জেদ” পর্ব-৩০

0
671

#জেদ(A Conditional Love Story)
#পার্ট৩০
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
কয়েকদিন থেকে বাসায় বেশ তোড়জোড় চলছে।আরাজ আমেরিকা চলে যাচ্ছে।না সে একা যাচ্ছে না আমাকে নিয়েই যাচ্ছে।তোড়জোড়ের পরিমানটা সেজন্যে যেন আরও বেশি ।যদিও আরাজের মা আর বড় বোন চেয়েছিল আমাকে এখানেই রেখে দিতে কিন্তু আরাজের বাবা বাধা দিলেন।
-ছেলেটা ওখানে একা থাকে ।কখন খায় ,কখন ঘুমায় তার ঠিক নেই ।সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ ।বউটাকে নিয়ে গেলে অন্তত বউ তার সেবা যত্ন করবে।
আরাজের জোড়াজুড়িতে আর তার বাবার নিষেধে তার মা আর বোন খুব একটা জোরখাটাতে পারেন নি ।কিন্তু তারা যে সম্মতি জানিয়েছেন তাও নয় ।
আরাজ বলেছিল আমাদের মধ্যকার স্বামী স্ত্রীর কথাগুলো চার দেওয়ালের মধ্যেই থাকবে।আমাকে জোর গলায় বললেও আরাজ নিজেই সেই কথা রাখেনি ।জানিয়েছে আমার বাবা মাকেও।সেরাতের জন্যে সে আমার কাছে নয় মাফ চেয়েছে আব্বু আম্মুর কাছে।তার মতে আব্বু আম্মুর কাছ থেকে নিয়ে আসা আমানতের সে ঠিক ভাবে যত্ন নিতে পারেনি ।আব্বু আম্মুও ব্যাপারটাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দেন নি ।আমাকে বাসায় ডেকে বিশাল এক মজলিশ সালিশের মাধ্যমের সুরাহা করেছেন এই ঘটনার ।আম্মু আমাকে অনেক করে বুঝালেন যে স্বামিদেরকে কিভাবে হাতের মুঠোয় রাখতে হয়।সব সময় স্বামির মন যুগিয়ে চলতে হবে।তার প্রতিটা কথামাথা নিচু করে কোন প্রশ্ন না করেই পালন করতে হবে। ।আব্বুর একটাই কথা ঘরের গিন্নি ঠিক না থাকলে ছেলেরা বাইরে যাবেই।আমি নির্বোধের মত কোন কথা নাবলেই চুপচাপ সব শুনে গেলাম।কারন আমার এখানে বলার কিছু নাই ।আমার কথায় কেউ কোন ভ্রুক্ষেপ করবে না।আমার অস্তিত্বই যেন সবার কাছে অনুপস্থিত এখন।
.
.
আরাজের মা আজকে সকাল থেকে কান্না করছেন।এর আগেও তার ছেলে আমেরিকা গিয়েছে।কিন্তু তার মাথা ব্যথা সেটা নিয়েনয়।ছেলে এবার বউ নিয়ে যাচ্ছে।তার নিজের সংসার হবে।বাচ্চা কাচ্চা হবে।তখন মা বাবাকে ভুলে যাবে সে।ছেলের বউ আর ছেলেকে দেশে আসতে দিবে কিনা এই নিয়ে তার সন্দেহ আর আশংকার কোন শেষ নেই।আরাজের মা থেমে থেমে কান্নায় ভেংগে পরছে।আরাজ বার বার গিয়ে তাকে সামলাচ্ছে। রাত ১২ টায় আমাদের ফ্লাইট।একটু পরেই আমরা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিব। আমি সব গুছিয়ে রেডি করছি৷ এমন সময় আরাজের মা রুমে এলেন।
-ইনায়াত।
-জ্বি আন্টি। কিছু বললেন?
-দেখো ইনায়াত। আমি জানি তোমার আর আরাজের বিয়েটা অনেকটা তাড়াহুড়োর মধ্যেই হয়েছে।তোমার হয়তোবা বিয়েতে মত ছিল না কিন্তু তোমার বাবা মা জানেন তোমার জন্যে কি ভালো আর কি মন্দ। যাক গে আসল কথায় আসি।আরাজকে আমরা অনেক আদর করে বড় করেছি। আমার দুই মেয়ের চেয়ে আরাজ আমার কাছে বেশি আদুরে।আরাজের বিয়ে বউ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল আমাদের।যদিও তার কিছু পূরন হয়েছে কিছু হয়নি।কিন্তু সেসব পূরোনো কথা তুলে কোন লাভ নেই।এখন বিয়ে হয়ে গেছে।ধর্মীয় ভাবে তুমি আরাজের স্ত্রী।তোমার দায়িত্ব হচ্ছে আরাজের সাথে সংসার গোছানো।বাংগালি মেয়েদেরপ্রধান দায়িত্ব হলো স্বামীর সেবা করা আর বাচ্চাদের মানুষের মত মানুষ করা।তোমাদের বিয়ের আট মাস পার হয়ে গেছে।বলি এখন বাচ্চাকাচ্চার প্লান করো।আরাজ আমার ছোট ছেলে।আমাদেরও সুযোগ দেও নাতি নাতনীর মুখ দেখার।একটা বাচ্চা নিয়ে নেও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।আগের অত কিছু মনে থাকবে না।
আরাজের মা একগাদা জ্ঞান দিয়ে চলে গেলেন।একটু পর মা বাবা এলেন ।বাবা এসেই আরাজের বাবার সাথে রাজনীতি আর দেশের অবস্থা নিয়ে গল্প করতে ব্যস্ত ।মা আমার কাছে এসে খানিকক্ষন বসলেন।সব ঠিকভাবে গুছিয়েছি কিনা চেক করলেন ।তারপর খপ করে আমার হাতটা ধরে তার পাশে বসালেন।আমি জানি মাও এখন আরদ্ধর মায়ের বুলি আওরাবে।আমি মায়ের কথায় মন না দিয়ে নিজের চিন্তায় মগ্ন হলাম ।
আরদ্ধর খুব শখ ছিল বিয়ের পর হানিমুনে সে আমাকে নিয়ে আমেরিকা যাবে।সেখানে বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করবে।যেসব বাচ্চা অন্ধ ,বধির তাদের জীবনে সে প্রযুক্তির আলোকে কাজে লাগাবে।এটা নিয়ে তার মাতামাতি দেখলে মনে হতো যেন সে নিজেই একটা ৫ বছরের বাচ্চা।আরদ্ধ এসব কাজ করত আর আমি চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।মুগ্ধ চোখে চেয়ে দেখতাম তাকে ।আরদ্ধ বার বার বলত
-ইনা যখন তুমি এইভাবে এক মনে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো I feel like এটলিস্ট কেউ তো আছে যে আমাকে বিশ্বাস করে ।তুমি আমার জন্যে বড় সড় একটা অনুপ্রেরনা ।
আল্লাহ জানে ছেলেটা কোথায় আছে।কি করছে ।মাস দুয়েক আগেও আরদ্ধ কল দিয়েছিল।ইচ্ছা করেই ধরিনি।কি হবে কথা বলে?ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করবে।কষ্ট পাবে ।তার চেয়েও বেশি কষ্ট দিবে আমাকে।অযথা কষ্ট বাড়ানোর কোন মান নেই ।অপূর্নতাকে খুচিয়ে বিষাদ ছাড়া কেউ কখনো হর্ষ পায় নি।আমার বেলায়ও ব্যতিক্রম কিছু হয় নি ।
আম্মু তার মনের কথা বলে বিদায় নিলেন।সবাই কত খায় ফরামেশ খাটালেন ।অথচ কেউ আমি কেমন আছি কথাটা জিজ্ঞেস করার ফুরসত পেলেন না।
.
.
রাত ১১টা ।আমি এয়ারপোর্টে পাসপোর্ট হাতে বসে আছি।ঠিক একটু পরেই আমাদের ফ্লাইট।একটু পর আমরা সবার থেকে বিদায় নিয়ে প্লেনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।ইমিগ্রেশন এর সময় হঠাত একটা চিরচেনা গন্ধ ভেসে আসল ।আমি পাত্তা না দিয়ে একবার পিছনে ফিরে তাকালাম ।মা বাবা একটা তৃপ্তির হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে।আমি ভেজা চোখে মুখ ফিরিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালাম।প্লেনে উঠতেই সেই চেনা গন্ধটা নাকে এসে আবার ধাক্কা খেল।আমি খানিক খন এদিক ওদিক করলাম ।কিন্তু কাউকে পেলাম না।ছেলেটা আমার ঠিক কতটা জায়গা জুড়ে আছে হয়তো তাকে আমি কখনো বলে বুঝাতে পারব না।আরাজ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।আমি চুপচাপ সিটে বসে পরলাম।চোখ মেললাম জানালার বাইরের আকাশে ।নীল আকাশের মাঝে সাদা মেঘ ভাসছে ।তার ফাক দিয়ে উকি দিচ্ছে নিচের শহরের চাকচিক্য।প্লেন উড়ে চলছে নিজের গতিতে……।
চলবে
{হঠাত করে আমার পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দেইয়ায় + আমি মাঝখানে খুব বেশি অসুস্থ ছিলাম তাই কন্টিনিউ করতে পারিনি।ইন শা আল্লাহ পরের পার্ট তাড়াতাড়ি দিতে পারব।}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here