#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_১৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
বিথী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাস্তায় জমে থাকা পানির দিকে।
অচেনা যুবকটি ওর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। নিম্ন সুরে বলে উঠলো,’ সংসার সামলাচ্ছেন দিব্যি কিন্তু এখনো শাড়ি সামলাতে পারেন না..শাড়ি ঠিক করে বসুন।’
বিথী লজ্জায় তারাতারি নিজের শাড়ির দিকে তাকালো। শাড়ি অনেকটা পেট থেকে সরে গেছে কখন যেনো।
অচেনা ছেলেঃ সব তো ঠিক ছিলো। আপনার বিয়ে তো আপনার প্রেমিকের সাথেই হয়ে ছিলো কিন্তু তারপরেও আপনি গাড়ির নিচে কেনো যেতে চাচ্ছেন..??
ছেলেটির কথা শুনে বিথী অন্ধকার আকাশের দিকে তাকাতে চাইলো কিন্তু বৃষ্টির ফোঁটার জন্য আর তাকানো হলো না। চোখ বন্ধু করে একটা গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
ছেলেটা হঠাৎ বলে উঠলো,’ আমি বাকি গল্পটা শুনতে চাই..??’
বিথী শান্ত চোখে ছেলেটার চোখের দিকে তাকালো। এতো, এতো কৌতুহল কেনো জানার জন্য এই ছেলের..?
বিথী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আবারও চলে গেলো অতীতে….
বিথী তখন বউ সেজে দাঁড়িয়ে ছিলো আকাশের বাড়ির সামনে। বাড়ি দেখে বিথী অবাক হয়ে ছিলো। এটা কার বাড়ি..?? ওরা এখানে কেনো.?? আকাশের কথার সাথে তো কিছুই মিলছে না। তাহলে কি দারোয়ান আঙ্কেলের কথাই সত্যি!!
তখনি সদরদরজা দিয়ে বেড়িয়ে আসে এক সুন্দরী মহিলা। উনার পিছু পিছু আসেন কয়েক জন মহিলা আর মেয়ে, সাথে পুরুষ ও আছে।
উনি অবাক হয়ে কিছু সময় বিথীর দিকে তাকিয়ে থাকে। উনার হাসি হাসি মুখটা সাথে সাথে চুপসে যায়।
হয়তো ছেলের পাশে অন্য কাউকে আশা করে ছিলো।
সুন্দরী মহিলাটি আকাশের দিকে তাকিয়ে বড় বড় পা ফেলে বাসার ভেতর চলে যায়।
আকাশ তখন বিথীর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজেও ওই মহিলার পিছু পিছু চলে যায়। বিথী তাকিয়ে রই ওদের যাওয়ার দিকে। বিথীর চোখের সামনে শুধু বাসে উঠে ছিলো আকাশের অগ্নি দৃষ্টিতে তাকানো দৃশ্য টা। আগে তো আকাশ যখনি তাকাতো এই চোখে থাকতো শুধুই মুগ্ধতা।
একজন মেয়ে এসে বিথীকে নিয়ে গেলো বাড়ির ভেতর।
ভেতরে গিয়ে বিথী যেনো আরো স্তব্ধ হয়ে গেলো। যখন শুনলো এই মহিলা আকাশের জন্মদায়িনী মা। বিথী একদম ভেতরে ভেতরে ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে গিয়েছে। এতো বড় ধোঁকা!!
আকাশের কথায় এই সুন্দরী মহিলা বিথীকে বরন করে নেয় । বিথীর জানা নেই ঠিক কি বলে আকাশ ওর আম্মুকে রাজি করিয়েছে।
তারপর সুন্দর করে বিথীকে রেখে আশা হয় একটা ফুলে ফুলে সাজানো রুমে।
বিথী সুন্দর করে ঘোমটা দিয়ে বসে অপেক্ষায় ছিলো নিজের বরের কিছু সময় পর রুমে পা রাখে আকাশ।
আকাশ রুমে এসেই বিথীর দিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো কিছু সময় তারপর হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো।
বিথী কল্পনাও করতে পারেনি এমন কিছু হবে। সে চোখ তুলে তাকালো আকাশের দিকে ততক্ষণে আকাশের হাসি থেমে গেছে।
সে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠে তোদের মতো পতিতা দের জন্য এই সুন্দর ফুলে ফুলে সাজানো বিছানা নয়। তোর শরীরের এই কলঙ্ক নিয়ে এই ফুল ধরলে ফুলটাও যে কলঙ্কিত হয়ে যাবে।
“পতিতা ” কথাটা যেনো ঠিক ওর বুকে গিয়ে বিঁধেছে ।
বিথী দুর্বল শরীরের দিক দিয়ে হলেও মনের দিক দিয়ে সে অতটাও এখন দূর্বল নয়। সে রাগে অগ্নিরূপ ধারণ করলো। মাথায় চড়ে বসলো রাগ, জেদ।
সে উঠেই থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আকাশের গালে। রাগে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। বলে উঠে, ‘ কার জন্য আজ আমি এমন কলঙ্কিত..?? কার জন্য বলো..?? ঠিক তোমাদের মতো কিছু নরপশুদের জন্য। যাদের টার্গেট হলো মেয়েদের ভুলিয়ে বালিয়ে, নিজের প্রেমের ঝালে ফাঁসিয়ে নিজের পুরুষত্ব মিটিয়ে নেওয়া তাই না!! তারপর মন ভরে গেলে সে নারী নষ্টা নারী, সেই নারী অপবিত্র নারী, সেই নারী পতীতা, সেই নারী কলঙ্কিত তাই তো..??
আকাশ অট্ট হাসিতে ভেঙে পরে। তারপর আসতে আসতে চোখ মুখ শক্ত করে বিথীর গাল শক্ত করে চেপে ধরে।
~ হুম একদম ঠিক বলেছিস।
বিথী ব্যথায় চিৎকার করে আকাশকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। আর কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে,’ আকাশ তুমি তো এমন নও। আমার আকাশ এমন নয়, হতেই পারে না। সব আমার দুঃস্বপ্ন তাই না..? ঠিক বলেছি তো বলো..?? তুমি তো এমন নও। তোমার চোখে এমন নিষ্ঠুরতা মানায় না, তোমার চোখে তো শুধু ছিলো আমার জন্য মুগ্ধতা। তুমি এমন পাল্টে গেলো কেনো আকাশ। মানুষ পাল্টায় শুনেছি কিন্তু এতটা পাল্টায় তা বুঝতে পারিনি। তুমি জানো আকাশ আমার পেটে তোমার বাচ্চা তুমি বাবা হতে যাচ্ছো আর আমি মা৷
আকাশ ধাক্কা দিয়ে বিথীকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর বলে উঠে, ‘ খবর্দার এই বাচ্চা আমার বলবি না। এই বাচ্চা আমার না। এই বাচ্চা তোর কোন প্রেমিকের গিয়ে জিজ্ঞেস কর।
বিথীঃ আকাশ প্লিজ চুপ করো… তুমি খুব ভালো করে জানো এই বাচ্চা কার আর আমার প্রেমিক তো তুমি।
আকাশ আচমকা বিথীর গলা টিপে ধরে। এতোটাই শক্ত করে ধরে যে বিথীর চোখ বড় বড় হয়ে যায়। এক সময় মনে হয় এই বুজি সে এই নিষ্ঠুরতম পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিলো। কিন্তু না আকাশ তাকে তো এভাবে মারবে না তিলে তিলে মারবে কিন্তু কেনো..? কি দোষ ছিলো তার??।
আকাশ বিথীকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
বিথী নিস্তেজ হয়ে যাওয়া শরীরটা নিয়ে পড়ে থাকে রুমের এক কোনায়। একটু পর আকাশ আবার ফিরে এসে বলে উঠে, ‘ এই বাসার একটা খবর যদি বাহিরে যায় তাহলে তোর প্রান প্রিয় বোন ঐশী আর ভাই তীব্র কে এই পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিবো। সাথে তোর পরিবারের লোক গুলোকে রাস্তায় নিয়ে নামাবে।
বিথীও তাই বিশ্বাস করে নেয়। ওর ভাই বোনের জন্য সে এমন কষ্ট কেনো মরতেও রাজি। কিন্তু বোকা বিথী জানতেই পারলো না এই ছেলেকে শেষ করতে ঐশী একাই যথেষ্ট।
শুরু হলো ওর কঠিন থেকে কঠিন তম দিন। শাশুড়ী, স্বামী তাদের হাতের মার, বকা সব আসতে আসতে হজম করে নিতে শিখে গেলো। এর মধ্যে কারো সাথে আর যোগাযোগ ও আর করতে পারলো না। মোবাইল ছাড়া কি দিয়ে যোগাযোগ করবে। এর মধ্যে সব চেয়ে আশ্চর্য বিষয় হলো ওর পরিবারের কেউ একদিন ও ওর খবর নেয়নি। কেনো কেউ খবর নেয়নি..? সে কি ওই বাড়ির কেউ ছিলো না..? সেই যে বিয়ের পরে একবার বাবার বাড়ি গেলো তারপর আর তাদের কারো ছায়াও চোখে পড়েনি। এই সব ওকে মানুষিক ভাবে অশান্ত করে তুলতো।
এরি মধ্যে আকাশের অত্যচার ও বেড়ে গেলো। যখন তখন গায়ে হাত তুলা। সামনে যা থাকে তাই ছুড়ে মারা। বিথীর মনে প্রশ্ন জাগায় আকাশ ওকে কেনো এতো ঘৃণা করে..? এমন কি কাহিনী যার কারনে ওর প্রতি আকাশের আম্মুর আর আকাশের এতো রাগ..?? কিন্তু মাথায় কিছুই ধরা দেয় না। শুধু কি ঐশীকে বউ করে আনতে পারেনি তাই আকাশের আম্মুর এতো রাগ,ঘৃণা নাকি অন্য কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে যা বিথী জানেনা..? আকাশ কেনো হঠাৎ পাল্টে গেলো। এগুলো কি সব প্লেন ছিলো..?
এইসব ভাবতে ভাবতে ও যে কখন নিজের শাশুড়ীর রুমের কাছে চলে এসেছে নিজেও জানেনা। হঠাৎ কানে ভেসে আসলো শাশুড়ীর কিছু কথা। কার সাথে যেনো ফোনে বলছে, ‘ সত্যি এটা খাওয়ালে বাচ্চা ম*রে যাবে তো। আমি কিছু চাই না শুধু চাই এই বাচ্চা ন*ষ্ট হয়ে যাক। আর দেখতে চাই চোখের সামনে এই মেয়ের ছটফটানি। বাচ্চার জন্য আমার কাছে ভি*ক্ষা! হাতে পায়ে ধরে মিনতি তাহলে যে আমার অশান্ত মনটা শান্ত হবে। বলেই হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো।
ভয়ে বিথীর হাত পা কাঁপছে নিজের রুমে গিয়ে এক গ্লাস পানি এক নিঃশ্বাসে খেয়ে নিলো৷ বুকের ভেতর ধুকধুকানি ক্রমশ বেড়েই চলছে। এক হাতে ঘন-কালো চুলগুলো খোঁপা করে নিলো অন্য হাতে একটা চিরকুট আলতা দিয়ে লেখলো আকাশর জন্য তারপর এক ছুটে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে। সিদ্ধান্ত নিলো আর কারো বোঝা হয়ে থাকবে না, কারো কষ্টের কারন হবে না, কারো লজ্জার কারন হবে না, কারো জীবনে অন্ধকার হয়ে আগমন করবে না। চলে যাবে বহুদূর যেখান থেকে চাইলেও ফিরা যায় না। এই নিকৃষ্ট মানুষদের সামনে তার সন্তান কে জন্ম দিবে না।
কিন্তু তা আর হতে দিলো না এক অচেনা যুবক।
এতো টুকো বলে তাকালো যুবকটির দিকে। কেমন অনুভূতি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যুবকটি ওর দিকে।
যুবকটির দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে উঠলো বিথী,’ আমার এখন যাওয়া উচিৎ… ‘
যুবকটি বলে উঠলো,’ কোথায়..?
বিথীঃ নিজের সন্তান কে নিয়ে বহুদূর যেখানে গেলে সে ভালো থাকবে।
ছেলেটি কিছু সময় চুপ থেকে কি যেনো ভাবলো৷
অচেনা ছেলেঃ আপনি এখন আপনার পরিবারের কাছে ফিরে যাবেন৷
বিথী শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,’ কখনো না।’
অচেনা ছেলেঃ কেনো..?? তারা খুঁজ নেয়নি বলে..??
বিথী কেমন অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,’ আমি না হয় একটা ভুল করেছি তাই বলে আম্মু আব্বু আমাকে এভাবে ভুলে যাবে। আমার কলিজার টুকরো ভাই বোন আমার একটা খুজও নিলো না। আমি মরে গেলেও যাদের কিছু যায় আশে না। আমি তাদের কাছে কেনো ফিরে যাবো বলতে পারেন..?।
অচেনা ছেলেঃ হয়তো তার পিছনেও কোনো না কোনো কারন আছে।
বিথী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ হুম কারন আছে । আমার মতো মেয়েকে বাড়িতে জায়গা দিলে, খুঁজ খবর নিলে তো উনাদের মানসম্মান থাকবে না।’
~ আপনি বাড়িতে যান। ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেন। জোকের মাথায় কিছু করা ঠিক হবে না। ভালো করে ভেবে দেখুন হয়তো আপনার পেছনে এমন কিছু সত্যি লুকিয়ে আছে যা আপনি জানেন না। আগে সত্যি টা জেনে তারপর না হয় আপনার আর আপনার সন্তানের ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নিবেন।
বিথী ভাবলো কিছু সময় তারপর উঠে হাঁটা ধরলো।
~ কোথায় যাচ্ছেন..??
বিথীঃ রহস্যের সমাধান করতে।
ছেলেটার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
ছেলেটা বিথীর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে একবার আওরালো ” আপনার এই দিনের জন্য কোথাও না কোথাও হয়তো আমিও দায়ী ”
বিথী যেতে যেতে পিছন ফিরে ছেলেটার উদ্দেশ্য বলে উঠলো,’ আপনার নাম..??
ছেলেটার মুখে মৃদু হাসির রেখা ঝিলিক খেয়ে গেলো,’ মুনতাসীর ‘
***
বাহিরে যত বৃষ্টি বাড়ছে সোনিয়ার মনে চিন্তাও বাড়ছে এই রাতে বৃষ্টির মধ্যে শুভ গাড়ি নিয়ে কখন বেড়িয়েছে এখনো আসছে না। বার বার সোনিয়া দরজার দিকে তাকাচ্ছে।
তখনি দরজা ঠেলে ভেতর ঢুকলো শুভ।
শুভকে দেখে খুশি হওয়ার বদলে সোনিয়ার মুখ কালো আঁধারে ডেকে গেলো।
শুভর কোলে ঘুমন্ত ঐশীকে দেখে।
রাগে সোনিয়া হাত মুষ্টি বদ্ধ করে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,’ এই মেয়ে এমন শুভর আগে পিছে চিপকে থাকে কেনো!! আজ তো একদম কোলে উঠে গেছে আর আমি ওই দিন জড়িয়ে ধরায় কতো গুলো থাপ্পড় পরলো। রাগ হলো প্রচুর রাগ হলো ঐশীর উপর।
শুভ ঐশীকে নিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে।
এটা দেখে আগুনে ঘি ডালার মতো ছিলো। সোনিয়া অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শুভর রুমের দিকে। হঠাৎ মনে হলো ঐশীর তো শরীরে ভিজা কাপড় ও কি শুভ চেঞ্জ করবে..?? বুক ভার হয়ে আসলো সোনিয়ার৷ সে দৌড় দিলো শুভর রুমের দিকে…।
[ দুঃখীত্য আইডির কিছু সমস্যার কারনে গল্প দিতে পারিনি]
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।