জ্বিনের ভালোবাসা
#পর্ব_৫
লেখিকাঃ Mahiya Akter Priya
চোখ বন্ধ করার পরেই প্রিয়ার অদ্ভুত লাগছে। মনে হয় ও মাটির উপর নেই। চোখ খুলে দেখে আবির ওকে নিয়ে আকাশে উড়ছে। ও পরে যাবে এমন সময় আবির ওকে ধরে ফেলল।
আবিরঃ জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এভাবে ধরে রাখব তোমায়।
প্রিয়াঃ কে আপনি। আর কেন আমাকে সারাজীবন ধরে রাখবেন?
আবিরঃ কারন তোমার কাছে আছে আমার মানে জ্বিনের ভালোবাসা।
প্রিয়াঃ মানে? কি বলতে চান আপনি? আর আপনি আকাশে কিভাবে উড়ছেন?
আবিরঃ জ্বিন আকাশে উড়তে পারে তাই আমিও উড়ছি।
প্রিয়াঃ কি? আপনি জ্বিন?
আবিরঃহুম।
প্রিয়াঃ আদিলের সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক?
আবিরঃ ও আমার ভাই হয়। কিন্তু ও খুব খারাপ জ্বিন। আপাতত বেশি কিছু তোমার না জানলেও হবে। চুপচাপ থাক।
কিছুক্ষণ পরে তারা একটা জায়গায় নামে। আবির বলে, তোমাকে নিয়ে আর উড়তে পারছি না। একা উড়তে উড়তে এখন আর দুজনে উড়া সম্ভব না। প্রিয়া কিছু বলল না। আবির আর হাটতে থাকলো। প্রিয়ার খুব মন খারাপ আদিলের জন্য। ও এমনটা কিভাবে করতে পারল।
আবিরঃ মন খারাপ নাকি টমেটো?
প্রিয়াঃ হুম।
আবিরঃ কেন?
প্রিয়াঃ যাকে নিজের ফ্রেন্ড মনে করলাম সে শত্রু আর এখন একটা জ্বিনের সাথে যাচ্ছি।
আবিরঃ কেন? এতে কি খুব বেশি সমস্যা?
প্রিয়াঃ জানি না।
কিছুক্ষণ চুপচাপ। অনেকটা চলে এসেছে তারা। হেঁটে হেঁটে আর কতদুর যাবে?
প্রিয়াঃ আর হাটতে পারছি না।
আবিরঃ হুম।
প্রিয়াঃ কি হুম?
আবিরঃ কিছু না। বিয়ে করবে আমাকে?
প্রিয়াঃ😠😠😠 বিপদে পড়ে আপনার সাথে আছি বলে কি যা খুশি তাই বলবেন? দরকার পড়লে আদিল কে বিয়ে করব তাও আপনাকে না। সে তো আমাকে ভালোবাসেই নিয়ে গিয়েছিল।
আবিরঃ টমেটো তুমি এমন কেন? ওরে ফিল করাতে যে আমাকে ভালোবাস আর আমাকে ফিল করাচ্ছ আমার ভাইকে ভালোবাস।
প্রিয়াঃ বাজে কথা বলবেন না। আমি আপনাদের কাউকে ভালোবাসি না। এখন আর হাটতে পারছি না। একটা ব্যাবস্থা করুন।
আবিরঃ চোখ বন্ধ করো।
প্রিয়াঃ আবার উড়বেন?
আবিরঃ হুম।
প্রিয়াঃ এবার কিন্তু অনেক উপর দিয়ে নিয়ে যাবেন। আমি যেন চাদকে ছুতে পারি।
আবিরঃ তুমি না ইন্টারের ছাত্রী? তোমার তো জানা উচিত চাদ পৃৃথিবী থেকে কত দুরে।
প্রিয়াঃ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০কি.মি(আমি সিউর না। যতদুর মনে পড়ল লিখলাম।)
আবিরঃ তাহলে চাদের কাছে কিভাবে যেতে চাও?
প্রিয়াঃ না মানে আপনি তো জ্বিন।
আবিরঃ জ্বিন আমি। কোনো যাদুকর নই।
এই বলে উড়তে শুরু করল। প্রিয়া বুঝল অনেক উপরে আছে তারা। খুব মজা লাগছে। মনে হয় সে সপ্ন দেখছে।
প্রিয়াঃ আমার না আপনাদের দেখার পর থেকে জ্বিন সম্পর্কে জানার খুব ইচ্ছা। আমাকে বলবেন?
আবিরঃ জ্বিন আর মানুষ। দুটির মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো মানুষ। আল্লাহর সৃৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। এই মানুষের মতই থাকতে হয় জ্বিন দের।
প্রিয়াঃ কিন্তু সবাই যে বলে, জ্বিনের অনেক শক্তি। যা খুশি তাই করতে পারে?
আবিরঃ তেমন কিছু না। বিশেষ শক্তি বলতে তারা রূপ পরিবর্তন করতে পারে। কালো বিড়াল,কালো কুকুর এমনকি মানুষের রূপে আসতে পারে। তারা মানুষের উপর আসর করতে। মানুষের রূপে তাদের সব কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। সবশেষে তারা নিজেদের মানুষ বলে পরিচয় ও দিতে পারে না।
প্রিয়াঃ আচ্ছা, আমি শুনেছি ইবলিশ শয়তান নাকি জ্বিন? এই ঘটনা টা বলতে পারবেন?
আবিরঃ মানুষ সৃৃষ্টির হাজার হাজার বছর আগে আল্লাহ জ্বিন সৃৃষ্টি করে। তখন সবাই আল্লাহর ইবাদত করে। কিন্তু ধীরে ধীরে অনেকেই আল্লাহর পথ থেকে সরে যায়। আল্লাহ ওদের সঠিক পথ দেখানোর জন্য একজন কে পাঠায়। আল্লাহর দাওয়াত দিলে তারা তা অস্বীকার করে। এবং তাকে হত্যা করে। আল্লাহ আরো কয়েকবার পাঠায় তারা সবাইকে হত্যা করে। আল্লাহ ফেরেশতা দের হুকুম দেয় ভালো জ্বিন বাদে সবাইকে মেরে ফেলতে। ফেরেশতা রা সবাইকে মেরে ফেলে। আর ভালো জ্বিন আল্লাহর দয়ায় বেচে যায়। আবার জ্বিনের বিস্তার ঘটলে আবারও একই ঘটনা ঘটে। আল্লাহ এবারও সবাইকে মারার হুকুম দিলেন। যারা ভালো তারা বেচে গেলো। এভাবে পর পর কয়েকবার এমন হলো। তারপর আল্লাহ জ্বিনদের মধ্যে বাদশাহ নিযুক্ত করলেন। সে ভালোভাবে অনেক বছর শাষন করে। তারপর সেও খারাপ জ্বিনের সাথে মিশে যায়। আল্লাহ জিব্রাইল (আ) কে তার কাছে পাঠালেন।
প্রিয়াঃ তারপর?
আবিরঃ তারপর সে আবার আল্লাহর পথে ফিরে আসে। কিন্তু কথা আছে না, সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। সে আবার আগের মত হয়ে যায়। আল্লাহ আবারও সবাইকে মারার হুকুম দিলো। এমন পরপর কয়েকবার হলো। আল্লাহ রেগে গিয়ে সবাইকে মারার হুকুম দিলেন। এবার ফেরেশতারা সবাইকে মেরে ফেলল কিন্তু একটি ছোট জ্বিন বালক তাদের নজর কারে। তার বয়স ছিল মাত্র ১০০০ বছর। তারা আল্লাহকে বলে আল্লাহ আমরা একে আমাদের সাথে আসমানে আনতে চাই। একে আমরা আমাদের মতই বড় করব। আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করলেন। সে সবসময় আল্লাহর ইবাদত করত। কিন্তু আল্লাহ যখন আদম কে সিজদা দিতে বলল, তখন সে অস্বীকার করল এবং সে হলো ইবলিশ শয়তান।( এসবই সত্য ঘটনা। আমি ছোট করে দিলাম)
কথা বলতে বলতে তারা প্রিয়ার খালার বাড়ির সামনে পৌঁছায়।
আবিরঃ যাও।
প্রিয়াঃ আপনি কোথায় যাবেন?
আবিরঃ মামার বাড়ি। এখানেই।
প্রিয়াঃ ওহ, আমি ভেবেছিলাম আমাকে সাথে নিয়ে আসতে চাইছিলেন তাই মামার বাড়ির কথা বললেন।
আবির কিছু বলল না। মৃৃদু হেসে উধাও হয়ে গেলো। প্রিয়া ওর খালার বাড়িতে ভোরে পৌঁছালো। সবাই ওকে দেখে খুব খুশি। অনেক দিন পর মেয়েটা এসেছে। খুব আদর পাচ্ছে সবার। আর ভাই বোন গুলো সব তো ওকে ধরে যে রেখেছে ছাড়ার নাম নেই। সে সেখানে ৩ দিন থাকল। খুব আনন্দে কাটল ৩ দিন। ওইদিকে আবির বা আদিল কারোর কথাই মনে নাই। হঠাৎই রাত্রে ঘুমানোর সময় প্রিয়ার খুবই আনইজি লাগছে। ছাদে যাওয়ার কথা ভাবতেই আবার আদিলের কথা মনে পরে গেলো। তাই আর ছাদে গেলো না। বেলকনিতে বসে বসে কফি খাচ্ছে। একটা পচা গন্ধ তার নাকে আসতে লাগল। সে যেই উঠে চলে যাবে তখনই পিছন থেকে কেউ ওর গলা চেপে ধরল। ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যার্থ হচ্ছে। কোথাও থেকে আবির এসে তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। আর শেষ পর্যন্ত তাকে ছাড়াতে সক্ষম হয়।
আবিরঃ টমেটো তুমি ঠিক আছ তো?
প্রিয়াঃ হুম আপনি এখানে?
আবিরঃ তোমার জন্যই এসেছি। আমি যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে বিপদে রেখে কিভাবে যাব?
প্রিয়াঃহুম।
আবিরঃ আমাকে বিয়ে করবে প্রিয়াঃ
প্রিয়াঃ জ্বিন বিবাহ নাজায়েজ।
আবিরঃ আমি যাই। কিন্তু একটা সময় ঠিকই তুমি আমাকে মেনে নেবে।
১ সপ্তাহ পরে খালার বাড়ি থেকে সে যখন আসবে তখন ভয় পায়। যদি কিছু হয়। কিন্তু কি হবে আবির তো এখানেও চলে আসছে।
(বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন। গল্পে আরেকটি twist আসতে চলেছে। ঠিক একটা নয় 2 টা। তাড়াতাড়ি দেওয়ায় গল্পটা আর লিখে শেষ করতে পারি নি। এই পর্যন্ত লেখা হয়েছে। গল্পটা শেষের দিকে।)
Part 6 plz