তুইতেই আমি🏵পর্বঃ৫

0
2807

🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ৫

🍁🌼🍁

–আহান আমি শুয়েছি জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন নিশ্চয়ই এখন এত রাতে কিভাবে?

–আমার কি এখন তোর রুম এ আসতে হবে?

🍁🌼🍁
সকাল হয়েছে। রাতের কথা ভেবে মিটিমিটি হাসছি। বিছানা ছেড়ে উঠিনি এখনও। এত সুখ সুখ বাতাস বইছে যে আমার এমন লাগছে আমি উড়ে যাব।

রাতে তখনই আহান অনলাইন থেকে চলে গেল অনেক ফোন কল করেও পেলাম না তাকে। বুঝাতেই পারলাম না শাড়ি পরতে মুড এর প্রয়োজন আছে।রাতের বেলায় ঘুম রেখে কেউ শাড়ি পরে নাকি?নিজেকে স্নিগ্ধ লাগলেই শাড়ি পরা যায়। চোখ লেগে এসেছিলো একটু।বোধ করি তার ৫ মিনিট পরেই আমাকে টেনে টুনে বিছানা থেকে তুলে বসালো।

–তোকে শাড়ি পরার টাইম দিয়েছিলাম আর তুই ঘুমালি?

— কই আপনি অনলাইন থেকে যাবার সময় এই কথা বলেন নি তো।

–শাড়ি কই তোর?

এটা বলেই নিজে গিয়ে শাড়ি বেছে বুছে আনলেন।লাল একটা শাড়ি। আমি শাড়ি পরি না একেবারেই।। কোনো অকেশনেও পরি না কিন্তু আম্মু তবুও প্রত্যেক অকেশনেই কিনে দেয় আমাকে।জিজ্ঞেস করলে বলে এখন আমার কথায় শাড়ি পরো না কিন্তু সেই মানুষ যখন জীবনে আসবে আর শাড়িতে তোকে দেখতে চাইবে তখন খুব কাজে দেবে এই শাড়িগুলো বুঝলি(মাথায় গাট্টা মেরেল)

আচ্ছা এই কি সেই মানুষটা? আহান?আহান কি আমাকে ভালোবাসে আমার মতো? আমার মতো মানে কি আমিও ভালোবাসি?
আল্লাহ কি ভাবছি মন টা কি ভাবছে? এতো গভীরভাবে কখনও তো ভাবি নি।।ভালো লাগত লাগে খুব লাগে কিন্তু নিজেই নিজের কথার প্যাচে পরে যাচ্ছি।দুইদিন ধরে মনটা খুব আউল ফাউল বকছে,,,,এই মন বেশি বুঝতে যেও না অকে?

–কিরে কথা কানে যায় না? শাড়ি নে পর গিয়ে।

হাতে নিয়ে হাটা দিলাম মুখে কিছু বললাম না।শাড়ি পরা আমার আম্মু আমাকে ভালো ভাবেই শিখিয়েছে।

মাকে বলতাম এখন শাড়ি পরা শিখে কি করব আমি ?

মা বলতেন

–কেন রে ইচ্ছু তুই কি চাস সে পরিয়ে দিক? অন্য মেয়ে দের মতো নেকু নেকু করবি না একদম।ছেলেরা সুযোগ পেলে কিছুতেই ছাড়ে না।তোর মা প্রেম করে বিয়ে করেছে মনে রাখবি সব এক্সপেরিয়েন্স আছে তোর মায়ের।

–নিজে এক্সপেরিয়েন্স করেছ আর আমি করলেই দোষ এ কেমন বিচার আম্মু?

— সব ছেলেরা ভালো হয় না বুঝলি।বিশ্বাস যোগ্য ছেলে পাওয়া সোনার হরিণ পাওয়ার সমান। তুই যে ভালো ছেলে পাবি তার গ্যারান্টি কি?তাই শিখিয়ে রাখছি যাতে সুযোগ নিতে না পারে অযুহাতে।দেখবি পরাতে পারে না তাও বলবে চেষ্টা করে দেখতে পারি।জীবন এ যখন সে আসবে সব বুঝে যাবি

–হুম মা।

–কেউ কেউ আবার সাজাতে চায় বুঝলি? দেখবি ছেলেরা সাজানোর সময় নিজেদের চোখ মুখ খিচিয়ে টেনে টুনে কপালে হাজার টা ভাজ ফেলে দুই ঠোট একসাথে ভাজ করে এমন ভাব করবে যেন ৩য় বিশ্ব যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে,, আবার যখন কানের দুল পরাতে যাবে একশো বার জিজ্ঞেস করবে ব্যাথা পাচ্ছ না তো। সাজানোর শেষে গাল এপাশে নাড়িয়ে দেখবে ওপাশে নাড়িয়ে দেখবে। নিজের মন মতো হলে বলবে পারফেক্ট।

আম্মু এক ধ্যানে কথা গুলো বলল খুব আবেগ মিশিয়ে

— এইসব করে আব্বু তাই না?এখনও করে?

আম্মু লজ্জা পেয়ে গেলো।

–ধুর কিসব বলিস? পেকে গেছিস খুব।,,,,যাই হোক।।
কিন্তু মনে রাখবি সবার কেয়ারিং টা ভালোবাসা হয় না কারো কারোটা অভিনয়ও হয়,কেউ লালসায় ভালো না বেসে অভিনয় চালিয়ে যায়,বা কেউ বাধ্য হয়ে।তাই তো বললাম সোনার হরিণ

🍁🌼🍁

বাথরুম থেকে শাড়ি পরে বের হয়ে এলাম।আহান তাকিয়ে আছে আর আমি কাচুমাচু করছি।
সে কিছুক্ষণ পর গলা খাকারি দিয়ে বললেন

–আয় সাজ অল্পসল্প নয়তো খালি খালি লাগবে ছবিতে অবশ্য এভাবেও(থেমে) ভালো আর কি।

হাত টা ধরে ড্রেসিংটেবিলের সামনে নিয়ে গেলো। কসমেটিক্স দেখাচ্ছে আর জিগ্যেস করছে এটা কি ওটা কি,,আমিও তার উত্তর দিচ্ছি। আমার হাতে একটা সিম্পেল লকেট দিয়ে বললেন

–নে এটা গলায় ঝুলা

–এটাকে গলায় ঝুলানো বলে না আহান

–জানি জানি শেখাতে আসিস না।পড়া বাদ দিয়ে এসব শিখতে আসি নি।

লিপ্সটিক সিলেক্ট করে দিলেন আর বললেন কাজলটাও দিতে।তারপর এক পা উঠিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে শরীর এর ভর টাও দেয়ালে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

নিজের কাছে তার তাকানো টা কেমন কেমন অনুভূতি হলেও চুপচাপ সেজে চলছি।

–আচ্ছা তোর বড় কানের দুল আছে না? হ্যা হ্যা ওগুলো। লাল লাল হ্যা ওই কানের দুল টা পরবি

কানের দুল পরছি

–ইচ্ছে ব্যাথা পাচ্ছিস না?

দেখলাম সুক্ষ্ম চোখ টা খিচিয়ে রেখেছে

–না আহান এতে ব্যাথা লাগে না

সাজা শেষে বলে উঠলেন

— পারফেক্ট লাগছে তোকে।

আমার ঠোঁট আপন ইচ্ছায় হেসে উঠল আর মন? সে পেলো প্রশান্তি। আম্মুর কথা গুলো বার বার মনে পরে যাচ্ছে।

–এই দাঁড়া তো ছবি তুলব।

–আরে এভাবে প্রতিবন্ধীর মতো দাড়াতে বলি নি।নিজের ফোন এ যেমন পাংকি পুংকি দিয়ে তুলিস ওভাবে রিয়াকশন দে

–ওকে

–আবার কাচুমাচু করছিস।ওকে একা একা নিজের ফোন এ তুলে আমাকে পাঠাবি।এখন আমি যেভাবে বলব সেভাবে দাঁড়াবি অকে?

–অকে

বারান্দায় নিয়ে এলো। প্রথমে গাছের পাশে দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন ভাবে ছবি তুললেন।রেলিং ঠেস দিয়ে কিছু ছবি।নাইট মুড আধো আলো আধো অন্ধকার,রঙিন আলো ।তার তোলা প্রত্যেকটা ছবিই খুব সুন্দর হয়েছে।ছবি তোলা শেষে রেলিং ধরে দারালাম। সেও সাম্নের দিকে ফিরে আমার পাশে দাঁড়িয়ে পরল।একটু পরে তার হাত আমার কাধে ,,, আমি শাড়ির আচল খামচে ধরলাম।একবার তাকিয়ে দেখলাম সেও সাম্নের দিকেই ফেরা।আমার দিকে তাকাচ্ছে না।চোখের পলকেই টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।

হঠাৎ এমন কাজে তার দিকে ফিরলাম সে ও আমার দিকে ফিরলেন। চোখ মুখ খুব কাছাকাছি।

আস্তে করে বললেন

–স্মাইল পিলিজ

আমি মুচকি হেসে দিলাম সাথে সেও।

খেয়াল করলাম একহাতে ফোন ধরে মোমেন্ট টাকে ক্যাপচার করেছে।

দেখাতে বললাম দেখালেন না। লাফিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আমি দাঁড়িয়ে আছি রেলিং ধরে। তিনি দরজাটা আটকেছেন বেশ শব্দ করে।আমি পলকবিহীন দরজার দিকে তাকিয়ে আছি।নিঃশব্দে দরজা খুলে বললেন।।

–শাড়ি পরবি না আর কখনো। রাস্তার পাগল দৌড়ে চলে আসবে। আমি বাবা পাগল টাগল তাড়াতে পারব না।

–অপমান করলেন নাকি প্রশংসা?

আচ্ছা সে তো নিজের হাতে আমায় সাজালেন না।তাহলে আম্মু যে বলেছিলো,,,,,,,,,,

🍁🌼🍁

আজ আহানের এক্সাম শেষ। সেইদিনের পরে আর রুম থেকে বের হয় নি।আমাদের বাসায় ও আসে নি। মাঝে মধ্যে মেসেজ দিয়ে পড়াশুনার আপডেট জিজ্ঞেস করলে বলত ভালোই চলছে।কিন্তু আর কোনো মেসেজ এর রিপ্লাই দিতেন না।

কিন্তু আমি জানি সে আমাকে দেখছেন জানালা দিয়ে ।আচ্ছা জানালার গ্লাসটা এমন হতো যে বাইরের লোকটাও ভিতরের মানুষকে দেখতে পেত। আমার জন্য সেটা ভালো হতো। খুব ভালো হতো।

পরের দিন,,,

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here