চেরি ব্লসমের সাথে এক সন্ধ্যা পর্ব: ১৩

0
1121

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ১৩
____________

মিতুল ইজি চেয়ারে বসে আছে। তিনটা ইজি চেয়ারের মাঝের চেয়ারটা ফাঁকা। ওপাশের ইজি চেয়ারে জোহান।
জোহানের মুখে ফেস প্যাক লাগানো। ইজি চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে আছে। চোখ বুজে থাকলেও মিতুল যে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, সেটা বেশ উপলব্ধি করতে পারছে ও।
“আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? খুব শীঘ্রই আমার পাগলের কারখানায় এডমিট হতে চাইছো বুঝি?”

মিতুলের চোখ বিস্ময়ে বিস্ফোরিত হলো। চোখ সরিয়ে নিলো জোহানের থেকে। আবার তাকালো। বললো,
“তোমার ওই পাগলের কারখানা নিয়ে তুমিই থাকো। ওখানে এডমিট হওয়া তো দূরের থাক, তোমার ওই কারখানার হাজার হাজার মাইল দূরত্বেও আমার পদচিহ্ন পাবে না।
আমি তো শুধু তোমার দিকে তাকিয়ে এত সকাল সকাল তোমার রূপ চর্চার মানে খুঁজছিলাম। সকাল সকাল এত রূপচর্চা করার মানে কী?”

জোহান চোখ বুজেই বললো,
“তুমি আর রূপচর্চা করার কী মানে বুঝবে? হাজার হাজার মেয়ে তো ঘোরে আমার পিছন পিছন। আমি জানি চেহেরার যত্ন আত্তি করা কতটা জরুরি।
বাই দ্য ওয়ে, কালকে রাতটা কেমন ছিল?”

“মানে?”

“কালকে রাতের বারবিকিউ পার্টির কথা বলছি আমি। কেমন ছিল কালকের বারবিকিউ পার্টি?”

মিতুলের কালকে রাতের কথা মনে পড়ে গেল। কালকে রাতে বারবিকিউ পার্টি হয়েছিল। রেশমী আন্টির এক নেইবরহুডের বাড়িতে বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। তাদের লনটা বাকি সবার লনের থেকে বেশ দীর্ঘ বলে, সেখানেই বেশি পার্টির আয়োজন করা হয়। আশেপাশের অনেক প্রতিবেশীরা এক সাথে জড়ো হয়েছিল সেখানে। বাতাসে বারবিকিউ’র লোভনীয় সুগন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছিল। মানুষের সমাগম ছিল বেশ ইনজয়অ্যাবল। মিতুল বললো,
“হুম, ভালো ছিল।”

“ভালো থাকবে না! দেখলাম তো সবই। একটা ছেলের সাথে খুব হাসাহাসি হচ্ছিল। পার্টি ফুরিয়ে যায়, অথচ তোমাদের দুজনের কথা ফুরোয় না।”

জোহানের কথা শুনে মিতুল অবাক।
“কোন ছেলে? কার কথা বলছো তুমি?”

“ভাণ করো না একদম। আমি নীল চোখের কথা বলছি।”

মিতুল বুঝতে পারলো জোহান কার কথা বলছে। পার্টিতে পরিচয় হয়েছে ছেলেটার সাথে। খুব অমায়িক ছিল।
“ওর সাথে আমি মাত্র আট, নয় মিনিটের মতো কথা বলেছি। আর তুমি সেটাকে পুরো পার্টি বানিয়ে দিলে? আর আমি পুরো পার্টি জুড়ে কথা বললেও তোমার কী? তুমি যে ওই বাড়ির মেয়েটার সাথে বলতে গেলে এক প্রকার নাচানাচি করছিলে, সেটা কী? কেউ কিছু বলেছে তোমায়? তাহলে তুমি মানুষের ব্যাপারে কেন নাক গলাচ্ছ?”

মিতুলের কথা শুনে জোহান আর স্থির থাকলো না। চেয়ারের সাথে হেলিয়ে দেওয়া মাথাটা চকিতে সোজা করে উঠে বসলো।
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল মিতুলের দিকে।

মিতুল জোহানের এমন করে তাকানোর মানে বুঝতে পারছে না। তাই বললো,
“এমন ভাবে কী দেখছো?”

“কালকে রাতে মদ টড কিছু খেয়েছো না কি তুমি? আই মিন ভদকা, বিয়ার, ওয়াইন এমন কিছু?”

জোহানের কথা শুনে মিতুলের মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। মেজাজ দেখিয়েই বললো,
“আমাকে কি তোমার মতো মদখোর মনে হয়?”

“যদি মদই না খেয়ে থাকো, তাহলে এমন কথা কেন বলছো? ওই মেয়েটার সাথে আমি নাচানাচি করলেই বা কী? শী ইজ লাইক অ্যা মাই ইয়াংগার সিস্টার। আমরা ছোট বেলা থেকে এক সাথে বড়ো হয়েছি। আমাদের এক সাথে নাচানাচি করা স্বাভাবিক।”

“তাহলে ওই ছেলেটার সাথে আমার কথা বলাটা কি অস্বাভাবিক?”

“অবশ্যই। না ছেলেটা তোমার ছোট ভাইয়ের মতো, আর না তোমরা এক সাথে বড়ো হয়েছো। সুতরাং এটা অস্বাভাবিকই।”

বলতে বলতে জোহান ইজি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মুখের ফেস প্যাক শুকিয়েছে কি না চেক করতে করতে ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কিছুটা দূর গিয়ে থামলো আবার। পিছন ফিরে মিতুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার চেহেরার অবস্থা ভালো নয়। আধমরা লাগছে দেখে। আমার সাথে এসো ফেস প্যাক লাগিয়ে দেবো তোমার মুখে। কাম, কাম।”
জোহান হাত দিয়ে মিতুলকে নিজের সাথে আসতে ইশারা করে আবার হাঁটতে লাগলো।

অপমানে মিতুল বাকরুদ্ধ হয়ে পাথরের ন্যায় বসে রইল। আধমরা? এতদিন এটা ওটা নিয়ে অপমান করে, শেষ পর্যন্ত চেহারা নিয়েও অপমান করলো?

_____________

দরজায় একের পর এক করাঘাত হচ্ছে। মিতুলের কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে যাচ্ছে করাঘাতের শব্দে। দরজার ওপাশের ব্যক্তিটি একের পর এক করাঘাত করেই চলেছে। থামার নাম গন্ধ নিচ্ছে না।
মিতুলের ঘুমটা একেবারেই ভেঙ্গে গেল। মিতুল মনে মনে একশটা কথা শোনালো দরজায় করাঘাত করা ব্যক্তিটিকে। তারপর এগিয়ে গেল দরজা খুলতে।
দরজা খুলতেই জোহানের ব্যস্ত কণ্ঠ শোনা গেল,
“তুমি এখনও রেডি হওনি? কী করছিলে এতক্ষণ? পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলে? পার্টিতে যাব কখন আমরা? পার্টি শেষ হলে?”

“পার্টি? কীসের পার্টি?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো মিতুল।

“এতদিন জানতাম তোমরা বাংলাদেশি মেয়েরা খুব বেশি বোকা। কিন্তু আজ জানলাম তোমরা বোকার পাশাপাশি খুব বেশি স্মৃতিভ্রষ্টও। বিকাল পাঁচটা নাগাদ তোমায় আমি ম্যাসেজ করে সব জানিয়ে দিলাম। কোথায় পার্টি, কী উপলক্ষে পার্টি, আমরা কখন যাব, সব। আর তুমি এখন আমায় জিজ্ঞেস করছো কীসের পার্টি? শোনো মাত্র দশ মিনিট সময় পাবে তুমি। এর ভিতর রেডি হয়ে সোজা গ্যারেজে চলে যাবে। ও কে?”

জোহান যাওয়ার জন্য এক পা বাড়ালেই, মিতুল বললো,
“দাঁড়াও।”

জোহান দাঁড়ালো। পিছন ফিরতেই মিতুল বললো,
“কী ভাবো কী তুমি নিজেকে? তুমি যা অর্ডার করবে সবাই তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে?
একটা ম্যাসেজ দিয়ে জানাবে পার্টিতে যাবে, আর আমি ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে তোমার সাথে চলে যাব? যাব না আমি। দশ মিনিট কেন, দশ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও গ্যারেজে উপস্থিত হবো না। আমার চেহেরা দেখে না আধমরা মনে হয়? তাহলে কেন এই আধমরা চেহারার মেয়েটিকে নিয়ে তুমি পার্টিতে যাবে? নিজের জীবন্ত, প্রাণবন্ত, সতেজ চেহারা নিয়ে একাই চলে যাও।”

বলে জোহানের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো মিতুল। দ্রুত পায়ে দরজার কাছে থেকে সরে এসে বিছানায় বসলো।
রাগে হাত পা নিশপিশ করছে। এখানে এসে অপমান আর মানুষের হুকুম কুড়াতে হচ্ছে ওকে। এত এত অপমান করতে জানে এরা! শেষ পর্যন্ত চেহারা নিয়েও অপমান করলো!

মিতুল একই জায়গায় স্থির বসে রইল অনেকক্ষণ। এর মাঝে দরজায় আবার করাঘাতের শব্দ হলো। মিতুলের মাথায় রক্ত উঠে গেল। আবার এসেছে বদমাইশটা? আসুক। খুলবে না এবার। নক করতে করতে মরে যাক ওখানে বসে।

“মিতুল, ওপেন দ্য ডোর…” ক্যামিলার কণ্ঠ কানে আসতে মিতুলের টনক নড়লো। দরজায় ক্যামিলা নক করছে? মিতুল দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ক্যামিলার হাস্যজ্জ্বল মুখটা দেখা গেল দরজায়।
ক্যামিলা বললো,
“দ্রুত রেডি হয়ে নাও। বাইরে বের হবো তোমাকে নিয়ে।”

“বাইরে?”

ক্যামিলা মাথা নাড়িয়ে বললো,
“হুম। কেন? যাবে না?”

মিতুল হেসে বললো,
“যাব না কেন, অবশ্যই যাব। গিভ মি জাস্ট ফিফটিন মিনিটস।”

“ও কে।”

ক্যামিলা মিতুলকে রেডি হওয়ার সময় দিয়ে চলে গেল।
পনেরো মিনিটের জায়গায় মিতুলের বিশ মিনিট লাগলো। মিতুল ছোট্ট করে একটা স্যরি বললো ক্যামিলাকে। ক্যামিলা বললো, কোনো ব্যাপার না।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছে ওরা। মিতুল ক্যামিলার পাশে বসে আছে। রাতে শহরটাকে যেন দিনের বেলা থেকে অধিক সুন্দর দেখাচ্ছে। বাহারি আলোর সাজে মাতোয়ারা হয়ে আছে পুরো শহর। গাড়ি অনেকক্ষণ চললো। টুকিটাকি কথা হলো ক্যামিলার সাথে। হঠাৎ করে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করলো ক্যামিলা।
মিতুল বলেই ফেললো,
“কী ব্যাপার গাড়ি থামালে কেন?”

“জোহান আসবে।”

মিতুলের চোখ কপালে উঠলো।
“জোহান আসবে মানে?”

“হ্যাঁ। জোহানই তো বললো তোমাকে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসতে। ও না কি তোমাকে নিয়ে পার্টিতে যেতে চেয়েছিল? তুমি না কি ওর সাথে রাগ করেছো, বলেছ পার্টিতে যেতে চাও না। সে জন্যই ও বললো যাতে আমি তোমাকে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসি। ও তোমার রাগ ভাঙ্গাবে এবং পার্টিতে নিয়ে যাবে।”

মিতুলের মস্তিষ্ক ফাঁকা লাগছে। জোহান এভাবে টেকনিক খাটিয়ে ওকে এখানে আনলো? মিতুল মুখে কিছু বলতে পারল না, ভিতরে ভিতরে রাগে ফুসলো জোহানের জন্য। মিতুলদের কারের সামনে একটা কালো কার এসে থামলো। মিতুল চেনে এই কার। এই কার জোহানের।
ক্যামিলা পাশ থেকে বলে উঠলো,
“আরে ওই তো জোহান এসে গেছে।”

গাড়ি থেকে জোহানকে বের হতে দেখা গেল। জোহানের গায়ে সাদা শার্ট, তার উপর নীল কটি। পরনে নীল জিন্স। জোহানকে দেখে মিতুলের ভিতরটা রাগে শেষ হয়ে যাচ্ছে। জোহান এসে মিতুলের সাইডের দরজাটা খুলে দিলো। মিতুলকে নামতে বললো।
মিতুল জোহানের দিকে তাকাচ্ছে না। জোহানের দিকে তাকাতে দু চোখ জ্বলে যাচ্ছে ওর।

জোহান আবারও বললো,
“মিতুল, বের হও কার থেকে।” জোহানের কণ্ঠ বেশ শান্ত শোনালো।

মিতুল আগের ন্যায় বসে রইল। জোহানের দিকে তাকালো না। জোহান মিতুলের রাগে ফুলো নাকটা দেখতে পাচ্ছে। মিতুল নিজ থেকে না নামার কারণে, জোহান মিতুলের হাত ধরে জোর পূর্বক টেনে নামালো মিতুলকে।
মিতুল হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইছে কিন্তু পারছে না। জোহান খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে।
ক্যামিলা গাড়ির ভিতর থেকে ওদেরকে সুন্দর একটি পার্টি ইনজয় করার শুভেচ্ছা জানিয়ে চলে গেল। জোহান ক্যামিলার ছুটন্ত গাড়িটার থেকে চোখ এনে মিতুলের দিকে তাকালো। মিতুলের চোখে রাগ, নাকেও রাগ। জোহান বললো,
“এত রাগ কোথা থেকে আসে তোমার?” জোহানের কণ্ঠ শান্ত।

মিতুল কিছু বললো না, শুধু দুই চোখে জ্বালা নিয়ে তাকিয়ে রইল।
জোহান একটু মিষ্টি হাসি উপহার দিলো মিতুলকে। মিতুলের কাছে ওই হাসি বিষের মতো মনে হলো। জোহান বললো,
“গেট ইন দ্য কার।”

জোহান মিতুলের হাত ধরেই কারের কাছে নিয়ে এলো। দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসিয়ে দিলো মিতুলকে। এতক্ষণে মিতুলের হাতটা জোহানের শক্ত হাতের বাঁধন থেকে মুক্তি পেল। জোহান দরজা বন্ধ করে দিলো। গাড়ির সামনে থেকে ঘুরে ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো। সিট বেল্ট বেঁধে লক্ষ্য করলো, মিতুল নিজের সিট বেল্ট বাঁধেনি। জোহান মিতুলের সিটবেল্ট বেঁধে দিলো।

“বাংলাদেশি মেয়েরা এত রাগী হয় সেটা আগে জানা ছিল না আমার।”
কথাটা বলতে বলতে জোহান গাড়ি ঘুরালো।

গাড়ির ভিতর মিতুল একেবারে নিশ্চুপ বসে রইল। ঠিক একটা পাথরের মতো। জোহান অনেক কিছুই বক বক করলো মিতুলের সাথে। কিন্তু মিতুলের কানে সেসব কিছুই ঢোকেনি। প্রায় পনেরো মিনিটের মধ্যে জোহান নিজের গন্তব্যে এসে পৌঁছলো। একটা বড়ো এপার্টমেন্টের পার্কিং লটে এসে গাড়ি থামালো। সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নামলো।
মিতুল নিজ থেকে নামলো না। জোহান গিয়ে নামালো। মিতুলের মুখে এখনও বেশ জোরদার রাগ দেখা যাচ্ছে। জোহান গাড়ি লক করে বললো,
“চলো।”

মিতুল জোহানকে অনুসরণ করে লিফটে এলো। জোহান নয় নাম্বার ফ্লোরের বাটন চাপলো। লিফট উপরে উঠছে। মিতুল আগের মতোই নিশ্চুপ। জোহানের থেকে অনেকটা দূরে সরে দাঁড়িয়েছে ও। জোহান মিতুলের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করলো,
“এভাবে কি চুপ করেই থাকবে তুমি? আমার বন্ধুরা তো ভাববে তুমি বোবা।”

জোহানের কথা কানে এলে মিতুল চোখ তুলে তাকালো। কী তেজ সেই তাকানোতে।
জোহান বললো,
“হেই তুলতুল, এমন করে তাকিয়ো না। এমন কঠিন চোখে কোনো মেয়ে তাকায় না আমার দিকে। তুমি আমার জীবনের ইতিহাস পাল্টে দিয়ো না।”

“কোথায় যাচ্ছি আমরা?” মিতুলের পাথুরে মুখটাতে কথা ফোঁটে। ভীষণ রুক্ষ কণ্ঠ।

“এ কি, বিকেলেই তো বললাম তোমাকে! তাছাড়া আসার আগেও তো বললাম পার্টিতে যাচ্ছি আমরা।”

“কী রকম পার্টি?”

“ম্যাসেজেই তো তোমাকে সব বললাম। তুমি কি ম্যাসেজ দেখোনি?”

“না।”

জোহানের বিশ্বাস হলো না। ও দ্রুত মোবাইল বের করে নিজের মোবাইল চেক করলো।
না ম্যাসেজ সিন হয়নি। জোহান এটা আগে একেবারেই খেয়াল করেনি।
জোহান মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে রেখে বললো,
“এটা আমাদের ফ্রেন্ডস পার্টি। আমরা অনেক সময় এরকম পার্টি করে থাকি। আমার বন্ধু রিকার্ডোর ফ্ল্যাটেই সব সময় পার্টি হয়। রিকার্ডো এই অ্যাপার্টমেন্টের নয় নম্বর ফ্লোরে থাকে।”

“নিজেদের ফ্রেন্ডস পার্টিতে আমাকে আনলে কেন?”

জোহানকে অপ্রস্তুত দেখালো।
“এ-এনেছি আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই।”

মিতুল আর কথা বাড়ালো না। নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে দাঁড়িয়ে রইল। লিফট নয় নম্বর ফ্লোরে এসে থামলো।
জোহানকে অনুসরণ করে রিকার্ডোর ফ্ল্যাটের দরজায় এসে থামলো মিতুল।
জোহান দরজায় নক করতে গিয়ে আবার থামলো। মিতুলের দিকে তাকালো। মিতুলকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখলো। মিতুলের পরনে গ্লো পিঙ্ক কালারের ফোরাক, কালো সোয়েটার, জিন্স আর গলায় ওড়না পেঁচানো। কাঁধে একটা সাইড ব্যাগ ঝুলছে। চুল খোলা। পাথরের একটা ক্লিপ শোভা পাচ্ছে চুলে। কানে ডায়মন্ডের ছোট দুল। মিতুলকে ভালো করে এক ঝলক দেখে নিয়ে দরজায় নক করলো জোহান। সঙ্গে সঙ্গেই দরজাটা খুলে গেল। একজন চঞ্চল মুখের যুবক ছেলে জোহানকে হাগ করলো। তারপর মিতুলকে লক্ষ্য করে বললো,
“হাই! ইউ মিটুল, রাইট?”

মিতুল অবাক। ছেলেটা ওর নাম জানলো কীভাবে? মিতুল জোহানের দিকে তাকালো। জোহান বললো,
“হি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড রিকার্ডো।”

মিতুল রিকার্ডোর দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“হ্যালো! নাইস টু মিট ইউ।”

রিকার্ডো ওদেরকে ভিতরে আসার তাগিদ করলো। বসার রুমে এসে মিতুল দেখলো অনেক ছেলে মেয়ে বসে আছে এখানে সেখানে। অনেকে এগিয়ে এসে জোহানকে হাগ করলো। এমনকি একটা মেয়েও হাগ করলো।
মিতুলকেও হাগ করলো সেই মেয়েটা।
মিতুল অবাক যে সবাই ওর নাম আগে থেকেই জানে। মিতুল হাসি মুখে সবার সাথে পরিচিত হলো। অনেক সময় নিয়ে আড্ডা চললো। খাওয়া দাওয়া হলো। কম বেশি সবাই ড্রিংক করলো। শুধু মিতুল বাদে। ওর জন্য কয়েকটা ফলের রস একসাথে মিক্সড করে বিশেষ একটা পানীয় তৈরি করা হয়েছিল, সেটা পান করলো ও। জোহানের ফ্রেন্ডস গুলোকে বেশ পছন্দ হলো মিতুলের। সবাই খুব সহজেই মিশে গেছে ওর সাথে। এদের মধ্যে এক জোড়া এনগেজড কাপলও আছে। জুটিটাকে বেশ ভালো লেগেছে মিতুলের। জেমস এবং সারা। জোহানের প্রত্যেকটা ফ্রেন্ডই খুব ভালো এবং মিশুক। মিতুল ভাবতে পারছে না জোহানের ফ্রেন্ডস গুলো এত ভালো, আর জোহান কি না একটা বদমাইশ। এই ফ্রেন্ডস গুলোর সাথে থেকেও একটু ভদ্রতা শিখলো না!
মিতুল এর মাঝে আরও একটা ব্যাপার খেয়াল করেছে। সেটা হলো জোহানের এক মেয়ে ফ্রেন্ড, নাম লেনি। মিতুলের মনে হলো মেয়েটা জোহানকে অনেক পছন্দ করে। হয়তো কখনও জোহানকে বলেনি সে কথা। কিন্তু না বললেও জোহানের বোঝা তো উচিত। কিন্তু গাধাটাকে দেখো, ও এই লেনির সাথেই বেশি দুষ্টমি করে। এতটাই দুষ্টমি করে যে, লেনির অনুভূতি গুলোই হয়তো ওর দুষ্টমির নিচে চাপা পড়ে যায়।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here