তুইতেই আমি🏵পর্বঃ১১

0
2371

🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ১১

🍁🌼🍁

আহান দোয়া করছে ইচ্ছে রাতের কথা যেন ভুলে যায় নয়তো আমার সামনে আর আসবে না।এক ঘরে থেকে দূরত্ব একেবারি সহ্য করবে না আহান। দূরে থাকার জন্য এতো কাঠখড় পুড়িয়ে রাখেনি ইচ্ছেকে সে।

আহান ইচ্ছেকে বাকি রাতটুকুও দুচোখ ভরে দেখলো। সূর্য উঠি উঠি তখন আহানের চোখ দুটো লেগে এলো।

আহানের যখন ঘুম ভাংলো তখন তখন সে দেখলো ইচ্ছে সোফার সামনে হাটু গেরে বসে আহানের মুখের কাছে বড় বড় চোখ করে খুব উৎসুক দৃষ্টিতে কি যেন দেখছে।

আহান চোখ খুলতেই ইচ্ছে ছিটকে দূরে পরলো।

— কিরে ভয় পেয়েছিস নাকি? লাফিয়ে ৫ হাত দূরে সরে গেলি যে।

–কি হলো কথা বল। কই দেখি জ্বরটা ক কমেছে। এদিক আয় তো।

ইচ্ছের কোন নড়চড় নেই।শেষে আহান ইচ্ছের হাত ধরে টেনে উঠিয়ে পাশে বসালো। ইচ্ছের মাথায় হাত দিয়ে জ্বর মাপছে আর বলছে।

— বাহ তোর জ্বরটা দেখছি নেমে গেছে। যাক আমার হাতে জাদু আছে মানতে হবে,,,, তুই কি বলিস?

— হু হু

— কি হু হু । কি দেখছিলি সত্যি করে বল তো

আমতা আমতা করে বললাম

— কিছু না আহান আপনাকে জাগানোর জন্য সামনে বসেছিলাম

— হ্যা এতো সামনে যে পারতি তো মুখের মধ্যে ঢুকে পরতি।

— কি বলেন আহান।এমন কি করিনি আমি

— দেখেছি আমি,,,,তো অনুবীক্ষন যন্ত্র এনে দেব নাকি দূরবীক্ষন?তোর এই নিক্ষুত পর্যবেক্ষনের জন্য কোনটা চাই?

— কিচ্ছু চাই না আমার( মন খারাপ করে)

— কি হয়েছে ইচ্ছু বলবি?কাল সারা রাত ঘ্যানঘ্যান করে আমাকে ঘুমাতে দিস নি।এখন ঘুম থেকে উঠে কি শুরু করলি বলবি?

— হ্যা হ্যা এটাই। আপনাকে আমি কিভাবে কিভাবে জালায়ছি? ( ইকটু থেমে)
না মানে আম্মু তো আমার জ্বর কুমলেই কির্তীকলাপ গুলো বলতো।তাই আর কি আপনার সাথে কি করেছি বলতেন যদি,,,,,,

ইচ্ছের উৎসুক ভংগী দেখে আহান কিছুটা আচ করলো।
আহান বুঝতে পারে ইচ্ছের হালকা হালকা রাতের কথা মনে পরছে কিন্তু সে নিজে সিউর হতে পারছে না তাই ঘুরিয়ে পেচিয়ে জিজ্ঞেস করছে

— অনেক ভাবে,,,জালাইছিস কয়টা শুনতে চাস?

–সব গুলোই বলুন না? (ইচ্ছে খুবই উৎসুক ভংগী তে লাফিয়ে উঠল তার ধারণা সত্যি কিনা এটা জানতে পারবে এই ভেবে)

–হ্যা বলছি বলছি উটকল মাছের মতো লাফ দিস না।অবশ্য যা করেছিস লাফ দেয়ার মতোই।

আমতা আমতা করে বলে উঠলো

–কি করেছি আমি? দুষ্ট কিছু?

আহান মনে মনে হাসলো। সে যে ভয় পেয়েছিলো তা হয় নি এখন সে এই বোকাটাকে কিছু একটা বুঝিয়ে দেবে।

— প্রথমে বমি করলি।তারপরে জামা কাপড় চেয়ে টেনে টুনে নিয়ে চেন্জ করে নিলি। আমার মনে দয়া হলো মাতালের মতো করছে মেয়েটা,,,ভাবলাম একে অন্তত নিচে রাখা যায় না।তাই আমি আমার রুমে নিয়ে এলাম তোর হাত ধরে হাটিয়ে হাটিয়ে।।তোকে বিছানায় বসিয়ে রেখে আমি টিভি দেখলাম কিছুক্ষণ। এরমধ্যেই তুই চিল্লিয়ে উঠলি। জিজ্ঞেস করতেই বললি আমার হিশি পেয়েছি সাথে ওটাও,,,, বুঝিস তো ওটা কি তাই না?

— কিইইইইইই???? এমন আমি কোনোদিন ও করিনি আহান

— কি জানি করতি হয়তো ভালো মা মানসম্মনের ভয়ে বলতেন না। তারপরে কি হলো শোন

–না আমি শুনবো না একেবারেই শুনবো না।

আহান পারে তো ছাদে গিয়ে প্রান খোলা হাসি দিয়ে আসে।সে আর হাসি চাপিয়ে রাখতে পারছে না। ইচ্ছের মুখ মোটামোটি লাল হয়ে এসেছে।হাসি চাপিয়েই বললো

–আরে শুন।তারপরে এতো বললাম যে ইচ্ছু ওয়াসরুমে যা কিন্তু তুই কথাই শুনছিস না। তুই নাকি বিছানায় ই সব করবি।।বার বার ওই মুড এ বসছিলিও জানিস তো। কোন মুড বুঝেছিস তো? হাগু মুড বলেই আহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

— কিইইইইই( ইচ্ছে মনে মনে ভাবছে ঘাট হয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করে)

–আরে হ্যা আমি তো ভয়ে শেষ । আমার বিছানা বুঝি আর বিছানা রইলো না এই বুঝি হাগা খানা হয়ে গেলো। সে কি এক অবস্থা ইচ্ছু তুই এমন করিস জানলে তোর জ্বর এসেছে দেখেই আমি সাথে সাথে তোকে বাসায় রেখে আসতাম।ভাগ্যিস ঠেলে ঠুলে ওয়াসরুম পাঠাতে পেরেছিলাম

–কি সর্বনাশ এসব সে করেছে ভাবতেই ইচ্ছের গায়ে কাটা দিচ্ছে।

ইচ্ছে পারে তো মাটির নিচে ঢুকে যায়।

ইচ্ছে লাফ দিয়ে উঠে যেতে চাইলো।আহান হাত টেনে পাশে বসিয়ে ইচ্ছের পায়ের উপর নিজের এক পা উঠিয়ে দিল যাতে নড়তে না পারে।ইচ্ছের মুখের অবস্থা এমন ছেড়ে দে মা কেদে বাচিঁ। নিজের ভাবনায় ভুল হয়েছে তাই আবার ঠিক করে ভাবলো এটা হবে ছেড়ে দেন হবু বর কেদে বাচিঁ।

–আমাকে ছাড়ুন।এটা কোন ধরনের আটকনো? পা দিয়ে চেপে ধরে।

— চুপ একদম চুপ

ইচ্ছে ঝাড়ি খেয়ে একেবারে চুপ আর যাই হোক আহানকে সে প্রচুর ভয় পায়। নিজের বাবার থেকেও বেশি ভয় পায়।কিন্তু হাসির মধ্যে হঠাৎ রাগের কারণ ইচ্ছে খুজে পেল না।

আহানও রাগ রাগ মুখ করে রইলো। তারপর গম্ভীর মুখে বললো

— তোর মুখে কোনো সমস্যা আছে?উম উম টাইপ সমস্যা আর কি

–মানে?(আহান কি বলছে ইচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না)

–না মানে তোর হাগাহাগির পালা শেষ করে ঘুমালি ঠিকই কিন্তু আমি ঘুমাতে পারলাম না।

–কেন?

— কারণ মুখ ঠোঁট উঁচু করে টানা দু ঘন্টা উম উম করলি জানিস তো?কাউকে খিস্তি টিস্তি দিচ্ছিলি নাকি? না মানে তোর **দোষ টোষ হওয়ার অভ্যাস আছে নাকি?ছেলেদের হয় জানি। আমার আবার যথেষ্ট এক্সপেরিয়েন্স আছে বুঝলি তো? রাতে তোকে দেখে বসে বসে ভাবছিলাম মেয়েদেরও হয় কিনা?হয় হয়?

ইচ্ছের এবার ইচ্ছে করছে আয় কেউ ফ্লোরটা ফাঁকা করে দে আমি নিচে ঢুকে যাই । তাতেও বিপত্তি নিচে তো আরও এক তলা আছে তারপরে মাটি।উহ আল্লাহ

— নাউজুবিল্লাহ কি বলেন এসব।দেখুন আমাকে ছাড়ুন। আমি এমন কিছু করছি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না

ইচ্ছে মনে মনে ভাবছে সপ্ন দেখলাম আপনাকে কিস করছি। আর আমি কিনা এমন করছিলাম ছি ছি। ইশ আজ আমার নাক কাটা গেলো। ধুর নাক দিয়ে উম উম করা যায় নাকি!! হায়রে আজ আমার মুখ কাটা গেলো।

ইচ্ছের প্রলাপগুলো নিশব্দই রয়ে গেলো। আহানকে ঠেলে পা সরিয়ে কোনো মতে দৌড় লাগালো।

আর আহান হাসতে হাসতে সস্তির নিশ্বাস ফেললো। যাক পাগলটা আর তাকে সন্দেহ করবে না।ঘুম থেকে উঠেই ছি-আই-ডি দের মতো লেগে পরেছিলো।আহান হাসতে হাসতেই ওয়াসরুমে ঢুকে সাওয়ার ছেড়ে দিলো।রাতের কথা ভেবে হাসির বেগটা যেন আরও বেড়ে গেলো। সে কি ভয়ানক চুমু বাপরে বাপ,,,রাতে এক পর্যায় আহানের নিজেকে ছোট খাটো একটা ললিপপ মনে হচ্ছিলো। ইচ্ছের অবস্থা এমন ছিলো যে ৫বছরেএ বাচ্চা ললিপপ পেয়েছে ছাড়বেই না।

🍁🌼🍁

আহান নিচে নেমে দেখলো ইচ্ছে কিচেনে কিছু একটা করছে।চুল গুলো খোপা করা ওড়না কেমন একটা গিট্টু দিয়েছে গায়ে জড়িয়ে। পাক্কা গিন্নি গিন্নি লাগছে ইচ্ছেকে।

আহানের তখনই মনে মনে ইচ্ছেকে পিছন থেকে জড়িয়ে ঘাড়ে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিলো।আফসোস বাস্তবে কিছুই প্রভাব পড়লো না।

— কিরে হাগুরানী কি বানাচ্ছিস? কি খাওয়াবি আমাকে?

–আপনি আমাকে আর একবার হাগুরানী বললে আমি চলে যাব যেদিক দু চোখ যায় সেদিক চলে যাব বলে দিলাম

ইচ্ছেএ কথায় স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে।

— ওওরে বাবা রাগতে জানিস তুই?জীবনে প্রথম তোকে রাগতে দেখলাম।আর একটু রেগে দেখা তো।দারুণ লাগছে তোকে। রাগ রাগ

ইচ্ছে হাতে কিছু একটা নিয়ে আহানের সামনে এসেই পুরো গালে লাগিয়ে দিলো।আহান কি আর ছেছেড়ে দেয়ার পাত্র।সে ইচ্ছে কে ভুত বানালো। আহানের শক্তির কাছে ইচ্ছে সামান্য পিঁপড়া মাত্র

— যাহ গোসল করতে যা।পিপড়ের শক্তি নিয়ে লড়তে আসিস মা আর।কি বানাচ্ছিস পরাটা? আমি ভাজতে পারি যা তুই। দাঁড়িয়ে আসিস কেন?সাদা বিলাইর বাচ্চার৷ মতো লাগতেছে তোকে। বড় কোনো বিড়াল তোকে দেখলেই মুখে করে নিয়ে যাবে।( হাসতে হাসতে)

— আপনাকে আমি দেখে নেব হুহ

— আমি দেখাতে চাই।।কি কি দেখবি লিস্ট কর।আমি খুব ফ্যামস পারসোন জানিস তোজপরে আর সুযোগ পাবি না দেখে রাখ

–চাই না আমি সুযোগ।যারা দেখতে চায় তাদের দেখান

— তাই নাকি দেখাবো? তোর লাগবে না?(খোচা মেরে)

ইচ্ছে আর জবাব না দিয়েই হনহনিয়ে হেটে চলে গেলো । এই ছেলের সাথে একটা কথা উত্তর দেয়া মানে তুমি ফেসেছো।আর ইচ্ছে তো নিজেই ফাসতে চাইছে অনিচ্ছায় হলেও ফাসতে চাইছে। প্রাণ পাখি যে ওখানেই বেশি দিন বাঁচবে না এই প্রাণ পাখি ছাড়া তাতে যতই পচানি খাক আর যা করুক। প্রয়োজন হলে ইচ্ছে পচে মরতেও রাজি।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here