তুইতেই আমি🏵পর্বঃ৪

0
3126

🏵তুইতেই আমি🏵
লেখিকাঃইসরাত আয়রা ইচ্ছে
পর্বঃ৪

🍁🌼🍁
মাথায় হাত বুলিয়ে আবার ডাকলাম

–আহান

,,,,

–আহান

–ইচ্ছে?

–হুম

–আচ্ছা তুইতেই কি আমি?

–মানে?ঠিক বুঝলাম না আমি

–কিছু না ছেড়ে দে । আমিও বুঝতে পারছি না কিছু তুই কিভাবে বুঝবি?

শুধু মাথাটা দোলালাম দুপাশে

–আসলে বুঝতে পারলেও হয়তো মানতে পারছি না বা মানাতে পারছি না নিজেকে। ক্ষনে ক্ষনে উত্তেজিত হয়ে পরছি।কিছু একটা হচ্ছে আমার সাথে বুঝলি?

মাথাটা আমার কাধ থেকে তুললো।

আর আমি বোবার মতো কথা শুনে যাচ্ছি। আসলে অস্পষ্ট কথা তৎক্ষনাত আমি বুঝতে পারি না।

আহান আবার বললেন

— জানিস এখন মাঝে মধ্যেই অনেক সুখ সুখ লাগছে।এই ধর মনে হচ্ছে জেনো দমকা বাতাস আমার মন ছুয়ে যাচ্ছে। ইউ নো আই ক্যান ফিল দিস ফিলিংস ডিপলি এন্ড আই এনজয় দিস ফিলিংস ফ্রম দা কোর অফ মাই হার্ট।

(আবার থেমে)

— ফিলিংস রিয়ালি গুড,টেস্টি,হেলদি

বলেই হাহাহাহা করে হেসে চলছেন

–আহান আপনি কি আমায় কোনো খাবার এর কথা বলছেন? আমি আসলেই বুঝতে পারছি না আহান।আপনার কি আমাত হাতের কড়া কফিটা ভালো লেগেছে?(ভাবতেই চোখ আপন ইচ্ছায় চকচক করে উঠল)
আহান আপনার উপর এক্সাম প্রেসার চলছে তাই হয়তো কফি টা বেশ কাজ করছে।আমি আজ নেট এ অবশ্যই সার্চ দিয়ে কড়া কফির উপকারীতা দেখে নেব।কেমন?

–এই থাম তো তুই।কি একটা মুডে ছিলাম। দিলি তো দিলি তুই আর তোর কফি মিলে দিলি। সর পাশ থেকে সর,,, দূরে গিয়ে বস

দূরে গিয়ে বসলাম এতদিন পর আমার সাথে একটু সাভাবিক ভাবে কথা বলছিলো। সবসময় তো ঝারির উপরেই রাখেন আমায়।আজ সেও বলল তাই আমিও তার কমপ্যানি দিতে গেলাম। তাতেও ঝারি বাহ রে বাহ

–টুকি যা তো আমার জন্য একটা বেড কুশান নিয়ে আয়।

নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলাম কি করব এবার

— দে আমায় বস তুই দোলনার ওই কিনারায়

বসার সাথে সাথে আমার কোলের উপর মাথা রেখে কুশান টা জরিয়ে ধরে দোলনায় পা উঠিয়ে শুয়ে পরলেন।

আজ অনেক বার অবাক হবার কারণ এ এবার আর অবাক হলাম না শুধু ভাবছি হলো টা কি তার?কিন্তু আমার কেমন জানি ফিল হচ্ছে খুব কেমন জানি,,,,,

–ইচ্ছে

–হুম

–আকাশের চাঁদটা দেখেছিস?

–হম।

–তুই কি আমায় তুমি বলবি?

— এবাবা না না আপনি আমায় ভুতের ভয় দেখিয়ে তুমি বলা থামিয়েছেন।এখন নিশ্চয়ই আমি ভুলে তুমি বললে আবার ঝারবেন?আগের মতো।
আমায় সবসময় বলতেন ওই ইচ্ছে দেখিস না আমি তোর থেকে লম্বা স্বাস্থ্যবান হয়ে গেছি। আমায় আবার যদি আপনি ছাড়া ডেকেছিস খবর করে দিবো।ভালো মা ভালো বাবা তোকে শিখিয়েছে না যে বড়দের আপনি বলতে হয় শিখিয়েছে?আবার তুমি বলবি? বল বলবি আর একবার বল,,,,

মাঝে মাঝে হুটহাট এসে বলতেন ইচ্ছে তুমি বল আমায়

যেই না মনের ভুলে বলতাম আপনি গালে একটা লাগিয়ে দিতেন

আহানের মতো অভিনয় করে দেখালাম এতক্ষণ। আহান আমার কোলে শোয়া অবস্থায় আমার দিকে তাকিয়ে আমার কথা শুনছে

–আচ্ছা ইচ্ছে তখন আমি কোন ক্লাস এ পড়ি আর তুই কোন ক্লাস এ?

–আমি এইট আর আপনি সেভেন। বলতে গেলে সিক্স আপনি তো একটা ক্লাস পরেন নি

–হ্যা আর এখন তুই অনার্স আর আমি ইন্টার শেষ করলাম। এখনও বাচ্চা রয়ে গেলি বড় কবে হবি?
বোধ বুদ্ধি কবে হবে?

–হ্যা হ্যা হয়ে যাবেনে
(কথা বারালেই অপমানিত হতে হবে চুপ থাকাই বেটার)

— আর হইছিস তুই,,,,,
মাথায় বিলি কেটে দে আমি ঘুমাবো অনেক দিন ভালো ভাবে ঘুম হয় না

–এভাবে?

–হুম(গম্ভীর ভাবে)

–আপনার পড়া কমপ্লিট?আর একবার দেখতেন

–হ্যা। আর এক্সামের রাতে আমি তোর মতো পড়তে পারি না। এমনিই দুবার রিভাইজ দিয়েছি

— ওকে

তার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি সে ঘুমচ্ছেন। চাঁদের দিকে তাকিয়ে তার বলা কথা গুলো ভাবছি।অনেক ভাবাভাবি, ক্যালকুলেশন, পারি তো গিয়ে ক্যালকুলেটর এনে তার কথা ক্যালকুলেট করি,,,,,, তারপর যা মাথায় এলো। তাতে আমি সত্যিই সারপ্রাইজড। আবার মন খারাপ হয়ে গেলো যা ভাবলাম তা যদি ভুল হয়?যদি নিরাশ হতে হয়?তাই ভাবলাম সপ্ন দেখব না। সময় কথা বলবে

তার মুখের দিকে তাকালাম বাইরের অন্ধকারের মধ্যে বেল্কুনিতে লাল নীল আলো। কি অদ্ভুদ মায়াবী চোখ কি সুন্দর এক ঝাক চুল।কিছু চুল কপালে।। ঠোঁট টা কেমন ছোট করে আছে।এত সুন্দর কেন উনি?এতোওও কেন? কেন এত মায়া ওই বুজে থাকা চোখে?উনার বাম গালে একটা তিল। দেখেই মনে হলো আমার ডান গালে একই জায়গায় একটা তিল আছে।তিল টা জানো তার মুখের মায়া দিগুন করে দেয়।

গায়ে একটা হাতা বড় টি-শার্ট এর অর্ধেক ফোল্ড করা আর ট্রাউজার সব মিলিয়ে আমার সপ্নের পুরুষ। অগোছালো মানুষ টাকে যে আমার খুব ভালো লাগে খুব,,,,,

🍁🌼🍁

সকালের আজান এ ঘুম ভাংলো। আহান গুটিশুটি দিয়ে এখনো ঘুম।সারারাত বসেই ঘুমিয়েছি।ঘুম চোখেই আহানের মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকলাম। সে আরমোরা ভেঙে আমার পেটে মুখ গুজে কোমর জড়িয়ে ধরলো।এমন কাজে আমার চোখের ঘুম বিদায় জানিয়ে চলে গেল

এবার রীতি মতো কাপছি। আহানের মাথা টেনে সরানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম।এভাবে আমি এক সেকেন্ড ও থাকতে পারব না এক সেকেন্ডও না ইমপসিবল

–মা আর একটু ঘুমাই না

— আমি মা না আহান আমি ইচ্ছে ইচ্ছে।আপনি পিলিজ উঠুন পিলিজ্জজ্জ

আমার লাফালাফিতে সে চোখ খুলল নিজের অবস্থান দেখে এক লাফের উঠে বসল

–সরি আমি ঘুমে ছিলাম বুঝতে পারি নি

তারপর আর কিছু না বলে সে বেলকুনি লাফিয়ে নিজের রুম এর দিকে গেলো সাইড এঙ্গেল থেকে দেখে আমার মনে হলো সে হাসছে

🍁🌼🍁

আয়নার সামনে দাড়িয়ে হেয়ার ব্রাশ করছি।কিছুক্ষন পর পর হেসেও উঠছি। কি কারণে এমন কাজ করছি তা আমার অবচেতন মনই ভালো জানে । আমি জানি না। হঠাৎ মনে হলো একটু শাড়ি পরলে মন্দ হয় না

নীল রং এর শাড়ি নিলাম পরার উদ্দেশ্যে।

শাড়ি পরে এসে নিজে আয়নায় দেখছি । হাল্কা করে ডিপ পিংক লিপ্সটিক টা দিলাম।চুল হাটুর কিছুটা উপরে,,,, লম্বা চুল টা খুলে দিলাম।অতি ফরসা না হলেও শ্যামলা ভাব টা চেহারায় নেই। আম্মু সব সময় বলে আমার গায়ের রং টা পারফেক্ট। চোখে কাজল দিলাম। ভ্রু টা আল্লাহ সুন্দরই বানিয়েছে তাই কখনও প্লাক করার কথা ভাবি নি।আমার বান্ধবীরা খুব জালায় আমাকে এই নিয়ে। এরপর কানে ঝুমকো।

খুব একটা সাজগোজ করা হয় না বললেই চলে। আজ নিজেকে দেখতে নিজের খুব ভালো লাগছে।নিজেকেই নিজে বলে উঠলাম খুব মিস্টি লাগছে।

নুয়ে শাড়ির কুচিগুলো আবার ঠিক করছি,,,উঠে দাঁড়িয়ে সামনে আহান কে দেখলাম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তো আছেই। তার চোখ দেখে কেন জানো মনে হলো সে মুগ্ধ হয়েছে
মুখে বললাম

–আহান আপনি কিছু বলবেন?

,,,,,,,,,,,,,,

–কলেজ ড্রেস পরা যে এক্সাম দিতে যাচ্ছেন?আব্বু আম্মুকে বলতে এসেছেন?

কোনে উত্তর না পাওয়ায় বলে উঠলাম

–আপনি আমাকে এভাবে কেন দেখছেন?শাড়ি পরেছি তাই? আসলে আমি মানে,,,,,,আমি শাড়ি এখন ই খুলে রাখব এমনিই পরে দেখলাম আরকি

সে কোনো কথা না বলেই চলে গেলেন আমার ভাইয়ের ডাকে।

মাথাটা খুব ভন ভন করছে আমার খুব খুব।ওনার চোখ এমন কেন?

🍁🌼🍁

–আম্মু আহান কেন এসেছিলো?

-এক্সাম দিতে যাবে বলতে এসেছিলো। তোকেও বলতে গিয়েছিলো বলেনি?

কিছু না বলে রুম এ চলে এলাম।

🍁🌼🍁

রাতে আহান মেসেজ দিয়ে বললেন।

–তোর পিক পাঠা আজ যা তুলেছিস

— সরি আহান আমি পিক তুলি নি। আপনার এক্সাম কেমন হলো?

–এখনি শাড়ি পর পিক দিবি আমায়

–আহান আমি শুয়েছি জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন নিশ্চয়ই এখন এত রাতে কিভাবে?

–আমার কি এখন তোর রুম এ আসতে হবে?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here