#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট১৬
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
গাড়ি জ্যামে আটকে আছে।আমি চোখ বুঝে কানে হেডফোন গুজে চুপচাপ বসে আছি।হঠাত ঠোটের মধ্যে একটা উষ্ণ ছোয়া পেয়ে চোখ খুললাম আমি। পাশ না ফিরিয়ে বললাম
-আজ দেরী হল যে?
-ভাবলাম তোমাকে বিরক্ত না করি। কিন্তু অভ্যাস তো আর পালটানো যায় না।মাথায় ব্যাথা বাধালে কিভাবে?স্ট্রেস কিসের এত?
-আরদ্ধ আমি ভেবেছিলাম আরাজ……
-তোমার আর ওর প্যারেন্টস কে মানিয়ে নেবে। বিয়ে ভেংগে দেবে। তাই তো?বাট হল কি?
Just the opposite.আরাজ হয়তো বা তোমার প্যারেন্টস এর সাথে কথা বলেছে বাট The thing is গার্জিয়ানরা মানে নি। এটা নিয়ে এত স্ট্রেসড হওয়ার কি আছে?
আরদ্ধর কথা শুনে আমি চোখ তুলে পাশ ফিরে তাকালাম।
-What do you mean by stressed হওয়ার কি আছে?
আরদ্ধ আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।তাও এমন এক জনের সাথে যার পুরো নামটাও মেবি ঠিকভাবে আমি জানি না।আমি এত চেস্টা সত্ত্বেও কোন ভাবে বিয়ে থানাতে পারছি না!
-তুমি নিজে বলেছ?
আরদ্ধের কথা শুনে থমকে গেলাম আমি।
ওর দিকে ফিরে তাকাতেই বলে উঠল
-ইনা ছোট থেকেই আমি অনেক খাই-ফরমেশ খাটিয়ে বড় হয়েছি।যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। তোমাকে তুলে এনে নিজের করে নেওয়া আমার জন্যে বাম হাতের খেলা।
কথাটা বলে থামল আরদ্ধ। আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ইনা একবার চিন্তা করে দেখ তো সেদিন আমি যদি নিজে না এসে অন্য কাউকে দিয়ে তোমাকে তুলে নিয়ে যেতাম তবে আজ কি তুমি এত গভীর ভালোবাসায় আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে?
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই আরদ্ধ আমার কপালে গাঢ় করে একটা চুমু খেল।বাম হাত দিয়ে আমার মাথাটা জড়িয়ে নিল ওর বুকের মধ্যে।
– ইনা কিছু কাজ নিজেকে করতে হয়৷ শুধু নিজেকে। অন্য কেউ সে কাজ করতে পারে না।কারন তখন প্রশ্ন থাকে অস্তিত্বের উপর।
.
.
ডায়নিং টেবিলে আমি আর বাবা মুখোমুখি হয়ে বসে আছি।বাবার মুখ আষাঢের কালো ছায়ায় ঢেকে আছে। চুপচাপ ভাতের দলা গিলছে বাবা। তাড়াহুড়ো করে খাওয়া শেষ করে উঠে গিয়ে গা এলিয়ে দিলেন সোফাতে।আমিও বাবার পিছু পিছু গিয়ে বসলাম।
-বাবা আমি…..
-বিয়ে মানুষের জীবনের এক অমোঘ সত্য।প্রতিটা মানুষের জীবনে এক জন সংগী দরকার। বাবা মা সারাজীবন থাকবে না। যখন আমি আর তোর মা থাকব না তখন তুই একা কীভাবে চলবি ভেবে দেখেছিস একবার?
আমি বাবার কাছে এগিয়ে গিয়ে বসে তার হাতদুটো চেপে ধরলাম।
-বাবা আমি বলছি না যে আমি বিয়ে করব না।বিয়ে করতে আমার কোন আপত্তি নেই।কিন্তু আমি আরাজকে বিয়ে করব না।
আমার কথা শুনে বাবা অবাক হয়ে ফিরে তাকাল আমার দিকে।
-আরাজকে বিয়ে করবি না তো কাকে করবি?
-আ..
আমি আরদ্ধের নাম নিতে গিয়েও থেমে গেলাম।একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বললাম
-আমি এখন বিয়ে করতে চাই না বাবা।আমার হাতে অনেক কাজ পরে আছে।আমি মাত্র আমার ড্রিম প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করা শুরু করেছি।এখন বিয়ে মানে ডিসট্রাকশন।
আমার কথায় বাবা মুখখানা আরও এক শেড কালো করে বলল
-অনেক কাজ করেছ। এবার নিজের লাইফে সময় দেও।আমরা আজ আছি কাল নেই।আমাদের কিছু হয়ে যায় তখন তোকে কে দেখবে?
-বাবা আমি নিজের দেখাশোনা নিজেই করতে পারব।
আমার কথা শুনে বাবা মুখ বাকিয়ে বলল
-ওসব সবাই বলে।কিন্তু সময় আসলে সবাই হাহাকার করে।
বাবার কথার কোন জবাব খুজে পেলাম না।কারন আসলেই নিজেকে সামলানো কোন সোজা কাজ না।আরদ্ধকে ছাড়া আমি কিভাবে কী করতাম তা ভাবতেও পারিনা।ছেলেটা আমার অগোছালো জীবনটাকে নিজের মত করে সাজিয়ে দিয়েছে।
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম
-দেখ বাবা হুট করে যাকে জানি না চিনি না তার সাথে আমি সারাজীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারব না।যাকে আমি কখনো কাছ থেকে দেখিনি যার মানসিকতার সাথে আমি পরিচিত নই আমি তার হাতে আমার জীবনের দায়ভার দিতে পারব না।
-মানে?কি বলতে চাচ্ছিস তুই?
বাবা রাগী গলায় জিজ্ঞেস করলেন।আমি একটা নিশ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চার করে বললাম
-মানে বিয়ে করতে আমার কোন সমস্যা নেই।কিন্তু আমি আরাজকে বিয়ে করতে পারব না।
আমার কথা শুনে বাবা যেন আকাশ থেকে পড়লেন।চোখে মুখে বিষ্ময় ফুটিয়ে বললেন
-আরাজকে বিয়ে করতে পারবি না কেন?আরাজের মধ্যে কী সমস্যা?ছেলে দেখতে শুনতে ভালো।উচ্চ শিক্ষিত।বিদেশে থাকে।হাই কালচারড।মাস গেলে ভালো বেতন পায় ।কমতি কোথায় ?
আমি বাবার কথায় তাচ্ছিলের হাসি দিয়ে বললাম
-ব্যাস এই টুকুই?দেখতে শুনতে ভালো হলেই কি তার মনটা ভালো বাবা?উচ্চ শিক্ষিত মানে কি সে সবাইকে যথাযথভাবে সম্মান করতে জানে?হাই কালচারড মানে আবার সো কলড পুরুষ না তো! যে কিনা কথায় কথায় পুরুষত্ব আর আধিপত্য ফলাতে আসবে?মাস গেলে ভালো বেতন হাতে তুলে দিবে কিন্তু মাসের শুরুতে সংসারটাকে গুছিয়ে দেবে তো?আমি মানিয়ে নিতে পারলেও আমার দোষ ত্রুটীগুলোকে সে মানিয়ে নিতে পারবে তো?আমার ভালোলাগা মন্দ লাগাকে প্রাধান্য দিবে?আমাকে যথাযথ সম্মান দিবে তো?
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলাম আমি।বাবা হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।ছোট একটা দম ফেলে বললাম
-বাবা ছোট থেকে আমার যাবতীয় সব সিদ্ধান্ত তুমি নিয়েছ। আমার ভালোমন্দ সব কিছু তুমি যাচাই বাছাই করেছ।কিন্তু এবার না।এবার লাইফ আমার এবার সিদ্ধান্ত তুমি নিবে ।কারন বাকিটা পথ তুমি আমার সাথে থাকবে না। আমাকে একাই চলতে হবে।তাই অজানা কারও সাথে আমি বিয়ে করব না।এতদিন আমি তোমার সব সিদ্ধান্তকে সম্মান করে এসেছি।আশা করি মেয়ে হিসেবে আমার এই সিদ্ধন্তটাকে তুমি রেস্পেক্ট করবে।
কথাগুলো বলে বাবার উত্তরের অপেক্ষা না করেই আমি রুমে চলে আসলাম।পেছনে ফিরলে হয়তো দেখতে পেতাম বাবা রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার পর মায়ের দিকে ফিরে বেশ খানিকটা কথা শুনিয়ে রাগে গজরাতে গজরাতে রুমে চলে যাবেন।
.
.
আমি রুমে এসে ব্যালকনিতে দাড়ালাম।এক রাশ ঠান্ডা হাওয়া এসে ছুয়ে গেল।চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি।আমি জানি বাবাকে রাজী করানো সহজ হবে না। অথচ শুরুতে আমি কি নিশ্চিত ভাবেই বলেছিলাম আমি বাবাকে রাজী করাতে পারব।আরদ্ধর মত ছেলেকে কোন বাবাই তার মেয়ের জন্যে জীবন্সংগী হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করবে না।বিয়ে ভাংগার এখন একটা উপায়ই হাতে আছে।সময় এসে গেছে সেই Trump card ব্যবহার করার।…..
চলবে
{নেক্সট পার্ট রাতে দিব ইন শা আল্লাহ }