🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ৬
🍁🌼🍁
কিন্তু আমি জানি সে আমাকে জানালা দিয়ে দেখছেন ।আচ্ছা জানালার গ্লাসটা এমন হতো যে বাইরের লোকটাও ভিতরের মানুষকে দেখতে পেত। আমার জন্য সেটা ভালো হতো। খুব ভালো হতো।
পরের দিন সকাল বেলা খাবার টেবিলে খাচ্ছি সবাই মিলে।
আয়ানঃআপু তোকে আজকে কেমন একটা লাগছে
–কেমন?
–কেমন যেন
–কেমন বল না
–লাইক আ দেবদাসী ।
–মানে কি তোর এমন মনে হলো কেন?
আব্বু আম্মু মুখ বুঝিয়ে হাসছে।আবার ভাব নিচ্ছে কিছুই না।।তবুও হাসি কন্ট্রোল করতে পারছে না এমন একটা অবস্থা।
–আব্বু তুমিও হাসছো? তোমার ছেলে আমাকে এভাবে বললো তুমি কিছু বলবে না?
–না মামুনি আমারও মনে হচ্ছে তুমি দেবদ,,,,ওই আর কি মানে আয়ান যা বলল তাই আর কি
–আমি রেগে যাচ্ছি আম্মু। ওরা এইভাবে কেনও বলছে আমাকে
আম্মু একটু হেসে,,
–এই এই তোমরা এইভাবে কেন বলছো?
— আপু তুই কি জানো তোর এক পায়ে জুতা নেই?হাহাহাহা
সবাই হাসছে। চেক করে দেখলাম সত্যিই আমার পায়ে জুতা নেই।
–খেয়াল না থাকতেই পারে ইটস নরলাম। তাই বলে দেবদাসী বলবি?
–হ্যা অবশ্যই আমি শুনেছি প্রেমের শোকে এমন অবস্থা হয়ে যায়। আপু বিরহ কি বেশি? পাত্তা দিচ্ছে না নাকি? তোর ভাই আছে এক্সপার্ট চিন্তা কি ? মেয়ে পটাতে পারছি তোর জন্য দরকার পরলে ছেলেও পটালাম।কুল কুল
–এই তো তুই এক্সপার্ট তাই না? তাহলে লেখা পড়া লেখা বাদ দিয়ে এই করা হয়। আম্মু তোমার ছেলের অবস্থা দেখ?শেষে তোমার আর ভালো মায়ের বেয়াইন হওয়ায় হস্তক্ষেপ করতেছে মানা যায়?
–সত্যি আপু????? ইশাল আমার??????(লাফ দিয়ে উঠে)
আব্বু বলে উঠল
— কি বলছ কিসের বেয়াইন?কিসের ইশাল? ইচ্ছে তোমার কথায় ভুল আছে (চোখ টিপ দিয়ে)
— (শিট ভুলেই বলে ফেললাম এখন কি হবে?)
এর মধ্যেই আম্মু বলে উঠল
–না সত্যি না আয়ান ও মজা করেছে।কিন্তু তুমি এখন ই এসব করছ আয়ান?আমি তোমাকে কতো বুঝিয়েছি না? এইচএসসি এক্সাম দিলে আমি নিজে তোমার জন্য মেয়ে খুজে দেব?
–আম্মু আমি খুব ভালো করেই জানি আপু মুখ ফসকে সত্যি কথা বলে।ভূগোল বুঝিয়ো না আর।সমস্যা নেই আমি তা ভাবছি না ভাবছি প্রিয়া নুসরাত আনিকার কি হবে?? মেয়েগুলো কষ্ট পাবে খুব।কি আর করার?
কিন্তু আম্মু তোমার ছেলে তোমার তোমার সপ্ন পূরণ করবেই তাতে যা হোক
ভাই মাহাত্ম্যা গান্ধির ভাব নিয়ে উঠে চলে গেল আর আমাদের গলায় খাবার আটকে যাওয়ার অবস্থা। এইটুক বয়সে এই টেন এ উঠে নি তাতেই এই।তাও একটা হলেও মানা যেত।আম্মুর কি হলো জানি না তার চোখ ভরা পানি দেখে আমি আর আব্বু আর একবার অবাক হলাম
–আম্মু তুমি কাদছো কেন?
-কাদব না? ছেলেটা আমার মুখে হাসি ফুটাতে তিন তিনটা গার্লফ্রেন্ড বিসর্জন দিলো।এ যে আমার পরম সৌভাগ্য।
–হ্যা ইশাল এর ও সৌভাগ্য। বাচ্চা মেয়েটার পিছনে এখনি লেগে গেছে গিয়ে দেখ। সব পাগল(আব্বু)
–আসলেই তো ওই বাদর ছেলে এদিক আয়য়য়য়য়য়য়(আম্মু)
আয়ান এর মধ্যেই রেডি হয়ে এলো। নতুন প্যান্ট শার্ট চোখে সানগ্লাস। পারফিউম এর ঘ্রাণ এ নাক চিরছে আমাদের।
–এই তুই যাচ্ছিস কই? স্কুলএ কেউ রংড্রেস এ যায়?
— নাহ ইশাল কে স্কুল দিয়ে আসব।ভালো বাবার আর কষ্ট করতে হবে না। আমিই আজ থেকে,,,,
এরমধ্যেই আব্বু চেচিয়ে আম্মুকে বললেন।
–এই তোমার ছেলে তোমার মতোই হয়েছে সামলাও এবার।চোখ এ থুথু দিয়ে কান্না করো এবার এই হলো ছেলের উদারতা। তোমার মেয়ের আগে এই ছেলেকে বিয়ে দিতে হবে দেখ
আব্বু হনহনিয়ে চলে গেল।আম্মু আয়ানকে কাছে ডাকলো
–শোনো আয়ান ইশাল খুব ছোট ওকে এসব কিছু বলবে না ।ওর পরাশুনায় ডিসটার্ব হয় এমন কিছু করবে না।শুধু খেয়াল রাখবে বাইরের কেউ ওর দিকে নজর না দেয়। তাহলে এসে আহান ভাইয়াকে বলবে কেমন?নিজে যাবে না তুমি এখনও ছোট। নিজেকে খুব বড় মনে করো তুমি,,, লম্বা হলেই বড় হয় না।আমি তোমাকে বেশি কিছু বললাম না তুমি ছোট বিধায়।পড়ালেখা না করলে আর ভালো রেসাল্ট না আসলে সব আশা বাদ বুঝলে। এইটা তোমার সাথে কনডিশন আমার
আম্মুর শান্ত কথা আয়ান হয়তো বুঝেছে আর সিরিয়াস ভাবেই বিষয়টা নিয়েছে । ওর মুখ দেখেই আমি বলতে পারি কখন ও সিরিয়াস আর কখন ফান করে।
🍁🌼🍁
আয়নার সামনে রেডি হচ্ছি ভার্সিটি যাব বলে।আজ ইকটু হাল্কা লিপ্সটিক দিতে মনে চাইলো।লিপ্সটিক হাতে নিয়ে ঠোঁটে দিবো ঠিক তখনই
–দিবি না লিপ্সটিক।
এতদিন পরে আহানের গলা।চমকে পিছনে তাকালাম।আমার চোখ তৃষ্না মেটাতে ব্যস্ত হয়ে পরল।ছেলেটা কি ঘরের ভিতরে থেকে আর একটু ফরসা হয়ে গেলো? ঠোঁট টা কি আর একটু লাল হলো? ধ্যান ভেঙেই শুনলাম
–তুই ঠোঁটে লিপ্সটিক দিলে রাস্তার পাগল এসে চুমু খেয়ে যাবে। তাই এটা না চাইলে দিস না,,,চাইলে দিতে পারিস
এসব শুনার পরে আমার আর লিপ্সটিক দেয়ার ইচ্ছে নেই।জীবন এর প্রথম বার নিজে থেকে চাইলাম তাও।লিপ্সটিক রাখতে রাখতে বললাম
–দিলাম না আহান তাতে কি আছে আমার লিপ্স এমনিই পিংক।
-এএহহহহ ওনার ঠোঁট পিংক।পাতিলের কালি চিনিস?
–হ্যা আহান আর বলতে হবে না আমি তো আয়নায় ফেস বিউটি মুড লাগিয়ে দেখি তাই হয়তো ভুল দেখেছি নিজেকে সরি
— বুঝেছিস।কথা সেটা না কথা হলো । আমার সাথে চল ঘুরতে যাব।
এতক্ষণ পচিয়ে ঘুরতে নেয়া?কি সাদ
— আহান যাব না আমি
–না গেলে নাই। ভেবেছিস কি পা ধরব?এভাবে যে ইচ্ছে আপু ইচ্ছে আপু চলো পিলিজ তোমাকে ছাড়া আমি যাব না।
–না আহান আমি এটা সপ্নেও ভাবি না।আপনি একাই যান
এতো ইগনোর করে আসছে এতদিন পরে তাও আবার এসেই পচানি। যাব না আমি হবে কি তাতে ভাবছে কি উনি? উনি ছাড়া ছেলে নেই নাকি
— অকে গেলাম। এরপর যেন বায়না ধরিস না।
বলেই চলে গেলো। জীবন এ ধরব না আমি। হয়েছে টা কি পেয়েছে টা কি?
🍁🌼🍁
নিচে নেমেই অবাক। আহানের ঢঙ্গী ফ্রেন্ড আরিয়া সহ দুইটা ছেলে ফ্রেন্ড নিশুতি তানিয়া রাইনা বসে আছে।সবাই আমার ছোট।সবাই আহানের ফ্রেন্ড।
–কেমন আছো আপি? (আরিয়া)
— এইতো আপু ভালো তুমি
–ভালো ছিলাম এখন আর নেই। তোমার প্রতি আমি জেলাসি আগেই ছিলো এখন আরও বেশি বাড়ল আপি।( বলেই জড়িয়ে ধরল)
অন্য সবার সাথেও কথা হলো। কিন্তু আরিয়ার জেলাসির কারণ আজও জানতে পারলাম না।ভাবনা ফেলে জিজ্ঞেস করলাম
–কোথাও যাচ্ছ তোমরা?
–হ্যা আপু ঘুরতে। তোমাকে আহান ডাকতে গেলো তুমি তো যাবে না(নিশুতি)
এর মানে ওই ঢঙ্গী আহানের সাথে যাবে আর একশো বার গায়ের উপর পরবে।আমি কিছুতেই বুঝি না একটা মেয়ে এতো বার গায় কিভাবে পরে।কথায় না কথায় সব সময় গায়েই পরবে।আহানকে একা ছাড়া যাবেই না।ওটা আমার আহান আমার অধিকার। কি আমার আহান?কিছুক্ষণ ভেবে হ্যা আমারই আহান।ফাইনাল
–কে বলল যাবো না।অবশ্যই যাবো
–না ইচ্ছে তোকে নিবো না আমি
–আমি যাবো আহান পিলিজ। আম সরি।আমাকে না নিয়ে যাবেন না
— ন্যাকা ন্যকা না করে ভার্সিটি যা
— না
–তুই যাবি তোর ঘাড় যাবে
🍁🌼🍁
বাধ্য হয়েই ভার্সিটি আসতে হলো নইলে ছোটদের সামনে মাইর খেতে হতো।কেন যে আজ আহানের সাথে লাগতে গেলাম তার ফলস্বরূপ,,,,,,,,,, কপাল
ভার্সিটি যেতে পারলাম না তার আগেই ছেচড়া গুন্ডা টাইপ ছেলেটা পিছনে লাগল।এই ছেলেটার জন্য ভার্সিটি আসতে আমার মনে চায় না।
পউশিঃদেখলি শুরু হয়ে গেছে
–হুম তাই ই দেখছি।আজ আমার মেজাজ খুব খারাপ। কি করব কিছু জানি না।বাট কিছু করব তা জানি
–দ্যাখ ওর বাবার টাকা আছে আর গুন্ডা টাইপ তাই এতো দেমাক। ভাবে যে পিছনে ঘুরলেই রাজি হয়ে যাবি।
আমাদের ফিসফাস কথার মাঝেই আকাশ নামক ছেছড়া ভাল্লুক আমায় নিয়ে গানের সুর ধরল
🎶ও সুন্দরী মনে কেন দোলা দিয়ে যাও
আজ কি হলো জানি না পিছনে ঘুরেই এক থাপ্পড়। থাপ্পড় মেরে নিজেই নিজের মুখে হাত চেপে ধরলাম।। এ আমি কিভাবে করলাম???আমাকে দেখে পউশিও মুখে হাত দিলো।
আমি কি করব দিক না পেয়ে পউশির হাত ধরে উল্টো বাসার পথ ধরলাম।
🍁🌼🍁
বাসায় না গিয়ে সোজা আহান এর রুমে এসেই দেখি। সে বাসায়ই আছে। ওর বন্ধুরা কেউ নেই একাই আছে।মনে পরল তাদের ঘুরতে যাবার কথা ছিলো । যায় নি তাহলে? কিন্তু কেন?
এত কিছু ভাবার সময় নেই।তার রুমে দৌড়ে ঢুকলাম।
— আয়ান আয়ান বিপদ হয়ে গেছে।দুর্টঘনা হয়ে গেছে
–দুর্টঘনা কি?
–সরি দুর্ঘটনা হয়ে গেছে।
–আচ্ছা শান্ত হয়ে বল।শ্বাসকষ্ট উঠে যাবে
তার সামনে একটা চেয়ার টেনে আমাকে চেয়ারে বসিয়ে পানি খাওয়ালেন।মাথায় হাত দিয়ে শান্ত হতে বললেন কিন্তু আমি নিজেকে কন্ট্রোল এ আনতে পারছি না।আমাকে চমকে দিয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরলেন।
আমি শান্ত হয়ে গেছি ,,,, ভয় আর নেই,,, কি জন্য ভয় পাচ্ছিলাম তাও ভুলে গেছি।শুধু ফিল করছি ফিল,,,,, পৃথিবী এতো কেন সুন্দর?
চলবে