🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ১২
🍁🌼🍁
ইচ্ছে গোসল সেরে এসে দেখে আহান পরাটা ভাজা অলমোস্ট কমপ্লিট করে ফেলেছে।তাই দুটো অমলেট করে ফেললো দ্রুত করে।
🍁
আহান নিজের প্লেট থেকেও খাচ্ছে আর ইচ্ছে তার খাবার যখনই মুখে নিতে যাচ্ছে তখনই ঠিক মুখের সামনে থেকে খাবার টেনে নিয়ে নিজে খেয়ে ফেলছে।
ইচ্ছে একপর্যায়ে চরম বিরক্ত চেহারা নিয়ে জিজ্ঞেস করল
–আমি কি খাব না নাকি সব আপনি নিয়ে নিচ্ছেন।
–না খেলে নাই
— ঠিক আছে তাহলে আপনিই খান।
ইচ্ছে প্লেটটা আহানের সামনে দিয়ে দিলো।আহান খাচ্ছে তো খাচ্ছে।ইচ্ছেকে একবার সাধেও নি।ইচ্ছে রাগ করে উঠে বললো
–পাশে যে হাতির পেটি মানুষ নিয়ে খেতে বসে ছিলাম বুঝতেই পারি নি।হাতির খিদে পায় বিড়ালের খিদে পায় না বুঝলেন?
এটা বলেই রুমের মধ্যে হনহনিয়ে চলে গেল ।আহান হাল্কা হেসে ওর প্লেটের খাবার খেয়ে নিলো।ইচ্ছের জন্য নিজের প্লেট টা নিয়ে চলে গেলো ইচ্ছের কাছে।
— ওই বিলাই করিস কি?
ইচ্ছে সুয়ে আছে অন্যদিকে ফিরে
— কথা বল,,,, দ্যাখ বিড়ালের জন্য আমার চাবানো হাড্ডিগুলো এনেছি।আয় খা
ইচ্ছের এবার সত্যিই খুবই রাগ হচ্ছে।এভাবে অপমান? শেষমেষ কিনা তার চাবানো হাড্ডি খাবে?কিন্তু হাড্ডি এলো কই দিয়ে আমি তো মাংস রান্না করি নি!!!!
ইচ্ছে এবার আর একটা বালিস নিয়ে মাথা চাপা দিলো।কিন্তু বেশিক্ষন পারলো না আহানের ধমকে বাচ্চা বিলাইর মতো গুটিশুটি দিয়ে উঠে বসলো।আহান নিজেই ইচ্ছের মুখে খাবার ধরলো।
–কিরে নে হা কর
ইচ্ছের রাগ ভয় যেন বরফ থেকে পানি হয়ে গেছে।ছেলেটা তাকে কতো ভালোবাসে কিন্তু সামনা সামনি কেন কিছু বলে না? কিছু বললে তো ইচ্ছেও দুই কথা বলতে পারে।ইচ্ছের যে আজকাল খুব ভালোবাসার কথা বলতে ইচ্ছা করে।খুব
–হ্যা তাকিয়েই থাক। আমাকেই খাবি নাকি? খেতে পারিস আয় খা তবে একটা কথা বউরা যেমন ভাবে খায় তেমনভাবে মোটেই খেতে দিবো না আমি বলে দিলাম হুম
আহানের মুখভঙ্গি আর কথায় ইচ্ছে ফিক করে হেসে দিলো।
–এখন হাসবি ইচ্ছু তুই?আমি কতক্ষণ ধরে খাবার ধরে আছি নাকি বউদের মতো খাওয়ার শখ জেগেছে?
ইচ্ছে লজ্জা পেয়ে গেলো আহান দিন দিন মুখ কাটা
হয়ে যাচ্ছে।
— না না খাচ্ছি তো দিন ।
আহান ইচ্ছের মুখে খাবার দিতে গিয়ে নিজেই বার বার মুখ হা বানিয়ে ফেলছে।।শেষমেষ বলে ফেললো
–প্রথম তো অভ্যাস হয়ে যাবে।
বলে হাল্কা করে হাসলো ।
ইচ্ছে তাকিয়ে তাকিয়ে আহানের হাসি দেখছে। কি সুন্দর সে হাসি। তার ভ্যাম্পায়ারের মতো দুই পাশের উপরের নিচের দাত চারটা অন্যদের থেকে এই দাত তার বেশিই বড়।এতে তার সৌন্দর্য দিগুণ বেড়ে যায়। ভালোবাসার মানুষের সব কিছুই অত্যন্ত সুন্দর হয় কারণ ভালোবাসার দৃষ্টি অসুন্দর বা কটু হয় না কখনো।
🍁🌼🍁
রাতে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে সাথে বর্জপাত হচ্ছে।আহান এই সুযোগ টা একেবারেই ছাড়েনি।দৌড়ে নিচে নেমে এসেছে।যা ভেবেছে তাই হয়েছে।ইচ্ছে ভয়ে গুটিশুটি মেরে আছে।ঘরের মধ্যে নিচ তলায় ইচ্ছে একা তাই ভয়টা বেশিই পাচ্ছে।
— কিরে ভয় পাচ্ছিস?
ইচ্ছে চমকে তাকালো।
–হ্যা অল্প পাচ্ছি আর কি
–রাতের বেলা ভাবলাম তুই একা ভয় পাবি তাই নিতে এলাম।আমার রুমে শুয়ে পরবি আয়।আমি সোফায় ঘুমিয়ে নেব আর আমায় ভয় লাগলে আমার পাশের রুমটায় শুবি চল।
ইচ্ছে উঠে দাঁড়িয়ে বললো
–আপনাকে কেন ভয় লাগবে হুম? চলুন
–আমার কিন্তু ভয় লাগে
–কেন?
— কিছুনা এমনি ( আমি তোর ললিপপ আর মাংসের হাড্ডি হতে চাই না নিজেকে শামলানো দায় হয়ে যায় রে। অবশ্য আজ এমন সম্ভাবনা নেই কারণ তোর জ্বর নেই)
কই চল
–চলুন
🍁🌼🍁
ইচ্ছেকে শুয়ে পরতে বলে আহান ব্যালকুনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
ইচ্ছে সিগারেটের গন্ধ পেয়ে ব্যালকুনির দরজায় গিয়ে দেখে আহান সিগারেট টানছে।ইচ্ছে বেশ রাগী সুরেই বলে
–আহান আপনি এগুলো কবে থেকে খান?
আহান সাভাবিক গলায় উত্তর দেয়
–তুই যে বিশদিন ছিলি না তখন তুই যাওয়ার পাঁচ দিন পর থেকে খাই।
–কিন্তু আপনি তো খেতেন না।।।হঠাৎ?
–খেতাম না এখন খাই। ওই ১৫ দিন টানা খেয়েছি।তারপর ৫ দিনে দুইটা আর এখন ৫দিনে একটা খাই।আর আমি নাইন-টেনে দুই একবার খেয়েছিলাম।
— কিন্তু কি এমন হলো? ( ইচ্ছের সাহস থাকলে গালে একটা থাপ্পড় লাগাতো কিন্তু সে সাহস ইচ্ছের নেই)
— একটা বস্তুর জন্য খেয়েছিলাম।
ইচ্ছে মনে মনে ভাবছে ইচ্ছে তো কোনো বস্তু না তাহলে???নাকি তাকেই বস্তুর সাথে তুলনা করলো?এই লোক টা আমাকে সব সময় অপমান করবে।
ইচ্ছে আর কিছু না ভেবে আহানের মুখ থেকে সিগারেট টেনে নিয়ে নিজের খেতে নিলো।পরের পরিনতি যা হওয়ার ছিলো তাই হলো । কাশতে কাশতে ইচ্ছের হিচকি উঠে গেলো। আর আহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
— খাবি আরও খা খা
ইচ্ছে কোনো মতে কাশি থামিয়ে বললো আমার মাথায় টাক দিন আস্তে করে। কাশছি তো দেখছেন না?
আহান ইচ্ছা করে জোরেই টাক দিলো।
–এইভাবে কাশি থামায়?আপনি তো রীতি মতো আমাকে মারতে চাচ্ছেন।
আমি ভিতরে গেলাম ভিজে যাচ্ছেন ভিতরে আসুন।
আহান ইচ্ছেকে যেতে দেয় না।ইচ্ছেকে টেনে এনে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।ইচ্ছে ফ্রিজড হয়ে যায় আহানের এমন কাজে।কিছু বলছে না কিন্তু ভিতরে তোল পাড় হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিস্নাত রাত শুধু দুটো মানুষ আর মানুষটি যদি হয় ভালোবাসার। ইচ্ছে রীতিমতো কাপছে।সরিয়ে দেওয়ারও সাহস নেই জড়িয়ে ধরারও সাহস নেই।
নিরবতা ভেঙে আহান বললো
— তুই কি পিচ্ছি একটা মেয়ে রে ইচ্ছু
ইচ্ছে কাপতে কাপতে বললো
— আমার দুই বছরের ছোট আপনি।
–সাইজ দ্যাখ।আমার কানের নিচে পরিস তুই।ছোট বেলায় ভালো মা কে বলতি আম্মু আম্মু আহান যে কমপ্লান খায় ওইটা আমার চাই আমার কমপ্লানে লম্বা হয় না
আমি আহানে হাসি শুনছি কি সুন্দর হাসির সেই শব্দ। আহান তার থুতনি আমার কাধে রাখল।দাড়ির খোচা লাগছে অনবরত আর ঘাড়ে পরছে গরম নিশ্বাস। আমার শ্বাস কখন ঘনো হয়ে গেছে নিজেই টের পাই নি
–এত জোরে শ্বাস নিচ্ছিস কেন?
আহানের এমন কথায় রীতিমতো শ্বাস আটকে ধরলাম।ধুর এরকম ভাবে ভালোবাসার মানুষের সাথে মিশে থাকা যায় নাকি?শুধু তো জোরে জোরে শ্বাস নিলাম শ্বাসকষ্ট উঠে নি এটাই কপাল আমার।সে বুঝে না কেন আমি জোরে জরে নিশ্বাস নিচ্ছি?বাচ্চা?
— কিরে মরলি নাকি এইবার তো আর শ্বাসই ছাড়ছিস না। কি আজব ব্যাপার রে ইচ্ছু!!!!
ইচ্ছের কার্যকলাপে আহান নিশব্দে হেসে চলছে। যা ইচ্ছেকে সে একদন্ড বুঝতে দিচ্ছে না।
— কই ছাড়ছি না ছাড়ছি তো আহান।আবার গলা খাকারি দিয়ে বললো
–আমি খাটো নই আহান পাচ ফিট চার মোটামোটি ঠিক আছি।আর পুরুষদের আপনার মতো লম্বায় মানায়।আমার বর আপনার মতো লম্বা হলেই হবে।
–হ্যা তোর বর আমার মতো লম্বা হলেই হবে।আমি যদি আরও লম্বা হই তর বরও সেটুকু লম্বা হবে দেখিস!!!
ইচ্ছে কিছু না বলে নিশব্দে হাসছে।ভালোবাসা এখন পানির মতো পরিষ্কার দুজনের কাছেই।জীবন কতো সুন্দর। কিন্তু আফসোস সুন্দর সময় বেশির ভাগ মানুষেরই স্থায়ি হয় না।
আহান ইচ্ছের কপাল চেক করছে।
— কি হচ্ছে আহান আপনি কপাল চেক করছেন কেন?
–দেখছি জ্বর এলো কিনা।
— কেন আপনি কি চান জ্বর হোক?
–হুম(আনমনেই)জিভকেটে আবার বললো না না কি যে বলিস। আমার রুমকে আমার হাগাখানা বানানোর একদমই ইচ্ছা নেই বাবা।,,
–আপনি আবার আমাকে পচানি দিচ্ছেন।(এটা বলে আহানের হাত ছাড়িয়ে ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো।)
আহানও পিছু পিছু এসেছে।আহান বুঝতে পারে ইচ্ছে কিছুটা রেগে গেছে।আহান যখন বাইরে ছিলো তখন বৃষ্টির বেগ বেশি থাকায় জামা অনেকটাই ভিজে গেছে।তাই জামা খুলে অন্য জামা টা খুজতে গিয়ে দেখে বিছানায়,, ইচ্ছের মাথার পাশে।
ইচ্ছে চোখ খুলে তার দিকে আহানকে খালি গায় আসতে দেখে ভয় পেয়ে যায়।
মনে মনে ভাবছে কি হবে এখন? আহান কি ঐসব করবে?সে তো আহানকে একদমই বাধা দিতে পারবে না এবার কি কিছু হয়েই যাবে?উহ প্রথম বার কেমনে কি হবে?কি করবে?শুনছি কামড়ায় আমাকেও কামড়াবে?দাগ হয়ে যায় যদি? ভালো মা আম্মু যদি দেখে ফেলে? কি ভাববে কি বলবে? ইচ্ছে আর কিছু ভাবতে পারলো না।মাথা ভন ভন করছে মষ্তিস্ক শূন্য শূন্য লাগছে।
ইচ্ছের এমন ভাবনার মধ্যে আহান ইচ্ছের পাশ দিয়ে জামা নিয়ে গায়ে পরলো।আহান ইচ্ছের সামনে তুরি বাজিয়ে বললো অপেক্ষা আরও বড় কর।তারপরে ধপাস করে সোফায় শুয়ে পরলো।
ইচ্ছে এবার চরম লজ্জা পেল।কি ভাবলো আর কি হলো? সে জীবনে আর কিছু ভাববে না জীবনেও না।নিজের ভাবনা নিজেকে এতো লজ্জা দেয় ইচ্ছে এই প্রথম বার টের পেল।
কিন্তু আহান কি বুঝতে পেরেছে?নাউজুবিল্লাহ অসতাগফিরুল্লাহ।
অপেক্ষা বড়ো করতে বলেছে সে কি লজ্জার কথা,,,,।কি ভাবলো।তওবা তওয়া। ইচ্ছে চোখ বুঝে ঘুমিয়ে পরার আগ পর্যন্ত তওবা পরেছে। মনে মনে ঠিক করেছে এই মন নেক্সট টাইম কিছু ভাবলে কঠিন দন্ড দেবে কঠিন।কঠিনতম কঠিনতর।হুহ
চলবে,