#জীবনের অন্যরঙ [৬ষ্ঠ পর্ব]
#আজিজুর রহমান
আর কতদিন রবে নিরুক্ত তোমার মনের কথা?
কথা কও প্রিয়া, সহিতে নারি এ নিদারুণ নীরবতা।
কেবলই আড়াল টানিতে চাহ গো তোমার আমার মাঝে
সে কি লজ্জায়? তবে কেন তাহা অবহেলা সম বাজে?
বাস উলটোডাঙ্গা ছাড়িয়ে সবে মায়াবি সিনেমা হল ছাড়িয়ে যাবে অনিমানের চোখ এক মহিলায় আটকে যায়। উগ্র সাজ শ্যামবর্ণা মুখে পান রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে একজনের সঙ্গে কথা বলছে। জানলা দিয়ে মুখ বের করে অনিমান জোর গলায় ডাকলো,সন্ধ্যা আপু?
মহিলা একবার তাকিয়ে হন হন করে বিপরীত দিকে হাটতে থাকে। সঙ্গে লোকটি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বাস থামতেই অনিমান নেমে দ্রুত মহিলাকে ধরতে হাঁটতে থাকে। মহিলা মনে হচ্ছে হাটার গতি বাড়িয়ে দিল। তার ডাক কি শুনতে পায়নি?
অনিমান কি ভুল দেখল?কোথায় মিলিয়ে গেল?শ্লেটের মত রঙ টানা টানা চোখ। ঐতো সামনে চলে যাচ্ছে। অনিমান গতি বাড়ায়। সন্ধ্যা আপু অত্যন্ত নিরীহ শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। ছোটো বেলায় দেখেছে বুকে বইয়ের গোছা নিয়ে মাথা নীচু করে স্কুলে যেতো। সেই সন্ধ্যা আপু এই পথে এল কীভাবে?অত জোরে হাঁটছে কেন,তাকে কি দেখেছে? অনিমান প্রায় দৌঁড়ে একেবারে সামনে গিয়ে পথ আটকে জিজ্ঞেস করল, সন্ধ্যা আপু আমাকে চিনতে পারছো না?
আগুনে চোখে দেখে মহিলা বলল,তুমি কে ?
অনিমান এক দুঃসাহসের কাজ করে ফেলল। খপ করে হাত চেপে ধরে বলল,ইয়ার্কি না সন্ধ্যা আপু, সত্যিই তুমি আমাকে চিনতে পারছোনা?
–এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে লাগলো।
অনিমানের চোখে জল এসে গেল। রুমাল বের করে চোখ মুছে দু-পা ফিরতেই শুনতে পেল,এই অনি দাড়া।
চমকে পিছন ফিরতে দেখল ম্লান মুখে দাঁড়িয়ে আছে সন্ধ্যা আপু। কাছে গিয়ে বলল,তুমি আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে?
–কেন ডাকছিলি বল?
–তোমার সঙ্গে অনেককথা–।
–রাস্তায় দাঁড়িয়ে অত কথা বলা যাবেনা। রাস্তার মাঝে এভাবে কথা বললে সবাই আমাদের খারাপ ভাববে।
–কিন্তু আমার যে তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে।
–আমার সঙ্গে তোর এত কথা কিসের? পাড়ার সবাই তো আমাকে কলঙ্কীনি বলে ভৎসনা করেছে।
–বুঝেছি আমার সঙ্গে কথা বলতে তোমার ভাল লাগছে না?অভিমানের সুরে বলল অনিমান।
সন্ধ্যা আপু ফিক করে হেসে বলল,তুই একদম বদলাস নি।
এই প্রথম হাসল সন্ধ্যা আপু। কালচে ঠোঁটের ফাঁকে দাঁতগুলো মুক্তোর মত ঝলকে ওঠে। কি ভেবে জিজ্ঞেস করে,আমার বাসায় যাবি?
–তুমি যেখানে নিয়ে যাবে।
সন্ধ্যা আপু ‘চল’ বলে উলটো দিকে হাঁটতে লাগল।অনি পাশে পাশে হাঁটতে গেলে সন্ধ্যা আপু বলল, তুই একটু পিছে পিছে আয়। নাহলে তোকে আমার সাথে দেখে খারাপ ভাববে।
মায়াবি সিনেমার হলের কাছে এসে রাস্তা পার হল।রাস্তার ধারে বস্তি। বস্তির গাঁ ঘেষে এক চিলতে ঘিঞ্জি গলি। গলির একদিকে বস্তি অন্য দিকে বিশাল পাঁচির। পাঁচিরের ওপাশে ভদ্র সামাজের।অন্ধকার ঘুটঘুট করছে। আর এইপাশে থাকে সমাজ হতে বঞ্চিত হওয়া কিছু নর-নারী। সমাজে তাদের কোনো যথেষ্ট জায়গা না থাকলেও নিজের জীবন চালিয়ে নেবার মতো উপার্জন করে নিতে পারে।
সন্ধ্যা আপু দরজা দিয়ে ঢুকে গেল। বা-দিকেই তার ঘর। ছবি তালা খুলে ঘরে ঢুকল। এখন লোড শেডিং। বদ্ধ গুমোট ঘর, জানলা খুলে চোখ ফেরাতে পারেনা। সন্ধ্যা ঘরে ঢুকে হ্যারিকেন জ্বালতে বসে। অনি ঘরে ঢুকতে মেঝেতে মাদুর পেতে দিয়ে বলল,বোস।
–তোমার ঘরে আলো নেই?
–এখন লোডশেডিং।
–তাহলে পাশে লাইটপোস্টে আলো জ্বলছে?
–ওটা ভদ্র লোকেদের এলাকা,ওদের জেনারেটর আছে। আমার জানলা দিয়ে একটু আলো আসে।এখানে আসতে যাদের দেখেছিস তারা আমার মতোই ভদ্র সমাজ হতে বঞ্চিত। এখন নিজের উপার্জন নিজে করি। এখন আর আগের মতো ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখি না। যতদিন বাঁচতে পারব ততদিন ভদ্র সমাজের মুখোশধারীকে শেষ করে দিব। ভদ্র সমাজ আমাদের মতো নিরীহ নারীদের জন্য নয়। আমি সেই নিরীহ নারীদের অধিকার রক্ষাতে এখানে থেকে রক্ষা করে চলেছি। এটা আবার বলিশ না কি করে। রাস্তায় আমাকে দেখেছিস পকেট মারতে গেছিলাম। প্রয়োজনে টাকার জন্য মুখোশধারী ভদ্রকে শেষ করে দেই। আমি দেখতে চাই ভদ্র সমাজ কত টাকার লোভী।
সন্ধ্যা না তাকিয়ে হ্যারিকেনের চিমনি লাগিয়ে দেই।
–তুই কি কথা বলবি বলছিলিস?
–তুমি বাড়ি ছেড়ে এলে কেন?এইকি একটা জীবন?
–কদিন আগে রাজুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। চিনতে পেরেছিল কিনা জানিনা। আমিও না চেনার ভান করে ভীড়ে লুকিয়ে পড়েছিলাম। তুই এমন নাছোড়বান্দা তোকে এড়াতে পারলাম না।
–এড়িয়ে গেলে কি সত্যকে চাপা দেওয়া যায়?
–রাখ তো ডায়লগ। সত্য বলতে এসেছে।সত্য-ফত্য অনেক দেখেছি।
–তুমি কি বলছো সত্য বলে কিছু নেই?
–শোন অনি যেমন আছিস তেমন থাক। সত্য নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে অনেক কিছু সামনে আসবে যা কখনো মানতে রাজি হবি না। যেন আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।
–সন্ধ্যা আপু তুমি কাদের কথা বলছো জানিনা।আমি সত্যকে ভয় পাইনা।
সন্ধ্যা বলল,তুই এখনো সেই আগের মত আছিস।শোন অনি সত্যরে বেশি পাত্তা দিবি না। ওকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা খুব কঠিন। সত্য-সত্য করছিস, কতটুকু সত্য তুই জানিস?অনেককথা বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুরছি,বলার মত কাউকে পাইনি। আজ তোকে বলছি,ভাবিস না নিজের পক্ষে সাফাই দিচ্ছি। আসলে এই ভার নামিয়ে একটু হালকা হতে চাই।
অনিমান সামনে ফ্রেমে বাধানো একটা ছবি দেখল।
সন্ধ্যা আপু বলল,সাহিরের ছবি। মানুষটা আমাকে খুব ভালবাসতো। সুখেই কাটছিল কিন্তু বিধাতার ইচ্ছে নয়। নাহলে এত অল্প বয়সে কেন চলে যাবে?
–কি হয়েছিল?
–কিছুই না। বাইকে চেপে অফিসে যেত। দুপুরে ঘুমিয়েছি,ভাসুর এসে খবর দিল গাড়ীর সঙ্গে ধাক্কা লেগে–।নিজেকে সামলাতে পারিনি বোধ হয় জ্ঞান হারিয়েছিলাম। জ্ঞান ফিরতে শাশুড়ীর গঞ্জনা শুননাম আমি নাকি অপয়া বউ।
–শোকে সান্ত্বনা পাবার জন্য অনেকে এরকম বলে। অনি বলল।
–কম বয়সী সন্তানহীনা বিধবাকে মানুষ অন্য চোখে দেখে। একদিন দুপুরবেলা মেঝেতে কম্বল পেতে শুয়ে আছি। বলা নেই কওয়া নেই ভাসুর ঘরে এসে ঢুকল। আমি উঠে দাড়ালাম। ভাসুর বলল,বৌমা একী চেহারা করেছো?সাহির তো আমার ভাই ছিল কিন্তু যার যাবার তাকে আটকাবার সাধ্য কি?
ভাসুরের কথা শুনে চোখে জল চলে এল। উনি আমার হাতের দিকে তাকিয়ে হাতটা খপ করে ধরে বললেন,একী খালি হাত? দু-গাছা চুড়িও তো পরতে পারো। গলা ভারী করে বললেন,দেখো সংসারে এতজনের মুখে দুটোভাত যেমন তুলে দিতে পারছি,তোমারও পেটের ভাতের অভাব হবেনা। একটু এগিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বললেন,সাহির নেই তো কি আছে?আমি ত মরে যাইনি? তারপরে খারাপ নজরে আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করে। আমি চিৎকার দিতেই শশুড় শাশুড়ি চলে আসে। আমি সব বলার পরেও আমাকে বিশ্বাস করে নি। আমি বুঝে গেছিলাম এখানে আমার আর থাকা হবে না। বাপের বাড়ি চলে আসলাম। সেখানেও আমার নির্যাতন, অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। আর না পেরে এক রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে চুপিচুপি পালিয়ে এখানে এসে পড়ি। যাক পাড়ার খবর বল, কাকা কেমন আছে?
–কে বাবা?বাবা মারা গেছে।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে সন্ধ্যা আপু,তাহলে তোদের চলছে কি করে?কাকি–?
–মাও চলে গেছে। আর বাবার পেনশন,চলে যায়।
–বেশ ছিল পাড়াটা,বাঙালী বিহারী পাঞ্জাবী– আচ্ছা একটা পাঞ্জাবী মেয়ে আমার বিয়েতে এসেছিল কি যেন নাম?
–অর্নিতা ।
–মেয়েটা বেশ হাসি খুশি। বিয়ে বাড়ি মাতিয়ে রেখেছিল।
–ওরা চলে গেছে। এখন থাকেনা। তোমার সুজয়কে মনে আছে?
–হ্যা-হ্যা কেন মনে থাকবে না?ওর বোন টিনাকে ছোট্টটি দেখেছিলাম।
–ওর মা খুব অসুস্থ। আমরা একটা ফান্ড করেছি চিকিৎসার জন্য।
–ওর বাবা কি একটা কারখানায় কাজ করেনা?
–হ্যা। সেইজন্য একটা ফান্ড করেছি। সবাই টাকা দিচ্ছে।
–সব অনেক বদলে গেছে। কিছুই খবর রাখিনা।
— তা তো অনেকটা বদলেছে।
বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে বললাম, সন্ধ্যা আপু রাত হল। আজ আসি?
বেরিয়ে গলিতে পা রেখেছে,জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে সন্ধ্যা আপু ডাকলো,এই অনি শোন।
অনিমান জানলার কাছে যেতে সন্ধ্যা আপু হাত বাড়িয়ে বলল,এটা রাখ।
অনিমান স্বল্প আলোয় দেখল একটা পাঁচশো টাকার নোট। মুখ তুলে তাকাতে সন্ধ্যা আপু বলল, তোদের ফান্ডে দিলাম।
অনিমানের চোখ জলে ঝাপ্সা হয়ে যায়। আবছা আলোয় সন্ধ্যা আপু ভাগ্যিস দেখতে পায়নি। অনির মনে আজ একটি কবিতা আওড়াতে মনে করছে।
দেখিয়াছ সেই রূপের কুমারে, গড়িছে যে এই রূপ?
রূপে রূপে হয় রূপায়িত যিনি নিশ্চল নিশ্চুপ!
কেবলই রূপের আবরণে যিনি ঢাকিছেন নিজ কায়া
লুকাতে আপন মাধুরী যে জন কেবলই রচিছে মায়া!
সেই বহুরূপী পরম একাকী এই সৃষ্টির মাঝে
নিষ্কাম হয়ে কীরূপে সতত রত অনন্ত কাজে।
পরম নিত্য হয়ে অনিত্য রূপ নিয়ে এই খেলা
বালুকার ঘর গড়িছে ভাঙিছে সকাল-সন্ধ্যা বেলা।
এতদিন কত ভুল ধারণা বয়ে বেড়িয়েছে ভেবে অনুশোচনা হয়। বিশাল এই পৃথিবীতে কে কোথায় কোন প্রান্তে কীভাবে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তার কতটুকু খবর কজন জানে। সেই তুলনায় অনিমান তো ভালই আছে। নিজের মধ্যে যেন লড়াইয়ের শক্তি ফিরে পায়।
বাস থেকে নেমে ভাবে করিম ভাইয়ের দোকানে যাবে কিনা?মোবাইলে সময় দেখল,সোয়া-নটা।ওরা কি করিম ভাইয়ের দোকানে আছে নাকি ঘুরে ঘুরে চাঁদা তুলে বেড়াচ্ছে?দোকানে থাকলে একটু বসে যাবে। একটা পরীক্ষা বাকী, হয়ে গেলে নিশ্চিন্ত। মনে পড়ল বিজয় ভাই দেখা করতে বলেছিল। কোর্ট থেকে এতক্ষনে বাসায় ফিরে এসেছে নিশ্চয়ই। ভাবতে ভাবতে বাড়ির কাছে এসে পড়েছে। গ্রিলে ঘেরা বারান্দায় বসে আছে বৃষ্টি ভাবি। অনিকে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,কালেকশন শেষ?
–আমি যাইনি অন্য কাজ ছিল। ভাবি বিজয় ভাই নেই?
–আয় ভিতরে আয়। এইমাত্র বাথরুমে গেল।
অনিমান গ্রিল ঠেলে ভিতরে ঢুকল। একটা বেতের চেয়ার টেনে বসল। বৃষ্টি ভাবি বলল, বিজু এলে একসঙ্গে চা করবো।
–বিজয় ভাই আমাকে দেখা করতে বলেছিল।তুমি কিছু জানো কি ব্যাপার?
–রবি তোদের খোঁজ খবর নেয় না?
–কেন? কি হয়েছে?
– -তোর যে কি হবে তাই ভাবছি। বৃষ্টিভাবি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে।
বিজয় লুঙ্গি পরে তোয়ালে গায়ে এসে বসল। বৃষ্টিভাবি উঠে চলে গেল। অনিকে দেখে জিজ্ঞেস করে,কেমন আছিস?
অনিমান বুঝতে পারে এটা ভুমিকা। বিজয় বলল, রবি অনেক বদলে গেছে। অনি ভাবে তাহলে কি রবি কাকুর সম্পর্কে কিছু বলবে?বিজয় জিজ্ঞেস করল,হ্যারে রবি তোর সঙ্গে দেখা করতে আসেনা?
–আসে খুব কম।
বৃষ্টিভাবি তিনকাপ চা নিয়ে ঢুকল। বিজয় চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,বাড়ীটা রবি প্রোমোটারকে দেবার চেষ্টা করছে জানিস?
অনিমান হাসল,এ আর নতুন কথা কি?বলল,এই নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। আমি বলেছি কিছুদিনের সময় দেওয়ার জন্য। আপন চাচা কিছুটা হলেও সময় দিবে আশা আছে।
–ও এতদুর গড়িয়েছে?পরামর্শের জন্য এসেছিল আমার কাছে। বাড়ি তোর নামে তোর কিছু করার নেই ওকে বলেছি। একটাই মুস্কিল চিরকাল তো কেউ থাকবেনা।
বিজয় কি বলতে চায় বুঝতে অসুবিধে হয়না। ঋণের কাগজ দেখেয়ে সহজেই কোর্ট হতে বাড়িটা হাতিয়ে নিতে পারবে। রবি কাকু তাকে বঞ্চিত করতে পারে? করলে করবে। চা শেষ করে বিজয় বলল,বৃষা আমি যাই,তুমি গল্প করো।
বৃষ্টিভাবিকে বিজয় ভাই বৃষা বলে?বৃষ্টি বলতে অসুবিধে কোথায়?বৃষ্টিকে বৃষা বললে আরো কাছের মনে হয় হয়তো। লক্ষ্য করছে বৃষ্টিভাবি তাকে গভীর ভাবে লক্ষ্য করছে। অনিমান বুঝেও রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে।
–লেখকরা সব সময় কি ভাবে বলতো?
বৃষ্টিভাবির প্রশ্ন শুনে ফিরে তাকালো অনি।বলল,ভাবনা-চিন্তা হীন মস্তিষ্ক হয় না। লেখক কেন সবাই সব সময় কিছু না কিছু ভাবে।
–যা জিজ্ঞেস করছি বুঝতে পারিস নি?সবাই কি একরকম ভাবে?
অনিমান হেসে ফেলে বলল,তুমি বলছো আমি কি ভাবি বা কেমনভাবে ভাবি?একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবে। ধর, তোমার সঙ্গে কথা বলছি,বলতে বলতে মুন্নীভাবির কথা ভাবি।কোথায় মিল কোথায় দু’জনার অমিল বোঝার চেষ্টা করি।
–তোর রবি কাকুর উপর রাগ হয়না?
–রাগ হবে কেন বরং একটা কারণে কষ্ট হয়।
–কষ্ট হয়?
–কাকুর একটা ছেলে আছে,শুনেছি সে নাকি এখন স্কুলে যায়। অথচ তাকে একদিনও চোখে দেখিনি। সেও কি জানে তার একজন চাচাতো ভাই আছে? অনিমানের চোখ ঝাপসা হয়ে এল।
–যাদের এরকম চোখে জল এসে যায় তাদের মনটা খুব নরম।
–তুমি তো সাইকোলজির ছাত্রী। নরম মন কি খারাপ?
–মনটাকে শক্ত করতে হবে। নরম মনের মানুষরা সহজে অপরের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। মানুষ নরম মনের সুযোগ নেয়।
–মন শক্ত করব কি করে?কোনো ওষুধ আছে নাকি?
–বৃষা একবার আসবে?ভিতর থেকে ডাক এল।বৃষ্টিভাবি বলল,তোকে একটা বই দেবো। যোগ সাধনার বই,পড়ে দেখিস।
অনিমান কিছুক্ষন বসে বেরিয়ে পড়ল। করিম ভাইয়ের দোকানে যাবার ইচ্ছে নেই। কিছুক্ষন পর খেয়াল হয় অন্যপথে চলে এসেছে। পথ ভুল হল কেন? কি ভাবছে সে মনে করার চেষ্টা করে। পিছন থেকে কে যেন ডাকছে মনে হল। পিছন ফিরে তাকাতে দেখল রাজু ভাই হনহন করে আসছে।কাছে এসে বলল,কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাস না?এদিকে কোথায় যাচ্ছিস?
–আসলে কি একটা যেন ভাবছিলাম তাই শুনতে পাইনি।তোমাদের কালেকশন শেষ?
–হ্যা অনেক্ষন আগে। জাস্টিস আঙ্কেলের বাসায় গেছিলাম। ভাবি বলল,তোকে একটা বই দেবে,এসে দেখে তুই নেই,বলে আসবি তো?
অনিমান বোকার মত হাসল। রাজু ভাই জিজ্ঞেস করে,তুই কখন এসেছিস?
–আমি এসে বিজয় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম। রাজু লক্ষ্য করে অনি যেন কি ভাবছে।বিজয় ভাইয়ের সঙ্গে কি কথা হয়েছে?খারাপ কিছু?বৃষ্টিভাবি এই বইটা অনিকে দিল কেন?
–রাজু ভাই তোমার সন্ধ্যা আপুকে মনে আছে?
রাজুর কানে নামটা যেতেই চমকে ওঠে জিজ্ঞেস করে,কোন সন্ধ্যা আপু?
–ওইযে রাশেদ ভাইয়ের বোন?
চিন্তিতভাবে রাজু বলল,ও হ্যা বাড়ী থেকে পালিয়ে গেছিল?
–পালিয়ে গেছিল তুমি কি করে জানলে?
–অত জানিনা,শুনেছি খারাপ লাইনে গেছে। রাজু ভাবে এতদিন পর অনি সন্ধ্যা আপুর কথা কেন তুলল?আড়চোখে অনিকে দেখে বইটা এগিয়ে দিয়ে বলল,বৃষ্টিভাবি এটা তোকে দিতে বলেছে।
অনি বইটা হাতে নিয়ে দেখল,ইংরেজি বই-” How to control your mind”,লেখক বিদেশী। পকেট থেকে পাঁচশো টাকার নোটটা বের করে রাজু ভাইয়ের হাতে দিয়ে বলল, সন্ধ্যা আপু ফাণ্ডে দিয়েছে।
রাজু তড়িদাহতের মত হাতটা সরিয়ে নিল। অনি অবাক গলায় বলে,কি হল?
–সন্ধ্যা আপুর টাকা? মানে তুই তো জানিস সন্ধ্যা আপু এখন খারাপ লাইনে নেমেছে?
–টাকার কি দোষ?যত টাকা কালেকশন হয়েছে তুমি নিশ্চিত সব সৎপথে উপার্জিত?
রাজু বিস্মিত চোখ মেলে অনির দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর হেসে বলল,তোর সঙ্গে দেখা হল কোথায়?
অনি বিস্তারিত বলল রাজুকে। রাজু বলল,আমার সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। আমি এড়িয়ে গেছি। তুই যা বললি এসব কিছুই জানতাম না। খুব অন্যায় হয়েছে সন্ধ্যা আপুর উপর। শোন অনি এসব আর কাউকে বলবি না,তারা অন্য অর্থ করবে। কিন্তু আমি ভাবছি টাকাটা নিলে সবাই জানতে পারবে, সন্ধ্যা আপুকে নিয়ে বিচ্ছিরি আলোচনা শুরু হয়ে যাবে।
–সেটা ঠিক বলেছো। অন্য নামে জমা করে নেও।অন্যনাম কেউ চিনতে পারবে না। অনি দেখল রাজু ভাই কেমন অন্য মনস্ক,জিজ্ঞেস করে, কি ভাবছো?
রাজু হেসে বলল,ভাবছি তোর কথা। তুই আমার থেকে ছোটো কিন্তু তোর মন অনেক বড়। ভাবি ঠিক বলে–।
–কোন ভাবি?
–আমার ভাবি।
–মুন্নীভাবি আমাকে খুব ভালবাসে। কি বলছিল ভাবি?
–তুই খুব আবেগ প্রবন,গতিবেগ মাত্রা ছাড়ালে নিয়ন্ত্রণ হারাবার সম্ভাবনা ভুলে যাস না।
দেরি করে বাড়ি ঢুকতে ভাবি বলল, এভাবে কি তোমার জীবন চলবে?অনিমান ভাবে তাকে নিয়ে ভাবির মনে চিন্তা রয়েছে একটা আক্ষেপ ?মনটা খারাপ হয়ে গেল। পরক্ষণে ভাবি বলল,মানুষ এত স্বার্থপর হয় কিভাবে বুঝিনা। এবার মনে হল ভাবি হয়তো রবি কাকুর কথা ভেবে বলছে। ভাবির কাছে শুনল রবি কাকু এসেছিল। ছেলে বড় হচ্ছে,ঘর দরকার। বাড়ীটা পুরানো হয়ে গেছে।এখন বাড়িটাকে ভেঙে নতুন করে বাড়ি করার চিন্তা করছে। অনি জানে তার সময় এই পাড়ায় ফুড়িয়ে এসেছে। শীঘ্রই একটা কাজের খোঁজ করে চলে যেতে হবে।
ডায়েরী লিখতে বসে একটা প্রশ্ন প্রথমেই মনে হল।সন্ধ্যা আপু ইজ্জত বাঁচাবার জন্য ঘর ছেড়ে এপথে গেল কেন?শ্বশুরবাড়ীতে আত্মমর্যাদা রক্ষা করে থাকা সম্ভব হয়নি। ভাইয়ের সংসারে সারাক্ষন অপরের শাসনে দমবন্ধ পরিস্থিতি হতে মুক্ত পরিবেশ সন্ধ্যা আপুর পছন্দ। অনিমান কখনো এভাবে ভাবেনি। কত বিশাল ভাবনার জগত,যত জানছে পুরানো ধ্যান-ধারণা চুরচুর হয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। পুথি পড়ে এসব শিক্ষা হয়না। যতদিন যাচ্ছে মনের অহংকার কর্পুরের মত উবে যাচ্ছে।কত কি জানার আছে কতটকুই বা জানে সে?
চ্যারিটি ফাউণ্ডেশন। নামটা জাস্টিস আঙ্কেলের দেওয়া,সকলের পছন্দ। কেউ কেউ বলছিল বাংলা নাম হলে ভাল হত। অনিমান বলল,শব্দটা ইংরেজি হলেও চ্যারিটি বাংলায় ঢুকে গেছে। মনে করিয়ে দিল বাঙালী মাড়োয়ারী পাঞ্জাবী সবাইকে নিয়ে কমিটি হয়েছে। ডাক্তার সাহেব সবাইকে চমকে দিয়ে ঘোষণা করলেন, তিনি সব মিটিং-এ থাকতে পারবেন না কিন্তু প্রতিদিনের একটি পেশেণ্টের ফিজ তিনি দান করবেন তহবিলে। জাস্টিস চৌধুরী সভাপতি এবং রাজু ভাই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হল। কেউ কেউ রাজু ভাইয়ের সঙ্গে একজন মহিলাকে নিয়ে যুগ্ম সম্পাদকের কথা বললেও প্রস্তাবটি তেমন সাড়া পায়নি।
পরীক্ষা শেষ,ফল প্রকাশের অপেক্ষা। দিন কয়েক পরে রেজাল্ট বেরোবে শোনা যাচ্ছে। করিম ভাইয়ের দোকানে নিয়মিত আড্ডা চলছে। একদিন রাজু ভাই আড়ালে ডেকে নিয়ে শ-পাচেক টাকা হাতে দিয়ে অনিকে বলল,স্যার বলেছে তোকে আর পড়াতে যেতে হবেনা।
অনিমান হতাশ দৃষ্টি মেলে তাকায়। রাজু ভাই অপরাধীর গলায় বলল,শালা বড়লোকের খেয়াল।অনি তোকে আরও ভাল টিউশনির ব্যবস্থা করে দেব।
অনিমান মনে মনে হাসে। গুণে দেখল একশো টাকার পাঁচটা নোট, হেসে বলল, এতটাকা তো পাওনা নয়।
–ছাড়তো,ওদের অনেক টাকা।
–না রাজু ভাই ওদের টাকা ওদেরই থাক। তুমি এই তিনশো টাকা ফিরিয়ে দিও।
রাজু ফ্যাসাদে পড়ে যায়,স্যারকে টাকাটা ফেরৎ দেবে কিভাবে?অনি ভীষণ জেদি একবার যখন বলেছে নেবেনা কিছুতেই নেবেনা। অগত্যা পকেটে রেখে দিল। অনিমান দোকানে এসে বসল। রবি কাকু প্রায়ই এসে গোলমাল করছে,পাশ করলে কলেজের মাইনে দিতে হবে,এর মধ্যে টিউশনিটা চলে গেল। সমস্যার পর সমস্যা। রাজু ভাইয়ের স্যার টিউশনিটা ছাড়িয়ে দিল কেন? চিত্রা কিছু বলেছে মনে হয়না। সিরাজকে চুপচাপ দেখে অনিমান বলল,কিরে কি ভাবছিস?
সিরাজ হাসল,মুখে কিছু বলল না।
রাজু ভাই বলল,আমি একটু অফিস থেকে ঘুরে আসি,অনি যাবি নাকি?
অনিমান বেরিয়ে পড়তে বরুণও সঙ্গী হল।ফিসফিস করে বলল বরুণ,সিরাজ ঝামেলায় পড়ে গেছে। তনিমা বলেছে পাস না করলে আর দেখা হবেনা।
–পাস করবে না ধরে নিচ্ছে কেন?
–পাস-ফেল কথা নয় আসলে তনিমা নাকি কেটে পড়ার অছিলা খুজছে।
অনিমান অবাক হয়। পাস-ফেলের সঙ্গে প্রেমের কি সম্পর্ক?সিরাজকে ছেড়ে একা একা খারাপ লাগবেনা? নাকি অন্য আরেকজন জুটিয়ে নেবে?
বিজয় ভাই বড় রাস্তায় চেম্বার করেছে। আগে বাড়ীতেই ছিল। বিজয় ভাইয়ের বাড়ীর চেম্বার এখন চ্যারিটি ফাউণ্ডেশনের অফিস। বৃষ্টিভাবি চাবি খুলে দিয়ে বলল, অনি তুই এদিকে আয়।
রাজুভাই বরুণকে নিয়ে অফিসে গিয়ে বসল। অনিমান বারান্দায় গিয়ে বসতে বৃষ্টিভাবি জিজ্ঞেস করে,বইটা পড়ছিস?
অনিমান মেডিটেশন চ্যাপ্টারটা একটু পড়েছে,ভাল করে পড়ার সুযোগ হয়নি। ধ্যান সম্পর্কে নাছির ভাইয়ের ক্লাসে কিছুটা শিখেছিল।বলল,সবে শুরু করেছি।
–তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করছি। সত্যি করে বলবি। কোনো বয়স্ক মহিলার সঙ্গে তোর পরিচয় আছে?
অনিমান ভাবে ডেকে নিয়ে এসে এ কেমন প্রশ্ন?জিজ্ঞেস করল,হঠাৎ একথা জিজ্ঞেস করছো?
–ঝরা পাতার কান্না গল্পটা পড়লাম। বৃষ্টিভাবি বলল।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে অনিমান। গল্পটা ছাপা হয়েছে অনিমান জানেনা। আসলে নতুন লেখকদের বেশি পাত্তা দেয়না। ছেপেই কৃতার্থ করে। বৃষ্টিভাবি অন্য কোনো কারণে নয় গল্পটা পড়ে মনে হয়েছে।
–আচ্ছা অনি তুই অত কথা জানলি কি করে?তুই তো কারো সঙ্গে প্রেম করিস নি।
–মেয়েদের জানতে প্রেম করতে হবে?প্রেম করেও অনেকে তার প্রেমিকাকেও জেনে উঠতে পারে না। তাছাড়া ভাবি কোনো নির্দিষ্ট মহিলা নয়,নানা জনের সঙ্গে মিশে একটু-এক্টু করে নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে গল্পটা লিখেছি।
–খুব অবাক লেগেছে। এই অল্প বয়সে এত কথা জানলি কি করে? বোস চা করে আনছি।
বৃষ্টিভাবি চলে গেল। অনিমান ভাবে ভাবি তুমিও খুব সুখে নেই। একটা সন্তান থাকলে সেই ফাঁক হয়তো পূরণ হতো। বৃষ্টিভাবি অনিকে এককাপ চা দিয়ে বলল,দেখে আয়তো কজন আছে?
আরও দু-জন এসেছে। বৃষ্টিভাবি ট্রেতে চারকাপ চা দিয়ে বলল,ওদের দিয়ে আয়। রোজ রোজ দিতে পারবো না।
অনিমান চা দিয়ে ফিরে আসতে দেখল ভাবি একমনে চা-এর কাপ নিয়ে উদাস হয়ে বসে আছেন। অনিমান বলল,ভাবি চুপ করে কি ভাবছো?
–তোর লেখাটা ভাল হয়েছে। তুই মানুষকে দেখে বোঝার চেষ্টা করিস?
–সে তো সবাই করে। নতুন লোক দেখলে তুমি ভাবো না,কেমন হতে পারে লোকটা?
বৃষ্টিভাবি হাসল। হাসিটা কেমন নিষ্প্রাণ মনে হল।বৃষ্টিভাবির কি মন খারাপ?
–আচ্ছা অনি আমাকে তোর কেমন মনে হয়?
–তোমার সঙ্গে কথা বলতে আমার ভাল লাগে।
–তোর কেমন লাগে শুনতে চাইনি। তোর কি মনে হয় আমি খুব ভাল আছি?
অনিমান হোচট খায়,কি বলবে?বৃষ্টিভাবি জিজ্ঞেস করে, কিরে বল?
–দেখো ভাবি কৃত্রিম কেনা গাছে পাতা গজায় না।কিন্তু এমনি গাছে পাতা গজায় পাতা ঝরে ফুল হয় ফল হয়। জীবনও সেই রকম,প্রতিনিয়ত বদলে বদলে নিতে হয়।
বৃষ্টি অপলক তাকিয়ে অনিকে দেখে। অনিমান বলল,যদি রাগ না করো তাহলে বলি–।
–রাগ করব কেন তুই বল।
–বিয়ের পর তোমার মন যেমন ছিল এখনো তাই থাকবে আশা করা ভুল। বয়স বাড়ছে সময় বদলাচ্ছে আর মন একই রকম থাকবে তাকি হয়?বিজয় ভাইয়ার বাবা কত বড় মানুষ অথচ সে তুলনায় সাধারণ উকিল বিজয় ভাইয়ের মনে হতাশা আসতেই পারে। সংসারে নতুন অতিথি এলে না হয় তাকে নিয়ে মেতে থাকা যেতো–।
বৃষ্টিভাবির মুখ লাল হয়। ফিক করে হেসে বলল,তুই খুব ফোক্কড় হয়েছিস।
–এইজন্যই বলতে চাইছিলাম না।
–ঠিক আছে-ঠিক আছে। এসব আবার কাউকে বলতে যাস না। ওদিকে দেখ কি নিয়ে তর্ক শুরু হয়েছে।
নিরব সাহেব আর রাশেদ ভাই কি নিয়ে তর্ক শুরু করেছে। কিছুক্ষন শোনার পর বোঝা গেল, নিরব সাহেব বলছেন,অসম্মান অবহেলা মানুষকে বিপথে ঠেলে দেয়,রাশেদ ভাইয়ের বক্তব্য যে যেমন সে তেমন পথ বেছে নেয়। রাজু ভাই ইশারায় নিষেধ করল,অনি যেন কোনো কথা না বলে।নিষেধ না করলেও অনিমান বড়দের কথায় কথা বলত না। নতুন গড়ে ওঠা চ্যারিটি ফাউণ্ডেশন শুরুতেই চিতপাত হয়ে যাবে। সন্ধ্যা আপুর কথা মনে পড়ল। সন্ধ্যা আপুর বড় ভাই এই রাশেদ ভাই।
–ভাবির সঙ্গে এতক্ষণ কি গপ্পো করছিলি? রাজু ভাই জিজ্ঞেস করল।
–জানো রাজু ভাই আমার গল্পটা ছাপা হয়েছে।বৃষ্টি ভাবি গল্পটা পড়েছে। পত্রিকা থেকে আমাকে কিছুই জানায়নি।
–কি বলছিল ভাবি?
–প্রশংসা করছিল, ভাবির ভাল লেগেছে।
রাজু ভাই উদাসভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।বরুণ বলল,মেয়েদের মধ্যে লেখকের হেভি খাতির।
–কি হচ্ছে কি আস্তে। রাজু ভাই ধমক দিল বরুণকে তারপর বলল, অনি তুই লেখাটা ছাড়িস না। যত ঝামেলা আসুক লেখালিখি চালিয়ে যাবি।রাজু ভাই বলল।
রাজু ভাইয়ের গলায় কষ্টের সুর। আমি জানি রাজু ভাই আমাকে খুব ভালবাসে। আমার অবস্থার কথা ভেবেই কথাগুলো বলল।
–সন্ধ্যাবেলা টিভির খবর শুনেছেন?ঢুকতে ঢুকতে দীলিপ আঙ্কেল বললেন।
কোন খবরের কথা বলছেন?সবাই সজাগ হয়। নিরব সাহেব বললেন,সবাই সিরিয়াল নিয়ে বসে গেছে। খবর শুনব তার উপায় নেই।
–ঠিক বলেছেন,টিভি-ই ছেলেমেয়েদের মাথাটা খেল।
–কি খবর বলছিলেন? রাশেদ ভাই জিজ্ঞেস করে।
–বিএ বিএসসি পার্ট ওয়ানের রেজাল্ট বের হবে কাল। মেয়েটা পরীক্ষা দিয়েছে,কি করবে কে জানে?চিন্তিত মুখে বললেন দীলিপ আঙ্কেল বললেন। রাশেদ ভাই নিষ্পৃহ,তার বাড়ীতে কেউ পরীক্ষা দেয়নি।
দীলিপ আঙ্কেলের মেয়ে রুহি। অনিমান আর বরুণ চোখাচুখি করে। দুজনেই পরীক্ষা দিয়েছে।
–রাজু ভাই আমি আসি। বরুণ চলে গেল।
–আপনারা বসবেন?চাবিটা দিয়ে গেলাম। রাজু ভাই চাবি টেবিলের উপর রেখে বলল,চল অনি।
রাজু ভাই অনিমান বেরিয়ে পড়ল। মুহূর্তে পরিবেশ বদলে গেল। পরীক্ষা খারাপ হয়নি তাহলেও এখন কেমন যেন লাগছে। পথে শুভর সঙ্গে দেখা হতে রাজু ভাই বলল,শুনেছিস?
–রেজাল্ট তো? হ্যা রুহি ফোন করেছিল। শুভ ফ্যাকাসে হেসে বলল।
–চলে যাচ্ছিস?
–হ্যা ভাল লাগছে না।
অনিমান মনে করার চেষ্টা করে পরীক্ষা কেমন দিয়েছিল। মনে করতে পারেনা,সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। পাস করলে হাতি-ঘোড়া কিছু হবেনা। খেতে বসে ভাবিকে বলল,টিভিতে নাকি বলেছে, কাল রেজাল্ট বেরোবে।
–কলেজে গিয়ে খোঁজ নিয়ে আয়।
–সেতো যাবো। ভাবছি কি হবে?
–ভাবার সময় ভাবতে হয়। এখন ভেবে কি হবে?
রাতে ডায়েরী নিয়ে বসতে চিত্রার কথা মনে পড়ল।ও বলেছিল গডের কাছে প্রেয়ার করেছে। মেয়েটার মধ্যে হিপোক্রাইসি নেই। যা বলার স্পষ্ট বলে দেয়। পাস করেছে শুনলে খুশি হবে। পর মুহূর্তে খেয়াল হয় ওর বাবা তাকে যেতে নিষেধ করেছে। চিত্রার সঙ্গে তার আর দেখা হবে না।নিজেকে ভীষণ একা মনে হয়। চিত্রার সঙ্গে দেখা হবেনা এই ভেবে কি?
.
.
.
চলবে………!