তুইতেই আমি🏵পর্বঃ১৪

0
2290

🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ১৪

🍁🌼🍁

আহানের দিকে আমি এক ভালোবাসার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি।কি সুন্দর বললেন উনি। এখন খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে খুব খুব।দিপুকে থ্যাংকস ওর জন্য আমাদের বিষয়টা সহজ হয়ে গেছে।কিন্তু লজ্জা যে বেড়ে গেলো? ধুর তাতে কি ভালোবাসায় লজ্জা বিশেষ ভুমিকা রাখে।ভালোবাসা ছাড়া কে কবে ভালো থেকেছে?থেকেছে কি?প্রাক্তনের কাছে পাওয়া কষ্ট গুলো ভেবে যতই কেউ বলুক ওর দেয়া কষ্ট গুলো তো নেই এতেই আমি ভালো আছি কিন্তু গভীর ভাবে ভাবলে দেখা যায় প্রাক্তনের সাথে যখন সম্পর্কটা শুরু হয়ে ছিলো সেই সুখের, সেই ভালো থাকার গল্পের সাথে এই ভালো থাকার গল্পের আকাশ পাতাল তফাত আছে। যে প্রতারণার শিকার হয়েছে সে এটা ভেবেই সুখ নেয় যে নিত্যনতুন কষ্টটুকুই নেই। এটাই তার ভালো থাকা কিন্তু সত্যিকারের অর্থে সে ভালো নেই সে সুখী নয়।কখনোও ভালোবাসার মুহুর্ত গুলোর সুখ ভালোবাসার মানুষ সাথে না থাকলে অনুভব করা যায় না যত দিন না পরিপূরক এসে জায়গা ভরাট করছে।মানুষ ভালোবাসার কাঙাল।সবাই চায় আমার ভালোবাসা থাকুক।পিওর লাভারদের ক্ষেত্রে বেশি হয়।ধোকাবাজদের উদাহরণ টানাও ভুল তারা ভালোবাসাই চায় না কখনও তাদের থাকে শুধুই কামনা।

আহান ভালোবাসে আমায় খুব ভালোবাসে।এটা ভাবতেই মন আরও নেচে উঠলো।সজ্ঞানে ভালোবাসা প্রকাশ প্রথম বার হলো। আহান আমার প্রতি এত কনফিডেন্স ছিলো বাপরে বাপ।ছোট বেলা থেকে আমাকে পড়তে পারতো সে।এটা খুব সাভাবিক ব্যাপার কারণ ভালোবাসা মনের মধ্যে বাসা বাধলে তা শুধু মনেই বিদ্যমান থাকে না। ভালোবাসার মানুষ সামনে আসলে চোখ নাক মুখ শরীর এমনকি চুলও সার্থপরের মতো কথা শোনে না,নিজের প্রকাশে ব্যস্ত হয়ে পরে।যে যার নিজের গতিতে ভালোবাসা প্রকাশ করতে থাকে ।আমার ভালোবাসাও হয়তো আমার চোখ নাক মুখ শরীরের বিটলামির জন্য তার কাছে ধরা পড়ে গেছে।

— দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে না হেসে বাইকে বস।হর্ন বাজাচ্ছি তুই কি কান বন্ধ করে থাকিস ইচ্ছে?

এতক্ষণ হাসছিলাম? কি অদ্ভুত আমি তো শুধু মন দিয়ে ভাবছিলাম। আচ্ছা সে এতো নরমাল কেন? কই নরম স্বরে ডাকবে হাত ধরে বসাবে … তা না খিট খিট কেন শুরু করেছে।রাগ কিসের এতো?

— রাস্তায় থাপ্পড় না খেতে চাইলে উঠে বসসস ইচ্ছে আমার রাগ হচ্ছে।

— বসছি বসছি।

আমি হাত নেড়ে দিপুকে টাটা দিলাম।দিপু বলদের তিন নাম্বার কর্মীর মতো তাকিয়ে আছে।হয়তো আমাদের আচার-আচরণ এতো কাছ থেকে দেখে নি কখনো তাই

…..

বাসার সামনে বাইক থামলো।

— ইচ্ছে তুই বাসায় থাক।আমি দেড় ঘন্টা পরে এসে যাবো।

— আমার ভয় করবে আহান।সন্ধা হয়ে এসেছে একা থাকা সম্ভব না।আমাকেও নিয়ে চলুন পিলিজ।

আহান কপালে হাত বুলিয়ে কিছু একটা ভাবলো।

— আচ্ছা যাচ্ছি না।ঘরে যা। আমি বাইক রেখে আসছি।

— আচ্ছা।বলে মন খারাপ করে ঘরের ভিতরে পা বাড়ালাম।কিসের এত গাম্ভীর্যতা হ্যা? এই যে একটু আগে আমি ওনার দেয়া রিংটা গ্রহণ করলাম এতে যে আমাদের এক প্রকার প্রেম শুরু হয়ে গেছে বোঝেন উনি?কই আমার সাথে একটু প্রেম প্রেম কথা বলবে তা না,,, চিবিয়ে খাওয়া মুড নিয়ে আছেন।ভাল্লাগে না।

…..

ফ্রেস হয়ে মাগরিবের নামাজ পরে নিলাম। ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আচরাচ্ছি।আয়নায় আহানের কায়া দেখা যাচ্ছে। আমার পিছনে এসে দাড়ালেন।আমি একরাশ লজ্জা নিয়ে ঘুরে তার দিকে তাকালাম।সাথে সাথে আমার গালে ঠাস করে এক চড় লাগালেন।পিনপতন নীরবতার মাঝে শব্দটা বেশ বেমানান।রুমের মধ্যে প্রতিধ্বনিও হয়েছে।আমার লজ্জা মাখা মুখ নিমিষেই অবাক হওয়া চোখ নিয়ে তাকালো।চোখের ভিতরে একটু একটু করে পানি জমছে।যেকোনো সময় বাধ ভেঙে গড়িয়ে পরবে।আমি গালে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি আর সে রাগে রীতিমতো কাপছে।অন্য গালে মারতে নিয়েও হাত মুঠ করে আবার ফিরিয়ে নিলেন।আমার কি দোষ আমি জানি না।মুখে জিজ্ঞেস করার সাহসটুকুও পাচ্ছি না।এতো সুখের মাঝে এমন ব্যবহারও মেনে নিতে পারছি না।চোখের পানি আর বাধ মানলো গড়িয়ে পরতে শুরু করে দিয়েছে।

আহান চিল্লিয়ে বলা শুরু করলো

— তোকে আমি বলেছিলাম তোর পিছনে কোনো ছেলে লাগলে তুই আমাকে জানাবিইইই।।আগের বার নিজে থাপ্পড় মেরে ভয় পেয়ে বাসায় এসে বলেছিস।দিপু ভাই আজ তোকে ফার্স্ট টাইম ভালোবাসার ইঙ্গিত দিয়েছে?এটা আমি মানবো নায়ায়ায়ায়ায়া।আরে কোনো মেয়ের পিছনে দশ মিটার দূরে থেকেও কোনো ছেলে ঘুরলে মেয়েরা ইশারা ছাড়াই বুঝে যায়। তুই বুঝিস নি????????

আহানের চিৎকারে বার বার কেপে উঠছি।তার মুখ যেন থামছেই না।

–আর কে কে ঘুরে তোর পিছনে বল বললল।তুই কেন জানাসনি আমাকে। জানালে আমি একদিনও আর তোর দিকে চোখ বাড়ানোর সুযোগ দিতাম নায়ায়ায়ায়া।যে ভাইকে থাপ্পড় মেরেছিলি সে ওই দিনের পরে তোর পিছনে এসেছে আর? তুই ভেবেছিস কি তোর মাইরে সে ভয় পেয়েছিলো???? আরে পরের দিন তোকে রেপ করার প্লান করেছিলো। ওর যা অবস্থা করেছি বলেই হাসতে শুরু করলো আহান।

সত্যিই আমি ভাবছিলাম গুন্ডাটা আমার থাপ্পড়ে ভয় পেয়েছে।কিন্তু আহান…আর ভাবতে পারলাম না আহানের চিৎকারে

— আমি তোর ক্লাসে ছোট তাই তোর বিষয় সব খবর পাওয়া আমার সম্ভব হয় না।তোর উপর বিশ্বাস ছিলো তুই আমাকে বলবি কিন্তু তুই বলিস না আমি ছোট বলে?????এটা তোর যুক্তি?? আমি ছোট ???? চাইলে বাচ্চার বাপ হয়ে যেতে পারি। আমাকে ছোট লাগে তোর?????? আয় আমি ছোট নাকি বড়ো দেখাই। ছোটরা যা পারে না তাই করে দেখালেই তাহলে তো বুঝবি আমি বড় তাই না?

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গায়ের ওড়না টেনে নিলো।তার রাগ এমন চরম পর্যায় যাবে তা ভাবার বাইরে ছিলো আমার। এখন কি করবো। আমি হিস্কি দিয়ে কেদে চলছি তাতে আহানের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আহান এতোই ডেসপারেট হয়ে গেছে।

তার অবাধ্য হাত গুলো আমার শরীর ছুয়ে দিচ্ছে অবাধ্য ভাবে। ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁটে ভালোবাসার পরশের বদলে কামড়ে রক্তাক্ত করে দিচ্ছে।আর কিছু অনুভব করার জন্য আমার মস্তিষ্ক কাজ করছে না।

ইচ্ছে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় ভর পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছে।নিচে পরে যেতে নিলেই আহান আকড়ে ধরলো। এতক্ষণে আহানের খেয়াল এলো সে ইচ্ছের সাথে রাগের বসে কতটা ভুল করতে যাচ্ছিলো।অলরেডি কতটা করে ফেলেছে।মেয়েটা যে নরম সভাবের চাপা তা আহানের জানা তবুও কেন এমন করলো নিজেই বুঝতে পারছে না।রাগ এতটা ছিলো? ।মেয়েটাকে কি এবার বোরকা পরাবে নাকি সেটা ভাবছে। এই মেয়ের দিকে কেউ তাকাক সেটুকুই সহ্য করার ক্ষমতা আহানের নেই তা আহান হারে হারে টের পাচ্ছে।

ইচ্ছেকে তাড়াতাড়ি কোলে নিয়ে বিছানায় সুয়ে দিলো।কপালে একটা চুমো একে দিলো আলতো করে।ওড়নাটা নিচ থেকে কুড়িয়ে উঠালো।গায়ে জরিয়ে দিলো। চুলগুলো গুছিয়ে কপালে আর একটা চুমো আকলো।নিজের কাজের জন্য ঘৃণা হচ্ছে।কিন্তু এক ঘরে থেকে আগের বারের মতো আড়াল হওয়াও সম্ভব না।দেয়ালে কতক্ষণ ইচ্ছা মতো ঘুষি দিলো আহান।হাত অনেকটাই রক্তাক্ত হলো। তারপর হাত ধুয়ে গ্লাসে হাল্কা পানি নিয়ে ইচ্ছের পাশে বসলো।আবার কপালে চুমো একে হাত টা নিজের হাতের মধ্যে আলতো ভাবে আকড়ে ধরলো । আহত কন্ঠে বললো “আম সরি পাখি তুই যে প্রতিবাদও করতে পারিস না আমার উপর রাগের বসে ভুলেই গেছিলাম। আম সরি পাখি সত্যি সরি”

ইচ্ছের চোখে মুখে পানি ছিটাতেই ইচ্ছের সেন্স ফিরে এলো। কিছুক্ষণ চোখ মুখ কুচকিয়ে আহানকে দেখে ইচ্ছের কিছু আগের কথা মনে পরে যায়। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফুপিয়ে কেদে ওঠে। এবার আহানও কান্না করে দেয়।মূলত ইচ্ছের কান্না সহ্য করতে পারে না বলেই ইচ্ছে কান্না করার সময় আহান দূরে সরে যায় সামনে আসে না।আহানের কান্নার হালকা আওয়াজ পেয়ে ইচ্ছে মুখ ঘুরিয়ে তাকায়। দেখে আহান কাদছে।এবার কি করবে নিজেই বোকাবনে গেছে।ইচ্ছে সোয়া থেকে উঠে বসতে চায় কিন্তু পারে না।সোয়া অবস্থায় আহানকে জিজ্ঞেস করে

— আপনি বাচ্চাদের মতো কাদছেন কেন আহান?কি হয়েছে?বলুন

— আম সরি পাখি আম রিয়েলি সরি ইচ্ছু পাখি।
এই বলে আহান ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরলো।আহানের মুখ থামছে না নন্সস্টপ বলেই যাচ্ছে ।শুধু এক কথাই বলছে আম সরি ইচ্ছুপাখি আম সরি।আর কখনো হবে না।আম সরি

ইচ্ছে কিছুতেই থামাতে পারছে না বুঝাতেও পারছে না সে রাগ করে নি…মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কিন্তু কান্নার বেগ বাড়ছেই। ছেলেরা এতো কাদে? কে বলবে এই ছেলের রাগে একটু আগে আমার কলিজা কেপেছে?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here