🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ১৫
🍁🌼🍁
আহান তখনই উঠে নিজের রুমের দরজা লাগিয়েছে শত বার ডেকেও দরজা খুলতে পারি নি। খেতেও আসে নি। তাই আমিও না খেয়ে রাত ৯ টার দিকে শুয়ে পড়লাম কখন ঘুমিয়ে গেছি নিজেই জানি না।
.
কানের পাশে বিড়ালের প্রকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল।ধরফরিয়ে উঠতে গিয়ে পরে যেতে নিলাম।কিন্তু কেউ একজন আমাকে বাচিয়ে নিলো।ভাবছি বিছানা এতো ছোট কিভাবে হয়ে গেলো? ঘুম থেকে উঠে চটপট করে কিছু মাথায় ঘুরে না আমার।এখনও তেমিন সমস্যায়ই ভুগছি। চোখ কোচলে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখি পাশে কোনো বিড়াল নেই কিন্তু বড়ো বিড়াল আছে একটা । আহান।আশপাশ তাকিয়ে দেখলাম এটা রুম নয়। তাহলে কি? আমার সামনের জায়গায়টা মোমবাতি আর ফ্লাওয়ারসে ভরপুর। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি আকাশ দেখা যাচ্ছে । এবার নিজের অবস্থানের দিকে তাকিতে দেখি আমি দোলনায়। বুঝতে পারলাম ছাদের দোলনায় আছি।কিন্তু এখানে কিভাবে এলাম?
— কি মাথায় সব ঘুরানো হয়ে গেছে তোর?
— আহান আমি ছাদের দোলনায় কিভাবে এলাম? আমি না বিছানায় ছিলাম?
— হ্যা ছিলি
— তাহলে এখানে?
— কোলে করে এনেছি।ঘুমালে তোর হুস জ্ঞান কখনও থাকে না আর থাকবে বলেও আশা করি না।
— তা ঠিক আছে কিন্তু
— কিন্তু টিন্তু বাদ।এখন আমি যা বলবো তাই কর।
আমার হাত ধরে টেনে ছাদের কোণাটায় আনলেন।হাতে বোতল দিয়ে বললেন মুখে পানি দে।ঘুমের রেশ কাটে নি তোর। তাই কিছু দেখতে পারছিস না তুই।
মুখ ধুয়ে আসলেই নিজেকে ফ্রেশ লাগছে।আহান হাত থেকে বোতল নিয়ে এক পাশে রাখলেন।আমার ওড়না দিয়ে আমার মুখ মুছে দিলেন। আর সাথে সাথে চোখ টাও বেধে দিলেন।আমার হাত ধরে আবার দোলনায় আবার বসিয়ে দিয়েছেন।হাত ছাড়ার আগে বললেন যখন চোখ খুলতে বলবো তখন খুলবি।আমি তার কথা সায় দিতে মাথা এলিয়ে দিলাম।
কিছুক্ষণ পরে আমার চোখের বাধন পিছন থেকে নিজেই খুলে দিলেন।চোখের সামনের দৃশ্য দেখে আমি মুখ হা করে রইলাম। উনি জিজ্ঞেস করলেন কেমন লাগছে? কি বলবো ভাষা পাচ্ছি না।কিছুক্ষণ আগেই যেটা আমার কাছে শুধু মোম আর ফুল মনে হয়েছিলো। সেটা সারা ছাদ জুরে লাভ সেইপ ধারণ করে।এত্তগুলা মোমবাতি দিয়ে লাভ সেইপ করা।প্রত্যেকটা লাভের মাঝে একটা করে গোলাপ ফুল।লাভগুলো যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে আহান দাঁড়িয়ে আছে।পাশ থেকে গেলো কখন? এতোই মগ্ন ছিলাম।ওখান থেকেই চিল্লিয়ে বললো প্রত্যেক টা লাভের মধ্যে থেকে গোলাপগুলো তুলে নিয়ে আয়।
আমি অবাক চোখেই তাকিয়ে আছি
— কিরে নিয়ে আয়
আমি একএকটা লাভের মধ্যে ঢুকে ফুলগুলো হাত দিয়ে তুলছি। একটা সাদা গোলাপ একটা লাল একটা সাদা একটা লাল। এভাবে ১০টা ফুল তুললাম ফুলুগুলো তোলার সময় মনে হচ্ছিলো একেকটা প্রাপ্তি এগুলো আমার। ভালোবাসা পুর্ণতা পাওয়ার একেকটা ধাপ,একেকটা অধ্যায়। আমার মনে হচ্ছে এই ধাপগুলো যত তারাতাড়ি পার করতে পারবো আমার ভালোভাসার প্রাপ্তি ততই আমার সন্নিকটে। দ্রুত করে তুলে শেষ লাভ টার মধ্যে পা দিতেই আহান বললো থেমে যা।আমি দাঁড়িয়ে পরলাম কিন্তু মন চাইছে না আর প্রাপ্তির পথে দেরি।
— আহান এগারো নাম্বার লাভের মধ্যে কোনো ফুল নেই যে।
— ওখানে তুই দাঁড়িয়ে থাকবি।নইলে দেখা যাবে আমার উপর ঝাপিয়ে পরলেও পরতে পারো।এমনিই আমি ছোট বাচ্চা বুড়ো কেউ আমার গায়ে পরলে সমস্যা।
সামনে কি হবে তার আগ্রহে আমি এতই ব্যস্ত যে তার কথায় আমি আপাতত কান দিচ্ছি না।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলেন।আমার হাত ধরে লাভের মধ্যে থেকে বের করে দাড় করালেন।ইচ্ছের উৎসুক দৃষ্টি দেখে আহান আবারও হাসলো। কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললেন ধৈর্য শক্তি বাড়ানো অতি অপরিহার্য অন্তত তোর জন্য।টাইম মেশিন পেলে তো এখনই ঘুরিয়ে ফিউচার দেখে নিতি।
কি জানি তার সব কথায় আমার একরাশ লজ্জা লাগছে শুধু।চোখের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই পারছি না। খুব সাহস করে একবার তাকালাম।দেখলাম তার তাকানোর ভংগী পাল্টে গেছে।অন্য এক চোখের ভাষা। এটাই কি তবে ভালোবাসাময় তাকানো। যে চোখের দিকে তাকানোর পর আর একবার তাকানোর মতো সাহস করাই দায় হয়ে পরেছে।যদি হারিয়ে যাই? অনেক কিছু দেখার বাকি যে….
আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পরলেন।এবার আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।ব্লু কালারের শার্টে কি সুন্দর ই না লাগছে তাকে।কবি সাহিত্যিকরা শুধু মেয়েদের রূপের বর্ণনা কেন দিয়েছে আমার জানা নেই।আমি কবি হলে তার সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা করেই জীবন পার করে দিতাম।খানিকটা হাসলাম। নিজের মনের ভিতরেই হাসিটা চাপা রইলো।
–ইচ্ছে
তার ডাকে তার দিকে মনযোগ দিগুণ বাড়িয়ে দিলাম কিন্তু জবাব দিলাম না।
আহান আমার দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে পড়তে বললো। কিন্তু আমার আর পরতে হলো না
–” তোর চোখের দিকে তাকানো থেকে বিরত থাকতে
পারছে না আমার চোখ… পারছে না। পারছে না মনের কথা চাপা রাখতে
এভাবে আমাকে আকৃষ্ট করতে দয়া হচ্ছে না একটু?”
” আমার স্বপ্নগুলো তোর চোখে কাজল হয়ে লেগে থাকবে!
তোমার চোখের ঘষা লাগাতেই তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে॥”(এইটুকের বানীতে অন্য কেউ)
❤️❤️
আহানের গলার আওয়াজে আমি মত্ত প্রায়।তার কথাগুলোয় হাত পা কাপছে আমার। তার কথাগুলো কানে বাজছে আমার “দয়া হচ্ছে না একটু?”
আর ভাবতে পারলাম না। আমার দিকে আর একটা কাগজ বাড়িয়ে দিলেন
“তোর গানের কথা হতে ব্যস্ততায় ভরপুর আমার এই শহর ”
এভাবে একের পর এক কাগজ বাড়িয়ে দিচ্ছে আমি পড়ার আগেই সে বলে দিচ্ছে
“তোর নদীর বালি হতে ব্যস্ত আমার এই মন… দেখিস তুই? বুঝিস তুই?”
“আমার অনুভবের খাতার পৃষ্ঠা যে দিনে দিনে ভারী হচ্ছে।টের পেয়েছিস? ওজনটা বইতে পারবি তো?”
“সকালের রোদের শুভ্রতায় মিষ্টি হাসি হবি আমার?”
” আমার ক্লান্তির অবসান হবি কি?”
এর পরের প্রত্যেকটা কাগজ খুলে ভালোবাসি শব্দটা লেখা পেয়েছি বারংবার। কিন্তু তিনি মুখে বলেন নি।নতুন কাগজ পাওয়ার আশায় হাত বাড়াতেই হাতে একগুচ্ছ ফুল ধরিয়ে দিয়ে অন্যরকম শীতল এক আওয়াজে বললেন “ভালোবাসি”।
আমার বুকের ভিতরও শীতল হয়ে গেলো। এই মুহুর্তে আমার মনে হলো কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসার মানুষের মুখে ভালোবাসি শব্দটা পৃথিবীর সবচেয়ে সুুখী শব্দ।এই জাদুর শব্দ যার কানে আসবে সেই হয়ে যাবে সুখী মানুষ। ম্যাজিকের মতো।
— তোর উত্তরের অপেক্ষা আমি করবো না ইচ্ছে। আমি জানি তুই আজ বোবা হয়ে যাবি
একটা রিং বের করে আমার সামনে ধরলেন আমার হাত নিজ গতিতেই তার দিকে এগিয়ে গেলো।
— উইল ইউ মেরি মি ইচ্ছুপাখি?
— ইয়েস
চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।আহান চোখ মুছিয়ে বললো। জানিস আজ আমি পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। রাত দুটোয় আবছা আবছা মোমবাতির আলোয় ভালোবাসার প্রাপ্তিতে কান্নারত এক রমনী।অবাক করা বিষয় মুখে তার একরাশ হাসি। জানিস তো আমি যদি আর্টিস্ট হতাম এই কনছেপ্টটা আমার জন্য বেস্ট হতো।
তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঝাপিয়ে পরলাম তার বুকে।আমার মতে পুরুষের বুকের মধ্যে বেশ কিছু রুম থাকা উচিত এই যে আমার এখন বুকের মধ্যেখানে ঢুকে যেতে মন চাইছে? আমি শুধু রুমের অভাবে ঢুকতে পারছি না।এসব ভাবছি কাদছি হাসছি।হ্যা সুখী আমি খুব সুখী।
চলবে,