জান্নাহ্ “পর্বঃ৭৩

0
3965

#জান্নাহ্
#পর্বঃ৭৩
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি

একটা পুরো ডিম অমলেট করে খাইয়ে দিচ্ছে তিতিকে জান্নাহ্।তার সামনেই প্রসন্ন দৃষ্টিতে বসে আছে জাবিন।তিতির মুখে লেপ্টে থাকা আধাসিদ্ধ কুসুমের হলুদাংশ টিস্যু দিয়ে মুছে দিতেই ফিক করে হেসে ফেলে তিতি।জান্নাহ্ চট করেই তিতির কপালে চুমু খায়।গ্লাসে রাখা পানি অতি সন্তর্পনে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে ঢকঢক করে গিলে তিতি।পানি পান করে অধর পল্লব দুটো বৃহৎ ফাঁক করে ভেতর থেকে শ্বাস বের করে।জাবিন আর জান্নাহ্ তিতির এই অদ্ভুত কান্ডে শব্দ করে হাসে।

আজ চারদিন তিতি আর জাবিন সারহানের বাসায়।কিন্তু সারহান!
সে নিরন্তর ঘুরে ফিরছে তার পরীর খোঁজে।সারাটা দিন খুঁজে ফেরে রাতে।কখনো আবার ফেরে না।কলিং বেল বাজতেই সপ্রতিভ হয় জান্নাহ্।হয়তো সারহান ফিরেছে।চঞ্চল পা দুটো চালিয়ে অনেকটা আশা নিয়ে দরজা খুলে সারহান।সারহান ত্রস্ত পায়ে ভেতরে ঢুকতেই নির্মল গলায় জান্নাহ্ বললো–

“সারহান,হাত-মুখ ধুয়ে আসুন।আমি খাবার দিচ্ছি।”

সারহান তার পা দুটো থমকে দেয়।ধমকে উঠে বললো–

“আপনি ভাবলেন কী করে আমি খাবো?লজ্জা করছে না আপনার?আর কী চান আপনি আমার কাছ থেকে?

জান্নাহ্ আহত নয়নে তাকিয়ে ভেজা গলায় বললো—

“সারহান!

“প্লিজ,রজনীগন্ধা।অনেক করেছেন আমার জন্য।আর নয়।এইবার অন্তত আমাকে আমার মতো বাঁচতে দিন।আপনার যা করার আপনি করেছেন।আমাকে শাস্তি দিলেন।আমার ভালোবাসা হেরে গেলো আপনার ঘৃণার কাছে।আমি ব্যর্থ।পারি নি আপনাকে ভালোবাসতে আমি যতটা আপনি চেয়েছেন।”

অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো জান্নাহ্।সারহান লম্বা লম্বা পা ফেলে বেডরুমে চলে যায়।সারহানের আক্রোশভরা স্বরে ভীত হয়ে উঠে তিতি।আঁতকে উঠে জাবিনের কোমর জড়িয়ে ধরে তার পায়ের কাছে মুখ গুঁজে দেয়।বেশ কিছুক্ষণ পর বের হয়ে আসে সারহান।কারো সাথে কোনো বাক্যলাপ হলো না তার।অসহিষ্ণু মনোভাব,উন্মাদ আচরণ,বেসামাল চলাফেরা।

ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে জান্নাহ্।জাবিন নিরুত্তাপ গলায় বললো–

“কেন করছো এইসব জান্নাহ্?কেন মামাকে কষ্ট দিচ্ছো?

জান্নাহ্ মিনমিনে গলায় বললো—-

“আমার কিছু করার নেই জাবিন।”

জাবিন দ্রুত তার পা দুটো বাড়ায়।নিজের রুমে গিয়ে কাপড়-চোপড় গুছাতে হাত থামিয়ে ধরে জান্নাহ্–

“কোথায় যাচ্ছো জাবিন?

ছোট্ট দম ফেললো জাবিন।অত্রস্ত গলায় বললো—

“বাড়ির কেউ ভালো নেই।বিষিয়ে উঠছিলো সব।তাই এখানে এসেছি।ভেবেছি এখানে এসে কয়েকদিন তোমার আর মামার সাথে ভালো থাকবো।কিন্তু তুমি যা করলে তা ঠিক করোনি জান্নাহ্।আমি জানি না তুমি কেন এইসব করেছো।শুধু একটা রিকোয়েস্ট করবো।মামাকে আর কষ্ট দিও না। আমি বয়সে তোমার বড় হলেও সম্পর্কে তোমার ছোট।তবুও আজ বলছি।মামি,যদি পারো মামাকে ক্ষমা করে দিও।”

হনহন করে তিতির হাত ধরে বেরিয়ে যায় জাবিন।জান্নাহ্ গলা ফাটিয়ে বললো—

“জাবিন,জাবিন।প্লিজ দাঁড়াও।যেয়ো না।”

জান্নাহ্ এর কোনো কথাই কর্ণকুহর হলো না জাবিনের।এক মুহূর্তের জন্য পেছন ফিরলো না সে।নিরস্ত্রের মতো মূর্তি হয়ে রইলো জান্নাহ্।গুটি গুটি পায়ে নিজের ঘরে আসে জান্নাহ্।ধীর হাতে মোবাইল হাতে নিয়ে বাগানের দিকে পা বাড়ায় জান্নাহ্।একটা নাম্বারে ডায়াল করে জান্নাহ্।ওপাশের ব্যক্তি রিসিভ করতেই জান্নাহ্ অতটস্থ গলায় বললো—

“কেমন আছো আপু?

মেহনাজ একরাশ খুশি নিয়ে বললো–

“ভালো।তুই কেমন আছিস?

জান্নাহ্ মৃদু হেসে ক্ষীণ গলায় বললো–

“আমার সারহানকে তুমি ক্ষমা করেছো তো আপু?

মেহনাজ উল্লাসিত গলায় বললো—

“করেছি।তুই আমাকে যা দিয়েছিস তার জন্য আমি সারাজীবন তোর কাছে কৃতজ্ঞ।”

নিজের অজান্তেই চোখের জল ছাড়ে জান্নাহ্।কান্নার তোড়ে শরীর কেঁপে উঠে তার।সজোরে কামড়ে ধরে ঠোঁট।জমে যাওয়া গলায় স্বাভাবিকতা এনে বললো–

“পুঁচকো কে একটু দেখতে দিবে আপু?

মেহনাজ আদুরে গলায় বললো—

“দেখবি?
দাঁড়া দেখাচ্ছি।পুঁচকো ঘুমোচ্ছে।”

কল কেটে ভিডিও কল করে মেহনাজ।একটা ছোট্ট লালচে গোলাপী হাওয়াই মিঠাই যেনো শুয়ে আছে।তার ভরাট কপালে একটা কালো চন্দ্রের মতো গোলাকার টিপ।জান্নাহ্ আলতো হাত বুলাতে থাকে মোবাইলের স্ক্রীনে।বুক কাঁপিয়ে কেঁদে উঠে জান্নাহ্।তার প্রাণ যেনো তাকে ছেড়ে যাচ্ছে।বুকের ভেতর অথৈ সাগরের প্রমত্তা ঢেউ।জান্নাহ্ এর মনে হলো তার হৃদপিন্ডটা কেউ টেনে ছিঁড়ে নিচ্ছে।

বাচ্চাটি নড়ে উঠে।কোমল দুই হাত লাল দুই অধর পল্লবের মধ্য ঢুকিয়ে দেয়।ছোট ছোট চোখ দুটি অর্ধ নিমীলিত।জান্নাহ্ তার দৃষ্টি গাঢ় করে।অতলান্তিক মায়ায় আচ্ছন্ন দুই চোখ দিয়ে টপ টপ করে পড়ছে শীতল শ্রাবণ ধারা।
এমন কেন হলো?

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ
আজ সবাই কমেন্টস করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here