চেরি ব্লসমের সাথে এক সন্ধ্যা পর্ব: ২৮

0
955

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ২৮
____________

মিতুল রুমের দরজা বন্ধ করেই ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসে পড়ে ফ্লোরে। কষ্ট হচ্ছে বুকে। আজকে যে কষ্ট পেল, তা জীবনে আর কখনো পায়নি। আজকে যা দেখলো, যা শুনলো, আর যা জানলো, তাতে ওর হৃদয়ে এক মহাকাশসম হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। ওর পছন্দের মানুষটি আসলে সবসময় অন্য কারো ছিল। অন্য একটি মেয়ের ফিয়ন্সে সে। এসব ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। হৃদয়ের ক্ষতগুলো আরও বিস্তৃত হয়। কার্ল একটি ভুল ছিল ওর জীবনে। ভুল ছিল কার্লের সাথে দেখা হওয়া। ভুল ছিল কার্লের প্রতি ভালো লাগা সৃষ্টি হওয়া। সবই ভুল ছিল। আজকে কার্ল ডেকে নিয়ে এমন একটা সত্য জানাবে জানলে, কার্লের কাছে যাওয়ার জন্য আর পা মাড়াতো না জীবনে।
ডেকে নিয়ে নিজেদের লাভ স্টোরি শোনালো ওকে? এতটা পাষাণ হলো কী করে কার্ল?
সাত বছরের প্রেম কার্লের। এক বছর হয়েছে এনগেজড হয়েছে ওদের। খুব শীঘ্রই বিয়ে। কার্ল-অলিভারের বিয়ে। ও থাকবে সেই বিয়েতে অতি সামান্য এক অথিতি। যে অথিতির মূল্য খুবই কম। মিতুলের কান্না পাচ্ছে। হঠাৎ অভিমান হলো কার্লের প্রতি। কার্ল আগে কেন বললো না ও অলিভারকে ভালোবাসে? কেন বললো না যে ওর এনগেজড হয়ে গেছে অনেক আগেই? কেন বললো না এসব?
কার্লের প্রতি অভিমান করেও আবার অভিমানের খেই হারিয়ে ফেললো মিতুল। কার্লের উপর অভিমান করার অধিকার তো ওর নেই। কার্লের কী দোষ? কার্ল কি জানতো যে ও কার্লকে পছন্দ করে? কখনো বলেছে ও? তাহলে? কার্ল তো নিজের একজন বন্ধু ভাবতো ওকে, এর বেশি কিছু নয়। ওর মনে যদি লুকানো অনুভূতি থাকে, তাহলে সেটা কার্ল জানবে কীভাবে? কার্লের তো সেটা জানার কথা নয়। কার্লের তো কোনো ভুল নেই, কোনো দোষ নেই। দোষ তো নেই ওরও কোনো। সব দোষ জোহানের। জোহান যদি প্রথমে ওকে কার্লের রেস্টুরেন্টে না নিয়ে যেত, তাহলে এমন ঘটতো না। ওর হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হতো না। ওর সাথে এমনটা হওয়ার জন্য দায়ী একমাত্র জোহান। জোহান ওই রেস্টুরেন্টে না নিয়ে গেলে ওর জীবনে কার্লের সাথে দেখা হতো না। পরিচয় হতো না। কার্লের প্রেমে পড়তো না। এমন একটা পরিস্থিতির সম্মুখীনও হতে হতো না কোনো দিন!
মিতুলের সব অভিযোগ একসূত্রে এবার জোহানের উপর উঠলো। তবে জোহানের প্রতি কেন যেন ওর রাগ হচ্ছে না।
ওর অসহ্য লাগছে এখন সবকিছু। এখানে বসে থেকে ঠিক ওর কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। খুবই নিস্তব্ধ, নিরালা একটা জায়গা দরকার ওর এখন। যেই জায়গায় ও ওর মনের কষ্টগুলো মেলে বসবে সব। কোথায় পাবে এমন একটা জায়গা?

__________

বিকেলের শেষ ভাগ চলছে। গাছের ডাল পালার আড়াল থেকে এখনও চিকচিকে রোদ উঁকি দিচ্ছে। জোহান শেষ বিকেলের চিকচিকে রোদ টুকুকে গায়ে জড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে টাইম হাউজের দিকে। হাতে আছে একটা বিয়ারের বোতল। চলতে চলতে আনমনে চুমুক দিচ্ছে বিয়ারে। জঙ্গলের ওই প্রান্তে দূরে একজন প্রতিবেশীকে নজরে পড়ছে। জোহান একটু ভালো করে লক্ষ্য করতে বুঝলো মি. মাইকেল। জঙ্গলে হাঁটাহাঁটি করছেন বোধহয়।
জোহান বাঁক নিলো বামে। নিজের টাইম হাউজ চোখে পড়ছে। আরও একটু হেঁটে আসতেই জোহানের মনে হলো ওর টাইম হাউজের সামনের সিঁড়িতে কেউ বসে আছে। প্রথমে ভেবেছিল ক্যামিলা হবে। পরে দেখলো ক্যামিলা নয়। মিতুল! মিতুলকে দেখে জোহানের বিস্ময়ে ভ্রুকুটি হলো। অসময়ে মিতুল ওর টাইম হাউজে?
মিতুলের সামনে এসে একটু নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালালো জোহান। মিতুলের মুখ কেমন নেতিয়ে পড়েছে। ও এসেছে টের পেয়েও একবার চোখ তুলে তাকায়নি।
জোহান মিতুলের এমন দশার মানে বুঝলো না। ঘণ্টা দুয়েক আগে তো শাড়ি পরে খুশিতে উড়তে উড়তে বাইরে গিয়েছিল। এখন আবার কী হলো? বাড়ি ফিরলো কখন? ড্রেস চেঞ্জ করলো কখন? আর এখানেই বা আসলো কখন?

মিতুলের পরনে ফতুয়া এবং প্লাজো। গলায় একটা ওড়না প্যাঁচানো। মুখে এখনও বাইরে বেরোনোর সময়কার মেকআপ। হাতে শাড়ির সাথে ম্যাচিং সেই চুড়ি।

জোহান মিতুলের পাশে এসে বসে বললো,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

মিতুল জোহানের দিকে না তাকিয়ে না বোধক মাথা নাড়িয়ে বললো,
“নাথিং।”

জোহান আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। মিতুলের চেহারা দেখে খুব একটা ভালো লাগছে না ওর। জোহান চুপচাপ বোতলে সীপ দিচ্ছিলো।
একসময় শুনতে পেল মিতুল বলছে,
“জানো জোহান, কার্লের না গার্লফ্রেন্ড আছে!”
মিতুলের কণ্ঠ আনমনা। জোহানকে কী বলতে কী বলছে নিজেরই খেয়াল নেই। এখানে ওর মনের কষ্ট বলার মতো মানুষ নেই দেখে জোহানকেই শেষ পর্যন্ত বেছে নিলো ওর আনমনা মন।

জোহান বোতলে সিপ দিয়ে নির্লিপ্তকার ভাবে বললো,
“হুম, জানি আমি। তো কী করবো এখন আমি? সেলিব্রেট করবো?”

মিতুল প্রথম নিজের নিরাশ চোখ জোড়া জোহানের উপর ফেললো।
“জানো? কীভাবে?”

“ওকে ঘুরতে দেখেছিলাম একটা মেয়ের সাথে। শপিং মলে। তখন জানতাম না মেয়েটি সম্পর্কে কী হয়। তোমার কথা শুনে মনে হলো, ওই মেয়েটাই গার্লফ্রেন্ড হবে।”
জোহানের জানার মাধ্যম ভিন্ন। সেই মাধ্যমটা মিতুলকে বললো না। মিথ্যা বলেছে মিতুলকে। জোহান যে মিথ্যা বললো মিতুল সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পেল না।

মিতুল চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
“আমাকে বলোনি কেন?”

“তোমাকে বলবো কেন? কার্ল কার সাথে ঘুরছে, না ঘুরছে তা নিয়ে তোমার এত মাথা ব্যথা কীসের?”

মিতুল প্রতিউত্তরে কিছু বললো না। বড়ো করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
“তুমি একজন বড়ো অপরাধী জোহান। তোমার করা অপরাধে আজ আমাকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হলো!”

“কী?” গলায় রাজ্যের বিস্ময় ঢেলে প্রশ্ন করলো জোহান।

মিতুল আর কিছু বললো না। আবারও জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে একেবারে নীরব হয়ে গেল।

মিতুলের নীরব, চুপসানো মুখটা দেখে হাসি পাচ্ছে জোহানের। এই তাহলে আসল কারণ? বিরহের সুরে ধরেছে মিতুলকে? জোহান মনে মনে হেসে চুমুক দিলো বোতলে।
কিছু সময় নীরবে কেটে যায়। মিতুল কষ্টভরা নিস্তেজ মন নিয়ে এক ধ্যানে বসেছিল। হঠাৎ আবার পাশে জোহানের দিকে তাকালো। জোহানের হাতের বোতলটা দেখে বললো,
“কী খাচ্ছ তুমি? বিয়ার?”

“হুম। কেন জিজ্ঞেস করছো? তোমারও খেতে মন চাইছে? বিয়ার খাবে তুমি?”

সত্যি কথা বলতে মিতুলের খেতে মন চাইছিল। কষ্ট ভুলে থাকতে উপকারে দিতো বোধহয়। কিন্তু ও বিয়ার খাওয়ার মতো এত স্পর্ধা দেখাতে পারে না। খাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও মিতুলের বলতে হলো,
“না, খাবো না। বিয়ার খেয়েছি জানলে বাংলাদেশে ফিরে আমার স্থান আর ঘরে হবে না। ফুটপাতে দিন গুনতে হবে আমার।”

জোহান হেসে ফেললো।
“কেন? তোমার ফ্যামিলি কি তোমার সাথে খুব কঠোর?”

মিতুলের মুখে বিরক্ত হওয়ার একটা চিত্র ফুঁটে উঠলো। বললো,
“বেশি কথা বলো না জোহান। আমি এখন তোমার সাথে কথা বলার মুডে নেই।”

বলে আবারও নিজের কষ্টগুলো পরখ করতে ব্যস্ত হলো মিতুল।

___________

দুটো দিন পার হয়ে গেল। এই দুই দিনে বলতে গেলে মিতুল প্রায় নীরব ছিল। জোহান মাঝে মাঝে উষ্কানিমূলক কথাবার্তা বলে উস্কে দিতে চাইতো ওকে। কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। কার্লের দুঃখে এখন জোহানের উষ্কানিমূলক কথাগুলোও কানের উপর দিয়ে যায় বলতে গেলে।
এরই মাঝে আবার নায়াগ্রা ফলস দেখতে যাওয়ার কথা উঠেছে। মিতুল এখন নায়াগ্রা ফলস দেখতে যাওয়ার মুডে নেই। কেমন উদাস উদাস লাগে সারাদিন। তাও নায়াগ্রা ফলস দেখতে যাওয়ার সাথে হ্যাঁ মিলিয়েছে। এবারে নায়াগ্রা ফলস দেখতে যাওয়ার ট্রিপে আর পুরো ফ্যামিলি যাবে না। যাবে কেবল ও এবং রেশমী আন্টি।

মিতুলের মোবাইলটা অনবরত বেজে যাচ্ছে, কিন্তু তুলতে ইচ্ছা করছে না। জোহানের নামটা দেখে তুলতে আরও বেশি অনিচ্ছা। এই তিনবার হলো কল দিয়েছে। আগের কল দুটো রিং হতে হতে কেটে গেছে। এবারও তাই হলো। কল রিসিভ করলো না মিতুল। এরপর দরজায় করাঘাতের শব্দ শুরু হলো। মিতুল না দেখেও বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলতে পারবে জোহান নক করছে। মিতুল গিয়ে দরজা খুললো না। কম্বলটা ভালো করে গায়ে টেনে নিয়ে বসে রইল।

ওদিকে জোহান অতিষ্ট কণ্ঠে বলে চলেছে,
“মিতুল, ওপেন দ্য ডোর। ওপেন দ্য ডোর ক্যুইকলি। হেই, ইউ ক্যান নট হীয়ার? ওপেন দ্য ডোর।”

মিতুল এরপরও খুললো না। জোহান এবার হুমকির সুরে বললো,
“দরজা খোলো। নয়তো দরজা ভেঙ্গে ঢুকবো কিন্তু। আর ঢুকলে দরজার সাথে সাথে তোমার নাকও ভেঙ্গে দেবো। খোলো দরজা।”

মিতুল জোহানের উদ্দেশ্যে উচ্চৈঃকণ্ঠে বললো,
“যা পারো তাই করো। আই ডোন্ট কেয়ার।”

“তাহলে তুমি দরজা খুলবে না?”

“না।”

“ঠিক আছে। আমি তোমার মমের কাছে কল করবো। তাকে বলবো, ম্যাম! আপনার মেয়ে খুবই অবাধ্য, বেয়াদব। সারাক্ষণ মানুষের সাথে বেয়াদবি করে বেড়ায়। ও কিছুতেই এখানকার মানুষের সাথে ভালো আচরণ করে না। বিশেষ করে এই আমি। আমি সবচেয়ে বেশি খারাপ আচরণের শিকার ওর। আপনি ওকে …”

জোহান এই পর্যন্ত বলতেই রুমের দরজা খুলে গেল।
মিতুল দরজা খুলেই সন্দ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে উঠলো,
“তুমি আমার মায়ের ফোন নাম্বার পেলে কোত্থেকে?”

“ওনার ফোন নাম্বার নেই তো আমার কাছে। তবে হ্যাঁ, জোগাড় করতে সময় লাগবে না। এটা আমার কাছে সেকেন্ডের ব্যাপার।”

“ব্ল্যাকমেইল করছো তুমি আমাকে?”

“তোমার বুঝি তাই মনে হচ্ছে? ঠিক আছে, ধরে নাও এটা ব্ল্যাকমেইল। তোমাকে মাত্র তিন মিনিট সময় দেবো। এর মাঝে রাস্তায় উপস্থিত হবে। নয়তো…উঁহু, তোমার মমের কাছে কল করবো না। নিজেই তোমার শাস্তির ব্যবস্থা করবো। প্রথমে নাক, তারপর হাত, তারপর পা, সবশেষে গলা কেটে ফেলবো!”

“তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছ? গলা কাটার হুমকি ?”

“শুধু গলা বলছো কেন? সাথে নাক, হাত, পা যাবে কোথায়? মাত্র তিন মিনিট। এর মাঝে না এলে শিরশ্ছেদ করবো তোমার।”

বলে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে নিলো জোহান। এরপর স্মার্ট একটা লুক দিয়ে চলে গেল ।

মিতুল ছয় মিনিটের মাথাতেই বাড়ির সামনে রাস্তায় এলো। রাস্তার দুই পাশের ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলছে। জোহানের গলা কাটার হুমকিতে ভয় পেয়ে এসেছে সেটা নয়। ও এসেছে ওর মায়ের জন্য। জোহানকে কোনো বিশ্বাস নেই। মায়ের ফোন নাম্বার জোগাড় করে ওর সম্পর্কে আজেবাজে কথা লাগাতে একটুও বাঁধবে না জোহানের।
জোহান পার্কিং সাইডে পার্ক করা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে মোবাইল ঘাটছিল। মিতুল কাছে আসতেই মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে রেখে বেশ আমদপূর্ণ গলায় বললো,
“সেই তো আমার হুমকিতে ভয় পেয়ে চলেই এলে তুলতুল।”

মিতুলের রাগ হলেও সেটা প্রকাশ করলো না।
শান্ত ভাবেই জিজ্ঞেস করলো,
“এখানে আসতে বললে কেন?”

“তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাব তাই।”

“কোথায়?”

“তোমরা বাংলাদেশি মেয়েরা বড্ড বেশি প্রশ্ন করো। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসো।”
কড়া আদেশ দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো জোহান। মিতুলের রাগ হচ্ছে। এমনিতেই কার্লের শোকে কাতর ও, এর মাঝে জোহানের এমন আচরণ ওর কাছে মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

কফি শপে নিয়ে এসেছে জোহান।
মিতুল বোঝে না, জোহান রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে ওকে নিয়ে যায়, আজকে আবার কফিশপেও নিয়ে এসেছে। কোথাও খেতে গেলেই ওকে কেন আনে নিজের সাথে?

কফি শপের ভিতরে প্রায় টেবিলগুলোই লোকজনে আটক। এর মাঝে দুই তিনটা টেবিল ছাড় আছে শুধু। মিতুল জোহানের সাথে একটা টেবিলে গিয়ে বসলো। জোহান এখান থেকেই উচ্চৈঃকণ্ঠে নিজের অর্ডার জানালো। দুটো কোল্ড কফি অর্ডার করলো।
মিতুলের বিরক্ত লাগছে। এমনিতেই মন ভালো না, তার উপর এই কফি শপটা ভালো লাগেনি ওর। এর মাঝে আরও একটু বিরক্ত এড করলো জোহান। মোবাইলে একটা কল আসতেই ও কল রিসিভ করে ওয়াশ রুমের দিকে গেছে। মিতুলকে একা ফেলে রেখে গেল দেখে মিতুলের রাগ বাড়তে শুরু করেছে। নিজের সাথে এনে একা ফেলে রেখে একেক দিক চলে যায়!

দশ মিনিট কেটে গেল অথচ জোহানের আসার কোনো খবর নেই। মিতুলের মেজাজ চড়াও হচ্ছে। কার সাথে এত কথা বলছে? সেই নির্লজ্জ মেয়েটার সাথে? নির্লজ্জ মেয়ে মানে, জোহানকে সেদিন জড়িয়ে ধরা মেয়েটির কথা বোঝালো। হবে ওই মেয়েটাই। মেয়েটির সাথে তো জোহানের গলিত ভাব একেবারে। মেয়েটির সাথে কথা বললে যে এত তাড়াতাড়ি ওর কথা শেষ হবে না, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক ব্যাপারটি মিতুলকে অস্বাভাবিক করে তুলছে উচ্চ মাত্রায়। নিজের রাগ সংবরণ করাই কঠিন হয়ে পড়ছে ওর জন্য। জোহান কি ওকে মানুষ বলে মনে করে না? যে সময় ইচ্ছা নিজের সাথে আনবে, একা ফেলে রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উধাও থাকবে! কী পেয়েছে কী?
দিনকে দিন…

“মিটুল!” একটি পুরুষালি কণ্ঠের ডাকে মিতুলের ভাবনায় ছেদ পড়লো। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখলো কালো চুলের এক কানাডিয়ান ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটির মুখ হাস্যজ্জ্বল। মিতুলের চেনা চেনা লাগছে ছেলেটিকে। কোথায় যেন দেখেছে! কোথায় দেখেছিল?

কালো চুলের ছেলেটা বুঝতে পারলো মিতুল চিনছে না তাকে। তাই সে নিজেই স্মরণ করিয়ে দিলো।
“আরে মিটুল, আমাকে চিনছো না তুমি? এটা আমি। ফ্রেডি। জায়িনের বাড়িতে দেখা হয়েছিল। মনে নেই?”

মিতুলের এবার মনে পড়লো। মিতুল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“ওহ, হ্যাঁ হ্যাঁ। আমার মনে পড়েছে তোমাকে!”

মিতুল ফ্রেডিকে চিনতে পেরেছে বলে ফ্রেডি আনন্দিত হয়ে মিতুলকে হাগ করার জন্য এগিয়ে এলো।

সামনের বীভৎস দৃশ্য দেখেই জোহানের পা দুটো জায়গাতেই স্থির হয়ে গেল। চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পেল একটা ছেলে মিতুলকে জড়িয়ে ধরেছে!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here