চেরি ব্লসমের সাথে এক সন্ধ্যা পর্ব: ৩৮

0
1355

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৩৮
____________

আজকে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলো মিতুল। বাড়ির কেউ তখনও ওঠেনি। মিতুল চুপি চুপি ক্যামিলার রুমে গিয়ে ক্যামিলাকে জাগালো। ক্যামিলার সাহায্য নিয়ে নিজ হাতে খাবার তৈরি করলো। রান্না মোটামুটি ভালোই জানে ও। রান্না করেছে মূলত জোহানের জন্য। রাতেই ওর মাথায় হঠাৎ জোহানকে রান্না করে খাওয়ানোর ভূতটা চেপেছিল। কাল রাতে বোধহয় কিছু খায়নি বেচারা জোহান। জোহানের জন্য ওর বড্ড মায়া বেড়ে গেছে কালকের পর থেকে। মায়া করে জোহানের জন্য রান্না করেছে ও। বাড়ির সবাই জেগে গেলেও কেউ টের পেল না ও রান্না করেছে। সবাই ভাবছে ক্যামিলা রান্না করেছে। রান্না শেষ হলে মিতুল দ্রুত খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়লো জোহানের টাইম হাউজের উদ্দেশ্যে।
জায়িন বারান্দার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট দেখতে পেল মিতুল জঙ্গলে ঢুকছে।

খুব খুশি মনে খাবার নিয়ে জোহানের টাইম হাউজের দিকে যাচ্ছে মিতুল। জোহানকে নিজের হাতের রান্না খাওয়াবে ভাবতেই মনে অন্যরকম প্রশান্তি হচ্ছে। কালকে রাতে জোহানের টাইম হাউজে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ক্যামিলাও গিয়েছিল টাইম হাউজে। ও আর ক্যামিলা অনেক সময় ধরে টাইম হাউজে থাকার পর বাড়িতে ফিরেছিল। জোহান ফেরেনি। টাইম হাউজেই ছিল রাতে।
মিতুল টাইম হাউজে এসে দরজা বন্ধ দেখলো। ভেবেছিল ভিতর থেকে লক করা। কিন্তু দরজায় মৃদু ঠ্যালা দিতেই দরজা খুলে যায়। মিতুল হাসি হাসি মুখে প্রবেশ করলো ঘরের ভিতরে। বেড রুম থেকে জোহানের কণ্ঠ ভেসে আসছে। সেই সাথে সাদাত আঙ্কলের। মিতুল আর এক পা’ও সামনে বাড়াতে পারলো না। দরজা থেকে মাত্র দুই কদম সামনে এগিয়ে ছিল। সেই দুই কদমেই থেমে গেল। সাদাত আঙ্কল এখানে উপস্থিত! না, না অসম্ভব। জোহানের জন্য ও খাবার নিয়ে এসেছে সেটা কিছুতেই সাদাত আঙ্কলের সামনে প্রকাশ করতে পারবে না। মিতুল তড়িৎ গতিতে খাবারের ট্রে নিয়ে বেরিয়ে এলো টাইম হাউজ থেকে। যে খাবার নিয়ে এসেছিল, তা আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাবে বাড়িতে। কিছুতেই সাদাত আঙ্কলের সামনে পড়বে না ও।

জোহানের চোখ বেড রুমের জানালা থেকে বাইরের দিকে পড়তেই দেখলো মিতুল তড়িঘড়ি করে রাস্তা ধরে বাড়ির দিকে যাচ্ছে।
জোহান বেড রুমে বসেই উচ্চৈঃকণ্ঠে ডেকে উঠলো,
“হেই তুলতুল!”

মিতুল জায়গাতেই থমকে গেল। জোহানের ডাক! জোহানের কেন ডাকতে হবে ওকে? এখান থেকে চুপিচুপি চলে যেতে চাইলেই জোহান টের পেয়ে যায় কীভাবে? মিতুল জোহানের কণ্ঠ অনুসরণ করে জানালার দিকে তাকালো। জোহানকে জানালার কাছেই দাঁড়ানো দেখলো।
জোহান আবারও উচ্চৈঃকণ্ঠে বললো,
“চলে যাচ্ছ কেন তুমি? ভিতরে এসো।”

মিতুল দিগভ্রান্ত অবস্থায় পড়লো। কিছুতেই চায়নি এখন এখানে এভাবে সাদাত আঙ্কলের সামনে পড়তে। কিন্তু এই জোহান সেটা হতে দিলো না। এখন এখান থেকে চলে গেলে কী ভাববে সাদাত আঙ্কল? মিতুল উপায়ন্তর না পেয়ে আবার টাইম হাউজে ফিরে এলো। খাবার নিয়ে একেবারে জোহানের বেড রুমে প্রবেশ করলো। জোহান বেডে হেলান দিয়ে আধ শোয়া অবস্থায় আছে। আর ওর পাশে বসে আছে সাদাত আঙ্কল। মিতুলের অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ হচ্ছে। সাদাত আঙ্কল কী ভাববেন এখানে এসেছে বলে?
জোহান মিতুলের হাতের ট্রে দেখে বললো,
“হোয়াট ইজ দিজ?”

মিতুল এবার আরও অস্বস্তির গভীরতায় ডুবে গেল। জোহানের কি এই প্রশ্ন না করলেই হতো না! মিতুল তোতলাতে তোতলাতে বললো,
“খা-খাবার এনেছিলাম। ভাবলাম রাতে কিছু খাওনি তাই…”
মিতুল ঠিক করে কিছু বলতেই পারলো না।

জোহান কেমন করে একটু হাসলো যেন। তারপর ড্যাডকে বললো,
“তুমি জানো ড্যাড, মিতুল কিন্তু খুব ভালো ট্রিটমেন্ট করতে পারে। আই থিংক ও একজন ডক্টর হলে খারাপ হতো না।”

মিতুলের হৃদয় কেমন ছ্যাত করে উঠলো। জোহান কি ওর ড্যাডকে বলে দেবে কালকে ও জোহানের প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট করেছিল? ইশ না! ও চায় না এটা। জোহান যেন কিছু না বলে ওর ড্যাডকে।
জোহান ট্রিটমেন্টের ব্যাপারে বললো না আর কিছু। হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা ড্যাড, মম কি খুব বেশি রেগে আছে?”

সাদাত আঙ্কল বললেন,
“না, খুব বেশি নয়।”

আরও কিছু টুকিটাকি কথা হলো বাবা, ছেলের মাঝে। মিতুলের এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে একদমই ভালো লাগছিল না। বাবা, ছেলের কথার মাঝে নিজেকে উটকো ব্যক্তি মনে হয়েছে ওর। সাদাত আঙ্কলের অফিসে যেতে হবে বলে অল্পতেই চলে যান জোহানের টাইম হাউজ থেকে।

জোহান মিতুলকে সটান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
“আমার জন্য খাবার নিয়ে এসে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে? খাবার কি আমাকে খাওয়াতে এনেছো? না কি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে বলে এনেছো?”

“তোমাকে খাওয়াবো বলেই এনেছি।”

মিতুল জোহানের কাছে এসে বেডের উপর রাখলো ট্রে।
জোহান দেখলো মিতুল ওর জন্য চিকেন পাৰ্ম এবং লাসানা নিয়ে এসেছে।
মিতুল বললো,
“তোমার জন্য নিজ হাতে তৈরি করেছি এগুলো।”

জোহান একটু অবাক হলো।
“তুমি?”

মিতুল মাথা নাড়লো। জোহানের দিকে চিকেন পার্মের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
“খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে।”

“হঠাৎ করে আমার জন্য তুমি নিজ হাতে খাবার তৈরি করেছ যে, কারণ কী?”

মিতুল একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। কিন্তু দ্রুতই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলো।
“এমনিই ইচ্ছা হলো তাই।”

জোহান একটু বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো,
“এমনিই?”

“এমনি নয়তো কী? খাবার বানানোর পেছনে আবার কোন কারণ থাকবে? দোষ হয়ে গেছে আমার খাবার বানানোয়? ঠিক আছে, তাহলে দাও নিয়ে চলে যাচ্ছি। আর আমি তো চলেই গিয়েছিলাম। তুমিই তো আবার ডাকলে।”

“না ডাকলে জানতাম কী করে যে তুলতুল আবার আজকাল আমার জন্য নিজ হাতে খাবার তৈরি করছে? ডাকলাম বলেই তো জানতে পারলাম। বাই দ্য ওয়ে, তুমি আমার জন্য খাবার নিয়ে এসে, তা আমাকে না খাইয়ে আবার পালিয়ে যাচ্ছিলে কেন সে সময়? ইদানিং এত পালানো শুরু করলে কেন তুমি? কালকে বিকেলেও দেখলাম তুমি আমার টাইম হাউজে এসে আবার পালিয়ে যাচ্ছ। আজকেও দেখলাম তাই। কেন? পালাও কেন তুমি?”

“দেখো জোহান, আমি কোথায় যাব, কী করবো, না করবো এগুলো একান্ত আমার নিজের ব্যাপার। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার তোমার নেই। সুতরাং এগুলো নিয়ে প্রশ্ন না করলেই খুশি হবো আমি।”
মিতুলের মাঝে একটু রাগের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়।

জোহান আর কথা বাড়ালো না মিতুলের সাথে। চিকেন পাৰ্ম নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালেই, মিতুল আবার নিয়ে নিলো প্লেটটা। বললো,
“আমি কেটে দিচ্ছি।”

মিতুল চিকেন পাৰ্ম পিস করে কেটে দিলো।
জোহান কাঁটা চামচ দিয়ে এক পিস মুখে পুরলো।
মিতুল প্রশংসা শোনার জন্য বসে আছে। ও জানে ওর বানানো চিকেন পাৰ্ম সুস্বাদু হয়। ভাইদের কাছ থেকে কত প্রশংসা শুনেছে চিকেন পাৰ্ম নিয়ে!
মিতুল মনে মনে আকুলতা নিয়ে বসে রইল। সময় কেটে গেল। কিন্তু জোহানের থেকে কোনো প্রশংসা এলো না। মিতুলের মাঝে রাগ রাগ ব্যাপারটা বেড়ে উঠছে। জোহান এখনও কেন প্রশংসা করছে না? মিতুল আর ধৈর্য ধরতে পারলো না। কাঠ গলায় জোহানকে বললো,
“আমার তৈরিকৃত খাবার কি খুব খারাপ হয়েছে?”

“না, একেবারে খারাপ হয়নি। মোটামুটি ভালোই হয়েছে।”

মিতুল গর্জে উঠলো,
“মানে? ‘একেবারে খারাপ হয়নি’, ‘মোটামুটি ভালোই হয়েছে’ মানে কী এসবের? তুমি এটা বোঝাতে চাইছো যে, আমার বানানো খাবার ভালো হয়নি?”

মিতুল জোহানের কিছু বলা পর্যন্ত অপেক্ষা করলো না। বসা থেকে দাঁড়িয়ে নিজেই ফের বলে উঠলো,
“হাউ ডেয়ার ইউ! আমার বানানো খাবারের বদনাম করো তুমি? জানো কত মানুষ আমার রান্নার প্রশংসা করেছে? আমার মা, আমার আব্বু, আমার ভাইয়েরা, আমার কাজিনরা, আমার সকল আত্মীয় স্বজনরাই আমার রান্না খেয়ে প্রশংসা করেছে। আর তুমি আমার রান্নার বদনাম করছো?”

“তারা তো তোমার রিলেটিভস। সে জন্য তোমাকে মিথ্যা করে হলেও…”

“জোহান…” মিতুল তীব্র ক্ষোভে চিৎকার করে উঠলো।

“কী? যেটা সত্যি সেটাই তো বলছি।”

মিতুল আক্রোশিত হয়ে বাংলাতে বলে উঠলো,
“তুমি জীবনেও শুধরাবে না আসলে। বদমাইশ, বদমাইশই থেকে যাবে। তোমার পুরো শরীর জুড়েই শয়তানিপনা কিলবিল করছে। তোমাকে পুকুরে চুবিয়ে মারার ইচ্ছাটা চলে গিয়েছিল আমার। কিন্তু সেটা যেতে যেতেও হুট করে ফিরে এসেছে আবার। তোমাকে একদিন সত্যি সত্যিই পুকুরে চুবানি খাওয়াবো আমি।”
বলেই মিতুল জোহানের হাত থেকে চিকেন পাৰ্মের প্লেটটা কেড়ে আনলো। জোহানের জন্য যা খাবার এনেছিল তা সব গুটিয়ে টাইম হাউজ থেকে বেরোনোর পথে চলতে লাগলো। আর এক পা বাড়ালেই টাইম হাউজ থেকে বাইরে চলে যাবে ও। মিতুল পা বাড়িয়েও থেমে গেল আবার। হঠাৎ করে মনে হলো, ও একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। কালকে জোহান মনে এত কষ্ট পেয়েছে, আর আজকে ও এরকম আচরণ করলো! এটা কি ঠিক হলো? হাত থেকে প্লেট পর্যন্ত কেড়ে এনেছে! এত নিষ্ঠুর কবে হয়ে গেল ও? কারো হাত থেকে খাবারের প্লেট কেড়ে আনার মতো নিষ্ঠুরতা কী করে করলো ও? মিতুলের অপরাধ বোধ হচ্ছে।
ফিরে এলো আবার জোহানের কাছে।

জোহান ভ্রু নাড়িয়ে বললো,
“কী? চলেই তো গেলে আবার ফিরে এলে কেন? আমি তো ডাকিনি তোমায়।”

মিতুল কিছু না বলে জোহানের দিকে ট্রে এগিয়ে দিলো।

জোহান অভিমানের সুরে বললো,
“খাবো না আমি। নিয়ে যাও তুমি তোমার খাবার।”

মিতুলের মেজাজ আবার বিগড়ে গেল,
“শোনো, বেশি ভাব দেখিও না তুমি। বড্ড বেশি ভাব দেখাও তুমি। খেলে বলো। নাহলে সত্যি সত্যিই নিয়ে চলে যাব।”

জোহান একটু দমে গেল। বললো,
“ঠিক আছে, খাব আমি।”
তারপর একটু থেমে আবার বললো,
“এক কাজ করো, তুমি নিজ হাতে খাইয়ে দাও আমায়।”

মিতুল অবাকের তুঙ্গে উঠে বললো,
“কী? খাইয়ে দেবো তোমায়?”

“হ্যাঁ, দিতেই পারো। এতে এত অবাক হওয়ার কী আছে? আমি একজন রোগী! একজন রোগীকে তুমি খাইয়ে দিতেই পারো।”

“কে রোগী? কোথায় রোগী? আমি তো কোনো রোগী দেখতে পাচ্ছি না।”

“দেখতে পাচ্ছো না মানে? তোমার সামনেই তো জলজ্যান্ত একজন রোগী বসে আছে।
ইট’স মি। আমাকে কি তোমার রোগী বলে মনে হয় না? দেখো…”
জোহান নিজের মুখের ক্ষত দেখাতে গিয়ে, ভুলে ক্ষত রেখে অন্য জায়গায় অঙ্গুলি করে বললো,
“এই যে ক্ষত! তা কি তুমি দেখতে পাচ্ছো না? এরপরও কি তোমার সন্দেহ আছে আমি একজন রোগী কি না?”

“এই সামান্য একটু আঘাত পেয়ে তুমি নিজেকে রোগী বলে দাবি করো? তুমি নিজেকে রোগী বললেই তো আর রোগী হয়ে যাবে না। তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ। তাই সময় নষ্ট না করে, নিজের টা নিজে খেয়ে নাও।”

বলেই মিতুল বেরিয়ে গেল।

_______________

মম রাগ করে আছে। জোহানের ভালো লাগছে না। আজকে সারাদিনে রুম থেকে বের হয়নি মম। তার খাবার রুমে পাঠানো হয়েছে। রুমে বসেই খেয়েছে।
কালকের মতো এর আগে এমন ঝগড়া ঝাটি আর হয়নি। এর আগে মম এটা সেটা নিয়ে বকা ঝকা করলেও, ও চুপ ছিল। মাঝে মধ্যে ইচ্ছা হলে দুই একটা কথার উত্তর দিতো, না হলে না। কিন্তু মম রাগ করে থাকতো। যা জোহানকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। জানে মমের ওর প্রতি অবহেলা আছে, কিন্তু ও মমকে খুব ভালোবাসে। তাই মমের এমন রাগ করে থাকাতে কষ্ট হয় ওর।
জোহান মমের রাগ ভাঙ্গানোর জন্য এলো। বন্ধ দরজায় নক করে নরম কণ্ঠে বললো,
“মম, আর ইউ অ্যাংগ্ৰি? ওপেন দ্য ডোর।”

ভিতর থেকে মমের কোনো উত্তর এলো না। জোহান বললো,
“আই অ্যাম স্যরি মম! আমি চাইনি কালকে ওরকম একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে। রাগ করে থেকো না তুমি।”

এবার মমের কণ্ঠ শুনতে পেল। মম কাঠ গলায় বললেন,
“আমি রাগ করে নেই জোহান। আমার মাথায় পেইন করছে। তাই আমি রুম থেকে বের হচ্ছি না। তুমি এখন যাও এখান থেকে।”

জোহান বলার মতো কিছু পাচ্ছে না। কষ্ট হচ্ছে। বলার জন্য ওর কাছে শব্দ ভাণ্ডারের ব্যাপক অভাব পড়েছে। জোহান শুধু একটি বাক্যই বললো,
“আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তোমার রাগ ভেঙ্গে যাবে।”
বলেই দরজার কাছ থেকে সরে পড়লো জোহান।

মিতুল আড়ালে দাঁড়িয়ে জোহানের সব কথা শুনেছে। হঠাৎই আবার মন খারাপ হলো ওর। জোহানের কষ্টের পালা যে আবার বেড়ে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারলো। সকালেও জোহান ঠিক ওর আগের চেনা জোহানের মতোই ছিল। চঞ্চল। এখন আবার এমন! জোহানকে এভাবে দেখতে খারাপ লাগছে ওর। ও চায় না জোহান এরকম থাকুক।
মিতুল জোহানের কাছে চলে এলো। জোহান মমের ওখান থেকে সোজা লনে চলে এসেছে।
সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। পড়ন্ত বিকেলের সোনালী রোদ্দুর নিঝুম মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। জোহান ইজি চেয়ারে বসে আছে।
মিতুল ইজি চেয়ারের দিকে এগিয়ে এলো। বসলো জোহানের পাশের চেয়ারে। জোহান চুপচাপ। প্রথম কথা বললো মিতুল,
“এই জোহান, ঘুরতে যাবে আমায় নিয়ে?”

জোহানের থেকে সরাসরি উত্তর এলো,
“না।”

“কেন?”

জোহান চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বললো,
“মন ভালো নেই আমার। যাব না আমি।”
জোহান হেঁটে কয়েক পা দূরে চলে এলেই, মিতুল পিছন থেকে দৌঁড়ে এসে পথ আগলে ধরলো ওর।
“আরে চলো না। গেলে মন ভালো হয়ে যাবে। চলো।”

জোহান মিতুলকে ঠেলে সরিয়ে দিলো সামনে থেকে।
“যাব না আমি।” বলতে বলতে ঘরের দিকে যেতে লাগলো।

মিতুল পিছন থেকে বললো,
“সত্যিই যাবে না?”

জোহান একই উত্তর দিলো,
“না।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here