তুমি আছো তাই পর্ব – ০৩

গল্প – তুমি আছো তাই
পর্ব – ০৩
লেখিকা – নৌশিন আহমেদ রোদেলা

চোখদুটো হালকা খুললো নিশি।।ওর দিকে এগিয়ে আসা স্টিকটা কেউ একজন চেপে ধরে আছে শক্ত করে।।নিশি একটা ঢোক গিলে পাশে তাকালো,,,,সাদা শার্ট,,কালো জিন্স,,,পরিহিত একটা ছেলে একহাত পকেটে রেখে অন্যহাতে স্টিকটা চেপে ধরে আছে অনেকটা স্টাইল নিয়ে।।নিশি তাকাতেই ছেলেটাও আড়চোখে তাকালো কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিলো।।কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকটা ছেলে এসে দাঁড়ালো ছেলেটির পাশে,,,আর চোখের ইশারা পেয়েই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে বেদড়াম পেটাতে লাগলো।।।কিন্তু সেদিকে নিশির কোনো খেয়ালই নেই,,,সে তো অবাক চোখে ছেলেটিকে দেখছে।।।ছেলেরাও যে এতো সুন্দর হতে পারে নিশির তা জানা ছিলো না।।সৃষ্টিকর্তা যেনো পৃথিবীর সব ইনোসেন্স এই ছেলেটির গায়ে ঢেলে দিয়েছেন।।গায়ের রং টাও কি ভয়ংকর সুন্দর।।ছেলেটির গায়ের রংটা নিশির গায়ের রঙের চেয়েও উজ্জল দেখাচ্ছে।।।বিষয়টি নিশির কাছে মোটেও ভালো লাগছে না।।ছেলেদের এতো সৌন্দর্য প্রকৃতিও মেনে নিতে নারাজ।।সৌন্দর্যে শুধুমাত্র মেয়েদের আদিপত্য,, সেখানে ছেলেদের উপস্থিতি গ্রহনযোগ্য নয় ।। নিশির ঘোর কাটলো নিরার চিৎকারে,,,,লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিরার দিকে তাকালো,,,

নিরাঃ ভাইয়া????(বলেই দৌড়ে গেলো ছেলেটির দিকে)

নিশি কিছুই বুঝতে পারছে না,,,ছেলেটা নিরার ভাইয়া??কই ওদের বাসায় তো কখনো দেখে নি,,,,ভ্রু কুচঁকে ওদের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করছে নিশু।।

ভাইয়া??তোর হাত থেকে তো ব্লিডিং হচ্ছে,,,নিশ্চয় মারামারি করছিলি??দাড়া আমি বাসায় গিয়েই মাকে বলবো যে তুই ভার্সিটি গিয়ে গোন্ডামী করিস।।

এহহহহ,,,আসছে,,,মাকে বলবো(মুখ ভেঙচিয়ে) আমি না থাকলে তো মাথাটাই দুভাগ হয়ে যেতো,,আবার বড় বড় কথা।।আর গাধার মতো এখানে দাঁড়িয়ে ছিলি কেন তাও আবার এতো গন্ডগোলের মাঝে ??(মাথায় চাটি মেরে)

হুহ ভাইয়া,,,বোনকে রক্ষা করা তো ভাইয়ের রেসপন্সিবিলিটি।।। আর তুই তো তোর রেসপন্সিবিলিটি পালন করার সুযোগই পাস না উল্টো আমি তোকে মার বকা থেকে বাঁচাই,,তাই ভাবলাম তোকে একটা সুযোগ দেওয়া যেতেই পারে,,,কি বলিস নিশু??(নিশির দিকে তাকিয়ে)

এএ,,হ,,হ্যা।।

অনেক হয়েছে পাকামো,, এখন আল্লাহর ওয়াস্তে অফ যা,,,,, আর এইযে আপনি?(নিশিকে উদ্দেশ্য করে)ওর না হয় মাথায় ছিট আছে,,কিন্তু আপনি কি দেখতে এভাবে দাড়িয়ে ছিলেন?? যদি কিছু হয়ে যেতে??

না,,মা,,মানে,,আসলে,,,,,(মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে নিরা বলে উঠলো)

ভাইয়া???তুই আমাকে তাড় ছিঁড়া বলছিস??(মুখ গোমরা করে)

কই বললাম??তুই তো আমার বলার আগেই স্বীকার করে নিচ্ছিস।।।(দাঁত কেলিয়ে)।।

নিশি সেদিন খিলখিল করে হেসে উঠেছিলো।।হাসির তোড়ে ভাসিয়ে নিয়েছিলো নিলয়ের মনটাকেও।।নিশিকে বুঝতে না দিলেও সেদিনই নিলয় খুন হয়েছিলো সেই নীল পরিটাতে।।।

বর্তমানে,,,,,

তিন ঘন্টা হতে চললো, নিশির ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিলয়।। উদ্দেশ্য নিশিকে এক নজর দেখা আর কালকের জন্য ক্ষমা চাওয়া।।নিলয় জানে নিশি তাকে দেখলে রেগে যাবে,,,,কিন্তু তাতে তার কোনো যায় আসছে না,,রাগুক,, মারুক,, যা ইচ্ছা করুক,,তবুও নিলয় ধমে যাওয়ার পাত্র নয়।।তার যে নিশিকে চায়ই চায়।।কাল রাতে এক মিনিটের জন্যও চোখের পাতা বুজে নি সে।।শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষায় ছটফট করেছে।।।নিশির ঘৃনা নিয়ে বেঁচে থাকা নিলয়ের পক্ষে সম্ভব নয়।।।তাইতো সকাল হতেই বেরিয়ে পড়েছে ভার্সিটির উদ্দ্যেশে।।কিছুক্ষণ আগেই নিশি ভার্সিটিতে ঢুকেছে,,,নিলয়ের উপস্থিতি বুঝতে পেড়েও একবারও তাকায়নি তার দিকে,,,নিশি থেকে পাওয়া প্রথম অবহেলা মেনে নিতে পারছে না নিলয়,,ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙে চুরমার করে ফেলতে।।আরো প্রায় চার ঘন্টা পর নিশি ক্লাস শেষ করে ভার্সিটি গেটে এসে পৌছাঁলো,,,পার্কিং এ চোখ যেতেই থমকে গেলো নিশি।।নিলয় এখনো দাঁড়িয়ে আছে,,এলোমেলো চুল,, পরনে রাতের টি-শার্ট আর টাউজার,, হাতে জ্বলন্ত সিগারেট,,,লাল হয়ে থাকা চোখ দুটো,,,অনেক কিছুই সাক্ষ্য দিচ্ছে,, প্রকাশ করছে অনেক আকুতি কিন্তু নিশি অপারগ।।নিলয়কে এই অবস্থায় দেখে অবাক হলেও নিজের রাগ ভুলেনি সে।।।তাইতো অবলিলায় নিলয়কে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়,,,,

নিশু,,,,,,

নিলয়ের এই গভীর মায়ায় মাখা ডাকে থমকে দাঁড়ায় নিশি।।এই ডাককে উপেক্ষা করার ক্ষমতা যে তার নেই।।।কিন্তু না,,আজকে আর দাঁড়াবে না সে,,,কিছুতেই না।।নিশি আবার পা বাড়াতেই হাত চেপে ধরলো কেউ।।নিশি ঝটকা দিয়ে পেছনে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,,,,

ছাড়ুন আমায়,,,হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মি???

নিশু,,নিশু প্লিজ শান্ত হও,,,

আমি কি বলছি আপনি শুনতে পাচ্ছেন না??আই ছে লিভ মি,,,(চেঁচিয়ে)

ও,,,ওকে,,,ওকে।।এই দেখো ছেড়ে দিয়েছি,, প্লিজ এবার তো শান্ত হও,,আমার কথাটা একটু শুনো,,প্লিজজ(করুন চোখে)

কি শুনবো??কি শুনাতে চান আপনি??আপনি কি বুঝতে পারছেন না,,,আপনার সাথে কথা বলতে আমার রুচিবোধে বাধে,,,

নিশু,,,(অবাক চোখে)

কি? নিশু কি বলুন??সত্যিটা শুনতে কষ্ট হচ্ছে বুঝি??বাট আই কান্ট হেল্প,, ইউ হেভ টু একসেপ্ট ইট,,,

বলেই হাঁটা দিলো সামনের দিকে,,, পিছন থেকে কিছু ভাঙার আওয়াজ পেয়েও ফিরে তাকায় নি নিশি,,,,নিজেকে কোনোভাবেই দুর্বল করতে চায় না সে ,,,নিলয়কে বলা প্রতিটি কথা নিজের বুকেও আঘাত করেছে তীক্ষ্ণভাবে কিন্তু তবু নিশি নিলয়কে ক্ষমা করবে না,,কিছুতেই না।।।

রক্ত মাখা হাত নিয়ে টলমলে চোখে নিশির যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে নিলয়।।বুকে ভয়,, তার একটা ভুলে নিশিকে হারিয়ে ফেলতে হবে না তো???না কিছুতেই না,,,এত সহজে তোমাকে আমি হারাতে দিবো না নিশু ,,তুমি চাইলেও না।।।তোমাকে যে বড্ড প্রয়োজন,,,তুমি ঠিকই বলেছো,,একসেপ্ট তো করতে হবেই,,,কিন্তু আমাকে না তোমাকে,,,ইউ হেভ টু একসেপ্ট মাই এপোলজি এন্ড লাভ,,,,
…………..
………………..
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে……]

#তুমি_আছো_তাই #নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা #গল্পের_ডায়েরি #রোদেলা #GolperDiaryOfficial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here