জেদ” পর্ব-২৭

0
806

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট২৭
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
-আরদ্ধ আমাকে কেন কিস করেছে এটা আমাকে না জিজ্ঞেস করে আরদ্ধকে জিজ্ঞেস কর।আরদ্ধকে আমি ইনভাইট করিনি। তুমি করেছ।সুতরাং যা কিছু ঘটেছে এটার দায়ভার আমার না।
-ইনা….সরি ইনায়াত আমি মানছি আরদ্ধ তোমাকে অনেক ভালোবাসে বাট We’re married now.দুনিয়া সমাজের নজরে তুমি আমার ওয়াইফ।ভরা সভায় কেউ যদি এসে আমার ওয়াইফকে কিস করে যায় তাহলে ব্যাপারটা কত খানি সন্দেহের চোখে দেখা হতে পারে তুমি জানো নিশ্চয়ই।
.
ব্যালকনির দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।বাসায় আসার পর থেকেই আরাজ অনবরত একটা জিনিস কে চুইংগামের মত টেনেই চলছে।ওর কথা শুনে পিছনে ফিরে তাকালাম আমি। আরাজকে খুব উত্তেজিত দেখাচ্ছে। সদ্য বিবাহিত বঊকে ভরা মজলিশে কোন পর পুরুষ কিস করে গিয়েছে। অথচ সে স্বামী হয়েও একবারও ছোয়ায় সুযোগ টুকুও পায় নি।।
-যদি ভেবে থাকো যে তোমার ওয়াইফকে আরদ্ধ আমাকে কিস করেছে বিধায় আমার উচিত ছিল রিয়েকশন দেখানো বা তাকে চড় থাপ্পড় কিছু মারা তাহলে জানিয়ে দেই আরদ্ধ আমার জীবনের সব চেয়ে প্রিয় মানুষ৷ আর আমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হল আরদ্ধর ঠোট।আজকে প্রথম নয় যে আরদ্ধর ঠোট আমাকে স্পর্শ করেছে৷ এর আগেও অনেক বার আরদ্ধ আমাকে চুমু খেয়েছে।সুতরাং তোমার ওয়াইফ হিসেবে হিসেবে কিভাবে রিয়েক্ট করা উচিত আমি জানি না।কারন আমার মধ্যকার ইনায়াত এখনো আরদ্ধকে ভালোবাসে।
আমার কথা শুনে আরাজের মাথায় যেন বাজ ভেংগে পরল।ওর চোখে মুখে স্পষ্ট বিষ্ময়ের ছাপ।ওর হাত পায়ে অস্থিরতা কাজ করছে।মুহুর্ত দেরী না করে সে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।আমি একদৃষ্টিতে আংটিটার দিকে তাকিয়ে আছি ।যাওয়ার সময় আরদ্ধ এটা আমার হাতে গুজে দিয়েছিল।হয়তো আমাকে দেওয়া এটাই তার শেষ উপহার।
.
.
রাতে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলাম।ভাতের প্লেট এ হাত দিব তখনি আম্মু বলে উঠল
-তুই একা কেন!জামাই বাবাজী কোথায়?
আমি মার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে প্লেটে ভাত বাড়তে বাড়তে বললাম
-জানি না।
মা আমার কাছ থেকে ভাতের বাটিটা টেনে নিয়ে বলল
-জানি না মানে?কালকে তোর বিয়ে হয়েছে আর আজকে জামাই কই তুই জানিস না?
মায়ের কথা শেষ না হতেই বাবা বলে উঠলেন
-নিজের জামাই এর খবর কখন রাখবে !ওর মাতামাতি তো পরপুরুষ নিয়ে ।ভরা অনুষ্ঠানে ছেলেটা এসে কীভাবে ছিহ!!মান সম্মান শেষ আমার।বিয়ে না হইতেই এই কাজ বিয়ে না হলে যে আরও কি করত!আমি কি এমনি এমনি অই ছেলের সাথে বিয়ে হইতে দেই নি।
-জামাইকে না নিয়ে একা একা খেতে চলে আসছিস!আমি ২৬ বছর ধরে সংসার করতেছি ।আজ পর্যন্ত তোর বাবাকে ছাড়া খাইনি কোনদিন।আর তুই বিয়ে হইতে না হইতেই একা একা খাইতে চলে আসছিস!যে ঘরে যা।জামাই আসবে তখন খেতে আসবি।
মায়ের কথা শুনে আমার অবাক হওয়ার কথা।প্রচন্ড কষ্ট পাওয়ার কথা।কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার কোনটাই হচ্ছে না ।বরং আমার কোন অনুভুতিই হচ্ছে না।যেন এমনটাই কিছু হওয়ার ছিল।প্লেট রেখে উঠতে যাব তখনি আরাজ বাসায় এল।আরাজ কে দেখে মা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল
-আরে জামাই বাবাজি ।কোথায় গিয়েছিলে?
আরাজ আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দিয়ে বলল
-আন্টী ইনায়াত আইসক্রীম খেতে চেয়েছিল ।তাই আইস্ক্রীম আনতে গিয়েছিলাম ।
আরাজের কথা শুনে মা দ্বিগুন খুশি হয়ে বললেন
-তুমি আর ওর কথা শুনতে গেছ বাবা!ওর সব বাচ্চামি আবদার ।এই রাতে কেউ আইসক্রীম খায় নাকি!কি রে তুই শুধু শুধু ছেলেটাকে খাটাচ্ছিস!আর বাবা আমাকে আন্টী বলো না ।আমি তো তোমার মায়ের মত।খেতে বস আমরা তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম।
-জ্বি আচ্ছা আন্টী ।সরি মা ।
আরাজ খেতে বসতেই আমি উঠে দাড়ালাম।মা আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললেন
-কিরে উঠলি কেন?খাবি না!
-না খিদে নেই।
কথা টুকু বলেই আমি সেখান থেকে চলে এলাম।
.
.
সবকিছু কেমন যেন পালটে গিয়েছে ।নিজেকে অজানা লাগতেছে।আশেপাশের মানুষ গুলোকে অজানা লাগতেছে।আরদ্ধকে খুব বেশি মনে পরছে ইদানীং।হয়তো না পাওয়া থেকেই অপ্রাপ্তির অসুখটা বেশি অনুভব হচ্ছে।অনেকটা গোছানো ছিল আমার আর আরদ্ধর কল্পনায় আজকের দিনগুলো ।ছেলেটার খুব শখ ছিল বিয়ের রাতে আমাকে শক্ত করে জড়ীয়ে ধরে সারা রাত ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে রাখবে।কোন বাধাধরা থাকবে না,থাকবে না কোন অযুহাত।আমাকে নিজের করে নিবে তার ভালোবাসায় ।অথচ চোখের পলকেই সব পালটে গেল যেন।সব কিছু তুচ্ছ করে আজকে আমি অন্য জনের ঘরের বউ ।এখনো সবকিছু অবিশ্বাস্য লাগছে।যেন কোন দুস্বপ্নে আছি ।এই তো আর ক্ষন কয়েক তার পরেই আবার ঘুম ভাংবে ।আমি গিয়ে আরদ্ধকে জড়িয়ে ধরব।আরদ্ধ ভালোবেসে আমাকে বুকে আগল নেবে।
ফোন হাতে নিয়ে আরদ্ধর নাম্বারে কল দিলাম আমি ।রিং হল ঠিকই কিন্তু ওপাশ থেকে কোন জবাব এল না।আবার একবার ডায়াল করলাম।দু বার রিং পরে কেটে গেল।আবার কল দিতে যাব তখনি আরাজ রুমে এল ।আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দিয়ে বলল
-আন্টি সরি মা ধরে বাধে অনেক কিছু খাওয়ালেন ।এখন মনে হচ্ছে নড়তে পারছি না ।তুমি খেয়েছ?
-খিদে নেই আমার।
আমি ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করে নিয়ে বসলাম ।আরাজ বেশ উশ খুশ করে বলে উঠল
-ব্যস্ত তুমি?
-কেন?
-উম না তেমন কিছু না।এম্নি গল্প করতাম ।
-গল্প করার ইচ্ছে নাই ।
-ওকে তাহলে ঘুমাই চলো ।
-ঘুমাও তুমি ।
-তুমি ঘুমাবে না?
আরাজের কথার কোন জবাব দিলাম না আমি।ফেসবুকের নতুন ফ্রেন্ড এর মত ছোটখাটো কথা চালানোর চেস্টা করছে।আমি কানে হেডফোন গুজে ল্যাপটপে মনযোগ দিলাম ।কিছুক্ষন পর মাথা তুলে দেখি আরাজ কিছু একটা বলার চেস্টা করছে।আমি কান থেকে বাড খুলে জিজ্ঞেস করলাম
-কিছু বলবে?
-রাত অনেক হয়েছে।ঘুমাও ।তাছাড়া সকালে বাসায় ব্যাক করতে হবে।
আমি ল্যাপটপটা অফ করে পাশে রেখে চেয়ারে বসেই চোখ বুঝলাম।আরাজ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
-তুমি এখানে ঘুমাবে?তোমার ঘাড় ব্যাথা করবে তো ।চল বিছনায় শোবে।
-হবে না অভ্যাস আছে আমার। স্কুল লাইফে থাকতে রোজ এভাবেই ঘুমাতাম ।
-Oh come on Inayat.আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ এখন।আমি তোমাকে কোণ কিছুর জন্যে ফোর্স করতেছিনা ।তো এক বিছানায় ঘুমাতে সমস্যা টা কি!
-মাঝ রাতে আমি ঘর থেকে বের হয়ে গেলে ব্যাপারটা ভালো লাগবে না আরাজ ।তুমি বরং ঘুমাও ।আমি এখানেই ঠিক আছি।
কথাটা বলে আমি কানে হেডফোন গুজে টেবিলে মাথা নোয়ালাম ।গীটারের টুংটাং আওয়াজে আরদ্ধ মিষ্টি মধুর আওয়াজে গেয়ে চলছে
-Teri najro main hain mere sapne
Mere sapno main hain naraji
Mujhe lagta hain ke baate dil ki
Hoti labjo ki dhoke baji
Tum saath ho yah na ho
Keya fark hain be dard thi
Jindegi be dard hain
Agar tum saath ho …..
চলবে
{দুই দিন থেকে বাসায় প্রচুর লোড শেডীং হচ্ছে ।তাই গল্প দিতে দের হয়ে গেল।নেক্সট পার্ট কালকে দিব ইন শা আল্লাহ}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here