জেদ” পর্ব-১৫

0
866

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট১৫
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.

আরদ্ধ…..
অনবদ্য, অপার এক ভালোবাসার নাম।আরদ্ধকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন থেকেই অজানা একটা ভালোলাগা মনকে দোলা দিয়ে গিয়েছিল।সবকিছু বুঝেও নিজেকে দমিয়ে রেখেছিলাম আমি। কিন্তু আরদ্ধ পারেনি। তার অনুভুতিগুলোকে নিজের অজান্তেই প্রকাশ করে ফেলেছে আমার কাছে।
আরদ্ধ নিজের অজান্তেই আমাকে ভালোবেসে ফেলেছিল।নিজের অজান্তেই তার জেদ আমার প্রতি আসক্তিতে রুপান্তরিত হয়েছিল।বুকের বাম পাশে হৃদয়ের অস্তিত্ব অস্বীকার করলেও আরদ্ধ নিজের মনের কথা অকপটে আমাকে জানিয়ে দিয়েছিল।লোকলজ্জা,সমাজ,স্ট্যাটাস সব কিছুর উপরে বেহে নিয়েছিল আমার সংগ।
.
.

-রেওয়াত স্যার আর পার্টি! সূর্য কোন দিকে উঠছে বল তো?
ডেস্কে বসে একটা ফাইল চেক করছিলাম ।রিতির কথায় মাথা না তুলে জিজ্ঞেস করলাম
-কেন?কি হয়েছে ?মানুষ পার্টি দিতেই পারে ।এটা স্বাধারন ব্যাপার ।এত অবাক হওয়ার কি আছে?
রিতি আমার সামনে থেকে ফাইল কেড়ে নিয়ে বলল
-ফাইলের অন্ধ এটা কোন সাধারন মানুষের কাজ না।দ্যা গ্রেট রেওয়াত স্যার এর পার্টি।যে ব্যক্তি আজ পর্যন্ত নিজের বার্থডে তো দূরে থাক ২০০ কোটী টাকার প্রোফিটেও কাউকে ডেকে চা খাওয়ান নি। আর উনি কিনা দিচ্ছেন পার্টি ।যদিও পার্টিটা উনার বার্থডে তে পরেছে কিন্তু উনি রিজন দেখিয়েন ডিল এর কাজ শেষ হওইয়ায় উনি এই পার্টি দিচ্ছেন।
এক নাগারে কথাগুলো বলে থামল রিতি।ভ্রু কুচকে বললাম
-উফফ…এত কথা বলতে পারিস তুই!সারাদিন বকবক করা ছাড়া তোর কোন কাজ নেই না?দে আমার ফাইল দে।
কথাটা বলে ফাইল নিতে হাত বাড়ালাম আমি।রিতি চোখ সরু সরু করে বলল
-এত তোর হাতের আংটিটা কিসের রে?এংগেজমেন্ট কবে করলি?
আমি চট করে হাত টা সরিয়ে নিয়ে বললাম
-ধুর কি যা তা বলিস! কিসের এংগেজমেন্ট!বার্থডে তে গিফট পেয়েছিলাম।এখন যা তুই ।কাজ করতে দে।
-বার্থডে তে এত বড় হীরার আংটি কে গিফট দেয় রে?
-তুই যাবি নাকি আমি যাবে এখান থেকে?
-যাচ্ছি যাচ্ছি।কারও সাথে দুদন্ড কথা বলে শান্তি নেই।সবাই খালি কাজ আর কাজ।হুহ।
আপন মনে বকতে বকতে রিতি আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি আংটিটা সামনে নিয়ে আনমনে রিতির কথাগুলো চিন্তা করতে লাগলাম।তখন পাত্তা না দিলেও রিতির কথাগুলো এখন বেশ ভাবাচ্ছে আমাকে।আরদ্ধ কি সত্যিই এসব আমার জন্যে করছে?

.
.
আমার সব প্রশ্নের জবাব পেয়েছিলাম আরদ্ধের বার্থডে পার্টির দিনে।আরদ্ধকে আগেই জানিয়েছিলাম কোন নাইট ওকেশনে বাসা থেকে এলাও করবে না।তাই যদি আমাকে উপস্থিত দেখতে চায় তবে যেন দিনে পার্টি এরেঞ্জ করা হয়।আরদ্ধ আমার কথা শুনে কিছু একটা বলতে গিয়েও দমে গিয়েছিল।হয়তো অধিকারের জায়গাটা খুজে পাচ্ছিল না।
যথাসময়ে একটা কালো শাড়ি পড়ে হাজির হলাম।সাজগোজ ছোট থেকেই আমার পছন্দ না। ঠোটে হালকা লিপস্টিক,চোখে গাঢ় কাজল আর কানে হালকা ভারী দুল আমার সাজের সজ্ঞা পূরন করে দেয়।কলিগরা সবাই ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরেছে ।আমি বেশ কয়েকবার এদিক ওদিক তাকিয়ে আরদ্ধকে খুজার চেস্টা করলাম।কিন্তু তার কোন চিহ্ন দেখা পেলাম না।আমি নিজের মত পার্টি এঞ্জয় করতে লাগলাম।কিছুক্ষন পর রাফাত এসে আমার পাশে দাঁড়াল।
-সুন্দর লাগে বেশ তোমাকে ।
-থ্যাংকিউ ।তুমিও তো কম সাজোনি ।কি ব্যাপার কার জন্যে এত সাজ?
আমার কথা শুনে রাফাত লজ্জা পেয়ে গেল।মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল
-আসলে বেশ কয়েক দিন ধরেই তোমাকে একটা কথা বলব বলব ভাবছি কিন্তু কাজের ব্যস্ততার কারনে বলা হচ্ছে না।আমি আসলে রিতিকে লাইক করি খুব.আজ পার্টি শেষে I’m gonna propose her.
-What!!!Really??Congratulations man.
লাফায় বলে উঠলাম আমি।
_শশশশহহহ…।প্লান বিগড়াবা না কি তুমি?
আমি গলা নামিয়ে বললাম
-তা বলেন মহাশয় প্লান কি !
রাফাত এদিক ওদিক তাকিয়ে পকেট থেকে একটা ছোট্ট রিং এর বক্স বের করে আমাকে দেখল। চকচকে সোনার একটা আংটী।বক্সটা খুলতেই রাফাতের চোখদুটো যেন ভালোবাসায় উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
আমরা দুজনেই বেশ এক্সাইটেড ।আমি ঘূর্নাক্ষরেও টের পাইনি কোন ভয়ংকর পরিস্থির সম্মূখীন হতে যাচ্ছি আমি।হঠাত করেই রাফাত কাউকে দেখে চুপ হয়ে গেল।রিং বক্সটা পকেটে ঢুকিয়ে বলল
-Good evening Sir.Thank you for inviting us in this party.
আমি ফিরে তাকাতেই যেন চমকে উঠলাম।আরদ্ধ হিংস্র পশুর মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চোখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।রাফাতের কথার জবাবে কোন রকমে ঠোটে একটা হালকা হাসি টেনে বলল
-Mr.Rafat Would you mind if I steal Miss Inayat for a few minutes?
রাফাত হালকা ইতস্তত করে বলল
-Sure Sir.All yours.
কথাটা বলেই রাফাত অন্যদিকে হাটা ধরল।আরদ্ধ এখনো মূর্তির মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ঢোক গিলে বললাম
-Good Evening Sir.
আমি আর কিছু বলার আগেই আরদ্ধ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।ছাদের এনে আমার হাত ছাড়ে দিয়ে রেলিং ঘেষে দাঁড়াল আরদ্ধ।
.
.
বেশ কিছুক্ষন কেটে গেল নিরিবতায় ।আরদ্ধ খুব শক্ত করে আমার হাতটা ধরেছিল।হাতে দাগ বসে লাল হয়ে আছে।আমি মনযোগ দিয়ে হাত ঘষছি সেই মুহুর্তেই আরদ্ধ ভার গলায় বলে উঠল
-ইনায়াত তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকেই তোমাকে দেখলে অজানা একটা ভালোলাগা কাজ করত।সব সময় তোমার আশেপাশে থাকতে চাইতাম।আমি একজন্যেই ডিল সাইন করার সময় কন্ডিশন এপ্লাই করেছিলাম যাতে কোম্পানি থেকে তোমাকে পাঠানো হয় যাতে আমি আরও বেশি সময় তোমার সাথে কাটাতে পারি।আমি জানি না এটাকে তুমি কি বলবে!ভালো লাগা না ভালো বাসা।But All I want is your happiness.Just want to see a smile on your face always.Till the last day of my life.
আমি এক সেকেন্ডের জন্যে থমকে গেলাম।নিজের কানকে অবিশ্বাস্য মনে হতে লাগল।ছোট থেকেই আমার পছন্দ অপছন্দকে খুব একটা গুরুত্ব দেওইয়া হয় নি।সব কিছুই হত বাবা মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী।
আরদ্ধ পিছন ফিরে এসে আমার সামনে দারাল।অন্ধকারে খুব ভালো করে আরদ্ধের চেহারা দেখা যাচ্ছে না ।আবছা আলোয় দেখলাম আরদ্ধের রাগ উবে গিয়ে একরাশ বিষন্নতা ছেয়ে আছে।আরদ্ধ আমার ডান হাতটা টেনে বলল
-ইনা doesn’t matter তুমি কার সাথে আছ।Only matters কার সাথে তুমি খুশি আছ।হোক সেটা আমি বা হোক সেটা রাফাত ।If you’re happy with him তাহলে আমি কখনোই তোমাদের মাঝে বাধা হয়ে দাড়াব না।
আরদ্ধ কথা শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে হাসার চেস্টার করে আমার হাত থেকে আংটিটা খুলার চেস্টা করতে লাগল।
-ইনায়াত আজকে থেকে তুমি ফ্রি ।তুমি চাইলে…
আরদ্ধ আংটীটা খোলার চেস্টা করছে কিন্তু খুলছে না। হাতের মধ্যে আটকে বসে আছে।
আমি হাতটা এক ঝটকায় টেনে বললাম
-Mr, Aroddho আমি আপনার খেলার পুতুল না যে যখন মন চাইবেন খেল্বেন আর যখন মন চাইবেন ছূরে ফেলে দিবেন।আংটি আপনি পরিয়েছেন নিজের মর্জিতে কিন্তু খুলবে আমার মর্জিতে ।
আরদ্ধ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
-মানে?
কোটী টাকার মালিক,The youngest বিজনেস আইকন Aroddho Reowyat এই সিম্পিল একটা কথাটা বুঝতে এত সময় লাগবে ব্যাপারটা ভাবতেই যেন রাগ উঠে গেল।চোখ দুটো সরু করে এক বার আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে ওর ঠোটে ঠোট ডুবালাম।আরদ্ধ যেন আকাশ থেকে পড়ল।কোণ রেস্পন্স না করে চুপচাপ নিজেকে ধরে রাখল।ঠোট ছাড়তেই বলে উঠল
-ইনা তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?কি ছিল এটা?
আমি হেসে বললাম
-তোমার বার্থডে গিফট ।
বিষ্ময় উপচে পরছে আরদ্ধের চোখ মুখ জুড়ে ।
-রাফাতের রিংটা আমার জন্যে ছিল না রিতির জন্যে ছিল।রাফাত রিতিকে লাইক করে ।আজকে প্রোপোজ করবে তাই সে আমাকে বলছিল যাতে আমি তাকে গুড লাক উইশ করি।
-মানে তুমি……?
-তোমাকে ভালোবাসি।
কথাটা শুনেই যেন আরদ্ধ খুশি হয়ে গেল।যেন কেউ ওকে তার জীবনের সবচেয়ে দামী কিছু দিয়েছে।অন্ধকারের মধ্যেও খুশিতে ওর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
-প্রমিস কর কখনো ছেড়ে যাবে না?
আমার কথা শুনে আরদ্ধ দুহাতে আমাকে জাপটে নিল।খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাহুডোরে বন্দি করে নিল।………
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here