ছায়া হয়ে থাকবো পাশে part-12

0
1254

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে
part ঃ 12
Writer ঃ humayra khan

গাড়ি এসে চারুর সাথে ধাক্কা লাগার আগেই আহান দৌড়ে এসে চারুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
যার কারনে গাড়িটির সাথে আহান ধাক্কা খেয়ে ছিটকে
পরে রাস্তার এক পাশে।
আহানের পরে থাকা সাদা শার্ট টি রক্তে লাল হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যেই।
নিজ চোখ কে কোন ভাবেই বিশ্বাস করাতে পারছেনা চারু।
হতভম্ব হয়ে বসে আছে রাস্তার এক পাশে।
আর ওর চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পরছে আহান কে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে।
আশেপাশে হইচই শুরু হলে হুস আসে চারুর।
আশে পাশের মানুষ ঘেরাও করে আহানকে দেখতে থাকে। অথচ ওকে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না।
চারু দৌড়ে গিয়ে আহানের কাছে পৌছায়।
আহানের হাতে হাত রেখে–
চারু ঃ ভাইয়া আপনার কিছুই হবেনা।কিছুই হতে দিব না আমি। আপনি ঠিক হয়ে যাবেন ( কান্না করতে করতে)
আহান নিজের রক্তাক্ত হাত দিয়ে চারুর গালে হাত রেখে-
আহানঃ তুই ঠিক আছিস তো চারু? কোথাও লাগেনি তো তোর????আমি মারা গেলে মিস করবি তো আমাকে?
চারু ঃভাইয়া প্লিজ বন্ধ করুন এসব কথা।
আপনার কিছুই হবেনা। কিছুইনা(কান্না করে)
আহানঃ কেন জানি মনে হচ্ছে এইটাই আমাদের বলা শেষ কথা।
কথাটি বলতে বলতে নিজের চোখ বুজে নেয় আহান।
আহান চোখ বুঝে নেওয়ায় চারু আহান বলে চিৎকার দিয়ে উঠে।
চারু ঃপ্লিজ কেউ একটু হেল্প করুন আমাকে।
(সকলের সামনে নিজের হাত জোড় করে)
কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনা চারুকে সাহায্য করতে।
সকলেই দাঁড়িয়ে শুধু তামাশা দেখে যাচ্ছিল।
চারু ঃ এই খানে কি কেউ নেই আমাকে সাহায্য করার মতো। প্লিজ কেউ আমাকে হেল্প করুন তাকে বাচাতে(কান্না করে)
ভিড়ের মাঝখান থেকে কেউ একজন বলে উঠে –
আপু আমি এম্বুলেন্স এর জন্য কল করেছি কিছুক্ষন এর মধ্যেই তারা চলে আসবে।
আপনি একটু শান্ত হন।
ওদিক গাড়িতে দিশা আর আবির বাইরে হইচই শুনতে পেলে
আবির গাড়ি দরজার গ্লাস খুলে একজন কে ডেকে জিজ্ঞেস করে।
আবিরঃ হ্যালো excuse me ভাইয়া।বাইরে এতো হইচই কেন???
লোকটিঃএকটা ছেলে গুরুত্বর ভাবে এক্রিডেনট করেছে।
কি যেন নাম বলল মেয়েটা চিৎকার দিয়ে??
ও হ্যা মনে পরেছে আহান।আহান নামের এক ছেলের এক্রিডেনট হয়েছে।
কথাটি বলে চলে যায় লোকটি।।
দিশাঃ কি ভাইয়ার(কান্না জড়িত কন্ঠে)
আবিরঃ দিশা নিশ্চয়ই লোকটা ভুল কিছু শুনেছে।
দিশাঃ প্লিজ আবির আমার মন বলছে কোন বড় একটা অঘটন ঘটেছে।
তাই দেরি না করে চল যাই দেখে আসি। কি হয়েছে।
আবিরঃ হ্যা চলো।
কথাটি বলে আবির আর দিশা তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে পরে।
রাস্তায় একটা লোক কে থামিয়ে –
আবিরঃ ভাইয়া কারো নাকি এক্রিডেনট হয়েছে।
বলতে পারবেন কোথায়???
লোকটিঃ সামনে গেলেই দেখতে পাবেন।মনে হয়না ছেলেটি বাচবে।
লোকটির কথা শুনে কাপতে থাকে আবির।
দিশা ঃপ্লিজ সামলাও আবির নিজেকে।
আর তাড়াতাড়ি চল আমার কেন জানি অনেক বেশি ভয় করছে।
আবির দিশার কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে হাটতে থাকে সামনের দিক এ
দিশাও আবির এর পিছনে যেতে থাকে।
একটু সামনে যেতেই অনেক মানুষ এর ভিড় দেখতে পায় ওরা।ভিড় কাটিয়ে সামনে গিয়ে দেখে আহান রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পরে আছে আর চারু ওর পাশে বসে অঝোরে কান্না করছে।
নিজের আদরের ভাইকে এমন রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে আবির থপাস করে মাটিতে বসে পরে আর আহান বলে চিৎকার দিয়ে উঠে।
চারু আবির আর দিশাকে দেখতে পেলে-
চারু ঃ ভাবি ভাইয়া দেখো না ইনি চোখ খুলছেন না।
বল না তাকে উঠতে।
আপনার কথা তো ঠিকই শুনবে ভাইয়া।
প্লিজ একবার তাকে উঠতে বলেন।
এম্বুলেন্স চলে আসলে —
দিশাঃ আবির চারু প্লিজ তোমরা শক্ত হও।এই সময় এইভাবে ভেঙে পরলে চলবেনা।ভাইয়াকে তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
দিশার কথা শুনে আবির তাড়াতাড়ি করে উঠে পরে।
এম্বুলেন্সে আহানকে উঠানো হলে চারু আর দিশা আহানের সাথে বসে আর আবির ড্রাইভার এর সাথে বসে।
চারু আহানের হাত ধরে-
আহান আপনার কিছুই হবে না।খুব শীঘ্রই আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
কথাটি বলার সময় চারুর চোখ বেয়ে জল পরতে থাকে আর সেই জলের ফোটা গুলো গড়িয়ে পরে আহানের রক্তাক্ত হাতে।।।।
দিশাঃ প্লিজ ধৈয ধর চারু। এই ভাবে ভেঙে পরলে চলবেনা।আমাদের এই সময় সবাইকে শক্ত থাকতে হবে।
চারু ঃ কিভাবে শক্ত থাকি ভাবি।আমার ভুলের জন্যই তো তার আজ এই অবস্থা। দেখোনা কিভাবে নিরব হয়ে পরে আছে।
দিশাঃ উফ চারু তোমার জন্য কিছুই হয়নি।
আমাদের ভাগ্যে যা লিখা থাকে তা তো হবেই।
তুমি দেখো আল্লাহ আহান ভাইয়ার কোন ক্ষতি হতে দিবেনা।
দিশার কথা শুনে চারু দিশাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
কিছুক্ষন এর মধ্যে ওরা হসপিটালে পৌঁছালে আহানকে তাড়াতাড়ি করে অপারেশন থিয়েটার এ নিয়ে যাওয়া হয়।
আবির তাড়াতাড়ি করে ওর বাবা মাকে ফোন৷ দিয়ে সব ঘটনা খুলে বলে।।
আহানের এক্রিডেনট এর কথা শুনে হসপিটালে দৌড়ে চলে আসেন মিরাজ সাহেব আর মিসেস সাবিনা।
হসপিটালে এসে আবিরকে তারা দেখতে পেলে–
সাবিনাঃ আবির আমার ছেলে এখন কেমন আছে।
কিভাবে হল এইসব ( কান্না করতে করতে)
চারু ঃভাইয়ার আজ এই অবস্থা শুধুই আমার জন্য হয়েছে।আমার ভুলের জন্য।
দেয়ালে এক পাশে গা হেলিয়ে বলতে লাগল চারু।
চারুর কথা শুনে মিসেস সাবিনার রাগ চরম পর্যায় গিয়ে পৌছায়।।।।
আর তিনি রাগের মাথায় জোড়ে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বসে চারুর গালে।
সাবিনা ঃ অলোক্ষিনী তোর কারনে আজ আমার সোনার টুকরো ছেলেটার এই অবস্থা।
আজ যদি ওর কিছু হয়ে যায় আমি তোকে মেরেই ফেলব
কথাটি বলে সাবিনা চারুর গলা চেপে ধরে শক্ত করে।
যার কারনে চারুর শ্বাস আটকে আসে।
আবির আর মিঃ মিরাজ তাড়াতাড়ি করে চারুকে
ছাড়ায় মিসেস সাবিনার থেকে।
সাবিনা তার হাত চারুর গলা থেকে সরিয়ে নিলে
চারু জোড়ে জোড়ে কাশতে থাকে।
মিরাজ ঃ সাবিনা কি করছ কি পাগলের মতো।
তুমি কি পাগল হয়ে গেছ??? (চেচিয়ে)
সাবিনা ঃ হ্যা পাগল হয়ে গেছি আমি।
পাগল হয়ে গিয়েছি। আজ একমাত্র ওর কারনে আমার
আদরের ছেলেটা মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে। (কান্না করতে করতে)
সাবিনার বলা কথাগুলো চারুর বুকে তীরের মতো গিয়ে লাগছে।কিন্তু কিছুই বলার নেই ওর।
চারু ঃ হ্যা সত্যিই তো বলছে আন্টি। আজ আমার ভুলের কারনে আহান ভাইয়ার এই অবস্থা।
আহান ভাইয়ার কথা শুনে সেই খানে দাড়িয়ে থাকলে আজ হয়ত ভাইয়া এই অবস্থা হতনা।
অপারেশন রুম থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আসলে-
মিরাজ আর আবির ডাক্তার এর কাছে গিয়ে-
মিরাজ ঃ ডাক্তার আমার ছেলের এখন কি অবস্থা??
ডাক্তার ঃ দেখুন অপারেশন হয়েছে।কিন্তু যতক্ষন না রোগীর জ্ঞান ফিরছে ততক্ষন পর্যন্ত আমরা কিছুই বলতে পারছিনা।
আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তার জ্ঞান না ফিরলে সে হয়ত আজীবন এর জন্য কোমায় চলে যেতে পারে।
তাই দোয়া করুন যাতে তার জ্ঞান ফিরে আসে এই চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে।
ডাক্তার কথা শুনে…….

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here