টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে_পর্ব ১২

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_১২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ঐশী ঘুম থেকে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো এটা তো ওর রুম না। উঠে বসলো পাশে তাকিয়ে চোখ বড় হয়ে গেলো।
ঐশীঃ হায় আল্লাহ আমি কি স্বপ্ন দেখছি..?

শুভ চোক বন্ধ রেখেই মুচকি হেসে বললো,’ একদম না তুমি তো জেগে আছো। এই যে আমার সামনে বসে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছো।’

ঐশী চোখ ছোটো ছোটো করে শুভর দিকে তাকালো। শুভ চোখ বন্ধ করে আছে।
~এই লোক তো চোখ বন্ধ করে আছে আর আমি তো মনে মনে কথা বলছি উনি শুনলো কিভাবে..?

শুভ চোখ খুলে বললো,’ সত্যি তুমি মনে মনে বলছো..?’
ঐশী কিছু না বলে উঠতে নিলে শুভ ওর হাত ধরে ফেলে।
~আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি কেউ আমার চোখে পানি ফিক্কা মারো।
শুভ শান্ত দৃষ্টিতে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছে। পাশের টেবিল থেকে পানি নিয়ে ওর মুখে এক গ্লাস পানি ফিক্কা মারলো।

ঐশী চোখ বড় বড় করে নিজের কাপড়ের দিকে তাকিয়ে আছে। পুরো কাপড়, শরীর একদম ভিজে গেছে।

ঐশীঃ এটা আপনি কি করলেন ভাইয়া..!?

শুভ রেগে বলে উঠলো,’ তোমাকে আমি আগেও নিষেধ করেছি ভাইয়া বলতে। তুমি কিন্তু বার বার একি ভুল করছো। তুমি কি চাও এই সকাল সকাল আবারো তোমাকে আমি শাস্তি।

ঐশী শুভকে এভাবে রেগে যেতে দেখে নম্র সুরে ঐশী বললো,’ স্যার আপনি আমাকে তো একদম ভিজিয়ে দিয়েছেন।

শুভঃ তো..তুমি নিজেই তো বললে পানি ফিক্কা মারতে??
ঐশীঃ আমাকে এখানে কিভাবে আসলাম..?
শুভঃ তুমি নিজেই রাতে আমার রুমে এসে বললে। তুমি আজ থেকে এই রুমে থাকবে এটা তোমার স্বামীর রুম আরও অনেক কিছু। আমি তোমাকে বের করে দিতে চাইলে মাঝ বিছানায় শুয়ে কান্না শুরু করলে। তারপর আমার মায়া হলো আমার পাশে তোমাকে জায়গা দিলাম।

ঐশী কিছু না বলেই উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রাগে মন চাচ্ছে শুভর মাথার চুল সব গুলো টেনে ছিঁড়তে। অসভ্য লোক একটা।

ঐশী নিজের রুমে ঢুকতেই আদিত্য রাগে সজোরে দেয়ালে একটা ঘুসি মারলো।

ঐশী যখন শুভর রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসছিলো আদিত্য সোফায় বসে ছিলো। ঐশীর শরীর ভেজা এমন এলোমেলো চুল দেখে আদিত্য রাগে শরীর জ্বলছে।

*****

আকাশ দু’হাতের মাঝ খানে সিগারেট নিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো সকাল সকাল সে কেনো সিগারেট খাচ্ছে সে নিজেও জানেনা শুধু জানে সিগারেট এখন তার প্রিয় সঙ্গি।

বিথী পা টিপে টিপে ব্যালকনির কাছে গিয়ে উঁকি দিলো। আকাশকে দেখে সাহস করে বললো,’ আকাশ আমাকে একটু ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবে৷’

আকাশের কোনো হেলদোল দেখা গেলো না। সে আগের মতো সিগারেট খাচ্ছে।

বিথী আবার বললো,’ আকাশ শুনছো। প্লিজ আমাকে একটু ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবে। আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে।’

আকাশ ওর সামনে এসে ওর দু’গাল চেপে ধরে বললো,’ শরীর খারাপ লাগছে মরে তো আর যাওনি। আমার সামনে একদম ন্যাকামু করতে আসবে না।’

বিথী ব্যথায় কেঁদে উঠলো,’ আকাশ আমার সারা শরীর খুব ব্যথা করছে ছাড়ো আমাকে।’

আকাশ ধাক্কা দিয়ে বিথীকে দূরে সরিয়ে দিলো।

আকাশঃ একদম আমার সামনে অভিনয় করতে আসবি না। শরীর খারাপ হলে আমি কি ডাক্তার যে আমার কাছে বলতে হবে। না-কি তুই দু বছরের বাচ্চা নিজে যেতে পারিস না।

বিথী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর কান্না করছে। সে কিভাবে নিজে যাবে ওর কাছে তো টাকা নেই। আকাশকে কিছু না বলে চোখ মুছে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

নিচে যেতেই শাশুড়ীর চিৎকার শুনতেই রান্না ঘরে দৌড়ে আসলো।

বিথীঃ কি হয়েছে আম্মু বলে উনার হাত ধরলো।

উনি আরও জোরে চিৎকার করে উঠলেন। বাসার সবাই আকাশ সহ রান্না ঘরে এসে উপস্থিত হলো। আকাশ দ্রুত ওর আম্মুর কাছে গিয়ে দেখলো অনেকটা জায়গা পুড়িয়ে ফেলেছেন উনি ফসকা পড়ে গেছে।

আকাশ অস্থির হয়ে বললো,’ আম্মু তোমার এই অবস্থা কি করে হলো..?

~ কিছু না বাবা তুই এতো অস্থির হস না। আমার কপালে যা আছে তাই হয়েছে।

আকাশ জলদি ডাক্তার কে কল দিলো।

ড্রয়িং রুমে বসে আছে বিথী মাথা নিচু করে এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তার এসে দেখে গেছে ওর শাশুড়ী কে।

আকাশ আচমকা ওর সামনে গিয়ে ওর গালে পরপর অনেক গুলো থাপ্পড় বসালো। বিথী কিছুই বুঝতে পারলো না। আকাশ ওকে কেনো মারছে।

বিথী কিছু বলার আগেই আকাশ ওর দিকে আবারও তেরে যেতে নিলে ওর আম্মু এসে ওকে টেনে নিয়ে গেলো।

বিথীর শরীর এমনি তেই অনেক খারাপ ছিলো। আকাশের মারে ও ওখানেই মাথা ঘুরে ফ্লুটে পড়ে যায়।
বিথীকে পড়ে যেতে দেখে আকাশ আরও বেশি রেগে গেলো।
আকাশঃ আম্মু এই মেয়ের জন্য আজকে তোমার হাত পুড়ছে। এই মেয়ে সারাদিন আরাম করবে আর তুমি কাজ করে করে হাত পুড়বে তা আমি হতে দিবো না। আজ থেকে ওর কাছে এই বাড়ি নরক হয়ে উঠবে। বলেই রান্না ঘর থেকে এক জগ পানি এনে অজ্ঞান বিথীর মুখে পুরো পানি ঢেলে দিলো। আর শয়তানী হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

বিথীর শাশুড়ী খুশিতে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। উনি তো এটাই চেয়ে ছিলেন।

******

মৌ মন খারাপ করে ক্যান্টিনে বসে আছে ওকে ঘিরে সবাই আজ খুব খুশি।

কাল কে মৌ এর বিয়ে এই নিয়ে সবার মধ্যে টানটান উত্তেজনা। সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে দীপ্তির আম্মু। এরা যেনো শুধু ফ্রেন্ড নয় যেনো একটা পরিবার।

দীপ্ত কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ উঠে চলে গেলো।

ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ঐশীও উঠে ওর পিছু পিছু গেলো।

সবাই বিয়েতে কি পরবে,কি করবে, আজকে গায়ে হলুদ কে কে শাড়ি পরবে এই নিয়ে কথা চলছে। তাই কেউ অতটা খেয়াল করেনি ওদের।

কিন্তু ঐশী যাওয়ার সময় ওর মোবাইল নিতে মনে নাই। মোবাইল রেখে গিয়েছে অথৈর কাছে।

দীপ্ত গিয়ে দাঁড়ালো ওদের ভার্সিটির পেছনে একটা ছোটো পুকুর আছে ওটার সামনে। পকেট থেকে সিগারেট বের করে দু এক টান দিতেই পেছন থেকে ঐশী বলে উঠলো, ‘ কবে ধরে এটা চলছে..?’
দীপ্ত ভয়ে তারাহুরো করে লুকাতে নিলে ঐশী বলে উঠলো, ‘ থাক লুকাতে হবে না। ‘
দীপ্ত সিগারেট দূরে ছুড়ে ফেললো।

ঐশী গিয়ে পুকুর পাড়ে বসলো। দীপ্তকে ইশারা করলো পাশে বসতে।
দীপ্ত গিয়ে বসলো।

ঐশীঃ কি হয়েছে তোর..?
দীপ্তঃ কোথায় কি হয়েছে..?
ঐশীঃ আমার থেকে লুকিয়ে লাভ নেই।
দীপ্ত কিছু না বলে সামনে তাকিয়ে বললো,’ তোর আনরোমান্টিক রোবট জামাইকে সাথে নিয়ে আসবি তো..??’
ঐশী বুঝলো দীপ্ত কথা ঘুরাতে চাচ্ছে। ঐশীও হেঁসে উঠলো।

দুইজন বিভিন্ন কথায় মেতে উঠলো। ঐশী ভালো করেই বুঝতে পারলো দীপ্ত মৌ কে ভালোবাসে। আর এটা সে শুধু নয় ওরা ফ্রেন্ড রা সবাই জানে তাও অনেক আগে থেকেই জানে।
ভাগ্য বড্ড নিষ্ঠুর কে কখন কার হয়ে যায় কেউ বলতে পারে না।

হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় সবাই অথৈর দিকে তাকালো। অথৈ মোবাইল সামনে এনে দেখলো এটা ওর মোবাইল না ঐশীর মোবাইল।

উপরে লেখা “রোবট বর” নামটা দেখে সবাই হাসাহাসি শুরু করলো।

ওদের হাসাহাসির মধ্যে দিয়েই ফোন কেটে গেলো।

মেসেজ আসলো ” নাস্তা করেছো..?”

সবাই মিলে প্লেন করলো ঐশীর রোবট বর কে মানুষ বানাবে।

ওরা মেসেজ পাঠালো ” না গো খাইনি, তোমাকে ছাড়া একা খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি আসো না এক সাথে খাবো। তুমি তো জানো আমি কখনো তোমাকে ছাড়াকিছু খাই না আসবে একটু প্লিজ ”

শুভর মোবাইলে ঐশীর পাঠানো এমন মেসেজ দেখে সে তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আসলেই কি এই মেসেজ ঐশী লেখেছে না-কি….

সবাই বেশ উত্তেজিত হয়ে এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে। আজ যে করেই হোক ঐশীর রোবট বর কে দেখেই ছাড়বে। বিয়ের আগে ঐশী একটা ছবি সবাইকে দিয়ে ছিলো ছেলে দেখতে তো এমন রসকষহীন, রোবট, আনরোমান্টিক মনে হয়নি। কিন্তু বিয়ের পর ছবি তো দূর নামটাও কাউকে বলছে না। আজ ওরা দেখবে আর রোমান্টিক হওয়ার কিছু টিপস্ ও শিখিয়ে দিবে মনে মনে ভেবে রেখেছে। ‘

ওদের ভাবনার মাঝেই একটা ছেলে এসে বললো ” আপু ঐশী আপু কোথায়..?’

মৌঃ কেনো..? ঐশী এখানে নেই। আমাদের বলে যাও আসলে ওকে বলে দিবো।
~আসলে আপু। ঐশী আপুকে ছাড়া অন্য কাউকে বলা যাবে না। ঐশী আপু কোথায়..?

দীপ্তি অথৈর কানে কানে বললো” দুস্ত এমন তো নয়, ঐশীর রোবট জামাই এই ছেলেকে পাঠিয়েছে..?”

অথৈঃ হুম ঠিক বলেছিস।

মৌঃ তুমি একটা কাজ করো যে তোমাকে পাঠিয়েছে তাকে গিয়ে বলো, ঐশী আপু আপনাকে বলেছে উনার কাছে যেতে কেমন।’

ছেলেটা চলে যাওয়ার কিছু সময় পর ওরা দেখলো শুভ স্যার ওদের দিকেই আসছে।

অথৈঃ শুভ স্যার এদিকে কেনো আসছে।
দীপ্তিঃ জানিনা।

শুভ গিয়ে ওদের সামনে দাঁড়ালো।
সব গুলো মাথা নিচু করে আছে। শুভকে সবাই খুব ভয় পায়।

মৌঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার।
শুভ সালামের উওর দিয়ে বললো,’ তোমরা সবাই এখানে ঐশী কোথায়…?’

একটা আরেকটার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলো।

অথৈঃ আসলে স্যার ঐশীর হাসবেন্ড এসেছে তাই ঐশী ওর হাসবেন্ডের সাথে নাস্তা খেতে রেস্টুরেন্টে গিয়েছে ।

চলবে……

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here