ছায়া হয়ে থাকবো পাশে part- 31

0
1165

ছায়া হয়ে থাকব পাশে
part. ঃ 31
Writerঃ humayra khan

সাবিনা সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে চারুকে………
সাবিনাঃ আমাকে তুই ক্ষমা করে দে মা…..
আমি অনেক খারাপ আচরন করেছি তোর সাথে….
আজ আমার কারনেই তোর উপর এই ঝড় বয়ে গেছে.
চারু ঃ না কাকিমা প্লিজ আপনি বড় হয়ে আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন না….. তাছাড়া আমার ভাগ্য এ যা লিখা ছিল তাই হয়েছে……
সাবিনাঃ সত্যি….. তুই আমায় ক্ষমা করে দিয়েছিস মা.
আহানঃ চারু ক্ষমা করতে পারলেও আমি কখনো ভুলতে পারব না মা যে আজ তোমার ভুলের কারনেই….
কথাটি বলে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে আহান….
হঠাৎ আহানের ফোনটা বেজে উঠলে আহান বেলকনি তে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে…..
আহানঃ হ্যালো কিছু খবর পেয়েছো মেহেদী আর ওই ড্রাইভার টার????
ফোনের অপর পাশের লোকটিঃ
জ্বি স্যার…. আপনার ধারনাই ঠিক ছিল… দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্লেন করছিল…. কিন্তু সময় মতো ধরে ফেলেছি শয়তান গুলো কে….. এখন আপনি এসে দেখেন কি করবেন….
আহানঃ গুড… ওদের আমি পুলিশে দেওয়ার মতো ভুল করবো না ওদের আমি নিজ হাতেই উচিৎ শিক্ষা দিবো
আচ্ছা তাহলে… আমি আসছি….
কথাটি বলার সাথে সাথে ফোনটি কেটে দেয় আহান…
বেলকনি থেকে রুমের মধ্যে এসে–
চারু মিসেস সাবিনার কোলে মাথা রেখে কান্না করতে থাকে……
আহান চারুর এক হাত ধরে…..
আহানঃ উঠো চারু…..
চারু বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আহানের দিক এ.
আহানঃ অবাক হয়ে না তাকিয়ে চলো আমার সাথে..
দিশাঃ ভাইয়া কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন চারুকে….
আহানঃ ভাবি এখন বলার সময় নেই… বাসায় এসে সব কিছু বলবো….
চারু ঃ না আমি কোথাও যাব না….
আহান বেশি কিছু না ভেবে চারুকে কোলে তুলে নিয়েই বাসার থেকে বের হয়ে পরে…..
গাড়িতে চারুকে বসিয়ে খুব স্পিড এ গাড়ি চালাতে থাকে আহান…….
ফার্ম হাউস এ…..
মেহেদী ঃ ওয়াট থা হেল… কেন আমাকে বেধে রাখা হয়েছে….
লোকটিঃ স্যার আসলেই বুঝতে পারবি তোকে কেন বেধে রেখেছি……

কিছুক্ষনের মধ্যেই ওরা ফার্ম হাউস এ এসে পৌছালে-
আহান গাড়ি থেকে নেমে —
আহানঃ গাড়ি থেকে নামো চারু….
চারু ঃ আমি বাসায় যাব… কেন নিয়ে এসেছেন আমাকে এই খানে……
আহান চারুর কথা শুনে কিছু না বলেই চারুর এক হাত টেনে বের করে আনে গাড়ি থেকে…..
ফার্ম হাউসের ভিতরে ঢুকে
চারু ডাক্তার মেহেদী আর ড্রাইভারকে দেখে ভয়ে কাপতে থাকে….
আহানঃ কি হলো চারু ভয় পাচ্ছো কেন…আমি চাই তুমি নিজ হাতে শাস্তি দাও ওদেরকে…
মেহেদী আর ড্রাইভার টা বেশ অবাক হয় চারুকে দেখে..
মেহেদী ঃ তুমি বেচে আছো???( অবাক হয়ে)
চারু মেহেদীর বলা কথা শুনে রেগে মেগে ওর সামনে গিয়ে নিজের পায়ের জুতা খুলে অনবরত মারতে থাকে মেহেদীর গালে…..
চারু ঃ হ্যা বেচে আছি…. তোর মতো শয়তানকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই আল্লাহ আমাকে এখনো বাচিয়ে রেখেছেন……
মেহেদী ঃ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও… সত্যি তখন আমার মাথা ঠিক ছিলো না।।।তাই তোমাকে অমানুষ এর মত মরার জন্য রাস্তায় ফেলে দেই…..
চারু ঃ তুই যদি আমাকে মেরেও ফেলতি তাও এতো টা কষ্ট হতো না আমার। কিন্তু আজ তোর জন্য সারা জীবন আমাকে সবাই ধর্ষিতা বলে ডাকবে….
কথাটি বলে চারু মেহেদীকে মারতে যাবে এর আগেই-
ড্রাইভারঃ ম্যাম আপনি ধর্ষিতা না….
ড্রাইভার এর বলা কথা শুনে চারু আর আহান দুইজন ই শকড…..
চারু ঃ মানে…….
মেহেদী ঃ মানে হলো তোমার সাথে তেমন কিছুই হয়নি…. তোমার সাথে কিছু করার আগেই তুমি ভয়ে বেহুস হয়ে পরো।।। তুমি অজ্ঞান হওয়ার পর কিছুই করিনা আমি তোমার সাথে.. বেশ ভয় পেয়ে যাই আমি…. তাই বেশি কিছু না ভেবে গাড়ি থেকে ফেলে দেই তোমাকে….
চারু ঃ মানে তখন গাড়ি তে আমার সাথে কিছুই হয়নি..?
ড্রাইভারঃ হ্যা ম্যাম কিছুই হয়নি আপনার সাথে আর আপনি বেচে ও আছেন.. প্লিজ আমাদের এখন ছেড়ে দেন… আমরা কখনো আর এমন ভুল করবো না..
আহানঃ তোদের ছেড়ে দিব এই কথা ভাবলি কিভাবে রে।।।।।
তারপর আহান মেহেদী আর ড্রাইভার কে মারতে থাকে নিজের শরীরের সব শক্তি দিয়ে..
তাদের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে গেলে-
চারু আহানকে থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু আহান চারুর কথায় কান না দিয়ে মার‍তে থাকে দুইজনকেই
চারু ঃ আহান আমার কসম লাগে আপনি যদি আরেকবার ওদের উপর হাত উঠান……
চারুর কথা শুনে আহান চারু দিক এ অবাক দৃশটিতে তাকিয়ে–
আহানঃ তুমি ওদের বাচাতে চাইছো….
চারু ঃ আহান ডাক্তার এর দায়িত্ব মানুষ এর জীবন বাচানো কারো জীবন নেওয়া না…..আর আমি চাইনা আপনার হাতে কেউ খুন হোক…আর এদের উচিৎ শিক্ষা পুলিশ দিবে….
লোকটিঃ হ্যা স্যার ম্যাম ঠিক বলেছে এদের পুলিশ এর হাতে দেওয়াই ঠিক হবে….
আহান চারুর কথা শুনে —
নিজের ফোনটা নিয়ে কাউকে কল দেয়..
আধা ঘণ্টা মধ্যে দুই জন পুলিশ আসলে –
পুলিশ ঃ ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মিঃ মেহেদী…
কথাটি বলার সাথে সাথে পুলিশ মেহেদী আর ড্রাইভারকে হেন কাপ পরিয়ে দিলে-
মেহেদী ঃ অই আমাকে ছাড়ুন বলছি… আমিতো কিছুই করিনি…. আই সেইড লিভ মাই হেনড
চারু মেহেদীর কথা শুনে সাথে সাথে একটা জোড়ে থাপ্পড় মেরে বসলো…….
চারুর হাতের থাপ্পড় খেয়ে মেহেদী খুব রাগি দৃশটিতে তাকিয়ে থাকে চারুর দিক এ….
চারু সেই দিক তোয়াক্কা না করে
মেহেদী মুখে থু থু ফেলে দিয়ে–
চারু ঃ তোরা জানিস আমাদের সমাজের এক প্রকার গারবেজ…
তোদের কারনেই আমাদের সমাজটা দূষিত হয়ে আছে..
তোদের কারনেই মেয়েরা এখনো স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারেনা….রাস্তায় বের হতে গেলেই ভয়ে থাকে তোদের মত অমানুষ এর কারনে…
মন তো চাচ্ছে তোকে ডুবন্ত তেল এর মধ্যে চুবিয়ে চুবিয়ে মারি।। কিন্তু তোর মতো আবর্জনাকে মেরে নিজের হাতকে নোংরা করতে চাইনা…..
প্লিজ ইন্সপেক্টর নিয়ে যান এই শয়তান টাকে আমার চোখ এর সামনে থেকে……
পুলিশ মেহেদী আর ড্রাইভার কে নিয়ে গেলে—
চারু আহানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে…
আহানঃ এখন কান্না করছো কেন এখন তো সব ঠিক হয়ে গেছে…..
চারু ঃ আপনি ওই সময়টাতে আমার পাশে না থাকলে আজ হয়ত আমি বেচে থাকতাম না আহান। আর এই সত্যি টাও কখনো জানা হতো না যে তখন আমার সাথে কিছুই হয়নি……
আহানঃ দাঁড়াও বাসায় কল দিয়ে জানিয়ে দেই বিষয় টা.
আহান দিশাকে কল দিয়ে সমস্ত বিষয় খুলে বললে –
দিশা সাথে সাথে মিসেস সাবিনাকে জানিয়ে দেয় বিষয় টা….
সাবিনাঃ আমি গিয়ে রিয়া আর মায়াকে বলে আসি এই ব্যাপার টা মায়ার রুমে গিয়ে….
মায়াররুমে…….
রিয়াঃ দেখলে মা আহান আমাকে কতটা অপমান করলো……তাও তুমি থাকতে চাইছো এই বাসায়…
মায়াঃ হুম থাকতে চাইছি কারন সেইটা তুইও জানিস.
রিয়াঃ খালামনি থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য…
মায়াঃ হ্যা……ছোট কাল থেকেই বাবা মা আমার থেকে আপুকে বেশি আদর করতো….. কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার সময় যখন আমার থেকে বেশি আপুকে তার সম্পওি দিয়ে যায় তখন আপুর প্রতি ঘৃনার পরিমান টা হাজারো গুন বেড়ে যায় আমার মনের মধ্যে……
তখন ই সিদ্ধান্ত নেই যে আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি তার যে দ্বিগুণ কষ্ট আমি আপুকে দিবো আর সেইটা একমাত্র তুই করতে পারবি আহানকে বিয়ে করে…..
এই বাসার বউ হয়ে…..নিবি না মা আমার প্রতিশোধ..
রিয়াঃ হ্যা মা.. নিবো।। এই বাসার বউ হলে অই সাবিনা ডায়নিকে এমন উচিত শিক্ষা দিবো…
কিন্তু সেইটা হয়ত আর পসিবেল না মা….কারন আহান অই চাকরানিকে ভালোবাসে…..
মায়াঃ টেনশন নিস না… রিয়া…. আহান একটা ধর্ষিতা মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হলেও অই সাবিনা ডায়নি রাজি হবে না কখনো……
হঠাৎ কেউ জোরে জোরে তালি বাজিয়ে মায়ার রুমে প্রবেশ করে আর সেই ব্যক্তি টা আর কেউ নয় সয়ং মিসেস সাবিনা খান…..
মায়া আর রিয়া বেশ ভয় পেয়ে যায় মিসেস সাবিনাকে দেখে………
মায়াঃ আপু তুমি???
সাবিনাঃ আপু কেন বলছিস এতো ক্ষন তো দুই জন মা মেয়ে আমাকে ডায়নি বলে ডাকছিলি….
মায়াঃ আপু তুমি নিশ্চয়ই ভুল কিছু শুনেছো।।।
মিসেস সাবিনা সাথে সাথে মায়ার গালে একটা থাপ্পড় মেরে বসে….
সাবিনাঃ ভুল কিছু না সঠিক কথাই শুনেছি আমি…
জানিস চারুর সাথে যে তখন কিছুই হয়নি সেইটা বলতে আসছিলাম তোর রুমে কিন্তু রুমের দরজার সামনে এসে তোদের এই জগন্য সত্য টা জানতে পারি…
জানিস বাবা মারা যাওয়ার সময় তোকে কিছুই দিয়ে যায়নি… তোর উপর রাগ করে… কারন তুই দেশের বাইরে গিয়ে বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছিস এর পর বাবার আর কোন খোজ খবর রাখিস নি…. সে বেচে আছে নাকি মারা গেছে…
তাই বাবা রাগ করে তোকে কিছুই দিয়ে যায়নি মারা যাওয়ার সময়….
মায়াঃ কিন্তু আমি যখন দেশে ফিরে আসলাম তখন তো উকিল আংকেল বললো… বাবা মারা যাওয়ার সময় ফোরটি পারসেন্ট সম্পওি আমার নামে লিখে গেছে…
সাবিনাঃ অই টা আমিই বলতে বলেছিলাম তাকে….
জানিস আমি চাইলে তোকে অর্ধেক সম্পওি দিয়ে দিতে পারতাম কিন্তু বাবাকে যে কষ্ট টা দিয়েছিস তাই.
কিন্তু আজ মনে হচ্ছে বাবা যা করে ছিলেন তা ঠিক করেছেন তুই কারই ভালোবাসা পাওয়া যোগ্য না..
কাল সকাল সকাল দুই জন মা মেয়ে বের হয়ে যাবি এই বাসা থেকে….তোদের চেহারা টাও আমি দেখতে চাইনা।
কথাটি বলে মিসেস সাবিনা বের হয়ে পরে মায়ার রুম থেকে……
চারু আর আহান বাসায় এসে পৌছালে—
দিশা শক্ত করে চারুকে জড়িয়ে ধরে……..
দিশাঃ উফফ আমি যে কত খুশি তোমার জন্য আমি বলে বোঝাতে পারবনা চারু….
হঠাৎ মিসেস সাবিনা আসলে আহান মিসেস সাবিনাকে দেখে সাথে সাথে চলে যায় সেই খান থেকে…..
মিসেস সাবিনা আহানের এইভাবে চলে যাওয়া দেখে মন খারাপ করলে–
চারু ঃ কাকিমা আপনি মন খারাপ করবেন না…
আমি আহানকে বুঝিয়ে বলবো….
সাবিনাঃ ওর রাগ করাটা জায়েজ রে মা অই মেহেদী সাথে সাথে আমিও কম দোষী নই….
কথাটি বলার সাথে সাথেই কান্না করতে করতে চলে যায় মিসেস সাবিনা…….
চারুঃ আহানকে আমার বুঝাতে হবে…
চারু আহানের সাথে কথা বলার জন্য ওর রুমে গিয়ে ওকে খুজলে–
রুমে আহানকে না পেলে—
চারুঃ জানি কোথায় আছেন……..
তারপর চারু সোজা চলে যায় ছাদ এ………..
ছাদ এ গিয়ে দেখে আহান ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিক এ তাকিয়ে আছে…….
চারু দৌড় দিয়ে আহানকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে..
আহানঃ চারু…
চারু ঃ হুম আমি…. আহান আজ আমি অনেক বেশি খুশি…. মন তো চাচ্ছে লুঙ্গী ডান্স দেই…..
চলেন আজ আপনাকে সাথে নিয়েই লুঙি ডান্স দেই..
(হেসে)
আহানঃ………….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here