জীবনটা_অনেক_কষ্টের পর্বঃ৪

0
853

গল্পঃ #জীবনটা_অনেক_কষ্টের

পর্বঃ ৫

লেখাঃ #মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার

খানিকটা অবাক হয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই স্তব্ধ
হয়ে গেলাম আমি কারণ আমার সম্মুখে সয়ং রুপা
দাঁড়িয়ে আছে।রুপা কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে
বলল,

–আমার ছোট বোনের জন্য বেঁচে গেলি,নাহলে আজ
ট্রাকের তীব্র আঘাত,তোকে সম্পূর্ণ মৃত্যুর দখলে নিয়ে
যেতে সাহায্য করতো?

এই মুহুর্তে অবাকের শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছি আমি।
তারমানে রুপা আমাকে চিন্তে পেরেছে?ভেবে ছিলাম,
নিজের করা জঘন্য কৃত কর্মের জন্য কিছুটা হলেও
অনুতপ্ত কিন্তু আমি ভুল ছিলাম তবে আমার মন ঠিকি
বলে ছিলো,কুকুরের লেজ সে?অতঃপর রুপা আবার
বললো,

–কি ভেবেছিস?শ্বিকারী হয়ে,তোর মতো বনের এক
ক্ষুদ্র পশুকে কে চিনতে পারবো না?হাস্যকর!এতে
কোনো অনুশোচনা বা ভ্রু-ক্ষেপ নেই আমার,যে
আমার জন্যই আমার বোনের আজ এই অবস্থা কিন্তু
আফসোস এ যাত্রায়ও তুই বেঁচে গেলি?

ছিহ কতটা দুর্গন্ধ-ময় ময়লা-অাবর্জনায় ভর-পুর
তোমার মনটা?তুমি এত নিকৃষ্ট কেন?কি এমন ক্ষতি
করে ছিলাম আমি যার জন্য রোজ আমার মৃত্যু
আমায় ক্ষণে ক্ষণে ডাকে?সেদিন এক পাপিষ্ঠ
ছেলেকে বাঁচানোর জন্য তুমি,প্রবাসে ঘামে প্রতিনিয়ত
পরিশ্রমে শার্ট ভিঁজানো এই আমাকে মিথ্যে সাক্ষ্যের
ভিত্তিতে ফাঁসিয়ে ছিলে?এটা তুমি খুব ভালো করেই
জানতে,যে আমার কোনো দোষ ছিল না,অপরাধ ছিল
না,আমি নির্দোষ,নিরাঅপরাধ তারপরেও তুমি আমায়
মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দোষী রুপে সাব্যস্ত করেছিলে,
যার জন্য আমায় ১৫টা বছর নরক যন্ত্রণার আর্তনাদে
প্রতিনিয়ত ব্যাথায়,যন্ত্রণায়,বেদণায়,কষ্টে কাতরাতে
হয়েছিল তবুও হয়তো ভেবেছিলাম নিজের করা
জঘন্য কাজের জন্য তুমি অনুশোচনায় ভুগছো,
অনুতাপের শ্বিকার হতে বাধ্য হচ্ছো কিন্তু আমি ভুল
ছিলাম,বেঠিক ছিলাম?ভুলেই গিয়ে ছিলাম তুমি তো
কোনো মানুষ না?

ঘৃণায় শরীরটা শিরশির করে উঠছে,ইচ্ছে করছে এই
মুহূর্তে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দিতে,হাত উপরে তুলেও
ছিলাম বটে তবে পরক্ষণেই আমি থেমে যাই রুপার
পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে দেখে,তারমানে রুপা
এখনো এই পাপিষ্ঠ ছেলেটির তত্বাবধানে রয়েছে।এত
দিন রুপা তার বাবার বাড়িতে মাঝে মধ্যে আসলেও
তার স্বামী কে কখনো আসতে দেখিনি,কখনো ভাবিই
নি পরিশেষে রুপা এই নিকৃষ্ট মানবের সাথেই লিপ্ত
হবে বিবাহ নামক কোনো এক পবিত্র বন্ধণে।মানুষ
এত পরিমাণ নিচু মন-মানসিকতার অধিকারী হয় কি
করে??অতঃপর রুপার বর্তমান স্বামী কিছুটা মুখ
বেঁকে হেসে বলল আমায়,

–উফ নিয়তির কি খেলা আবার মোলাকাত হয়েই
গেলো আমাদের?

অতএব আমি তাদের উভয় কে উদ্দেশ্য করে বললাম,

হবে একদিন সত্য উন্মোচন।আর থাকবেনা লুকাইয়া
কোনো সত্য?সময়টা সেদিন রইবে ন্যায়ের পক্ষে,শাস্তি
পাবে তোমরা দু’ইজন।

কথাটা বলার সাথে সাথে আমি তাদের নিকট থেকে
চলে আসলাম।বুকের ভেতরটা দহনে যাচ্ছে পুড়ে,
দাঁড়িয়ে রয়েছি অপারেশন থিয়েটারের সম্মুখে,বেশ
কিছুক্ষণ আগে ডাক্তার প্রবেশ করেছেন ভিতরে, রয়েছি আমি বহু চিন্তার মাঝারে।হঠাৎ রাইয়ের বাবা
এসে উপস্থিত হলেন আমার সম্মুখে,সঙ্গে সঙ্গে দু’টো
থাপ্পর লাগিয়ে দিয়ে উচ্চ কন্ঠের সুরে আমায় বললেন,

–শুধু তোর জন্যই আজ আমার মেয়ের এরুপ যন্ত্রণা-
দ্বায়ক করুণ অবস্থা?কেমন স্বামী তুই!নিজের স্ত্রীকে
দেখে,শুনে সামলে রাখতে পারলি না?

নিচু মাথা,গালে হাত দিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি
আমি অতঃপর চলে গেলেন তিনি,রয়েছি একই ভাবে।
আজ যদি উনি জানতেন, ওনার বড় মেয়ের ঘৃণিত মন
মানসিকতার কথা তাহলে হয়তো সবচেয়ে বেশি
তিনিই রুপার দিকে আঙুল তুলে ঘৃণিত নারী হিসেবে
চিহ্নিত করতেন,সবার সম্মুখে।এখনো মনে পড়ে সেই
বৃষ্টি ভেঁজা গভীর রাতের স্বরণীয় প্রতিটা মুহূর্ত গুলোর
কথা,হয়তো আর হবে না, গভীর রাতে এক সাথে
বৃষ্টিতে ভেঁজা!পিছন থেকে কেউ আর দৌড়ে এসে
জড়িয়ে ধরে বলবে না আমায়,অসীম ভালোবাসি
তোমায়’হে আমার প্রিয় শাহরিয়ার “”‘

পরিশেষে অপারেশনের আড়াই-মাস পর রাইকে
নিজের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।এখন সার্বক্ষণিক
রাইয়ের নিকটেই থাকতে হয় আমায়।প্রতিনিয়ত
রাইয়ের বিভিন্ন অসুবিধার মোকাবেলা বিরক্তহীন
ভাবে করতে হয় স্বয়ং আমাকে তবে এতে কোনো ভ্রু-ক্ষেপ বলতে কিছুই অন্তত আমার নেই কারণ
সত্যি বলতে আমার জন্যই রাইকে আজ বাস্তবতা এক
পা’হীন করে দিয়েছে।কিন্তু কেন যেন দিন দিন রাইয়ের
বাবার সম্মুখে আমি একজন ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে
চিহ্নিত হচ্ছি।যদিও বা এর বেশ যথেষ্ট অনেক কারণও
রয়েছে বটে,গত কাল শুনতে পেয়েছিলাম,আমার
বিরুদ্ধে নিজ বাবার নিকট রুপার উস্কানিমূলক কথা
গুলো।আজ যখন রাইকে কোলে করে ওয়াস রুমে
নিতে গিয়ে স্লিপ কেঁটে পড়ে গিয়ে ছিলাম,তখন
আমার থেকেও তীব্র যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়েও নিজেকে
আমার সামনে যন্ত্রণাহীন হিসেবে সাব্যস্ত করার বৃথা
চেষ্টা করেছিলো রাই!একটু’ টু শব্দ অবধি করেনি সে
কিন্তু তারপরও খবরটা যেন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে
সারা বাড়িতে।সবাই দৌড়ে এসে ছিলো রুমে।অতএব
দ্বিতীয় বারের মতো রাইয়ের বাবা আমার গায়ে হাত
তুলেন এবং প্রচন্ড রাগান্বিত হয়ে বললেন,

–ছোট লোক’ ঘর জামাই!ঘর জামাইয়ের মতোই
থাকবি?প্রতিনিয়ত আরাম-আয়েশে থাকছিস,বসে
রয়েছিস,সুস্বাদু খাবার চেটে-পুটে খাচ্ছিস?আর
পরিশেষে আমার মেয়ের দেখা-শোনার বেলায় এতটা
Careless But Why??

অতঃপর সেদিন সবার সামনে অনেকটা অপমানিত
হতে হয় আমাকে।সেদিন রাই বারবার বলেছিলো তার
বাবাকে, আমার কোনো দোষ ছিল না?স্থানটা আগে
থেকেই বেশ পিচ্ছিল ছিল কিন্ত রাইয়ের এরুপ কথা
তখন কেউই অতটা গুরুত্ব আকারে গ্রহন করেনি।

আজ অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখ,রাত প্রায় ১১টা
জানালার গিড়িল স্পর্শ করে মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে
রয়েছি আমি,দৈনন্দিনের চেয়ে আজ আমার যন্ত্রণা
গুলো বেশ তীব্র কারণ আজকের এই দিনই বিনাদোষে
অপরাধ না করা সত্যেও ১৫ বছরের জেল হয়েছিল
আমার।হঠাৎ রাই ডাকলো আমায় তার নিকটে
অতএব রাইয়ের কাছে এসে বসলাম, রাই মাথা
রাখলো আমার কোলে এবং বললো,

–মন খারাপ কেন?

শত ব্যাথা,যন্ত্রণা লুকিয়ে আমি বললাম,

কই না তো?

–আমি সবসময় কেন যেন বেশ অনুভব করি তুমি
প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা-বেদনার আর্তনাদে কাতরাও?এতো
কেনো ব্যাথা জমা তোমার মনে?আচ্ছা আমি শুনেছি
তোমার ভাইয়ার কাছ থেকে,কুয়েতে নাকী তোমার
১৫ বছরের জেল হয়ে ছিল?………..

………………………..চলবে…………………………

(পর্ব ছোট হওয়ায় দুঃখীত)

ভুল ক্রটি ক্ষমার চোখে দেখবেন

গঠন মূলক মন্তব্য করুন ধন্যবাদ 😊🔰

  1. বানান ভুল গুলো একটু ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here