ছায়া হয়ে থাকব পাশে
part ঃ (19;20;21)
Writer ঃ humayra khan
Part ঃ 19
তারপর আহান ওর ফোনটা কেটে দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে চারু ওর রুমের দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।।।
রুমের ভিতরে ঢুকে…….
চারুঃ ভাইয়া কি বলছিলেন ফোনে???
আহানঃ কি বলছিলাম???
চারু ঃ মানে ফোনে আপনি কাউকে বলছিলেন যে দোয়া করবেন আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে যাতে খুব জলদি আপন করে নিতে পারি।
এর মানে আপনি কাউকে ভালোবাসেন(খুশি হয়ে)
আহানঃ হুম বাসি তো অনেক বেশি ভালোবাসি মেয়েটাকে……
চারু ঃ সত্যি??? ভাইয়া মেয়েটা কে????
আহানঃ যদি বলি মেয়েটি আর কেউ নয় তুমি।
আহানের বলা কথা শুনে চারু চারশচল্লিশ বোল্ড এর শকড খায়।।।
আহান খেয়াল করে চারু আহানের বলা কথা শুনে বড় ধরনের শকড খেয়েছে।
তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য –
আহানঃ আরে আমি তো ফান করছিলাম।।।
চারু আহানের কথা শুনে সস্তির নিশ্বাস ফেলে।।
চারু ঃ উফ থ্যাংক গড সে ফান করছিল।
কিন্তু সে ফান করে কথাটা বলছে এই কথাটা শুনে আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেন???
মনে হচ্ছে আমার হৃদয় টাকে কেউ দাড়ালো ছুড়ি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে।।।।
তাহলে আমি তাকে………
না চারু এ-ই গুলো তর মনের ভুল।। এর চেয়ে বেশি কিছুনা।।।।
আহানঃ এই যে ম্যাম আপনি বার বার কোন দুনিয়ায় চলে যান???
চারু ঃ তো বললেন না মেয়েটা কে???
আহানঃ আরে বললাম তো তুমি(হেঁসে)
চারু ঃ শয়তান…..
তারপর চারু রেগে মেগে চলে যায় আহানের রুম থেকে।
আহান চারুর চলে যাওয়ায় পর বিছানায় শুয়ে পাশে থাকা
একটা বালিশ খুব শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে—
আহানঃ উফফ এই মেয়ে টা কি আল্লাহ কোন কথাই বুঝে না।কোন বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পরলি আহান।
এই মেয়ে শুধু উচ্চাতার দিক দিয়ে বড় হয়েছে।।
বোঝার শক্তি এক ফোঁটাও হয়নি।।।।
বাট আমার বিশ্বাস ও আমার ভালোবাসা ঠিক ই বুজবে যেই দিন আমি চিৎকার দিয়ে বলব –
আই লাভ উ চারু…..
কথাটি বলে আহান ওর বুকের সাথে জরিয়ে রাখা বালিশ টি আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরল……
বাসার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলে বাসার একটা সার্ভেনট এসে দরজা টা খুলে দেয়।।।।
সামনে তাকিয়ে দেখে আবির আর দিশা দাঁড়িয়ে আছে।
সাবিনাঃ কে এসেছে রে মরজিনা????
মরজিনাঃখাল্লামা আবির ভাইয়া আর দিশা ভাবি এসেছে…….(জোড়ে)।।।
মরজিনা ঃ ভাইয়া ভাবি কেমন আছেন আপনারা(খুশি হয়ে)
দিশাঃ আলহামদুলিল্লাহ মরজিনা ।।তুমি?
মরজিনাঃ আপনারা চইল্লা আইসেন বাসায় ।আমার তো অনেক খুশি লাগতাসে….
মরজিনার হাত হ্যাচকা টান দিয়ে তাকে সরিয়ে দেয় মিসেস সাবিনা।।
এই খানে দাড়িয়ে না থেকে কাজ কর গিয়ে।
মিসেস সাবিনার বলা কথা শুনে মরজিনা মাথা নিচু করে থাকলে–
সাবিনা ঃ কি রে এই খানেই কি দাঁড়িয়ে থাকবি??
আমার কপালে সব কাম চোর এসে ঠেকেছে।
সব গুলা শুধু বসে বসে খাওয়ার ধান্দায় থাকে।
যা কাজ কর গিয়ে।।।।
মিসেস সাবিনার কথা শুনে মেয়েটি মন খারাপ করে চলে যায় সেই খান থেকে।।
আবিরঃ মা কি দরকার ছিল মেয়েটাকে এই সব কিছু বলার??
সাবিনাঃ আরে ওর কথা বাদ দে তো।।।
আয় বাবা ঘরে আয়।।তোকে ছাড়া এই বাড়ি টা শূন্য শূন্য লাগছিল।।
আবির আর দিশা সাবিনার কথা শুনে বাসায় প্রবেশ করলে–
মিরাজ সাহেব সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন।।
দিশা আর আবিরকে দেখে তার যেন খুশির কোন সীমানা নেই।
চা টা টেবিলে রেখে নিজের ছেলের কাছে গিয়ে বুকে জরিয়ে নিলেন উনি।।।
দিশা মিরাজ সাহেব এর পাঁ ছুয়ে সালাম করতে নিলে মিরাজ সাহেব দিশাকে থামিয়ে-
মিরাজ ঃআরে কি করছ পাঁ ছুয়ে সালাম করতে হবে না।
আমার আশীর্বাদ সর্বদা তুমার সাথে আছে মা (দিশার মাথায় হাত রেখে।।।
সাবিনাঃ ভালোই ভালো শ্বশুর এর পাঁ ছুয়েই সালাম করছ। শ্বাশুড়ি যে আছে সেটা তো মনে হয় ভুলেই গেছ।।
মা বাবা পুরো পুরি শিক্ষা দিয়ে পাঠায়নি মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি।
সাবিনা বলা কথা শুনে বেশ রাগ আসে দিশার।
কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে চুপ হয়ে যায় সে।।
দিশা ঃ মা আপনাকে কি সালাম না করে পারি বলুন।আপনি তো আমার দশ টা না বারো টা না একটা মাএ শ্বাশুড়ি।।। (একটা হাসি দিয়ে)
তারপর দিশা মিসেস সাবিনা পাঁ ছুয়ে সালাম করলে-
সাবিনাঃ হয়েছে সালাম করতে হবেনা আমায়।
কথাটি বলে মিসেস সাবিনা দিশার থেকে সরে দাঁড়ায়।
মিরাজ ঃ দিশা আবির যাও নিজের রুমে গিয়ে একটু রেস্ট কর গিয়ে।।।
আমি অফিসে যাচ্ছি। রাতে আসলে সবাই মিলে আড্ডা দিব কেমন???
আবিরঃ বাবা আমি যাই তোমার সাথে অফিসে।
বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর আর এক সাথে অফিসে যাওয়া হয়ে উঠে না।।।
মিরাজ ঃ নো মাই সান।আজ তুমি রেস্ট নাও
আজ আমি একা সামলে নিব অফিসের কাজ।
আবিরঃ কিন্তু বাবা
মিরাজ ঃ কোন কিন্তু নয়।।আমি যেই টা বলেছি সেইটাই হবে।। বুঝেছ(মুখ গম্ভির করে)
আবিরঃ আচ্ছা বাবা যাব না আজ অফিস।।।
মিরাজ ঃগুড।।আচ্ছা তাহলে আমি যাই।
কথাটি বলে মিঃ মিরাজ সাহেব চলে গেলেন অফিসে।
সাবিনাঃ আবির বাবা তুই রুমে গিয়ে বিশ্রাম কর একটু.
আবিরঃ হ্যা মা আগে একটু আহানকে দেখে আসি ওর রুমে গিয়ে।।।
সাবিনাঃ আচ্ছা যা বাবা আহান তোকে দেখলে খুশি হয়ে যাবে।।।।
তারপর আবির আর দিশা আহানের রুমে চলে যায় আহানের সাথে দেখা করতে।।।
আহানের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দিশা আর আবির জোড়ে চিৎকার দিয়ে উঠে —
সারপ্রাইজ।।।।
আবির আর দিশা এই ভাবে আসায় বেশ ভয় পেয়ে যায় আহান।
আহানঃ আল্লাহ তোমরা।।।।
আমি তো ভূত ভেবে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।।
আবির আর দিশা বিছানায় আহানের পাশে বসে পরে।।
দিশাঃ তোমার ভাই কি ভূতের চাইতে কম নাকি??(হেসে)
আবিরঃ আমি ভূত হলে তুমি আম গাছের শাকচুন্নি। (মুখ বাঁকা করে)…..
চারু পিছন থেকে এসে দিশার পিছনে দাঁড়িয়ে জোড়ে চিৎকার দিয়ে
ভাবি………
আচমকা চারু এ-ই ভাবে চিৎকার দিয়ে উঠায় বেশ চমকে উঠে দিশা।।।।।
দিশা রেগে মেগে চারুর কান ধরে–
অনেক শয়তানি শিখে গেছ তাইনা।।।ভাবিকে ভয় দেখাও।।।।
দিশাঃ আরে ছাড়ো ভাবি আমার লাগছে তো।
আহানঃ হ্যা ভাবি ওর কানটা ছেড়ে দাও ও ব্যথা পাচ্ছে তো।।।
দিশাঃ ইসস রে দেবর আমার যেমন করে বলছে মনে হচ্ছে আমি উনার ভালোবাসার মানুষ টার কান ধরে বসে আছি(হেসে)
চলবে……..
partঃ 2O
Writer ঃ humayra khan.
দিশাঃ ইসস দেবর আমার যেমন করে বলছে মনে হচ্ছে আমি তার ভালোবাসার মানুষ টার কান ধরে বসে আছি। চারুর চেয়ে কষ্ট মনে হয় ইনিই বেশি পাচ্ছেন
(হেসে)
দিশার বলা কথা শুনে বেশ লজ্জায় পরে যায় আহান আর চারু।।।আর আবির খিল খিল করে বোকার মতো হাসতে থাকে দিশার কথা শুনে।।।
হঠাৎ মিসেস সাবিনা আহানের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে –
চারু আমার রুমে আয় তো একটু কাজ আছে।
দিশা মিসেস সাবিনাকে দেখে তাড়াতাড়ি করে চারুর কানটা ছেড়ে দেয়।।।
চারু চলে যেতে নিলে
দিশাঃ চারু ওয়েট আমিও আসছি তোমার সাথে।
তারপর দিশাও চারুর সাথে নিচে চলে যায়।।
মিসেস সাবিনার রুমে চারু আর দিশা প্রবেশ করলে-
মিসেস সাবিনা দিশা কে দেখে
সাবিনাঃ আমি কি তোমাকে আসতে বলেছিলাম দিশা।
দিশাঃ না মানে মা।।
সাবিনাঃ থাক বাদ দাও।
নে চারু এই লিস্ট টা।।লিস্ট এ যা যা আছে সব নিয়ে আসবি বাজার থেকে কিনে।।একটা জিনিস ও যেন বাদ না পরে।
চারু ঃ কাকিমা ড্রাইভার আংকেলকে পাঠিয়ে বাজার টা আনা যায়না
মিসেস সাবিনা চারুর কথা শুনে ওর দিক এ চোখ রাঙিয়ে তাকালে-
চারু ঃ আসলে সকাল থেকে আমার একটু খারাপ লাগছে। তাই বলছিলাম আর কি।।(মাথা নিচু করে)
সাবিনাঃ তর কোন দিন ভালো লেগেছিল বলবি।
সারা দিনভর ন্যাকামি করিস।।
চারু মিসেস সাবিনার কথা শুনে আর কথা বাড়ানো ঠিক মনে করল না।
চারু ঃ দিন লিস্ট টা।।
সাবিনাঃ এই ধর।
চারু মিসেস সাবিনার থেকে লিস্ট টা নিয়ে চলে যেতে নিলে-
দিশাঃ মা অন্য কাউকে দিয়ে বাজার টা আনলে ভালো হয়না।।এমনিও চারুর শরীর টা মনে হয় ভালো নেই।
সাবিনাঃ তোমাকে মাঝ খান দিয়ে কথা বলতে বলেছি আমি?? খালি তো কথাই বলতে জানো। আজ পর্যন্ত তো পারলে না আমাকে নাতি নাত্নির মুখ টা দেখাতে।
দিশা কিছু বলতে যাবে চারু দিশা কে থামিয়ে দিয়ে-
চারু ঃ ভাবি প্লিজ কথা বাড়িওনা।
কথাটি বলে চলে যায় চারু সেই খান থেকে।।
দিশা চারুকে থামাতে চাইলে কিছু বলার সাহস হয়না মিসেস সাবিনা কে দেখে।।।
রাস্তায় বের হয়ে চারু রিকশা খুজলে কোন রিকশাই খালি না পেলে পায়ে হেটে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেয় ও।
কিন্তু যতই হাটছে ততোই খারাপ লাগছে ওর।
সূর্যের তাপ যেন ঠিক ওর মাথার কাছে এসে ঠেকছে।।
বহু কষ্ট করে অবশেষে বাজারে পৌছাতে সফল হয় চারু…….
বাসায়…………….
আহান আর আবির মিলে আহানের রুমে বসে গল্প গুজব করতে থাকে।।।।।
হঠাৎ দিশা আহানের রুমে এসে মুখ গোমড়া করে বসে থাকে আবির এর পাশে গিয়ে।।।
আবিরঃ কি হল শাকচুন্নি এ-ই ভাবে মুখ প্যাঁচা মতো করে আছ কেন???
আবির এর কথা শুনে আহান হাসতে হাসতে শেষ।
দিশাঃ ফাজলামো ভালো লাগেনা সব সময়।।
চারুর জন্য মন টা খারাপ লাগছে বেচারির এমনিই শরীরটা ভালো লাগছিল না।।তার উপর মা ওকে লিস্ট হাতে ধরিয়ে পাঠিয়ে দিলেন বাজারে।।
দিশার কথা শুনে আহানের মুখের হাসিটা শূন্যে মিলিয়ে যায়।।।
উতেজিত হয়ে–
আহানঃ ভাবি কোন বাজারে গেছে ও??
দিশা ঃ এই তো আমদের বাড়ির সামনের বাজার টায়
আধা ঘন্টার দূরত্ব হবে।।।।
আহানঃ থানক্সস ভাবি।
কথাটি বলে তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে পরল আহান।।
তারপর গাড়িটা বের করে রওনা দেয় বাজারের উদ্দেশ্যে।
বাজারে আসলে গাড়ি থেকে নেমে পরে আহান।
আর পাগলের মতো বাজারের প্রত্যেক টা জায়গায় খুজতে থাকে চারুকে।।।
এই ভাবে অসুস্থ শরীর নিয়ে চারুকে খুজতে থাকায় বেশ ক্লান্ত হয়ে পরে আহান।।।
আকাশের দিক এ তাকিয়ে
আহানঃ উফ আল্লাহ কোথায় খুজব আমি মেয়েটাকে??
হঠাৎ একটা পরিচিত কন্ঠ আহানের কানে ভেসে উঠে –
আহানঃ কন্ঠ টা শুনে বাজারের সামনে দিক এ এগুলে-
দেখে একটা মেয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দোকানদারের সাথে দরকষাকষি করছে।।
মেয়েটিকে পিছন থেকে দেখে আহানের আর বুঝতে বাকি রইল না মেয়েটি কে
তাড়াতাড়ি করে চারুর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে–
আহানঃ তুমি এই খানে আর আমি তোমাকে কোথায় কোথায় খুজে বেরাচ্ছি??
চারু ঃ ভাইয়া আপনি এই খানে?(অবাক হয়ে)
ওয়েট ভাইয়া আগে এই দোকানদারের সাথে বুঝা পরা করে নেই।।।
চারু ঃ এই আপনি দিবেন??
লোকটিঃ আফা কেমনে দিমু।। এক হালি লেবুর দাম পঞ্চাশ টাকা আর আপনি দুই হালি লেবু চাইতাসেন ষাট টাকা।। আমি তো কিনসিই এক হালি চল্লিশ টাকা দিয়া।।
চারু ঃ আমি বুঝিনা এই সব কথা বলেই মানুষ কে বোকা বানান।আমি মোটেও বোকা নই তাই আমাকে বোকা বাননোর চেষ্টা করবেন না।।
মিথ্যা বললে আপনার সামনে দুইটা দাঁত কাউয়া এসে নিয়ে যাবে ঠোকর দিয়ে।
আহানঃ ওয়াট।??লাইক সিরিয়াসলি!!!! কি সব উলটা পালটা বলছ??
ভাইয়া দিন তো।আপনি যেই দামে বলছেন সেই দামেই দেন।।।
লোকটিঃ না ভাই থাক।।নেন আফা আপনার বলা
দামেই দাম রাখলাম।কথাটি বলে তাড়াতাড়ি করে লেবু গুলো একটা থলির মধ্যে ঠুকিয়ে চারুর হাতে দিয়ে দেয় লোকটি।।
চারু দাম দিতে চাইলে আহান চারুকে দামিয়ে–
আহানঃ……………….
চলবে…………৷৷
partঃ 21
Writer ঃ humayra khan
আহানঃ তোমার দাম দেওয়া লাগবেনা।।।আমিই দিয়ে দিচ্ছি।।। তুমি গিয়ে গাড়িতে বসো গিয়ে।।।
চারু ঃ ইসস আমাকে কি আপনার বোকা মনে হয়।
আমি কি কিছুই বুঝিনা।।।আমি সব বুঝি(ভাব নিয়ে)
আমি চলে গেলে আপনি লোকটাকে একশো টাকাই দিয়ে দিবেন।।।
লোকটি শুধু অবাক হয়ে চারুর কথা শ্রবণ করছিল।
লোকটিঃ আচ্ছা ম্যাডাম আপনেই দিয়া দেন টাকা।।
লোকটির কথা শুনে চারু তাড়াতাড়ি করে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিয়ে দিল।।
চারু ঃ ওই খানে ষাট না পয়ষট্টি টাকা আছে।।
আমার মন বিশাল বড়। তাই পাঁচ টাকা বেশি দিয়ে দিলাম।
লোকটিঃ কয় কি আমার পয়এিশ টাকা লস করাইয়া, এহন কয় আমি পাঁচ টাকা বেশি দিসি।।।।
কার মুখ দেইক্ষা যে আজ ঘুম থেইকা উঠসিলাম।
যে সকাল সকাল এমন কাস্টমার আইসে।।
(মনে মনে)
জ্বি ম্যাডাম হাচা কইসেন আপনার মন বিশাল বড়(শুকনো একটা হাসি দিয়ে)
আহানঃ হয়েছে।এখন চল
চারুঃ হুম চলেন।।।
চারু চলে গেলে লোকটির সস্তির নিশ্বাস ছাড়ে।।।
চারু ঃ তো বললেন না আপনি এই খানে কি করছেন।
আহানঃ আমার বউ কে নিতে আসছি(হেসে)
চারু ঃ কি সবজি বাজারে??? মানুষ তো বউ নিতে শ্বশুর বাড়ি যায়।।।(হেসে)
আহানঃ উফ আমি কেন আসলাম কি কারনে আসলাম সেই গুলো বাদ দাও।।।।।।
চলো বাসায় চলো লেট হয়ে যাচ্ছে।।।এমনি তোমার শরীর টাও বেশি ভালো দেখাচ্ছেনা।।।
চারু ঃ আমি আইস্ক্রিম খাব।। গলাটা আমার শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।।।।
আহানঃ তাই নাকি।।আচ্ছা তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো
আমি গিয়ে নিয়ে আসি।।।
তারপর আহান চারুকে গাড়ির সামনে নিয়ে গিয়ে ওকে গাড়িতে বসিয়ে চলে যায় আইস্ক্রিম কিনতে।।।।
কিছুক্ষণ পর আহান এসে গাড়িতে ঢুকে-
চারুর হাতে একটা ডাবের পানি ধরিয়ে দেয়।।।
চারু ঃএইটা কি(অবাক হয়ে)
আহানঃ এইটা আইস্ক্রিম।।। (হেসে)
চারু ঃ দেখুন মজা করবেন না।।।আমার আইস্ক্রিম কই???
আহানঃ আইস্ক্রিম ওর মামা বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে।
তাই আপাতত তুমি এইটা খাও।
ডাবের পানি হেলথ এর জন্য অনেক ভালো।
আর তোমার সর্দি লেগেছে তাই আইস্ক্রিম টাইস্কিম খাওয়া যাবেনা।
চারু ঃ এই কারনেই ডাক্তার দের সাথে থাকতে নেই।
তারা শুধু লেকচার দিতে থাকে।।
আহানঃ হ লেকচার দেই।।আর আমার লেকচার শুনতে তুমি বাধ্য।
চারু ঃ আপনি কেন আসলেন আমাকে নিতে ড্রাইভার আংকেল কে পাঠিয়ে দিতেন।।এমনি আপনার হাতে ব্যথা। গাড়ি চালাতে আপনার কষ্ট হবে।
আহানঃ তোমাকে কে বলল আমি তোমাকে নিতে আসছি? আমি তো এমনি ঘুরতে আসছি।
আমার হাতে এখন ব্যথা নেই।অনেক টা কমে গেছে।
তাই আমি ড্রাইভ করতে পারব।
কথাটি বলে আহান গাড়ি স্টাট দেয়।আর আপন মনে গাড়ি চালাতে থাকে।।।।
চারু মুখে পাইপ নিয়ে আহানের দিক এ তাকিয়ে থাকে।।
আহানঃ এই ভাবে বেশি ক্ষন আমার দিক এ তাকিয়ে থাকলে কিন্তু আমার প্রেমে পরে যাবা।।।।(সামনের দিক এ তাকিয়ে)
চারু আহানের কথা শুনে বেশ লজ্জায় পরে যায়।
তাড়াতাড়ি করে অন্য দিক এ মুখ সরিয়ে নেয় ও
আহান গাড়ি চালার ফাঁকে ফাঁকে চারুকে দেখে যাচ্ছিল
পুরোই বাচ্চাদে মতো করে আওয়াজ করে ডাবের পানি খাচ্ছে চারু।।।
কিছুক্ষন এর মধ্যে বাড়ি পৌছালো ওরা।
দরজার নক করলে মিসেস সাবিনা এসে দরজা খুলে দেয়।চারু আর আহানকে এক সাথে দেখে
তার হাসি মাখা মুখ টা নিমিষেই ফ্যাকসে হয়ে পরে।।
সাবিনাঃ আহান তুই বাহিরে গেলি কবে আর বাইরে বা গিয়েছিস কেন এই অসুস্থ শরীর নিয়ে।।।
আহানঃ আসলে মা(আমতা আমতা করে)
চারু ঃ আসলে আন্টি ভাইয়া আমাকে নিয়ে আসতে গিয়েছিল বাজারে।
আহানঃ ধুর পাগল কি বলছিস আবল তাবল।
আমি তো একটা জরুরি কাজের জন্য বাহিরে গিয়েছিলাম। আর ভাগ্যক্রমে তোর সাথে রাস্তায় দেখা হয়ে যায়।। তাই ভাবলাম তোকেও সাথে করে নিয়ে আসি।
আচ্ছা মা আমি আমার রুমে যাচ্ছি ফ্রেশ হতে।।
তারপর সেখান থেকে তাড়াতাড়ি করে কেটে পরে আহান।
চারুঃ আচ্ছা কাকিমা এই বাজারের ব্যাগ টা রান্না ঘরে রেখে আসি।।।।
চারু চলে যেতে নিলে মিসেস সাবিনা চারুর ডান হাত টা ধরে ওকে থামিয়ে দিয়ে–
সাবিনা ঃ তুই কি এতো নাজক কলি যে তোকে নিয়ে আসার জন্য আরেকজন কে যেতে হয়।।।আমি জানি আহান আমার সাথে মিথ্যা বলেছে।।।আহানের বলা কথা শুনে নিজেকে ভুলেও এই বাড়ির সদস্য ভাবিস না চারু।।। তুই এই বাড়ির বোঝা ছাড়া আর কিছুই না।
সাবিনা চারুর হাত শক্ত করে ধরায় বেশ কষ্ট পাচ্ছে চারু।।।।
সাবিনা তার কথা বলে চারুর হাতটা ছেড়ে চলে যায় সেই খান থেকে।।।।।।
কিছুক্ষন পর……………….
আহানঃ উফ এই চারুকে তো দেখছিনা কত ক্ষন ধরে।
তারপর নিজের রুম থেকে বের হয়ে সোজা চলে যায় আবির আর দিশার রুমে।।।
আহানঃ ভাবি চারুকে কোথায় দেখেছ??
দিশাঃ না কেন???
আহানঃ না এমনি
কথাটি বলে চলে যায় আহান।।।
বাসার পত্যেক টা রুমে চেক করে কিন্তু কোথাও খুজে পায়না আহান।
আহানঃ হয়ত চারু ছাদে আছে।।।
তারপর আহান ছাদে গিয়েও চারুকে খুজতে থাকে পাগলের মতো করে। কিন্তু ওর হাতে আসে শুধু ব্যর্থতা।
আহানঃ উফ আহান সব রুম চেক করলি। কিন্তু চারুর রুম টাই তো চেক করলি না।।
কথাটি বলে তাড়াতাড়ি করে চলে যায় চারুর রুমে।।।
রুমের দরজা নক করলে কারো রিসপনস না আসলে-
আহান চারুর রুমের ভিতর ঢুকে পরে।।
চারু চারু………
বলে ডাকতে থাকে আহান।
চারু ঃ আমি এইখানে ভাইয়া(কান্নার কণ্ঠে))
আহানঃ কোথায় তুমি????
চারু ঃ আমি ঘাটের নিচে।।।(কান্নার কন্ঠে)
আহান চারুর কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে পরে।।
ঘাটের সামনে নিজের হাটু গেড়ে বসে –
আহান খেয়াল করল চারু ঘাটের নিচে লম্বা হয়ে মাথা নিচু করে শুয়ে আছ।।
আহানঃ এই তুমি এই খানে ঘাটের নিচে কি করছ।।।??
চারু ঃ দেখতে পারছেন না আমি কান্না করছি
(আহানের দিক এ তাকিয়ে)
আহান খেয়াল করল চারু চোখের পানি নাকের পানি একাকার করে ফেলেছে কান্না করতে করতে।।।।।
আহানঃ কি হয়েছে এই ভাবে কান্না করছ কেন??? সেটা তো বলবে।।
চারু ঃ বাবার কথা খুব মনে পরছে ভাইয়া।।
সে আমাকে একা রেখে কেন চলে গেল।আমাকে কেন সাথে করে নিয়ে গেল না??
তাকে ছাড়া যে আমি বড্ড বেশি একা হয়ে গেছি।
দুনিয়াতে আমার আপন বলতে কেউ নেই(কান্না করে)
আহানঃ ঘাটের নিচে থেকে বের হও চারু।।।
চারু ঃ আমি বের হব না
আহানঃ দেখো চারু লাস্ট বারের মতো করে বলছি বের হও।। না হলে কিন্তু ভালো হবেনা (রেগে)
চারু আহানের কথা শুনে বেশ ভয় পেয়ে যায়।
তাড়াতাড়ি করে ঘাটের নিচ থেকে বের হয়ে পরে চারু।
আহান চারুর এক হাত টেনে রুম থেকে বের করে সোজা বাড়ির বাইরে এনে দাঁড় করায়।
যে যার রুমের মধ্যে থাকায় চারুকে এইভাবে বাইরে নিয়ে যাওয়ায় কারো প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়নি আহানকে।।।।।।।।
আহানঃ গাড়িতে উঠ চারু।
চারু ঃ কি??
আহানঃ উফ কি কি না করে গাড়িতে উঠে বস (চেচিয়ে)
চারু আহানের কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে উঠে পরে।
আহান ও গাড়িতে উঠে –
আহানঃ চারু সিট বেল্ট টা লাগাও।
চারু খেয়াল করল আহান প্রচুর রেগে আছে তাই কথা না বাড়িয়ে বাধ্য মেয়ের মতো সিট বেল্ট টা লাগিয়ে নেয়
চারুর সিট বেল্ট টা লাগানো হলে আহান খুব স্পিড এ গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে।।।
গাড়িতে বসে চারু হাজারো প্রশ্ন করতে থাকে কিন্তু আহান শুধু মুখ টা গম্ভির করে ড্রাইভিং ই করে যায়।
একটা উচু পাহাড়ের সামনে এসে আহান গাড়ি টা থামিয়ে দিয়ে–
আহানঃ গাড়ি থেকে নামো চারু।।
চারু আহানের এমন রাগান্বিত ফেস দেখে কোন কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরে।।
আহান ও গাড়ি থেকে নেমে চারুর হাত ধরে পাহাড়ের উচু চড়ায় নিয়ে দাঁড় করায়।
চারপাশে শুধু গাছগালি আর পাখির ডাক।।
চারু ঃ আমাকে এই খানে নিয়ে আসলেন কেন??
আমাকে মেরে ফেলার প্লেন করেছেন নাকি এই খানে এনে???
আহানঃ হুম।ঠিক ভেবেছ।।
চারু ঃ এ্যাা….ভাইয়া আমার হাত ছাড়ুন।। আমি এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাইনা।।।
আহানঃ সরি চারু ইটস বেরি লেট..বললে না তোমার বাবা তার সাথে করে তোমাকে কেন নিয়ে যায় নি। তাই তোমার বাবার কাছেই পাঠাচ্ছি তোমাকে।।চোখ টা বন্ধ কর মরতে কিছুটা কম কষ্ট হবে।।
চারু ঃভাইয়……(কান্না করে)
আহানঃ আই সেইড ক্লোস ইউর আইস।। আর কান্না করা বন্ধ কর।।
চারু ঃ করছি তো মরার আগে কি একটু কান্নাও করতে দিবেন না নাকি।।।
তারপর চারু ওর চোখ গুলো বন্ধ করে নিলে আহান চারুর দিক এ তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে আকাশের দিক এ তাকিয়ে নিজেও নিজের চোখ গুলো বন্ধ করে –
আহানঃ আই লাভ উ চারু…………..(চিৎকার দিয়ে)
আহানের বলা কথাগুলো প্রতিধ্বনি হয়ে পাহাড়েরর চারপাশে ভেসে উঠে
চারুঃ…………
চলবে………….