জেদ” পর্ব-৩১

0
860

#জেদ(A Conditional Love Story)
#পার্ট৩১
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
ফ্লাইট নিউ ইয়র্কে পৌছালো রাত ১২ টায়।আমরা গাড়ি করে ছোট একটা এপার্টমেন্টে এসে পৌছালাম।এপার্টমেন্ট টা খুব বেশি বড় না।দুই রুমের ছোট একটা বাসা।একটা কিচেন ড্রয়িং রুম আর এটাচড বাথ।বাসাটা বেশ সুন্দর তবে অগোছালো। আরাজ দরজা খুলেই কোন কথা না বলে সোজা রুমে গিয়ে শুয়ে পরল।আমি চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। প্রায় বছর খানেক হচ্ছে এই বাসাটা বন্ধ কিন্তু কোন কিছুর উপর ধুলোর চিহ্ন মাত্র নেই৷ মনে হচ্ছে যেন এতদিন এই বাসায় কেউ ছিল।জিনিসপত্র কোন সাজানো গোছানো নেই।সব এদিক ওদিক এলোমেলো ভাবে ছোড়ানো। আমি এক এক করে সব গোছাতে লাগলাম।কাজ করতে করতে কখন সকাল হয়ে গেছে টেরই পাইনি।আরাজ এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আমি এককাপ কফি বানিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালাম।
নিউইয়র্কে সূর্যোদয় দেখা অনেক দুসাধ্য ব্যাপার ।চারদিকে শুধু উচু উচু দালানের সমারোহ ।দুই একটা দালানের ফাক গলিয়ে হালকা সূর্যালোক চারদিকে ছড়িয়ে পরছে ।চারদিকে ছেয়ে যাচ্ছে দিনের শুভ্র ছায়া ।আমি কফি শেষ করে পাশের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
.
.
কতক্ষন ঘুমিয়েছি জানি না।ঘুম ভাঙ্গল দরজা ধাক্কানোর শব্দে।আরাজ খুব জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে।আমি ঢুলতে ঢুলতে গিয়ে দরজা খুললাম
-কি হয়ে…….
-ইনা আমরা এখানে হলিডে করতে আসিনি যে তুমি দুপুর দুইটা পর্যন্ত ঘুমাবে।আমি শপিং করে নিয়ে এসেছি তাড়াতাড়ি কিছু রান্না করে ফেল।সেকেন্ড শিফট থেকে আমাকে অফিসে জয়েন দিতে হবে।
আমি আরাজের কথার জবাব না দিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম ।আরাজ কোন রকমে খেয়েই বের হয়ে চলে গেল ।আমাকে সাধার কোন প্রয়োজন এ মনে করল না।যদিও এওসব নতুন কিছু না।
এভাবেই সপ্তাহ খানেক কেটে গেল।আরাজ খুব সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যায় ।ফিরে দের রাত করে ।এই কয়দিনে তার সাথে কোন কথা হয়েছে বলে আমার মনে পরে না।একদিন শুধু বলেছিলাম আমাকে একটা নতুন সীম এনে দিও।আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলব ।আরাজ শুধু হু কালকে দেব বলে চলে গিয়েছি ।আল্লাহ জানে তার কাল কবে হবে।
এখানে আসার পর থেকে যেন কয়েদী হয়ে গেছি আমি ।চারদেওয়ালে বন্দী ।নিশ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হয় ।আরাজ বাসায় ফেরার আগেই টুকিটাকি জিনিস নিয়ে আসে।কিন্তু এভাবে বেশি দিন থাকা সম্ভব না ।খেতে বসে আরাজকে বললাম
-এখানে আসার পর একদম ঘরে বন্দী হয়ে আছি।তোমাকে একটা সীম এনে দিতে বলেছিলাম তাও দেও নি ।বাসায় একা একা সময় কাটে না।তুমি কালকে একটু অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এলে হাটোতে যেতাম ।চারপাশ টা একটু ঘুরে দেখতাম।
আমার কথায় আরাজ ঝাঝিয়ে উঠল আরাজ
-তোমার সারাদিন বাসায় বসে কাজ না থাকতে পারে কিন্তু আমার অনেক কাজ আছে ,অফিসে সারাদিন অনেক কিছু ডিল করতে হয় আমার।আর কিসের বাইরে ঘোরা তোমার?পর পুরুষকে চেহারা না দেখালে পেটের ভাত হজম হয় না তাই না?ঘরে স্বামী পরে আছে তার খেদমত নাই আর যাবে বাইরে ঘুরতে ।যতসব ন্যাকা।
একনাগারে কথাগুলো বলে আরাজ উঠে চলে গেল ।এমন কিছু একটা হে আমি আগে থেকেই কিছুটা আন্দাজ করে রেখেছিলাম ।কিন্তু আরাজ ঠিক এত নিম্নমানের ব্যবহার করবে এটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল।চোখ না ভিজলেও কান্নার একটা দলা আমার গলা পর্যন্ত এসে থেমে গেল।আমি নিজেকে সামলে নিয়ে সব কিছু গুছিয়ে রুমে চলে গেলাম ।
.
.
দুপুরে রান্না করতে গিয়ে দেখি তেল শেষ হয়ে গেছে।তেল ছাড়া কোণভাবেই চলবে না ।উপায় না পেয়ে টাকা হাতে বের হলাম বাইরে ।এই প্রথম বার এই শহরের বাতাসে মুক্তভাবে নিশ্বাস নিচ্ছি আমি ।শহরটা অনেকটা যান্ত্রিক ।যে যার মত ছুটছে।।ফিরে তাকানোর যেন সময় নেই কারও ।আমি একজন লোককে জিজ্ঞেস করলাম আশে পাশে কোন গ্রোসারী শপ আছে কিনা।সে অকপটে আমাকে ঠিকানা বলে দিয়েনিজ গন্তব্যে পা বাড়ালো ।মিনিট দশেক হাটতেই আমি একটা সুপার শপ দেখতে পেলাম ।দোকানটা বেশ বড় আর নানা রকম জিনিস সাজানো ।আমি এক পা দুপা করে সব কিছু ঘুরে দেখতে লাগলাম ।হঠাত কেন জানি মনে হতে লাগল কেউ আমাকে ফলো করছে ।একটা অন্যরকম অস্বস্তি কাজ করতে লাগল।পিছন ফিরে তাকাতেই মনে হল কেউ যেন একজন চোখের আড়ালে চলে গেল।আমি আর মুহুর্ত দেরী করলাম না সেখানে ।তেল কিনে সোজা বাসায় চলে আসলাম ।
আরাজের এই বাড়িটা অনেকটা বস্তি এলাক্কার মত ।আশেপাশের পরিবেশ বেশ স্যাতস্যাতে আর ঘিঞ্জিতে ভরা ।আমি বাসায় এসে বাকি কাজ শেষ করে ফেললাম ।কিন্তু তখনকার ঘটোনাটা কোন ভাবেই মাথা থেকে বের করতে পারছিলাম না।
আমি আরাজকে এই ব্যাপারে কোন কথা বলিনি।তাকে কোন কথা বলার কোন মানে হয় না ।উল্টা সে নানা রকম কথা বলে কথা বাড়ীয়ে রাখবে।আমি সুন্দরমত বাজারের লিস্ট বানিয়ে আরাজের সামনে রেখে চলে আসলাম ।আরাজ কোন কথা বলল না।যাওয়ার সময় বলে গেল আমার ফিরতে রাত হবে ।টেবিলে টাকা রাখা আছে তোমার যা যা লাগে নিয়ে এসো ।সামনেই একটা দোকান আছে।হাতের ডানে ১০ মিন হাটলেই পেয়ে যাবে ।যা লাগে সেখান থেকে নিয়ে এসো ।কথাটা বলেই আরাজ বের হয়ে চলে গেল।
.
.
চার দেওয়ালে বন্দী থেকে সেদিনের ঘটোনা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম ।দোকানে গিয়ে আমি আবার এটাওটা দেখায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম ।হঠাত করে একটা গন্ধ এসে নাকে লাগল ।নতুন কিছু না এই সুবাস আমার অনেক পরিচিত।খুব কাছ থেকে আমু অনুভব করেছি ।আমি মাতালের মত ছুটতে লাগলাম গন্ধটার পিছে ।প্রায় পুরোশপ আমি উথাল পাথাল করে ফেললাম কিন্তু কাউকেই খুজে পেলাম না।নাহ এখানে আর বেশিক্ষন থাকা যাবে না ।আমি দরকারি জিনিস্পত্র নিয়ে বিল পে করে শপ থেকে বের হয়ে আসলাম ।রাস্তা পার হয়ে বাসার দিকে পা বাড়াবো মাত্র তখনি পেছন থেকে একটা চেনা স্বর ভেসে এল
-ইনা…।
আমি যেন মুহুর্তের মধ্যে জমে গেলাম ।নিজের কানকে অবিশ্বাস্য মনে হতে লাগল।মনে হচ্ছে আমি কোন ঘোরের মধ্যে আছি ।পা নড়তে চাচ্ছে না আমার ।অনেক কষ্টে পিছনে ফিরে তাকালাম ।সাথে সাথে যেন চমকে উঠলাম আমি ।থমকে গেল আমার সময় ।প্রায় বছর খানেক আগে যে মানুষ টা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল সে আজ আমার সামনে দাড়িয়ে।আচ্ছা আমি কি স্বপ্ন দেখছি!খুশিতে চকচক করে উঠল আমার চোখ দুটো ।সামনে পা বাড়াতে যাব তখনই একটা বাস সামনে দিয়ে চলে গেল আর সেই সাথে অদৃশ্য হয়ে গেল রাস্তার ওপাশে দাড়িয়েথাকা সত্ত্বা।আমি অনেক ক্ষন ঘাড় বাকিয়ে এদিক ওদিক খুজলাম।কিন্তু কারও হুদিশ পেলাম না ।চোখ বন্ধ করে নিজেকে সান্তনা দিতে লাগলাম ।কিন্তু ঠোট গুলোকে কোনভাবেই আটকাতে পারলাম না ।অজান্তেই যেন বলে উঠলাম
-I miss you Aroddho …..
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here