আমার ভাই করে। আমার জন্য নিজের গোটা জীবনটাও দিয়ে দিতে পারে। নিজের ভালোবাসা তো খুব সামান্য কিছু। আমি যদি সেদিন ডায়েরি পড়ে সবটা জানতে না পারতাম তাহলে আমাদের তিন তিনটে জীবনই নষ্ট হয়ে যেতো। যেই ভাই আমার জন্য হাসতে হাসতে নিজের সবটা সেক্রিফাইস করে দিতে পারে তাকে ঠকিয়ে আমি কুহুর সাথে কখনোই ভালো থাকতে পারতাম না। আর কুহু আমাকে ভালোবাসে না। ভাইকে ভালোবাসে। ভাইয়ের উপর রাগ করেই ও আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। আমি সবটা বুঝতে পেরেছিলাম সেদিনই যেদিন আমাদের হলুদের অনুষ্ঠানে কুহুকে ভাইয়ের সাথে কথা বলতে শুনেছিলাম। সবটা জেনে আমি কী করে ওদের দুজনের মাঝখানে থাকতাম বলো রিয়া? আমি না হয় চুপিচুপিই মিস কাদাবতীকে ভালোবাসবো। চুপকথার গল্পের মতো আমার ভালোবাসা সারা জীবন চুপটি করে থেকে যাবে আমার মন গহীনে। কুহু কোনোদিন জানতেও পারবে না।

কিন্তু তুমি তো কষ্ট পাচ্ছো। ভালোবাসা হারানোর কষ্টটা আমি বুঝি। আমিও তো তোমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে ধীরে ধীরে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি পিয়াস। কিন্তু আমি জানি, আমি কখনোই কুহুর জায়গাটা নিতে পারবো না।

পিয়াসকে কথা গুলো বলে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি পিয়াস নেই। কোথায় চলে গেল! আজও আমি পিয়াসকে আমার মনের কথাটা জানাতে পারলাম না। পিয়াস কি কখনো আমার মনের কথা বুঝতে পারবে? নাকি চুপকথার গল্পের মতো আমার ভালোবাসাও অসমাপ্ত থেকে যাবে?

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here