জান্নাহ্ “পর্বঃ৪৭

0
2889

#জান্নাহ্
#পর্বঃ৪৭
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

সকালটা তপ্ত রোদে ছাওয়া।ভ্যাবসা গরমে নাভিশ্বাস উঠার যোগাড়।ঘূর্ণায়মান ফ্যানের নিচেও যেনো মনে হচ্ছে আগুনের দলা সিলিং খসে খসে পড়ছে।সেই হাওয়াতেও জ্বলছে শরীর।

ড্রয়িং রুমে বসে পান চিবুচ্ছে অন্তরা।তার পাশেই বসে আছে সারোজা বেগম।জান্নাহ্কে ডেকে আনে নিধি।তাকে দেখেই একগাল হাসলেন সারোজা বেগম।পান খাওয়া দাঁতগুলো কেলিয়ে বললেেন—

“অ্যারে বউ তুই দেহি আগেরতুন আরো বেশি সুন্দর হইছোস!

জান্নাহ্ মৃদু হাসে।নিঃশব্দে সারোজা বেগমের পাশে গিয়ে বসে।তার দিকে উন্মুখ হয়ে আছে শুভ্রা,অন্তরা,নিধি।সারোজা দাঁত কেলিয়ে হেসেই জান্নাহ্ এর শাড়ির আঁচল ভেদ করে তার পেটে হালকা চাপ দেয়।চমকে উঠে জান্নাহ্।চোখ বড় বড় করে তাকাতেই মৃদু হেসে অন্তরা বললেন—

“ভয় পাইয়ো না বউ।খালা দেখতাছে তোমার পোলা অইবো না মাইয়া।”

জান্নাহ্ কিঞ্চিৎ ভ্রু ক্রুটি করে তার বিরক্তি বুঝানোর চেষ্টা করে।সারোজা বেগম দাম্ভিক হেসে বললেন—

“চিন্তা করিস না অন্তরা,পোলাই অইবো।”

অন্তরা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো যেনো।তার চোখ,মুখ ঝলমলে সোনালী রোদের মতো চিকচিক করে উঠে।
প্রাণখোলা হেসে বললেন–

“সত্যি কইতাছো খালা!

সারোজা ক্রোধান্বিত গলায় বললেন—

“তোর কী মনে অইতাছে আমি মিছা কথা কই!সারোজা বেগম যা কয় তাই ই অয়।তোর সারহাইন্নার পোলাই অইবো।মনে নাই শুভার সময় কী কইছিলাম!পোলা অইবো কইছিলাম আর তোর নাতি অইছিলো।”

প্রশান্তিময় হাসলেন অন্তরা।সারোজা বেগম সেকেলে মানুষ।তার চক্ষু তীরের ফলার মতো।যেনো খুঁচিয়ে ভেতরের খবর বাইরে নিয়ে আসেন।তাই তিনি দেখেই বলতে পারেন ছেলে হবে না মেয়ে।দাত্রী হিসেবেও তার অনেক পরিচিতি।জাবিন আর তিতির সময় তিনিই ছিলেন।হয়তো কোনো মেডিক্যাল ইস্যু না থাকলে জান্নাহ্ এর নর্মাল ডেলিভারিতে তিনিই থাকবেন।কিন্তু সারোজা বেগমের বয়স হয়েছে।

জান্নাহ্ অধর কোণে হাসলো।মনে মনে আরেক পসলা হাসলো।এভাবে কী বলা যায় নাকি ছেলে হবে না মেয়ে হবে!তার উপর সারহান চায় তার মেয়ে হোক।সারহানের ধারণা তার একটা ছোট্ট পরী হবে।কিন্তু সে যদি জানে তার পরী নয় রাজকুমার হবে তখন!

জান্নাহ্ কথা বাড়ালো না।বয়স্ক মানুষ যা বুঝেছেন তাই বলেছেন।যা হবে দেখা যাবে।আপাতত তার বাবার পাগলামি ভয়ংকর।মৃদু গলায় জান্নাহ্ বললো—

“দাদু,আপনার জন্য চা নিয়ে আসি?

সারোজা বেগম আপত্তি করে বললেন–

“নাহ।গরমে মইরা যাইতাছি।এই গরমে চা খাইতাম না।”

“তাহলে বেলের শরবত নিয়ে আসি?

“যাও,এতো যখন কইতাছো নিয়া আসো।একটু চিনি বাড়াইয়া দিও।”

“আচ্ছা।”

জান্নাহ্ উঠে দাঁড়াতেই দেখে ঝড়ের বেগে দরজা দিয়ে ঢুকেছে সারহান।কোনোদিকে তার খেয়াল নেই।সোজা গিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে।অন্তরা কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে সরস গলায় বললেন–

“তোমারে আর শরবত বানান লাগবো না বউ।সারহান আইছে তুমি ঘরে যাও।”

“জ্বী আম্মা।”

অন্তরা নিধিকে শরবত বানিয়ে আনতে বললেন।সারোজা বেগম মুখে বড়সড় পান গুঁজে নিলেন।পান চিবুতে চিবুতে বললেন—

“বউডা দিনদিন কী সুন্দর হইতাছে!পোয়াতি মাইয়ারা এমনেই সুন্দর অয়।তার উপর তোমার বউর তো পোলা অইবো।পোলা অইলে মায়েগো রূপ খেইলা উঠে।দেহোনাই শুভার সময় অইছিলি!আমাগো শুভা কী সুন্দর অইছিলো!

অন্তরা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

ঘরে ঢুকে আরেক দফারফা।সারহান তার ঘামার্ত জামা কাপড় বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে রেখেছে।শশব্যস্ত হয়ে কাপড় পরিবর্তনে ব্যস্ত সে।ধূসর রঙের শার্টটা পরেই আলমিরা খুলে কিছু নগদ টাকা আর চেক বইটা নিয়ে নেয়।জান্নাহ্ মনোযোগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিভ্রান্ত গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে—

“কী হলো?কোথায় যাচ্ছেন?

সারহান সরল গলায় বললো—

“ঢাকা।”

চমকে গিয়ে জান্নাহ্ বললো—

“কেন?

নিজের সবকিছু গোছগাছ করে নিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে বিতৃষ্ণা গলায় সারহান বললো–

“এই শ্রীজাটাও মরার সময় পেলো না!

জান্নাহ্ এর সন্দিগ্ধ চোখের চাহনিতে সারহান আবার বললো–

“এনজিও পেছনের দিকে ঘরগুলো অনেক পুরোনো।গত ঝড়ে সেগুলোতে ফাটল দেখা দেয়।বিভিন্ন ঝামেলার কারণে ঠিকও করতে পারিনি।তৌহিদ আর তানিয়াকে কতবার বললাম কাউকে যেনো সেদিকে যেতে না দেয়।গাধার বাচ্চাগুলা কী করে কে যানে!আর এই শ্রুতিটাও কারো কথা শোনে না।কী করতে গিয়েছিলো কে জানে!দেয়াল ধ্বসে শ্রুতির পায়ের উপর পড়েছে।”

আঁতকে উঠে জান্নাহ্।উদ্বেলিত গলায় বললো—

“কী বলছেন এইসব?

“হুম।শায়িখ ওকে হসপিটালে নিয়েছে।আমাকে এখনই যেতে হবে।”

জান্নাহ্ এর কাছে এসে দাঁড়ায় সারহান।তার ললাটে অধর ঠেকিয়ে বললো—

“আমি দু’দিন পর এসে আপনাকে নিয়ে যাবো।সাবধানে থাকবেন।আর আমার পরীর খেয়াল রাখবেন।”

জান্নাহ্ সারহানের দুই হাত ধরে চোখের ইশারায় তাকে আশ্বস্ত করে।

“আসি।”

ব্যস্ত পদযুগলে লম্বা লম্বা পা ফেলে বের হয় সারহান।জান্নাহ্ এর পাংশুটে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তপ্ত দীর্ঘশ্বাস।
,
,
,
হসপিটালের করিডোরে বিষন্ন মনে দাঁড়িয়ে আছে সারহান।হসপিটালে এসে শ্বাস নেওয়ারও সময় পায়নি।শ্রুতির চিৎকারে যেনো মুছড়ে যায় তার ভেতরটা।মেয়েটা কী কখনো একটু সুখ পাবে না!

করিডোর থেকে সারহানের চোখ যায় রিসিপশনে।একটা তেরো কী চৌদ্দ বছরের মেয়ে একজন বয়স্ক মানুষের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।গাঢ় দৃষ্টিতে মেয়েটিকে দেখে সারহান।মেয়েটি রিসিপশনে ওয়েটিং চেয়ারে বসে।পাশে অতি সাবধানে বয়স্ক মানুষটিকে নিয়ে বসায়।

সারহানের মানসপটে ভেসে উঠে সেই সন্ধ্যেবেলা।এমনই একদিন হসপিটালে প্রথম দেখেছে সে তার রজনীগন্ধাকে।দুই ঘন পল্লবে আবৃত চোখ,একপাশে সিঁথি করে চুল ফেলে রেখেছে দু’পাশে।সেই চুল গিয়েছে ঠেকেছে তার রজনীগন্ধার কোমরে।সিঁথির দুই পাশে তিনটি করে মৌ ক্লিপ লাগানো।ব্রাউন কালারের চুড়িদারের সাথে হলুদ,কালোর মিশেলে হাঁটু অব্দি লম্বা ফ্রক।পায়ে লাইট পিংক কালারের স্ক্যাকার্স।
জান্নাহ্ তার বাবার হাত ধরে যাচ্ছে আর বারবার ফিরে দেখছে সারহানকে।সারহানের পুরো শরীর তখন রক্ত মাখানো।বেখেয়ালিভাবেই সারহান তাকায় জান্নাহ্ এর দিকে।কিন্তু জান্নাহ্ এর ওই হৃদয়হরণ করা চোখ আর কলিজা কাঁপিয়ে দেওয়া তার পাতলা ঠোঁটের হাসিতেই যেনো ক্ষনে ক্ষনে মরতে ইচ্ছে হয় সারহানের।কিন্তু পরক্ষনেই সারহানের মনে হলো সে তো অনেক আগেই মরে গেছে।এখন যা আছে তা শুধুই দেহ নেই তার আত্না।

বুক ফুলিয়ে শ্বাস নেয় সারহান।আজ সে জীবন্ত।ওই ছোট্ট মেয়ে তার প্রাণ সঞ্চারিনী।তার নির্জীব দেহে প্রাণের জন্ম দিয়েছে।তাকে প্রাণদেবতা বানিয়েছে।

সারহানের ভাবনার ব্যবচ্ছেদ ঘটে তার মোবাইলের রিংটনে।হাতে নিতেই দেখে এই মূহুর্তে যাকে তার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে সেই ব্যক্তির কল।সারহান পরম আবেশে হাসলো।রিসিভ করেই অতি আবেগের সাথে বললো—

“কেমন আছেন রজনীগন্ধা?

জান্নাহ্ অভিমানি গলায় বললো–

“দুরে গেলে আর আমাকে মনে পড়ে না?

স্মিতহাস্য অধরে প্রত্যুক্তি করে সারহান–

“মনে তো তাকে করবো যে দুরে।যে এই বুকে তাকে কী করে ভুলে যাই!

লজ্জামিশ্রিত হাসে জান্নাহ্।ফিকে গলায় বললো–

“শ্রুতি কেমন আছে?

সারহান সাবলীল গলায় বললো—–

“ভালো নেই।গোড়ালির উপরের দিকে হাড়টা ভেঙে নিচের দিকে চলে গেছে।অপারেশন ইমিডিয়েট করতে হবে।আমি এখন আসতে পারবো না রজনীগন্ধা।সময় লাগবে।”

জান্নাহ্ মিষ্টি গলায় ভরসা দিয়ে বললো—

“চিন্তা করবেন না।সব ঠিক হয়ে যাবে।আগে শ্রুতি ঠিক হোক তারপর আসুন।আমি নিজের খেয়াল রাখবো।”

সারহান কন্ঠে গভীরতা টেনে বললো—

“শুধু নিজের নয়।আমার পরীরও খেয়াল রাখবেন।তার কিছু হলে কিন্তু আমি আপনাকে ছাড়বো না।”

জান্নাহ্ ঝুমঝুমিয়ে হাসে।সারহান ভ্রু নাচিয়ে বললো–

“হাসছেন কেন?

আরেক পসলা হাসে জান্নাহ্।ঠোঁট চিপে হাসি রোধ করে ক্ষীন গলায় বললো–

“আজ সারোজা দাদু এসেছিলেন।তিনি বললেন আমাদের ছেলে বাবু হবে।”

হঠাৎ করেই সারহানে কিছু হলো।কড়া গলায় বললো—

“মা নিয়ে এসেছে তাই না?

“হুম।”

তাচ্ছিল্য হাসলো সারহান।তার ঘৃণা যেনো বিদ্যুতের মতো ঝাঁকিয়ে তুললো তাকে।থমথমে গলায় বললো—

“কিছু খেয়েছেন আপনি?

“হুম।আপনি নিশ্চয়ই কিছুই খান নি?

“সারহান ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললো—

“আপাতত খেতে ইচ্ছে করছে না।কাল সকালেই শ্রুতির অটি।দোআ করবেন।মেয়েটা যেনো ঠিক হয়ে যায়।”

“আল্লাহ্ এর ভরসা রাখুন সারহান।তিনি যা করেন ভালোর জন্যই করেন।”

সারহান কথা কাটতে বললো–

“আচ্ছা রাখছি।রেস্ট নিন।রাতে খেয়ে ঘুমাবেন।”

“আচ্ছা।”

মোবাইলটা পকেটে রেখে রেলিং এ হাত দিয়ে ঝুঁকে দাঁড়ায় সারহান।নিমীলিত চোখের পর্দায় সে দেখতে পায় শ্রুতিকে।যে মানুষটাকে সে খুঁজে চলছে সেও শ্রুতির মতো।এই জন্যই কী এতোটা অনুভব করে সে শ্রুতিকে!

জান্নাহ্ এর পাশে শুয়ে আছে তিতি।বিকেলে এসে সে যে শুয়েছে আর উঠেনি।আধশোয়া হয়ে কথা বলছিলো জান্নাহ্।কথা শেষে নিজের পেটের উপর আলতো হাত রাখে জান্নাহ্।স্বগতোক্তি করে বললো—

“দেখলি পুঁচকো,তোর বাবার আমার জন্য কোনো চিন্তা নেই।সব চিন্তা তোর জন্য।তুই এলেই তোর বাবা একদম বদলে যাবে।আমি আমার প্রাণকে ফিরে পাবো পুঁচকো।তুই ভালো থাকিস।তোর কিছু হলে যে আমি আমার সব হারিয়ে ফেলবো।”

ছোট্ট দম ফেলে জান্নাহ্।ডেলিভারি নিয়ে তার ততটা ভয় নেই।অনেক কাছ থেকে সে এইসব দেখেছে।ছোটবেলা থেকেই হসপিটালে আসা যাওয়া তার।প্রেগন্যান্সির জটিল বিষয়গুলো সে তার বাবার কাছ থেকেই জেনেছে।শুনেছে সেইসব মায়েদের আর্তনাদ যারা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুসম যন্ত্রণা উপলব্ধি করেছে।কিঞ্চিৎ ভয় হয় জান্নাহ্ এর।কিন্তু এই বাড়ির মানুষগুলোর খুশি আর তার প্রাণের জন্য সে এইটুকু সহ্য করেই নিবে।মা হবে সে।এইটুক যদি সহ্য করতে না পারে তাহলে মা হওয়ার সার্থকতা কী!

কিন্তু জান্নাহ্ এর ভয় হয় সারহানকে নিয়ে।সারহানের ব্যবহার কেমন ভয়ংকর,শান্ত।সন্তান নিয়ে সে একটু বেশিই পজেসিভ।দুনিয়াজুড়ে তামাম কথা ভাবতে ভাবতে চোখে বুজে আসে জান্নাহ্ এর।ঘুমে ঢুলে পড়ে সে।

রাত প্রায় দশ।হঠাৎ জান্নাহ্ নড়ে উঠে।বুঝতে পারে না সে।একটু ধাতস্থ হয়ে উঠে বসে।তলপেটে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে।কিছু বুঝে উঠার আগেই তরতরিয়ে তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে।জান্নাহ্ এর মনে হলো কেউ যেনো তার পেটে ছুরিকাঘাত করছে।জান্নাহ্ চমকিত হয় তার শরীরের নিম্নাংশ দেখে।সে অনুভব করে একটা উষ্ণ স্মিত ধারা নেমে যাচ্ছে।ঠোঁট কামড়ে ধরে জান্নাহ্।পায়ের দিকটা রক্তে মাখামাখি।বিছানার চাদর খামছে চিৎকার দিয়ে উঠে জান্নাহ্।পাশে গভীর ঘুমে তলিয়ে থাক ছোট্ট তিতি ধড়ফড় করে উঠে চোখ কচলাতে থাকে।জান্নাহ্কে এই অবস্থায় দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।জান্নাহ্ ক্রন্দনরত গলায় বললো—

“তিইইইতি।আহ্!

তিতি ঝাপটে ধরে জান্নাহ্ এর গলা।কেঁদে কেঁদে বললো—

“পরীমা।”

তিতি জান্নাহ্ এর পায়ের দিকটা দেখে আরো চিৎকার দিয়ে উঠে।ছোট্ট বাচ্চার তীক্ষ্ম গলায় স্বর তার উপর জান্নাহ্ এর গলার আওয়াজে দরজায় করাঘাত শুরু হয়।কিন্তু জান্নাহ্ এর পক্ষে দরজা খোলা সম্ভব না।নিজের এই অবস্থা আর তিতির কান্নায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে জান্নাহ্।উচ্চ গলায় বলে উঠে—

“আম্মা,শুভ্রা আপু!

কিন্তু ভেতরে আসার আর কোনো পথ নেই।ছোট্ট তিতি কী করবে ভেবে পায় না।তার পরীমার চোখের পানি সে দেখতে পারছে না।জান্নাহ্ ধীরে ধীরে নুইয়ে পড়ছে।ওদিকে সমানতালে দরজা ধাক্কাচ্ছে জমির,সেরাজ।
এক অদ্ভুত কাজ করলো তিতি।বিছানা থেকে নেমে ডিভানের সামনে থাকা সেন্টার টেবিল ধাক্কা দিতে লাগলো।কিন্তু তা একবিন্দুও নড়াতে পারলো না তিতির ওই কচি হাত।সমানতালে কাঁদছে তিতি।রক্তে মাখা জান্নাহ্কে দেখে আরো ভয়ে কুঁকড়ে যায় তিতি।একটা টুল টেনে আনে।সারহানের রুমের দরজার দুটো ছিটকিনি।জান্নাহ্ মাঝের টাই লক করে।একমাত্র সারহান আসলেই উপরের ছিটকিনিটাও লক করা হয়।ছোট্ট তিতি নাগাল পেলো না।তখন অবিশ্বাস্য কাজ করলো সে।বারান্দায় থাকা তুলসি গাছটা মরে গেছে।তার টবটা এমনিতেই পড়ে আছে।ছোট্ট তিতি সেটাই নিয়ে আসে।সে একটা মুভিতে দেখেছিলো এমন।টবটাকে উপুর করে রাখে তিতি।টুলের উপর উঠে সাবধানে পা উঠায় টবের উপর।অনেক কষ্টে ছিটকিনি খোলে তিতি।হুরহুড়িয়ে ঘরে ঢুকে সবাই।জান্নাহ্কে দেখে মরা কান্না জুড়ে দেয় অন্তরা।শুভ্রা গিয়ে জান্নাহ্ এর মাথাটা নিজের কোলে নেয়।শ্রান্ত জান্নাহ্ হাত পা ছেড়ে দেয়।অজ্ঞান হওয়ার আগে শুধু এতটুকুই বললো—

“শুভ্রা আপু,আমার বাচ্চা…।”

অন্তরা সেরাজকে অ্যাম্বুলেন্সে খবর দিতে বলে।অন্তরা মাথা চাপড়াতে থাকে।রক্তের শ্লথ ধারা বলে দিচ্ছে আর কোনো আশা নেই।জমির যেনো পুরো জমে গেলেন।জাবিন ভেতরে আসলো না।বরফখন্ডের মতো দরজায় দাঁড়িয়ে রইলো।জান্নাহ্ এর অচেতন শরীর পড়ে রইলো শুভ্রার কোলে।জাবিন এক পা এক পা করে সামনে এগিয়ে আসে।জান্নাহ্ এর ফর্সা মুখটা নীল হয়ে আছে।জাবিনের পা খাবলে ধরে কেঁদে কেঁদে বললো তিতি—

“ভাইয়া,পরীমা!

জাবিনের দুই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।বিছানার রক্ত দেখে গা গুলিয়ে উঠলো তার।যেনো নিঃশ্বাস আটকে আসলো।
অন্তরা বিলাপ করতে থাকে।সেরাজ একের পর এক কল করেই যাচ্ছে।জান্নাহ্ নিশ্চেতন।সে অবচেতন মনে তার প্রাণকেই দেখছে নিশ্চয়ই।কী জবাব দিবে সে তার প্রাণকে?
সে যে তাকে দেওয়া কথা রাখতে পারে নি।ক্ষমা করবে তার প্রাণ তাকে?
সে ফিরে আসবে তো মৃত্যুর দুয়ার থেকে?নাকি নিজ সন্তানের সাথে সেও চলে যাবে তার প্রাণ থেকে দুরে,বহুদুরে।আর কখনো তাদের দেখা হবে না।হবে না কথা।হয়ে যাবে সব স্মৃতিকথা।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here