#টিট_ফর_ট্যাট
#Alisha_Anjum
#বোনাস_পাঠ
— হা হা হা হা। নীরব বেড়িয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই আমি তাকে দশটা ঘুমের ওষুধ খাইয়েছি।
আমি জেরিনকে আমার আর নীরবের ঘরে টেনে এনেছি। দরজা বন্ধ করার জন্য বাইরে যেতে না যেতেই তার এমন বাঁক। কলিজায় যেন আমার আগুন লাগলো। হৃদপিণ্ড ভুলে গেলো সিস্টোল-ডায়াস্টল। মিস করতে লাগলো স্পন্দন। জেরিন হেসেই চলেছে। থমকে গেছে আমার হাত, পা, নিশ্বাস। আমি কি জীবিত?
— বিশ্বাস করো নীলিমা তোমার সাথে এমন অবিচার আমি করতে চাইনি। ভালো হয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাল রাতে আমি যখন হৃদ আর তোমার বিষয়টা আমি নীরবকে বলি সে প্রথমে বিশ্বাস করলো না। পরে আবার কিছু ক্ষণ চুপচাপ থেকে বিশ্বাস করলো। তোমার উপর ওর খুব বিশ্বাস,ভালোবাসা। অনেক আদর করে ও তোমাকে। ও বলল, তোমার আর ওর মধ্যে কোনো ঝামেলা ও চায় না। যা হওয়ার হয়েছে। এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু ও আমাকে থাপ্পড় কেনমারলো। পরপর দুইটা। কেন কেন কেন? এতো বড় অপমান কেন করলো। সেই জন্যই আমি ওকে আজ ঘুমের ওষুধ খাইয়েছি। বাইক নিয়ে গেছে না? কিছুক্ষণ পরই খবর আসবে তোমার স্বামী ফুসসসসসসস!
জেরিনের এতো বড় বক্তব্যের সামনে আমি দিশেহারা। অবাকতা, দুঃখ, নিয়ে আমি যেন বোবার মতো তাকিয়ে রইলাম জেরিনের পানে। নীরব সব জানে? জেনেও সে আমায় একটা খোটা মূলক শব্দও বলেনি? সকাল থেকে কত আগলে আগলে রাখলো আমায়। আমার চোখ দিয়ে গলগল করে অশ্রু নেমে গেলো। হা হয়ে তাকালাম জেরিনের দিকে। সে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার নীরব? আমার নীরবকে ও ঘুমের ওষুধ খাইয়েছে? এজন্যই সে এতটা নিস্তেজ ছিল। বুকটা আরো ভেঙে চুড়ে আসতে লাগলো তার উদ্ভট কথাগুলো মনে উঠে। জান্নাত, পুলসিরাত, এপার ওপাড়। হে আল্লাহ! আমি কিচ্ছু ভাবতে পারছি না। কি করবো আমি? আমার প্রাণটা তো বাইক নিয়ে গেছে। বাইক চালাতে পারবে? ভাবতেই যেন সূদুর থেকে একটা তীক্ষ্ণ বিষ মিশ্রিত তীর এসে ধক করে বুকে বেঁধে গেলো। সর্বাঙ্গ শক্তিহীন হয়ে আসছে। সব কিছু বাদ। আমি দৌড়াতে লাগলাম। এই মুহূর্তে আমার হৃদকে ভীষণ দরকার। ও কি একটু যাবে ওর ভাইয়ের কাছে? অবশ্যই যাবে। আমি দেখেছি ওদের ভাইয়ে ভাইয়ে অনেক সখ্যতা। টলতে টলতে আসছি। পায়ের নিচে সরু কিছু পরলো দুবার। হবে হয়তো কিছু। আমি কিচ্ছু দেখবো না। পায় ব্যাথায় টনটন করে উঠলো। কিন্তু আমার মন নীরবকে চায়। কান্নায় বুক ভেসে যাচ্ছে। হৃদের দরজাটা বন্ধ। তুমুল জোরে আঘাত করলাম। বারকয়েক ডাকতেই হৃদ দরজা খুলে দিলো। ঘুমে আবিষ্ট তার চক্ষু। আমি হুড়মুড় করে ঢুকে পরলাম ঘরে। ডেকে উঠলাম
— হৃদ? আমার মীরব।
বলতে না বলতেই হাউমাউ করে কান্না করে দিলাম। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। যে কথা আমি সপ্বেও কল্পনা করি নি কখনো সে কথা আমি মুখে আনবো কি করে? হৃদ আমার কান্নায় হুলস্থুল হয়ে আমার পাশে বসে পরলো। সম্পূর্ণ পরিষ্কার কন্ঠে বলল
— নীলিমা কি হয়েছে? কান্না করছো কেন? নীরব কি? নীলিমা বলো?….. এভাবে কান্না করো না শ্বাসকষ্ট হবে।
আমি চটজলদি কান্নার দমকা কমিয়ে দিলাম। গলা থেকে কথা বের হতে নারাজ।
— হৃদ আমি টিট ফর ট্যাট তো ছেড়ে দিয়েছি। তবুও আমার নীরবের সাথে এমন কেন হবে? দরকার হলে আমি তোমার পায়ে পরি। তুমি একটু যাবে আমার নীরবের কাছে? যাও না প্লিজ। আমার সব জেদ মাটি। আমি কেনো প্রতিশোধ চাই না। আমি শুধুই আমার নীরবকে জীবন নিয়ে ফিরে আসা দেখতে চাই।
— নীলিমা এইভাবে লজ্জা দিও না। ভুল আমার ছিল। আমার তোমার পা ধরে ক্ষমা চাওয়া উচিত। যা হওয়ার আমাদের মধ্যে হয়েছে কিন্তু নীরবের কেন কিছু হবে? কি বলছো তুমি?
হৃদের কথায় বুকটা আরো পুড়ছে।
— জেরিন আমার নীরবকে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছে। দশটা। ও বাইক নিয়ে বাজারে গেছে।
বলেই হাউমাউ করে কান্না করে দিলাম। এই কষ্টের বর্ণনা আমি আর নতুন করে কি করবো?
— তুমি একটু যাও না প্লিজ। আমার নীরবকে সুস্থ নিয়ে আসো।
চোখের পানিতে গলা ভিজে গেছে। হৃদ আমার কথা শুনে ক্ষণিক স্তব্ধ হয়ে গেলো। দু সেকেন্ড পরে উঠে দাড়াতে দাড়াতে কাপা কাঁপা কন্ঠে বলল
— প্রোস্টিউট। ওর এক থাপ্পড়ে হয় নাই।৷ ওরে আমাি মেরেই ফেলবো। আগে আমার কলিজার ভাইটাকে নিয়ে আসি।….. নীলিমা এই কথা তুমি আম্মুর কানে একটুও দিও না। আর শোন জেরিনের আশেপাশে যেও না৷ ও একটা উন্মাদ।
কথাটা বলে হৃদ এক প্রকার দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমিও বেরোলাম তার পিছু। সে একটু দূরে যেতেই আমারও মনে চাইলো ছুটে চলে যাই আমার নীরবের কাছে। তার মুখ না দেখা পর্যন্ত আমার কষ্ট বাঁধ ভাঙা। কিন্তু সুযোগ হলো না। হৃদ ইতিমধ্যে বাড়ির বাইরে থাকা আরো একটা বাইক নিয়ে ছুটে গেলো। অন্য কারো বাইক হয়তো। হুঁশ নেই তারও। নগ্ন পায়েই বেরিয়ে গেছে। আমি মুখে আঁচল চেপে দৌড়ে চলে এলাম ঘরে। ওয়ারড্রব থেকে এলোমেলো ভাবে খুঁজে বের করলাম খুব সাধের ওড়নাটা। সাদ ওড়না। বার বার মনে বাজছে তার কথা।
” আমার নীলিমার আগে যেন আমায় মৃত্যু ডাক দেয়”
চলবে………
( নানি বাড়ি যাবো। দুইদিন হয়তো গল্প দিতে পারবো না। আপনারা ভুলে যাবেন না কিন্তু নীরব নীলিমাকে 🥺🥺)