#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_১৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
অথৈঃ আসলে স্যার ঐশীর হাসবেন্ড এসেছে তাই ঐশী ওর হাসবেন্ডের সাথে নাস্তা খেতে রেস্টুরেন্টে গেছে।
শুভ যেনো বেকুব বুনে গেলো। শুভ অবাক হয়ে বললো, ‘হাসবেন্ডের!! .?’
অথৈঃ কেনো স্যার আপনি জানেন না। ঐশী তো বিবাহিত।
শুভ জোর পূর্বক হেঁসে বললো,’ তা তো জানি। কিন্তু ভার্সিটিতে ক্যান্টিন থাকতে বাহিরে কেনো..??’
মৌঃ আসলে স্যার ঐশী ওর হাসবেন্ড কে খুব ভালোবাসে। ওর হাসবেন্ড ও ওকে খুব ভালোবাসে। তাই ওরা চায় না ওদের রোমাঞ্চকর খাওয়া অন্য সবাই দেখুক।
শুভ অস্বস্তিতে এদিক ওদিকে তাকায়। এই মেয়েগুলোকে এই জন্য শুভর পছন্দ না ওদের মুখে কথা আঁটকায় না। যার-তার সামনে মুখে যা আসে তাই বলে দেয়।
শুভঃ ওহ্হ আচ্ছা…..
দীপ্তিঃ জ্বি স্যার। তাই ঐশী ওর হাসবেন্ড কে ফোন দিয়ে বললো ওর হাসবেন্ড কে ছাড়া নাকি সে খাবে না। তাই ভালোবাসার টানে উনি কাজ ফেলে ওকে খাওয়ানোর জন্য চলে এসেছে।
শুভ কিছু সময় ভাবান্তর দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমরা ওর হাসবেন্ড কে দেখেছো..?’
অথৈ শুভর এই কথায় লাফিয়ে লাফিয়ে ও শুভর সামনে এসে বললো,’ অবশ্যই স্যার। খুব সুন্দর, অনেকে কিউট, গুলোমুলো।’
শুভ অবাক হয়ে বললো,’ একটা ছেলে গুলোমুলো হয় কিভাবে..? আর ও কোন রেস্টুরেন্টে গিয়েছে জানো কি..??
অথৈঃ সেটা আপনি বুঝবেন না স্যার। যাদের মনে ভালোবাসা আছে তারাই বুঝে গুলোমুলো কিভাবে হয়। হুম জানি তো। সামনে যেই রেস্টুরেন্টটা আছে ওইটায়। আমাদের ও ইনভাইট করে ছিলো।
দীপ্তি ফিসফিস করে বললো, আসলে তোর মনে কি চলছে অথৈ..?
অথৈঃ চুপচাপ দেখে যা কি হয়।
শুভ মন খারাপ হলো। ঐশীর কি বয়ফ্রেন্ড আছে..? ওর মনে কি ভালোবাসা নেই..? ওদের কি ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করিয়েছে..? শুভর চোখ লাল হয়ে গেলো। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে, চোখ মুখ কঠিন করে বললো, ‘ ও আসলে আমার সাথে দেখা করতে বলবে।” শুভর মন চাচ্ছে ঐশীর বয়ফ্রেন্ডকে এখন এই মূহুর্তে খুন করতে ‘
অথৈ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে শুভর অস্বাভাবিক আচরন।
শুভঃ তোমরা সাথে যাওনি কেনো.. একা একটা মেয়েকে ছেড়ে দিলে!!
অথৈঃ স্যার ও তো নিজের হাসবেন্ডের সাথে গিয়েছে আমরা কেনো যাবো.
মৌঃ ওদের রোমান্টিক মুভমেন্টে আমরা কেনো থাকবো স্যার।
অথৈঃ আমরা সিঙ্গেল মানুষ এতো ভালোবাসা দেখলে নিজের ও…. আর কিছু বলার আগে মৌ ওর মুখ চেপে ধরে।
শুভ অথৈ আর মৌ এর কথা শুনে খুক খুক করে কেশে উঠলো।
দীপ্তিঃ স্যার আপনি ঐশীকে কেনো খুঁজছেন..?
শুভ একটু দরকার ছিলো বলে চলে যেতে নিলে। অথৈ বলে উঠলো,’ স্যার আপনাকে একটা দাওয়াত দেওয়ার ছিলো।’
শুভ নিজেকে শান্ত করে ভ্রু কুঁচকে পেছন ফিরে তাকালো।
অথৈঃ কাল মৌ এর বিয়ে আপনি কিন্তু অবশ্যই আসবেন।
শুভ দৃষ্টি আটকে যায় অথৈর হাতের মোবাইলটির দিকে। ওর চিনতে অসুবিধা হয় না মোবাইলটি কার।
ওর কাছে এখন সব কিছু পানির মতো সহজ হয়ে গেছে৷ ঐশীর হাসবেন্ড কে দেখার জন্যই ওদের এতো প্লেন কিন্তু ঐশী কোথায়..?? সত্যি কি ঐশীর বয়ফ্রেন্ড আছে..??
শুভঃ আশার চেষ্টা করবো। বলেই চলে গেলো শুভ।
দীপ্তিঃ এবার বল স্যারের সাথে মিথ্যা বলার কারন কি..?
অথৈ একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে ওদের কিছু না বলে উঠে চলে গেলো।
মৌঃ দিন দিন ও স্যারের প্রেমে পাগলে পরিনত হচ্ছে।
দীপ্তি এখনো তাকিয়ে আছে অথৈর যাওয়ার দিকে। সামনে কিছু একটা হতে যাচ্ছে যা ভেবেই দীপ্তির বুক কেঁপে উঠল। বিরবির করে বললো, আমাদের এই বন্ধুত্য যেনো কোনো দিন ভেঙে না যায় আল্লাহ। ‘
শুভ লাইব্রেরিতে যাচ্ছে আর ঐশীর কথাও ভাবছে আসলে কি ঐশীর বয়ফ্রেন্ড আছে..? ও কি ওর কথা রাখবে তিন মাস পর শুভকে ডিভোর্স দিয়ে ওই ছেলের কাছে চলে যাবে.?? নানান রকম আজিব আজিব চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ নিচে চোখ যেতেই ভালো করে তাকালো।
হুম এটা তো ঐশী বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছে কিন্তু পেছনে ছেলেটি কে..?? ঐশীর মুখ দেখা গেলেও ছেলেটির মুখ দেখা যায়নি। ঐশীর বাইকের পেছনে বসে ছিলো। তাহলে কি সত্যি ঐশীর বয়ফ্রেন্ড আছে। ভাবতেই বুক ভাড় হয়ে গেলো। বুকের বা’ পাশে চিনচিন ব্যথা অনুভব করলো। ভেতর টা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তাহলে কি আমি ঐশীকে ভালোবেসে ফেলেছি এমন বাউণ্ডুলে, উড়নচণ্ডী মেয়েকে আমি আজ ভালোবেসে ফেলেছি যাকে এক সময় আমি দু’চোখে দেখতে পারতাম না। আজ তাকে অন্য কারো সাথে দেখে আমার এতো খারাপ লাগছে কেনো..?
শুভ আর কিছু ভাবতে পারলো না, মাথা ব্যথা শুরু হলো। লাইব্রেরিতে না গিয়ে বাসার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলো।
ঐশী দীপ্ত কে নিয়ে ওদের বাসার সামনে এসে নেমে দীপ্ত কে বাইক দিয়ে বাসায় চলে আসে। সন্ধ্যায় আবার মৌ এর কাছে যেতে হবে।
শুভ বাসায় এসে শুনে ঐশী বাসায় আসেনি। খুব রাগ হয় ওর। নিশ্চয়ই এই বোকা মেয়ে কোনো ছেলের ফাঁদে পড়েছে। রাগে ঐশীর মোবাইলে একের পর এক কল দিতেই থাকে কিন্তু একবারও ঐশী ফোন তুলে না রাগে মোবাইল সজোরে দেয়ালে ছুড়ে মারে।
ঐশী গোসল করে, খাওয়াদাওয়া করে রুমে এসে মোবাইল হাতে নেয়। ওর মুখ আপনা আপনি ফাঁক হয়ে যায়। শুভ কেনো ওকে এতো এতো কল দিয়েছে বাসায় কি কিছু হয়েছে..??
ঐশী কয়েক বার শুভকে কল দিলো কিন্তু মোবাইল বন্ধ দেখাচ্ছে।
ঐশী চিন্তিত মুখে মোবাইল পাশে রেখে তারাতারি রেডি হয়ে সবাই কে বলে বেরিয়ে পড়ে। বাসা থেকে বের হতেই ওর এক ভাইয়ার সাথে দেখা উনি ওকে দেখে বললো কোথায় যাবে।
~ আমিও ওই দিকেই যাচ্ছি ওঠে পরো।
ঐশী প্রথম উঠতে না চাইলেও পরে উঠে পরলো। বেশ দূরত্ব রেখেই বসলো।
~ তোমার হাসবেন্ড কেমন আছে..?
ঐশীঃ জ্বলছে আলহামদুলিল্লাহ ভালো। নাফসা মনি কে নিয়ে একদিন অবশ্যই আসবেন ভাইয়া ওকে অনেক দিন হলো দেখিনা।
নাফসা হলো উনার মেয়ের নাম।
এভাবে অনেক কথা বলতে বলতে ঐশী চলে আসলো নিজের গন্তব্যে।
ঐশীঃ ভেতরে আসুন না ভাইয়া।
~আজ সময় নেই ঐশী। তবে আমি কথা দিচ্ছি অন্য দিন নাফসা কে সাথে নিয়ে আসবো। বলেই উনি চলে গেলো।
ঐশী বাসায় ঢুকেই শুভর নানুকে দেখে সালাম দিলো।
উনি ওকে দেখে বেশ বিরক্ত হলেন।
ঐশী প্রথমে ওর শাশুড়ীর রুমে গেলো তারপর শুভর রুমের দিকে। শুভর রুমের কাছে যেতেই ওর রুম থেকে সোনিয়া কে বের হয়ে আসতে দেখলো। ভালো মনটা নিমিষেই বিষিয়ে গেলো।
ঐশীকে দেখে হেঁসে টুকটাক কথা বললো। ঐশীর সোনিয়া মেয়েটাকে পছন্দ না হলেও জোর পূর্বক মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখলো।
সোনিয়া চলে যেতেই রাগে গজগজ করতে করতে শুভর রুমে ঢুকলো।
শুভ ঐশীকে দেখেও না দেখার মতো রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ঐশী রেগে গেলো শুভর এহেন আচরণে। কত কষ্ট করে ওর ফোন দেখে ছুটে এসেছে আর সে কিনা ওকে দেখেও না দেখার মতো রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। প্রেমিকা সামনে থাকলে বউ কে চোখে পরবে কিভাবে। ছিঃ ক্যারেক্টারলেস জামাই। রাগে দুঃখে ঐশীর মন চাচ্ছে নিজের চুল ছিঁড়তে সব সময় সে কেনো শুভর কাছে অন্য কিছু আশা করে। নিজের চোখে সোনিয়া আর শুভকে এক সাথে বার বার দেখেও কেনো নিজের মন কে বুঝাতে পারে না । বেহায়া, নির্লজ্জ মন।
বউ শাশুড়ী মিলে মন দিয়ে খুব সুন্দর করে রান্না করছে। শুভর নানু সে দিকে তাকিয়ে সোনিয়া কে ইশারা করলো রান্না ঘরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সোনিয়া রান্না ঘরে যেতে একদম রাজি নয়। ওদের নানু আর নাতনির কাহিনী আদিত্য বসে বসে দেখছে।
আদিত্য তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো,’ সুইটহার্ট গাধা দিয়ে কখনো হালচাষ হতে শুনেছো..?’
সোনিয়া প্রথম কথার মানে না বুঝলেও পরে ঠিক বুঝলো আদিত্য ওকে অপমান করলো তাও এভাবে রেগে বলে উঠলো,’এই তুই তো আগে এখানে আসতেই চাইতি না। এখন তো দেখি এই বাড়ির সীমানা ছাড়তেই তোর ইচ্ছে হয় না।’
আদিত্যঃ আমি কি তোর শশুর বাড়ি এসে পরে আছি নাকি। এটা আমার বড় আম্মুর বাড়ি। আম্মু আমাকে বলেছে আম্মুর কাছে থাকতে।
সোনিয়া ভ্রু কুঁচকে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোর মতলব কি বলতো..? ‘
আদিত্য আমতাআমতা করে বললো,’ কিসের মতলব…? ‘
সোনিয়া এবার বাঁকা হেঁসে রান্না ঘরে ঐশীর দিকে তাকালো।
আদিত্য সোনিয়ার তাকানো দিকে অন্য দিকে ফিরে নিঃশব্দে হেঁসে ফেললো।
ঐশী রান্না ঘরে টুকটাক কাজ শেষ করে বের হওয়ার সময় একবার চোখাচোখি হয় আদিত্যর সাথে। আদিত্য হাসিহাসি মুখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
ঐশীও একরা হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। সব টাই দুতালা থেকে শুভ নিখুঁত ভাবে দেখলো। সময় এসেছে সবটা সত্যি সবাইকে বলার। না হলে নিজের বউ দুই দিন পর ছোটো ভাইয়ের বউ এ পরিণত হবে।
****
বিথী ব্যালকনিতে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। কপালের রক্ত শুকিয়ে গেছে তাও ভয়ে থরথর করে কাঁপছে সারা শরীর। ঠোঁটের রক্ত এখনো তাজা।
একটু আগে সবাই কে খাবার দেয় বিথী। হঠাৎ ওর হাত থেকে তরকারি বাটি গিয়ে পরে ওর শাশুড়ীর উপর।
বিথী কিছু বুঝে উঠার আগেই আকাশ ওর মুখে প্লেট ছুড়ে মারে।
সাথে সাথে কপাল,ঠোঁট কেটে যায়।
আকাশ তারপর ও ওকে মারতে আসে ওর শাশুড়ী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে শয়তানী হাসি দিয়ে ছেলেকে টেনে ধরে।
বিথীকে নিজের রুমে যেতে বলে ওর শাশুড়ী। ভয়ে বিথী কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে এসে ব্যালকনিতে গুটিসুটি মেরে বসে আছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। এই বুঝি আবার আকাশ আসলো আবার ওকে মারলো ভয়ে কুঁকড়ে আছে।
*******
ঐশী হলুদ শাড়ি, হলুদ চুড়ি, সাথে হালকা সাজ। খুব সুন্দর লাগছে ওকে। সাজগোজ শেষ করে আয়নার মধ্যে নিজেকে একবার ভালো করে দেখে নিলো চুল গুলো বেলী ফুলের মালা দিয়ে সুন্দর করে বেঁধে নিলো। এই সাধারণ সাজের সাথে ওকে বেলী ফুলের মালাটায় যেনো ওকে অসাধারণ লাগছে।
পিছনে ফিরেই অবাক হয়ে গেলো। শুভ দাঁড়িয়ে আছে ওর দরজায় হেলান দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে।
এক পা দু পা করে শুভ এগিয়ে আসলো ওর সামনে। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো ঐশী।
শুভ ঐশীর লজ্জা মাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ” অপূর্ব সুন্দরী ”
ঐশী লজ্জা মাখা মুখে শুভর চোখের দিকে তাকিয়ে যেনো কোনো ঘোরে চলে গেলো।
শুভ ঐশীর সামনে এসে ওর গালে হাত রাখলো। দুই জনের মধ্যে ইঞ্চি তফাৎ। শুভ ঐশীর গাল স্পর্শ করতেই আঁখি জোরা বন্ধ করে নেয় ঐশী। অনুভব করে শুভর ছোঁয়া।
হঠাৎ শুভর বাঁধন শক্ত হয়ে যায় সে ঐশীর চোয়াল শক্ত করে ধরে। ঐশী অবাক হয়ে যায়, ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠে, শুভর চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায়।
চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।