তুইতেই আমি🏵পর্বঃ১

0
5971

🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ১

🌼🌼

নানু বাড়ি থেকে বাসায় ফিরলাম মাত্র।আমার চোখ জোড়া এদিক ওদিক কিছু খুজছে। এটা আমার অভ্যাস বলা চলে।
ফ্রেশ হবার প্রয়োজন অনুভব করলাম কারণ শরীরটা অনেক টাই ক্লান্ত। হঠাৎ করেই ঝড়ের বেগে কেউ একজন এসে জড়িয়ে ধরল।খুবই চেনা স্পর্শ। আবেশে আমার চোখজোড়া বুঝে এলো। এত জোড়ে জড়িয়ে ধরেছে যে আমার ঘোর কাটতেই হাসফাস লাগছিলো।

–আহান কি করছেন ছাড়ুন।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে তো।

তার ঘোরটা কাটে নি হয়তো। কাধে গাড়ো নিশ্বাস এর আভাস পাচ্ছি।তাই আর বাধা দিলাম না।থাকুক না এভাবে ক্ষতি কি?
কতোটা সময় এভাবে কেটে গেলো বলাটা দায়।

— ইচ্ছে কই তুই আসছিস না যে ফ্রেস কি হলি? আর কতো ক্ষন? তোর আব্বু অপেক্ষা করছে তো।

আম্মুনি আমার রুমে ঢুকতে ঢুকতেই কথাটা বলছিল।আহানের তখনও কোনো হেলদোল নেই।ছেলেটা ঘুমিয়ে গেলো না তো??ভাবতেই হাসি পেল,,,,,,,,মনে হচ্ছে যেন এতদিন পরে সস্তির নিশ্বাস ফেলছে।তাকে ছেড়ে কি বেশিদিন দূরে রইলাম? কিন্তু আমি দূরে থাকলে কি তার আদোও কিছু এসে যায়?

আম্মু তাকে আমাকে এভাবে দেখতে অভ্যস্ত তাই কিছু মনে করলেন না।ছোট্টোবেলা থেকে এভাবেই করে আসছে সে।আর সে আমার থেকে হাতে গুনা 2 বছরের ছোট।।কারণ কাকতালীয় ভাবে তার আর আমার জন্মদিন একদিনেই।। তারসাথেই বড় হয়ে ওঠা । তাকে আপনি বলার পিছনে তার অদ্ভুত অবদান রয়েছে।।।

আচ্ছা আম্মুকি জানে তার জড়িয়ে ধরার ধরনটা এখন আর ছোটো বেলার মতো নেই?সেটা আমি বুঝি। সে নিজেই হয়তো বুঝে না মন যা চায় সে তাই করে ক্যনো করে নিজেই জানে না।কবে জানবে সে?

এইবার একটু জোরেই ডাকলাম। নিজে থেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় লেগে গেলাম এবং ফাইনাললি আমি সফল

–হ্যা রে আহান। তোর টুকিকে ছাড়া তুই কি দুইটা দিন ও থাকতে পারিস না? ওর বিয়ে হলে কি করবি কিভাবে থাকবি হুম?

আহান হয়তো চোখটা মুছল।আম্মুনির দিকে তাকিয়ে

–ভালো মা মোটেই 2 দিন না।হাতে গোনা ২০ দিন ৬ ঘন্টা মিনিট মনে নেই ছাড়। কিভাবে পারলে বলবে?আমায় নিতে চাও না তাই এমন টা করেছো নইলে আমার এক্সাম এর মধ্যেই কেন? হোয়াই ভালো মা?

— দ্যাখ আমার বাবা টার রাগ হয়েছে। বাবা তুই তো সমস্যাটা জানিস বল বাবা।তোর ভালো নানু কতোটা অসুস্থ হয়ে গেছিল।আর ইচ্ছেরও এক্সাম শেষ হয়ে গেছিল এতো অভিমান করে না সোনা।

–হ্যা আর অভিমান। আমার অভিমান এর মূল্য দেয় নাকি কেউ।চাইলে টুকিকে আমাদের বাসায় রেখে জেতে পারতে

— কিন্তু তোর নানু যে অকেই দেখতে চাইল বাবা

— অজুহাত দেখাবে না ভালো মা। আমি যাই। আর হ্যা তোমার মেয়ের জন্য ঘর জামাই আনবো বুঝলে।ওকে ঘরের বাইরে পাঠাবো না। যতদিন এমন ঘর জামাই হওয়া ছেলে না পাই ততোদিন ওর বিয়ে হবে না।গেলাম

— হাহাহায়া আচ্ছা কিন্তু আমাদের সাথে খেয়ে তো যা।

না যাই যাই বলতে বলতে চলে যাওয়া থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি আমি অপলক দৃষ্টিতে। কি সুন্দর দেখতে আচ্ছা ছেলেদের কি এতো সুন্দর হওয়া উচিত?বিশেষ করে চোখে কি এত মায়া থাকা উচিত? আর ঠোঁট জোড়া……. মনে হচ্ছে আবার ভাষা হারিয়ে ফেলছি।।।। প্রায়ই প্রশ্ন করি উত্তর কই পাই আবার তাকে দেখেই হারাই।

সে ও কি হারায়? হারায় না আমি জানি হারায় না।। হারালে বুঝি আমার সাথে ওমন রুক্ষ বিহ্যাভ আর সুক্ষ্মরাগ দেখাতেন?আর তাহলে বিয়ে দিতে কেন চাইবে আমায়। অন্য মেয়েদের সাথে ক্যানো ঘুরবে। আহান আপনার শেষ কথায় আমারও খুব অভিমান লেগেছে খুব।আর হ্যা যাবার আগে একবার কি তাকানো যেতো না?মহাভারত কি খুব বেশি অশুদ্ধ হতো? হতো না হয় একটু,,,,,কি এমন ক্ষতি হতো? নাহ তার মনে কিচ্ছু নেই কিচ্ছু না কিচ্ছু না।আমাকে সে একদমই দেখতে চায় না।

তাহলে তার জড়িয়ে ধরা টা কেন অন্যরকম লাগে আমার?তার বুকের কম্পন বার বার আমায় কেন তাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে?আমি চাইনি তো ভাবতে,,,,,আমি জানি তো আমার ভাবা ভুল,,,,

আচ্ছা মানলাম কিছুই নেই তার ভিতর কিন্তু আমার যে মনে হলো সে কেদেছে।

খুব কেদেছে? যাবার আগে যেমন দেখে গেছি তেমন তো সে নেই। খুব উষ্ক লাগল যে।
পরীক্ষায় কি খুব প্রেসার যাচ্ছে?? হবে হয়তো।

ভাবতে ভাবতেই ওয়াসরুম ঢুকে গেলাম। আম্মুনি কখন যে গেল টের পেলাম না। ভাবনায় এতই বিভোর
ছিলাম? তার ভাবনায়?

আমিও বা তাকে নিয়ে কেন ভাবছি ভাববো না আমি। আচ্ছা তার অভিমান টা কার উপর? আম্মুনির নাকি আমার?

লং সাওয়ার নিয়ে বেড়োলাম।গুন গুন করে গান গাইতে খেতে যাচ্ছি।

আমারও পরানও যাহা চায়,,,,,

আচ্ছা কি চায়?

🍁🍁

যেতে যেতে পরিচিত হই।আমি ইসরাত আয়রা ইচ্ছে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি।আর আমার পিচ্চি আপনি টা হলো আয়মান ইসলাম আহান।সে এইচএসসি দিচ্ছে।আমাদের সম্পর্ক টা হলো আমরা রিলেটিভ না কেউ কারো। কিন্তু কথায় আছে রক্তের সম্পর্কের চেয়ে আত্মার সম্পর্ক টা গভীর হয়।

অতীতে যাওয়া যাক,,,,,,

আমার আম্মুনি আর ভালো মা ছোটো বেলার বেস্ট ফ্রেন্ড। একজন কাদলে অন্যজন কাদবে একজন হাসলে অন্যজন হাসবে। আমার মনে হয় একজন কাশলে অন্যজন কাশত একজনের বাথরুম পেলে অন্য জনের পেত। যাক বাবা সে এক অটুট বন্ধন যা বলার ভাষা রাখে না।ইভেন আমার আম্মুনি প্রেম শুরু করেছিলো বিধায় ভালো মা ও প্রেম করেছিলেন ভালো বাবার সাথে।

আমার নানা ভাই মারা যাওয়ায় আম্মুনির ফ্যামিলি চালানোর কেউ ছিল না। আম্মুনিরা দুই বোন খালামনি আম্মুনির থেকে ছোট আর আম্মুনি ইন্টার দিয়েছে সবে মাত্র।আম্মুনির কাকারা তার বিয়ের জন্য খুব প্রেসার দিতে ছিল আর নানুও কিছু বলতে পারছিলেন না তাদের মুখের উপর।

আব্বুর তখন সবে মাত্র জব হয়েছে।ভালো জব হলেও ফ্যামিলি ছিলো আব্বুর উপর নির্ভরশীল।আব্বু তাই বিয়ে টা দেরিতেই করতে চেয়েছিলো। কিন্তু আম্মুনির এমন অবস্থায় তৎক্ষনাৎ বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এবং ফলস্বরূপ বিয়ে।কাকাদের আপত্তি ছিলো না কাধ থেকে বোঝা নেমেছিলো তাদের বলতে গেলে। খালামনির ভরনপোষণও আব্বু করত তার নিজ দায়িত্ব থেকে।।

এত কিছুর পরে ভালো মার কান্না শুরু হলো ভালো বাবার সাথে তারও এখনই বিয়ে করা চাই ই চাই।তার বান্ধবীর বিয়ে হলো সে কি বসে থাকবে নাকি?
ভালো বাবারা ফ্যামিলিগতো দিক দিয়ে সচ্ছল ছিলেন কিন্তু তখন তার চাকরি হয় নি লেখাপড়াই শেষ হয় নি। ভালো মায়ের আহাজারিতে সে লেখাপড়ার পাশাপাশি তার বাবার বিজনেস সামলানো শুরু করল আর তার বাবা তাতে খুশি হয়ে ভালো মার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হলেন আর ভালো বাবার ফ্যামিলি ভালো হবার কারণএ ভালো মায়ের ফ্যামিলি থেকে বিয়েতে আপত্তি করলেন না।

দুই বান্ধবীর ইচ্ছে ছিলো তাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিবে।প্লান মাফিক সব কিছুই ঠিক ছিলো কিন্তু হঠাৎ একদিন ভালোমায়ের মিসক্যারেজ হবার কারণ এ বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যায়। তবুও আশা ছিল আমি যেন ছেলে হই অনেক আল্লাহর কাছে চাইল কিন্তু আল্লাহর হুকুম আমি সদ্য বালিকা। আমার দুই বছর পরে একই দিনে আহান এর জন্ম। আমাদের নিয়ে তাদের আফসোস এর শেষ নেই।।এই গল্প যে কতবার শুনেছি তার ইয়াত্তা নেই। কিন্তু তাদের সপ্ন ছিল আমার যদি আর একটা বোন হয় ওকে আহান এর বউ করবে। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে আমার একটা ভাই হলো।

আর শেষ বার আল্লাহ মুখ তুলে তাকালো কারণ আহান এর একটা বোন হলো।। সেই খুশিতে নাকি টানা ৫ দিন গরীব লোকদের খাওয়ানো হয়েছিলো।

ওদের ই কি সুখ বিয়ের আগেই জানবে বর কে। অবশ্য ওদের এখন ও কেউ জানায় নি। ভাই এবার নাইন এ উঠল আর পিচ্চু এইটএ এবার। ভাইয়ের নাম আয়ান আর পিচ্চুর নাম ইশাল।

আয়ান ইশাল এই দুইজনের মধ্যে ভাব বরাবরি বেশি।তা দেখে আম্মু ভালো মায়ের খুশি চোখে জল নাকে সর্দি।

তাও ভালো আহান এর মতো এতো ঝগড়াটে না ওরা কেউ।

আম্মু ভালো মা এর চিল্লাপাল্লাতে আব্বু ভালোবাবা এক জায়গায় জমি কিনে ঘর বানালো পাশাপাশি এবং এক ডিজাইন সব কিছুতে। ঘর দুইটা পালটানো যাবে বলা চলে। মাঝে মাঝে আব্বু আর ভালো বাবার কষ্টের গল্প শুনি।আসলেই কি মেয়েরা জামাইদের এত প্যারা দেয়? আমিও কি দেব?আমার জামাই-ও কি আব্বু ভালোবাবার মতো ভালো হবে?

আমার আর আহানের রুম দুইটা একদম সোজাসোজি। চাইলেই তাকে দেখা যায় কিন্তু বদের হাড্ডি জানালা অফ করে রাখে সবসময়। কিন্তু আমি অফ করলে তুলকালাম। ঝড় যায় এক বিশাল ঝড়।

🍁🍁

খাবার টেবিলে বসলাম। তখনই আব্বু জিজ্ঞেস করল,,,,,

চলবে,

ব্লগস্পট-
https://israt987.blogspot.com/2020/09/2-2.html?m=1

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here