ছায়া হয়ে থাকবো পাশে part- 33

0
5939

ছায়া হয়ে থাকব পাশে
part ঃ 33
Writer ঃ humayra khan

দিশাঃ আরে দেবর এর হবু বউ এর সাথে তো একটু ফান করাই যায় তাইনা মা?????
সাবিনা ঃ হ্যা একবারে ঠিক বলেছো দিশা….(হেসে)
চারু ঃ কাকিমা আপনিও তাল মিলাচ্ছেন দিশা ভাবির সাথে..
চারু ফ্লোর থেকে উঠে গিয়ে সেইখান থেকে যেতে নিবে আহান চারুর হাতটা ধরে–
আহানঃ কোথায় যাচ্ছে আমার চড়ই পাখিটা???
চারু ঃ আমার হাত ছাড়ুন আর অই রিয়া পেত্নির সাথে বিয়ে করুন…..
আহানঃ সত্যি তো??(চোখ টিপ দিয়ে)
সাবিনাঃ হয়েছে হয়েছে আর কেউ আমার মেয়েকে রাগাবে না বলে দিলাম….
আমি তো পারলে আজই তোদের দুইজন এর বিয়ে দিয়ে দেই…..কিন্তু আহানের বাবা আর আবির অফিসের কাজে দেশের বাইরে থাকার কারনেই এক সপ্তাহ পর বিয়ের ডেট টা ফিক্সড করা হয়েছে…….
দিশাঃ সম্যসা নেই মা তারা দুইদিন পরই চলে আসছে দেশে… এই দুইদিন আমরা নিজেরাই বিয়ের শপিং করে নিবো….
দিশাঃ ভাইয়া বিয়েতে কিন্তু আমি চারুর সাইডে থাকব বলে দিলাম…..
সাবিনাঃ আমিও বিয়ের সময় চারু সাইডে থাকব ওর মা হয়ে…..
মিসেস সাবিনার বলা কথা শুনে চারুর চোখ বেয়ে দুইফোটা জল গড়িয়ে পরে….
আর ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মিসেস সাবিনাকে….

দেখতে দেখতে চারু আর আহানের গায় হলুদ এর দিন চলে আসে……..
চারদিকে শুধু আদন্দের হৈ হৈলাশ…..
চারু ওর বেড রুমে চুপ হয়ে বসে আছে আর রুমের চারদিকে শুধু বিয়ের জিনিস দিয়ে ভরা…..
দিশা চারুর রুমে দুইজন মেয়েকে নিয়ে এসে
দিশাঃ এই যে চারু সুন্দরী তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নাও…
আর এই বিউটিশিয়ান আপুরা তোমাকে হেল্প করবে রেডি হতে……….
চারু দিশার বলা কথা শুনে মাথা ন্যাড়ে হ্যাবোধক উত্তর দেয়…..
তারপর চারুকে রেডি করাতে শুরু করে দেয় মেয়ে দুইজন…..
প্রথমেই চারুকে একটা গাড় হলুদ রঙের উপর সবুজ ডিজাইনের শাড়ি পরানো হয়……….
তারপর দুইজন বিউটিশিয়ান মিলে চারুকে সাজানো শুরু করে..মেকাপ করা কম্পলিট হলে চারুরকে ফুলের গহনা পরিয়ে দেয় তারা…….
হটাৎ দিশা চারুর রুমে প্রবেশ করে চারুর উপর দিশার চোখ পরলে দিশা হা করে তাকিয়ে থাকে….
দিশাঃ আল্লাহ… তোমাকে তো আজ পুরাই রাজকুমারী লাগছে চারু…আহান ভাইয়া দেখলে তো বেহুস হয়ে পরবে……
চারু দিশার কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে–
আর বিউটিশিয়ান মেয়ে দুইজন হেসে উঠে চারুর লজ্জা মাখা মুখ দেখে
দিশাঃ আর লজ্জা পেতে হবেনা… এখন তাড়াতাড়ি চলো …..বেচারা আমার দেবর টা হয়ত তোমার অপেক্ষা করতে করতে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে…
তারপর দিশা আর কয়েকটা মেয়ে মিলে চারুকে নিয়ে ছাঁদ চলে যায়…….
চারুকে স্টেজ এর সামনে নিয়ে আসলে চারু খেয়াল করে আহান স্টেজ এ অলরেডি বসে আছে মুখে একরাশ হাসি নিয়ে…
দিশা আর মেয়ে গুলো চারুকে আহানের পাশে বসিয়ে দেয়……
আহানঃ আজ তো আমার চড়ই পাখিকে পুরাই হলুদ পরী লাগছে (ফিশ ফিশ করে)
চারু আহানের কথা শুনে কিছুনা না বলে মুচকি একটা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে..
আহানঃ কিছু তো বলো?
চারু ঃ নিশ্চুপ….
আহান কোন উপায় না পেয়ে সবার চোখ এর আড়ালে চারু কোমড়ে হাল্কা করে একটা চিমটি কেটে বসে…….
আহান এইভাবে চিমটি মারায় চারু আহানের দিক এ তাকালে —
চারু হা করে তাকিয়ে থাকে আহানের দিক…….
সাদা পাঞ্জাবিতে আহানকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে.
তার মুখের হাসিটা যেন তার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলছে……….
হঠাৎ হলুদ দেওয়ার জন্য মিসেস সাবিনা আসলে চারু তাড়াতাড়ি করে ওর চোখ জোড়া সরিয়ে নেয় আহানের থেকে……..
মিসেস সাবিনা চারু আর আহানকে হলুদ লাগিয়ে ওদের দুইজন এর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে দেয় তিনি
এক এক করে সবার হলুদ লাগানো শেষ হলে সকল মেহমান নিচে চলে যায় খাওয়ার জন্য…….
আহানঃ দিশা ভাবি সবাই তো হলুদ লাগালো…
কিন্তু আমি এখনো আমার বউকে হলুদ লাগালাম না(হেসে)
চারু ঃ অই মোটেও আমাকে হলুদ লাগানোর চেষ্টা করবেন না আপনি…
আহান চারুর কথায় কোন গুরুত্ব না দিয়ে নিজের দুইহাতে হলুদ নিয়ে লাগিয়ে দেয় চারুর গালে……
চারু বেশ রেগে যায় আহানের এমন কান্ড দেখে….
রাগের ঠেলায় চারু হলুদ এর বাটি থেকে সব হলুদ নিজের হাত এ নিয়ে লাগিয়ে দেয় আহানের পুরো মুখে.
আহান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে চারুর এমন কান্ড দেখে…
আর চারু আহানের হলুদ মাখা ফেস দেখে পেটে হাত রেখে জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে……
আহান আর চারুর এই সুন্দর মুহুর্তটাকে ক্যামেরাম্যান কেপচার করে ফেলেন তার ক্যামেরায়………
চারুকে নিচে রুমে নিয়ে যাওয়া হলে…….
দিশাঃ চারু আমি এখনি আসছি তুমি একটু রেস্ট নাও.
কথাটি বলে দিশা চলে যায় চারুর রুমে থেকে…..
চারু ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে আহান দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে……
চারু ঃ আপনি আমার রুমে কি করছেন(কাঁপা কন্ঠে)
আহান চারুর কথার কোন উত্তর না দিয়ে শয়তানি একটা হাসি দিয়ে চারুর সামনে এগোতে লাগলো..
চারু ঃ অই আমার কাছে আসছেন কেন??
আহান চারুর একবারে কাছে এসে চারুর কোমড়ে হাত রেখে–
আহানঃ আমার ফেস টার কি অবস্থা করেছো তুমি তার প্রতিশোধ নিতে এসেছি….
কথাটি বলে আহান চারুর গালে সাথে নিজের গাল স্লাইড করতে লাগলো… আর চারু তো লজ্জায় কিছুই বলতে পারছেনা….শক্ত করে আহানের পাঞ্জাবি ধরে রেখে চোখ বন্ধ করে আছে ও……
আহানঃ আল্লাহ এখনই এমন লজ্জা লাগছে তোমার বাসর রাতে কি করবা?? (হেসে)
চারু আহানের বলা কথা শুনে বড় বড় চোখ করে তাকায় আহানের দিক এ…..
আহান থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আহান আরও শক্ত করে চারুর কোমড় জড়িয়ে ধরে…
চারু ঃ অই ছাড়েন বলছি আমাকে….
আর কিসব পচা পচা কথা বলছেন..ছিঃ…
আহানঃ এইগুলা পচা কথা না এই গুলাই ভালো কথা..(হেসে)
হটাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলে,…..
চারু ঃ অই তাড়াতাড়ি করে বের হন রুম থেকে…
কেউ দেখে ফেললে তো লজ্জায় মরে যাবো আমি..
আহান চারুর কপালে একটা চুমু দিয়ে দরজা টা খুলে তাড়াতাড়ি করে চলে যায় রুম থেকে……..
দিশা চারুর রুমে ঢুকে….
দিশাঃ আল্লাহ কতক্ষন ধরে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছলাম… কিন্তু…. এতোক্ষন ধরে আপনারা কি করছিলেন শুনি???(হেসে)
চারু দিশার কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে…
দিশাঃ ইসস লজ্জায় গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে……
এই যে আপনি ভিতরে আসুন…….
দিশার কথা শুনে চারু দরজার দিক এ তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে হাতে মেহেদী থালা নিয়ে রুমে প্রবেশ করছে…….
দিশাঃ আপু আপনি তাড়াতাড়ি করে চারুর দুই হাতে সুন্দর করে মেহেদী পরিয়ে দেন….
আমি একটু নিচের থেকে আসছি……
আর্টিসটঃ জ্বি ম্যাম……….
তারপর চারু বিছানায় বসলে মেয়েটি চারুকে মেহেদী পরাতে থাকে………..
এক হাতে মেহেদী পরানো শেষ হলে–
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলে চারু আর মেয়েটি দরজার দিক এ তাকালে দেখে আহান দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে…..
আহান রুমের মধ্যে প্রবেশ করে….
আহানঃ আপু আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমি আমার হবু বউকে মেহেদী পরাতে পারি????
মেয়েটি আহানের বলা কথা শুনে…
আর্টিসটঃ আপনি মেহেদী পরাতে পারেন?(অবাক হয়ে)
আহানঃ হুম ডাক্তার হওয়াতে আমি অনেক সুন্দর আর্ট করতে পারি. এই যেমন ধরেন(মানুষ হৃদপিনড; মস্তিষ্ক ;কঙ্কাল) এইগুলো অনেক সুন্দর করে আঁকতে পারি…
আহানের কথা শুনে মেয়েটি হা করে তাকিয়ে থাকে আহানের দিকে…
আহানঃ আপু মুখ টা বন্ধ করুন মশা চলে যাবে তো মুখে…..
মেয়েটি লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি করে নিজের মুখ টা বন্ধ করে নেয়….
চারু ঃ অই কি সব যাতা বলছেন আপনি তাড়াতাড়ি করে বের হন রুম থেকে(রেগে)
আহানঃ আচ্ছা বাবা ওই গুলা কিছুই আঁকব না তোমার হাতে জাস্ট আমার নাম টাই লিখব…
চারুঃ সত্যি তো…..হৃদপিনড; মস্তিষ্ক অই গুলা আকবেন না তো আমার হাতে….
আহানঃ হ্যা বাবা সত্যি…
আর তুমি তোমার চোখ বন্ধ করো…..আপু আপনিও আপনার চোখ বন্ধ করেন….
আহানের কথা শুনে চারু অবাক হলে –
আহানঃ আহ রে করো না…
চারু আহানের কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়……
চারু ওর চোখ বন্ধ করলে আহান চারুর হাত নিজের হাতে রেখে ওকে মেহেদী পরাতে শুরু করে….
পাঁচ মিনিট হয়ে গেলে……
চারু ঃ কি হলো হয়নি??????
আহানঃ আরে এক মিনিট দাঁড়াও….
আহানঃ হয়েছে এইবার চোখ খুলো……..
আহানের কথা শুনে চারু আর মেহেদী আর্টিসট চোখ খুললে চারুর হাতের মেহেদী ডিজাইন দেখে ওরা দুইটা ই শকড….
চারু ঃ আহান. আপনি এতো সুন্দর মেহেদী লাগাতে পারেন……
আহানঃ সত্যি সুন্দর হয়েছে????
চারু ঃ হুম অনেক…..আপনি এতো সুন্দর মেহেদী পরাতে পারেন….????????
আহানঃ হুম এই এক সপ্তাহ অনেক গুল মেহেদী ভিডিও দেখে শিখে নিয়েছি… অনেক ইচ্ছা ছিল আমার চড়ই পাখিটার হাতে আমি নিজেই মেহেদী পরিয়ে দিব….
আহানের বলা কথা শুনে চারু চোখ বেয়ে দুই ফোটা জল গড়িয়ে পরে……
আর্টিসটঃ ম্যাম আপনি অনেক বেশি লাকি এমন একটা ছেলে পেয়েছেন……
চারু ঃ………..

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here