চেরি ব্লসমের সাথে এক সন্ধ্যা পর্ব: ৪৪

0
922

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৪৪
____________

বৃষ্টি থামার পর পরিবেশটা কেমন অনন্য হয়ে উঠেছে। সবকিছু ঝকঝকে, সতেজ লাগছে। বৃষ্টি শুরু হয়েছিল দুপুরে। আর থামলো এই একটু আগে। এখন বিকেল। বৃষ্টি থামার পরপরই সূর্য তার আলোক রশ্মি ছড়িয়ে দিয়েছে এডমন্টনের বুকে। গাছে গাছে পাতার গায়ে, ফুলের গায়ে এখনও লেগে আছে বৃষ্টির ছোঁয়া। যা জানান দিচ্ছে একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছিল প্রকৃতিতে।
বৃষ্টির কারণে লন ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে। মিতুল সাবধানে পা ফেলে এগোতে লাগলো। চেরি ব্লসম ট্রির নিচে অনেক পাপড়ি ঝরে পড়ে আছে অবহেলায়। মিতুল এগিয়ে এসে থামলো চেরি গাছের নিচে। মায়া হলো বড্ড। কয়েকটা পাপড়ি কুড়িয়ে নিলো সযত্নে।
ইজিচেয়ারগুলো ঢেকে রাখা হয়েছিল। তারপরেও কেমন ভেজা ভেজা ভাব। মিতুল সেসব গ্রাহ্য না করে চেয়ারে বসে পড়লো। বৃষ্টিটা যেন শীত নামিয়ে দিয়ে গেছে তুমুল হারে। শীত পোশাক ছাড়া চলা একেবারেই দায়। মিতুলের চোখ চলে গেল দোতলার বারান্দায়। বারান্দা শূন্য। অনেকক্ষণ আগে ও এবং জোহান ছিল ওখানে। তখন ছিল ঝুম বৃষ্টি। মিতুল বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। চোখ ফিরিয়ে আনলো। ধীরে ধীরে সবকিছুই স্পষ্টতর হচ্ছে ওর কাছে। কার্ল আসলে ওর ভালোবাসা ছিল না। কার্লের প্রতি যে অনুভূতি ছিল, তা ছিল কেবল ভালো লাগার। এর বেশি কিছু নয়। ওর সমস্ত অনুভূতি জুড়ে আসলে অন্য কেউ ছিল। যেটা ও বুঝতে পারেনি আগে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে। নিজের মনের আসল অনুভূতিগুলো ধরতে পারছে ও।
মিতুল ভাবার চেষ্টা করলো, জোহানকে কবে থেকে পছন্দ করে ও। কিন্তু ওর ভাবনা পৌঁছতে পারলো না সেই দিন ক্ষণের কাছে। জোহানকে পছন্দ করার দিন ক্ষণ জানা নেই ওর। শুধু জানে অনেক আগে থেকেই ওর মনে জোহানের জন্য একটা অনুভূতির জন্ম হয়েছে। জোহানের প্রতি এই অনুভূতি আগে থেকে থাকলেও, সেটা স্পষ্টতর ধরা দেয়নি ওর কাছে। বুঝতে পারেনি ও। আসলে বোঝার চেষ্টাই করেনি। কিন্তু এখন হৃদয় সরাসরি জানান দিচ্ছে। ওর হৃদয়ে জোহানের জন্য অনুভূতির একটা গাঢ় প্রলেপ ছেয়ে আছে।

দূর থেকে জোহানের কণ্ঠ আলতো করে কানে ভেসে এলো। জোহান গেট অতিক্রম করে বাড়িতে প্রবেশ করছে। কানে ফোন ধরা। কারো সাথে কথা বলছে। সেই শব্দই শুনতে পেয়েছে ও। মিতুলের হঠাৎ মনে হলো ও চেরি গাছের নিচ থেকে যে পাপড়ি কুড়িয়ে এনেছে, তা আসলে জোহানকে দেবে বলে এনেছে।

জোহান মিতুলকে লক্ষ্য না করে সোজা ঘরের দিকে যাচ্ছিল। অনেক দূর যাওয়ার পর থামলো। মিতুলকে দেখতে পেয়েছে। জোহান যার সাথে কথা বলছিল তাকে পরে কল ব্যাক করবে বলে লাইন কেটে দিলো। কিছুক্ষণ আগে বাইরে বেরিয়ে ছিল ও। জোহান মিতুলের কাছে এসে বললো,
“এখানে বসে কী করছো?”

মিতুল কিছু বললো না। কিছুক্ষণ জোহানের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর একটা অবাক কাজ করলো। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাতের চেরি পাপড়িগুলো জোহানের হাতে গুঁজে দিয়ে, দ্রুত পদে ঘরের দিকে যেতে লাগলো।
পাপড়িগুলো এমন ভাবে জোহানকে দেওয়ায় জোহান কী ভাবলো, না ভাবলো সেসব নিয়ে মাথা ঘামালো না। ওর মনে হয়েছিল জোহানের জন্য পাপড়িগুলো কুড়িয়েছে, তাই দিয়ে এসেছে।
সিঁড়িতে কেবল পা রাখবে এমন সময় জায়িনের সাথে ধাক্কা লাগবে লাগবে করেও লাগলো না। মিতুলের বিব্রতবোধ হলো। ও দ্রুত জায়িনের পাশ কাটিয়ে যাওয়া দিলো।
জায়িন থামালো,
“দাঁড়াও।”

মিতুল দাঁড়িয়ে পড়লো। ওর শ্বাস ভারী। হৃদয় এমনিই ছটফট করছে জোহানের সাথে অমন একটা কাজ করলো দেখে। দ্রুত এখন রুমে গিয়ে দরজা আটকাতে পারলেই বাঁচে ও। কিন্তু জায়িনের ডাকে সত্যিই খুব বাজে অবস্থাতে পড়েছে!
জায়িনের থেকে এক ধাপ সিঁড়ি অতিক্রম করে উপরে উঠেছে মিতুল। ওকে এই এক ধাপ নিচে নেমে জায়িনের কাছে যেতে হলো না। পিছনও ফিরতে হলো না। জায়িনই উপরে উঠে এলো। কিছু না বলে হাত বাড়ালো ওর চুলের দিকে। চুলে আটকে থাকা একটা চেরির পাপড়ি এনে ওর হাতে দিলো।
জায়িনের এই কাজে জায়িনকে থ্যাঙ্কস জানানো উচিত কি না এই মুহূর্তে তা বুঝতে পারছে না মিতুল। তবুও জায়িনকে থ্যাঙ্কস জানালো। তারপর আবারও ছুটলো নিজের রুমের দিকে।

জায়িন হেসে ফেললো। মিতুলকে দেখে কেন যেন হাসি পেল ওর। মুখের এই নিঝুম হাসিটুকু বজায় রেখেই ঘর ছেড়ে বাইরে বের হলো। জোহানকে ইজিচেয়ারের কাছে দেখে হাসির রেশ মুছলো। দেখলো জোহান হাতের দিকে তাকিয়ে কী যেন দেখছে। জায়িন এখান থেকেই ডেকে বললো,
“কী করছিস ওখানে?”

ব্রাদারের ডাক কানে আসতেই জোহান চেরিগুলো মুঠো বন্ধি করে হাত লুকিয়ে ফেললো। বললো,
“কিছু না।”

জায়িন জোহানের কাছে যেতে লাগলো। জোহান পাপড়িগুলো চুপিচুপি ঢুকিয়ে নিলো প্যান্টের পকেটে।

জায়িন এসে বললো,
“পরশু ইন্টারভিউ আছে তোর, সেটা মনে আছে?”

“চাকরিই যখন করবো না, তখন ইন্টারভিউর কথা মনে রেখে কী লাভ? কোনো ইন্টারভিউ দেবো না আমি।”
জোহান আর দাঁড়ালো না। ব্রাদারকে পাশ কাটিয়ে ঘরে চলে গেল।

জায়িন মুখে বিড়বিড় করলো,
“স্টুপিড!”

_____________

মিতুল সন্ধ্যায় একটু বাইরে গিয়েছিল। রেশমী আন্টিদের প্রতিবেশী একটা কিশোর ছেলের সাথে। এটা হলো সেই ছেলে, যে একদিন মিতুলকে জায়িনের গার্লফ্রেন্ড ভেবে ভুল করেছিল। ছেলেটা কী প্রয়োজনে যেন এসেছিল রেশমী আন্টিদের বাড়িতে। মিতুলকে বারান্দায় বসা দেখে হঠাৎ বলেছিল,
“ঘুরতে যাবে মিটুল?”

মিতুল কোনো কথা বার্তা ছাড়াই রাজি হয়ে যায়। ছেলেটার সাথে এতক্ষণ বাইরে হাঁটাহাঁটি করে এই মাত্র ফিরলো বাড়িতে।
হলরুমে পা রাখতেই দেখলো রেশমী আন্টি, সাদাত আঙ্কল, জায়িন, জোহান সবাই একসাথে বসে আছে। কী নিয়ে যেন কথাবার্তা হচ্ছে তাদের মাঝে। মিতুল একটু সময় দাঁড়িয়ে থেকে বুঝলো, কথা বলার বিষয়টা হচ্ছে ইন্টারভিউ এবং চাকরি। জোহান চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে চাইছে না। সাদাত আঙ্কল শান্ত ভাবে বোঝাচ্ছেন ওকে।
“দেখো, চাকরি করলে তোমারই লাভ। নিজে আয় করলে অন্যরকম একটা ব্যাপার থাকে। নিজেকে স্বাবলম্বী মনে হয়। তোমার যখন যা প্রয়োজন তুমি নিজ টাকায় তা সবই করতে পারবে। তাহলে চাকরি করবে না কেন?”

জোহান ড্যাডের কথা বুঝতে চাইছে না। ও বলছে,
“আমার যখন যা প্রয়োজন তা তো সবই পাচ্ছি আমি। তুমি তো দিচ্ছোই। আর তাছাড়া আমি একেবারে যে আয় করি না সেটা তো নয়। হয়তো তোমার এবং ব্রাদারের থেকে পরিমাণটা খুবই কম। কিন্তু আয় তো করি। গান গেয়ে…”

রেশমী আন্টি জোহানের কথা শেষ করতে দিলেন না। তিনি রাগান্বিত কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“ড্যাড, ব্রাদারের টাকায় বসে বসে খাচ্ছ লজ্জা করে না তোমার? আর কতদিন চলবে তুমি এভাবে? ভালো একটা চাকরি। তুমি ইন্টারভিউ দিলে চাকরিটা হয়ে যাবে, সেটা কনফার্ম। তারপরও এমন কেন করছো? নিজের ফিউচার গড়তে হবে না তোমার? সারাদিন কি গান নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে? গান গেয়ে কত ডলার পাও তুমি? মাস তিনেক আগেই তোমার ড্যাডের অফিসে একটা চাকরির সুযোগ ছিল। সেটার ধারে কাছেও গেলে না তুমি। এখনও আবার এমন করছো! আমি বুঝতে পারছি না তোমার কর্ম-কান্ড।”

“ভুল বললে মম। আমি মোটেই আমার ব্রাদারের টাকায় বসে বসে খাই না। আমার সকল খরচ আমার ড্যাড দেয়। যাই বলো না কেন, আমি এখন চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দেবো না। চাকরি পেয়ে এত তাড়াতাড়ি বন্দি একটা জীবনে চলে যেতে চাই না আমি। এখনই কীসের জন্য চাকরি করতে হবে আমার? ড্যাড, ব্রাদার যা ইনকাম করে তাতে আমার মতো আরও কয়েকজনকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারবে তারা। আর আমি তো একজনের ইনকামেই খাচ্ছি। যখন একজনের ইনকামেই আমি বসে বসে খেতে পারছি, তাহলে এত তাড়াতাড়ি আমার চাকরি করার কী দরকার?…”
জোহান হঠাৎ মিতুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমিই বলো তুলতুল, আমার চাকরি করার কি কোনো দরকার আছে?”

মিতুল সকলের সামনে একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। ও যে এখানে দাঁড়ানো সেটা কেউ খেয়াল করেনি। জোহানের কথায় এবার সকলের দৃষ্টি এসে পড়লো ওর উপর। মিতুল ভীষণ অস্বস্তি, বিব্রত অবস্থায় পড়ে গেল। কী করলো জোহান এটা? পারিবারিক একটা আলোচনার মাঝে ওকে টানলো কেন? এই জোহানের কি কোনো আক্কেল, জ্ঞান নেই? ফ্যামিলির সকলের সামনে কী করে ওকে এভাবে ডাকতে পারলো? তাও আবার তুলতুল বলে ডেকেছে! ফ্যামিলির মানুষ কী ভাববে? মিতুলের পাগল পাগল লাগছে। কী করবে ও এখন? কী বলবে?

মিতুলকে কিছু বলতে হলো না।
জোহানই আবার বলতে লাগলো,
“দেখো মম, আমি যে চাকরি করবো না সেটা নয়। আমি চাকরি করবো। তবে এখন করবো না। আগে আমি নিজের গানের ব্যাপারটা উন্নতি করি। তারপর নিজের পছন্দ মতো একটা চাকরি পেলে করবো।”

জায়িন ব্যাঙ্গাত্মক হেসে বললো,
“পছন্দ মানে? কোন চাকরি পছন্দ তোর? জোকারের চাকরি?”

জায়িনের কথায় কিছুটা রাগ হলো জোহানের। জোহান কঠিন হেসে বললো,
“সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না ব্রাদার। আমার চাকরি তো, আমি বুঝে নেবো।”
উঠে দাঁড়ালো জোহান। আবারও একবার বললো,
“আমি কিন্তু পরশু দিন কিছুতেই ইন্টারভিউ দিতে যাব না। বলে দিলাম আগেই।”

জোহান সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো। সিঁড়ির কাছে গিয়ে একবার থেমে মিতুলের দিকে তাকালো। মিতুলও জোহানের দিকে তাকানো ছিল। জোহান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ভ্রু নাড়লো।
জায়িন লক্ষ্য করলো ব্যাপারটা। একদমই সহ্য হলো না ওর এটা।

জোহান চলে গেলে রেশমী বললেন,
“সব দোষ তোমার সাদাত। তুমি ওকে লাই দিয়ে মাথায় না তুললে এমন করার সাহস পেতো না ও। তোমার কারণেই ছেলেটা বাদ বাকিটুকু নষ্ট হয়ে গেছে।”

সাদাত বললেন,
“জোহানের চাকরির বয়স তো আর ছাড়িয়ে যাচ্ছে না। চাকরি করার বয়স তো পরেই রয়েছে। কিছুটা সময় যদি এখন গানের পিছনে দেয়, তাহলে তো কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না আমি। এখনই ওর গান প্রশংসা কুড়াচ্ছে, সামনে আরও ভালো করবে।”
বলে হলরুম থেকে চলে গেলেন সাদাত।

জায়িন মমকে বললো,
“বুঝলে মম, ড্যাড নিজের ছোট ছেলের প্রতি ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছে। ড্যাডকে বশ করে ফেলেছে জোহান।”

মিতুল এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল। জায়িনের এই কথাটা একদম ভালো লাগলো না ওর। রাগ হলো। তাই দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে এলো ও।
______________

বাড়ির সবাই ইতোমধ্যে ঘুমে মগ্ন। মিতুল অনেক আগেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলেও ঘুমায়নি। ঘুম আসছে না ওর। সন্ধ্যার ঘটনাটা মনে গেঁথে আছে। জোহান কী করে ওকে সবার সামনে বসে ওভাবে প্রশ্ন করতে পারলো? কোনো কমনসেন্স নেই ওর? বাড়ির মানুষগুলো কী ভাবলো? আহাম্মক একটা!
আর হ্যাঁ, তুলতুল! নিজে তুলতুল ডাকে ভালো কথা। তাই বলে বাড়ির সবার সামনে তুলতুল বলে ডাকতে পারে? আসলেই একটা আহাম্মক। জোহান ওকে বোকা বলে। নিজে যে একটা বড়ো বোকা সেটা বোঝে না।

মোবাইলে ম্যাসেজ আসার শব্দ উপলব্ধি করতে পারলো মিতুল। হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা আনলো। জোহানের ম্যাসেজ।

‘বারান্দায় বসে আছি। আসবে না কি তুমি?’

ম্যাসেজটা দেখে মিতুলের মেজাজ একটু খারাপ হলো। না ঘুমিয়ে বারান্দায় বসে আছে জোহান? আবার ওকেও ডাকছে?
মিতুল জোহানের কথা মতো বারান্দায় যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করলো না। কিন্তু সন্ধ্যার ঘটনাটার জন্য জোহানকে কয়েকটা কথা না শোনালেই নয়। মিতুল উঠে পড়লো শোয়া থেকে। স্লিপিং স্যুটের উপর একটা শাল জড়িয়ে রুম থেকে বের হলো।
বারান্দায় লাইট জ্বলছে। জোহানকে দেখলো গায়ে কম্বল জড়িয়ে বসে আছে।
মিতুলকে দেখে জোহান বললো,
“ও এসেছো তুমি? আমি তো ভেবেছিলাম আসবে না।”

“তোমার কি আক্কেল, বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? কী করলে তুমি এটা?”

“কী করলাম? আমি ডাকলাম, তুমি এলে। ব্যস এতটুকুই তো।”

“আমি এটার কথা বলছি না। সন্ধ্যায় কী করলে তুমি?”

“কী করলাম আবার সন্ধ্যায়? চাকরি করবো না সেটাই তো বললাম শুধু। তুমি যে আমার হাতে চেরি ব্লসম গুঁজে দিয়েছিলে সেটা তো বলিনি।”

মিতুলের মনে হলো জোহান ওকে চেরির কথা বলে দমিয়ে রাখতে চাইছে। না, ও তো দমে যাবে না। মিতুল বললো,
“চাকরি করবে না বলেছো ভালো কথা। কিন্তু তোমার সকলের সামনে বসে আমাকে না টানলেই কি হতো না? তাও আবার সকলের সামনে আমাকে তুলতুল বলে ডেকেছো! কেন? দুই দুই বার তুমি এই কাজটা করলে। সকলের সামনে কেন আমাকে তুলতুল বলে ডাকো? তুমি নিজেই তো বলেছিলে তুলতুলের থেকে মিতুল নামটা বেটার আছে। তাহলে তুমি কেন আমাকে তুলতুল বলে ডাকো? নিজে তো ডাকই, আবার মানুষ জনের সামনেও ডাকা শুরু করেছো। কেন? আমাকে কী পেয়েছো?”

“আমি বলেছি তুলতুলের থেকে মিতুল নামটা বেটার, তার মানে এটা বলিনি যে তুলতুল নামটা খারাপ। আমার ভালো লাগে তোমাকে তুলতুল বলে ডাকতে। তুলতুল নামটার সাথে একটা কিউট কিউট ভাব জড়িয়ে আছে। তোমাকে মিতুল, তুলতুল যেটা খুশি সেটাতেই ডাকবো আমি। আর সবার সামনে বসে তুলতুল ডাকলেও কোনো প্রবলেম নেই।”

তুলতুলের সাথে কিউট কিউট ভাব জড়িয়ে আছে শুনে মিতুল একটু দমলো। একটু লজ্জাও পেল।

জোহান বললো,
“এখানে এসে বসো।”

মিতুল এগিয়ে গেল। জোহানের পাশের চেয়ারটায় বসলো।
জোহান গায়ের কম্বলের কিছু অংশ দিয়ে মিতুলকে ঢেকে দিলো। মিতুলও কম্বলটা ভালো করে গায়ে টেনে নিলো। জোহান চেয়ারের পাশ থেকে ফ্লোরে থাকা দুটো কফির মগ উঠিয়ে নিলো। মিতুলের দিকে একটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“নাও। নিজ হাতে বানিয়েছি।”

“কফিও বানিয়ে নিয়ে এসেছো? তুমি তো বললে, ভেবেছিলে আমি আসবো না। তাহলে দুটো মগ কেন?”

“তুমি না আসলে এক মগ নিজে খেতাম, অন্য মগ এখানে ঘুরে বেড়ানো সুন্দরী পেতনিদের মাঝে বিলিয়ে দিতাম।”

“তাহলে থাকতে তুমি তোমার সুন্দরী পেতনিদের নিয়ে। আমাকে কেন ডেকেছো?”

“আরে, পেতনিরা তো সেকেন্ড অপশন, তুমিই তো আমার আসল। ওরা তো পেতনি, তুমি হলে আমার লিটল এঞ্জেল!”

জোহানের কথায় মিতুল মোমের মতো গলে গেল। মনের ভিতর মিষ্টি, সুন্দর একটা অনুভুতি হচ্ছে। মিতুল মনে মনে বললো,
“আহা! বসন্ত এত রং ছড়াচ্ছে কেন?”

জোহান মিতুলকে আবারও কফির মগটা নিতে বললো,
“তুলতুল, টেইক ইট।”

মিতুল হঠাৎ মুখ কঠিন করে বললো,
“খাবো না।”

“কেন? সেদিন ঘোড়ার মতো কফি পান করো বলেছিলাম বলে?”

“আমি এমনিই খাবো না।”

“ওহ, বুঝেছি।”

জোহান মিতুলকে বাড়িয়ে দেওয়া মগটায় একটা চুমুক দিয়ে, আবার সেটা মিতুলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“এখন নাও।”

মিতুলের খুব রাগ হলো।
“এটা কী করলে তুমি? এটাতে চুমুক দিয়ে
এঁটো বানিয়ে আমাকে দিচ্ছ কেন? এটা কোন ধরণের অপমান?”

“অপমান? এটাকে অপমান বলছো?”

“অপমানকে অপমান বলবো না তো কী বলবো?”

“এটা অপমান নয় তুলতুল। ইট’স লাভ!”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here