জীবনের জলছবি
পর্ব ১৮
মনের মধ্যে চিন্তা টা রয়েই গিয়েছিলো দুদিন ধরে, আজ পড়া থেকে বেরিয়েই ফোন করলো টুসি। আধ ঘন্টা পরে ডেকে দেবে বলায় ওখানেই দাঁড়িয়ে থেকে আবার ফোন করলো, কিন্তু এখনও তনু আসেনি।
ও কখন আসবে বলেছে কিছু? আমি আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবো!
বেশ বিরক্ত গলায় বললো টুসি, ওর সত্যি এবার খারাপ লাগছিলো।
তোমাকে কি ও বাইরে চলে যাবে বলে বলেছিলো?
ছেলেটার কথায় একটু থমকে গেলো টুসি, কি উত্তর দেবে ঠিক করতে পারছিলো না, তনু ওকে মিথ্যে কথা বলেছে এটা এখন অনেকটাই স্পষ্ট ওর কাছে। কিন্তু সেটা ওর বন্ধু কে জানতে দেওয়া উচিত কিনা ঠিক বুঝতে পারছিলো না। ওর খুব অপমানিত লাগছিলো। এতো বছর ধরে ওই কি শুধুই টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে সম্পর্কটাকে! আজ একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে ভেবে নিলো ও, আর এই ভাবে বারবার অপমানিত হতে পারবে না!
ঠিক কতক্ষন পরে ফোন করলে ওকে পাওয়া যাবে একটু বলতো! আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,
ছেলেটার কথার কোনো উত্তর না দিয়েই বললো টুসি, ওর টাকাও শেষ হয়ে গেছে প্রায়, কিন্তু আজ যে করেই হোক ও কথা বলবেই তনুর সঙ্গে! নিজের ওপর নিজেই বিরক্ত হচ্ছিলো ও, কেনো ও কিছুতেই নিজেকে সরিয়ে নিতে পারছে না তনুর মনোভাব বোঝা সত্বেও!
আমি ঠিক আর আধঘন্টা পরে ফোন করবো, ওকে অপেক্ষা করতে বোলো, আমার জরুরী কথা আছে,
বলেই ছেলেটাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন টা রেখে দিলো টুসি। ওর কাছে আর টাকা নেই, এই মুহূর্তে এমন কেউ নেই যার কাছে ও টাকা চাইতে পারে। ও কি বাড়িতে ফিরে যাবে টাকা নিতে! কিন্তু মা সন্দেহ করবে তাহলে, প্রচুর প্রশ্ন করবে টাকা দেওয়ার আগে! কিন্তু আর ধৈর্য্যও রাখতে পারছিল না ও, আজকে যে করেই হোক কথা বলতেই হবে।
কি করা যায় ভাবতে ভাবতে হটাৎ মনে হলো তপু দা দের বাড়িতে ফোন আছে, ওখান থেকে করা যেতে পারে, কিন্তু কাকিমা কে কিভাবে ম্যানেজ করা যাবে, তপু দার হেল্প ছাড়া ওটা কিছুতেই সম্ভব হবে না। কোনো কিছু না ভেবেই সোজা হসপিটালে হাজির হয়ে গেলো টুসি।
তপু দা ডিউটি তে ছিলো না, অগত্যা ওর বাড়িতে গিয়েই উপস্থিত হলো ও। কাকিমা দরজা খুলেই ওকে দেখে খুব খুশি হয়ে তপু দা কে ডাকলেন,
তপু দেখে যা কে এসেছে,
আরে আয় আয়, কি খবর তোর? আজ কলেজে যাসনি?
ওকে দেখেই বললো তপু, টুসি কোনরকমে একটু হেসে ভেতরে ঢুকে এলো। খানিকক্ষন গল্প করার পর আর ধৈর্য্য রাখতে না পেরে কাকিমার কাছে চা খেতে চাইলো ও। এই মুহূর্তে কাকিমা কে এখান থেকে সরানো টা ভীষণ জরুরী।
কাকিমা উঠে যেতেই তপু দা কে প্রায় তাড়া তাড়ি সব টা কম কথায় বুঝিয়ে দিয়েই ফোন করতে চাইলো টুসি। তপু একটু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন, তারপর বললো
তুই ফোন কর, আমি রান্না ঘরে গিয়ে মা কে সামলে রাখছি।
বেশ কিছুক্ষণ রিং হয়ে যাওয়ার পর অবশেষে ধরলো তনুই। প্রায় অধৈর্য স্বরে বললো টুসি,
কি হয়েছিল তোমার? কেনো গেলে না?
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো তনু, তারপর বললো
মা চাইছিলো না, আসলে বোন মারা যাবার পর থেকেই মা আমাকে কাছ ছাড়া করতে চায়না একদম, খুব কান্নাকাটি করছিলো, তাই ওই চাকরি টা ছেড়ে দিতে হলো।
কিন্তু তুমি তো টিকিট কেটে ফেলেছিলে তাইনা?
একটু অবাক হয়ে বললো টুসি, মা কে না জানিয়েই ও এতো কিছু করছিলো, ওর কেমন বিশ্বাস হচ্ছিলো না!
হ্যাঁ, আসলে আমি ভেবেছিলাম মা কে রাজি করিয়ে নিতে পারবো তাই,
কেমন যেনো অজুহাতের মতো লাগছিলো কথা গুলো।
তাহলে এবার?
গলাটা কঠিন করে জানতে চাইলো টুসি,
আমাদের সম্পর্ক টা নিয়ে কিছু ভাবছো, তোমার চাকরির ওপর কত কিছু নির্ভর করছিলো জানো তুমি?
আমি তো তোমাকে বলেছিলাম টুসি, তোমার অসুবিধা থাকলে তুমি অপেক্ষা কোরোনা,
বেশ যেনো বিরক্তি নিয়েই বললো তনু, টুসির খুব খারাপ লাগছিলো।
তুমি যে যাওনি, এটা সোমাকে ফোন করে জানাওনি কেনো? আমি এখানে চিন্তা করছি একবারও মনে হয় নি তোমার?
ফোন নম্বর লেখা কাগজটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না,
কথাটা শুনেই আরও রাগ হলো টুসির, কাগজটা হারিয়ে ফেলেছে! এতোটুকুও টুসির দাম নেই ওর কাছে, কাগজটা যত্ন করে রাখার কথাটুকু ও মনে হয়নি ওর! আর এর জন্যেই টুসি পাগলের মতো তপুদার বাড়িতে ছুটে এসেছে! নিজের ওপরেই রাগ হচ্ছে এখন!
আর কোনো দিনও ফোন করবো না, যোগাযোগ রাখার দরকার নেই আর, মনে কর সব কিছু শেষ হয়ে গেছে আমাদের মধ্যে,
বলেই ফোন টা রেখে দিলো টুসি। পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো দরজায় হেলান দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তপু দা।
ক্রমশ