জেদ” পর্ব-২৯

0
678

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট২৯
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
.
.
.
খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে সবাই গল্প করতে ব্যস্ত ।সারাদিন কাজ করে আমার পেটে হাতি ঘোরা দৌড়ানোর উপক্রম ।আমি এক ফাকে রান্না ঘরে এসে প্লেটে খাবার বাড়তে লাগলাম।তখনি আরাজ এর গলা শোনা গেল
-ইনায়াত।
আমি প্লেট রেখে এগিয়ে গেলাম ডায়নিং এর দিকে ।আরাজ আমাকে দেখে এগিয়ে এসে আমার কোমড় জড়িয়ে নিল।আমি ভ্রু কুটি করে আরাজের দিকে তাকালাম ।কিন্তু আরাজের সেদিকে কোন মনযোগ নেই।সে তার বন্ধুদের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে ব্যস্ত ।পরিচয় পর্ব শেষ হতেই আমি বলে উঠুলাম
-আমার কিছু কাজ আছে।আমি আসছি।
কথাটা বলে পিছন ফিরে চলে আসতে যাব তখনি আরাজের একজন ফ্রেন্ড বলে উঠল
-আচ্ছা আরাজ তোর ওয়াইফের না বিয়ের আগে এক জনের সাথে এফেয়ার ছিল !এখনো কথা হয় নাকি!
তার কথা শেষ না হতেই আরেকজন বলে উঠল
-আরে ধুর এগ্লা হল গোল্ড ডিগার ।বোয়াল মাছ জালে ফাসলে পুটি মাছ কে ঘুরে তাকায় না ।
আমি কথাটা শুনে খানিকক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।ভেবেছিলাম আরাজ কিছু হলেও বলবে। কিন্তু না আরাজ টু শব্দটুকুও করল না।বরং তাদের সাথে হেসে উড়িয়ে দিল।আমি ফিরে গিয়ে আগের জায়গায় দাড়ালাম।হাসি মুখে বললাম
-আসলে জানেন কি ভাইয়া আমার মতে যেকোন সম্পর্ক শুরুই হয় সম্মান আর বন্ধুত্ব দিয়ে।আর আমি আমার প্রাক্তনকে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সম্মান করে যাব। কারন সে আমার সব চেয়ে ভালো বন্ধু।সুতরাং আমার বিয়ে হোক বা আমি মরে যাই তার সাথে আমার সম্পর্ক আজীবন থাকবে।যোগাযোগ হোক বা না হোক দূরত্ব কখনো সম্পর্কের পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে না। গোল্ড ডিগিং এর ব্যাপারটাতে এইখানে একটু মিস করে গেছেন ভাইয়া।আপনি যে কোম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে জব করেন সে কোম্পানির ৫০% শেয়ার হোল্ডার সে।আর থাকল আমার কথা।আমি একজন সার্টিফাইড পোস্ট গ্রাজুয়েট ।বিয়ের সপ্তাহ খানেক আগ পর্যন্ত একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভালো এমাউন্ট এ জব করছিলাম।সুতরাং গোল্ড ডিগিং কথাটা কতটুকু মানান্সই আরেকবার বিবেচনা করে নিয়েন ।ওকে?আর হ্যা পায়েস রেধেছি ।খেয়ে যাবেন ।তাতে যদি আপনাদের ভাষা একটু মিষ্টি হয় ।
হাসিমুখে কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে এলাম আমি।আরাজ আমার কথাগুলো ভালোভাবে নেয় নি।যাদের সামনে কথাগুলো বলেছিলাম তারা নিতান্তই আরাজের খুব কাছের বন্ধু ছিল।নিজের এত কাছের মানুষের সামনে এত বড় অপমান আরাজ হজম করতে পারবে বলে মনে হয় না।
.
.
আমার ধারনাকে সত্যি প্রমানিত করে সবাই যেতে না যেতেই আরাজ রুমে এসে গর্জে উঠল
-সমস্যা কি তোমার হ্যা?Whats your problem?নিজেকে কি মনে কর তুমি?
-আমি ইনায়াত ।এর বেশি নিজেকে কিছু মনে করার বোধ বা শক্তি কোণটাই নেই আমার এই মুহুর্তে।
ব্যালকনি থেকে শুকনো কাপড়গুলো এনে গোছাচ্ছি মাত্র ।তখনি আরাজের তর্জন গর্জন শোনা গেল।
-Oh really!নিজেকে খুব বড় কিছু ভাবো তাই না?কি দরকার ছিল আমার বন্ধুদের সামনে অইভাবে কথা বলার?
-ভুল কিছু বলেছি কি?তোমার সামনে তোমার ওয়াইফকে অপমান করা হচ্ছে তার ক্যারেক্টার তুলে কথা বলা হচ্ছে অথচ তুমি চুপ করে সব শুনছ ।কিছুই বলছ না ।বাট সরি আমার সামনে আমার ভালোবাসার মানুষকে কিছু বলা হলে আমি সেটা সহ্য করব না।আমি আরদ্ধকে যতটা ভালোবাসি ঠিক তার চেয়ে অনেক বেশি রেস্পেক্ট করি।আমার জন্য তার সম্মানে আঘাত লাগুক এটা আমি কখনোই চাইব না।তাছাড়া তোমার মান নষ্ট হয় এমন কোন কথাও বলিনি আমি ।
-তোমার বলা প্রতিটা কথাই আমার সম্মান নষ্ট করেছে।জাস্ট ইমাজিন আমার ওয়াইফ এখনো তার প্রাক্তনের প্রতি আসক্ত ।মানুষ কি ভাববে!সবাই তো আমার উপর প্রশ্ন তুলবে ।
আরাজের কথা শুনে কিছুটা হলেও অবাক হচ্ছি আমি।
-দেখ আরাজ তোমাকে আমিও আগেও বলেছি আমি আরদ্ধ……।
-এনাফ ইনায়াত ।তুমি এখন আরদ্ধর না আমার ওয়াইফ।আমাদের স্বামি স্ত্রীর মাঝে যা আছে বা নাই তা এই চার দেওয়ালের মাঝেই থাকবে।ইন ফিউচার এর বাইরে যাতে কোন কিছু না যায় ।নাহলে আমার খারাপ রুপটা দেখাতে বাধ্য হব ।
কথাগুলো বলে আরাজ ওয়াশরুমে চলে গেল।আমি আর কোন কথা বললাম না।কাপড়গুলো আলমারিতে তুলে রেখে চুপচাপ শুয়ে পরলাম ।
.
.
সপ্তাহ খানেক পার হয়ে গেছে।আরাজ এই কয়দিনে আমার সাথে ঠিক তেমন ভাবে কথা বলে নি ।বাসার সবার সাথে দূরত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে।জানি না এভাবে কতদিন চলবে ।ঠিক কতদিন এভাবে নিজেকে ধরে রাখতে পারব।দুপুরের দিকে আরাজ বেশ হাসিখুশি মুডে বাসায় এল।ঘন্টা খানেক ধরে সেজে গুজে বের হয়ে যাওয়ার সময় বলল
-আমার এক ফ্রেন্ড এর বিয়ে নেক্সট উইকে।ওর ব্যাচেলার পার্টিতে যাচ্ছি।ফিরতে রাত হবে।বাবা মাকে বলিও যাতে আমার জন্যে অপেক্ষা না করে ।
কথাটা বলে আরাজ আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই বের হয়ে চলে গেল।
বেল পরল ঠিক রাত ১২:৩৫ মিনিটে.আমি তখন বসে গল্পের বই পরছি ।আওয়াজ শুনে আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম ।আরাজ আমাকে দেখেই খুশিতে গলা জড়িয়ে ধরল
-Oh my darling wife.missed me?
আরাজ কাছে আসতেই কেমন একটা উটকো গন্ধ ভেসে এল মুখ থেকে ।তারমানে আরাজ ড্রিংক করেছে।আমি কিছু না বলে চুপচাপ আরাজকে নিয়ে ঘরে আসলাম।আরাজ আধো আধো বলে কিছু উলটা পালটা কথা বলেই যাচ্ছে।আমি পাত্তা না দিয়ে আরাজকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর জুতা মুজা খুলতে লাগলাম।উঠে এসে আলমারি খুলতেই হঠাত কেউ যেন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল আমাকে।
-আরাজ কি করছ?ছাড়ো আমাকে।
-উহু ।ছাড়ব না
আরাজ আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।আমি আবার আরাজকে ছাড়ানোর চেস্টা করে বলতে লাগলাম
-দেখো আরাজ তুমি ড্রিংক করেছ ।তোমার মাথা ঠিক নাই ।ছাড়ো আমাকে।
-ঠিক বলেছ।তোমার মত এত সুন্দর আর হট একটা বউ বাসায় থাকলে কি মাথা ঠিক থাকে!Come on Ina.একটা রাতেরই তো ব্যাপার ।lets do it.We are husband and wife now.
আরাজের কথা শুনে প্রচন্ড মেজাজ বিগড়ে গেল আমার ।আরাজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।আরাজ আচমকা আঘাতে নিজেকে সামলাতে পারল না ।ছিটকে গিয়ে পরল বিছানায় ।
-স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা শুধু শারীরিক না ।সম্পর্ক গড়ে উঠে বিশ্বাস আর সম্মানে ।যেদিন আমাকে সম্মান আর বিশ্বাস করতে আসবে সেদিন আসিও স্বামীর অধিকার নিয়ে তার আগে না।
আমার কথা শুনে আরাজ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠল
-Huh.Dont tell me just because of বিশ্বাস আর রেস্পেক্ট এর জোরে আরদ্ধর সাথে রাত কাটিয়েছ।আরদ্ধ করতে পারলে আমি কি দোষ করেছি?I’m your husband.Come on Ina আজকের রাতটাই তো প্লিজ ।
কথাগুলো বলেই আরাজ আমাকে জড়িয়ে ধরে কিস করার চেস্টা করতে লাগল ।দম আটকে আসছে আমার ।কোন রকমে নিজেকে সামলে বলে উঠলাম
-আরাজ তুমি ড্রিংক করেছ।তোমার মাথা ঠিক নেই ।উলটা পালটা কথা বলছ ।আরদ্ধর সাথে আমার তেমন কিছু ছিল না ।ঘুমাও সকালে কথা হবে ।
-সত্যি কথা বুঝি গায়ে লাগছে!
-দেখো আরাজ না জেনে কোন কিছু কে সত্যিপ্রমান করার চেস্টা করোনা ।আরদ্ধ আমাকে ভালোবাসত আমাকে সম্মান করত ।সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে আমাকে কখনো পারমিশন ছাড়া ছোয় নি । তোমার মত জোর করে সে কখনো আমাকে কাছে পাওয়ার চেস্টাও করেনি ।ছাড়ো আমাকে প্লিজ।
আমার কথা শুনে আরাজ আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।আমি ছিটকে গিয়ে ধাক্কা খেলাম টেবিলের সাথে ।কপাল ফেটে গেছে আমার ।গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে।আরাজ তেড়ে এসে আমার চুলের মুঠি টেনে ধরে চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরল।দাতে দাত চিপে বলে উঠল
-আরদ্ধ আরদ্ধ আরদ্ধ ।সারাদিন যে এত আরদ্ধ আরদ্ধ কর কই তোমার আরদ্ধ হ্যা?তোমার আরদ্ধ ভেজা শিয়ালের মত লেজ গুটিয়ে চলে গিয়েছে।যদি তোমার আরদ্ধ তোমাকে অতটাই ভালোবাসত ,তার যদি অতটাই সাহস থাকত তাহলে যেকরে হোক তোমাকে বিয়ে করত ।বাট সে তোমাকে মাঝ রাস্তায় ছাড়ে চলে গেছে ।সে তার নিজের রাস্তা মেপে নিয়েছে।তোমার জন্যে বেটার হবে আরদ্ধকে ভুলে আমার মত চলো ।নাহলে পরিনতি ভালো হবে না।
আরাজ আমাকে ছেড়ে দিয়ে টলতে টলতে বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিল।আমি কোন রকমে উঠে ব্যালকনিতে গিয়ে ব্যালকনির দরজা লাগিয়ে দিলাম ।আজকে আকাশ অনেক অন্ধকার ।দূরের কোন তারাও দেখা যাচ্ছে না। অমাবশ্যার তীব্রতা বেশ প্রকট হয়ে আছে চারদিকে।আমি আকাশ পানে চেয়ে প্রহর গুনতে লাগলাম নতুন সকালের।…….
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here