তুমি আমার মুগ্ধতা -(সূচনা-পর্ব)

১.

“এই মেয়ে কে তুমি? আমার গাড়ির পেছনে কি করছো?”

“নিজের বউকে এই মেয়ে এই মেয়ে বললে মানুষ কি ভাববে? আর হাসবেন্ড এর গাড়িতে ওয়াইফ থাকবে এইটাইতো স্বাভাবিক তাইনা?!”

“ওয়াইফ মানে? এই মেয়ে তুমি জানো আমি কে?”

“হুম জানিতো, আপনি আমার হাসবেন্ড।”

এইবার বিরক্ততে কপাল ভাঁজ হয়ে আসে এই শহরের ইয়াং বিজনেসম্যান প্রান্তিক চৌধুরীর। প্রান্তিক অফিস থেকে মিটিং সেরে বাসায় ফিরছিলো৷ বাসার মেইন গেইটে গার্ডরা গেইট খুলে ধরতেই সামনের আয়না দিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে চোখ যায় তার। দেখে একটা মেয়ে জানালার বাইরে মাথা রেখে বসে আছে। খোলা চুলগুলো তার হাওয়ায় উড়ছে। থমকালো সে। অবাক দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একবার আয়নায় তাকায়, আরেকবার গাড়ির পেছনের সিটে। তড়িঘড়ি করে গাড়ির ব্রেক ক’ষে সে। ব্যাস হয়ে গেলো। গাড়ি থেকে নেমেই মেয়েটিকে প্রশ্ন করা শুরু হয়ে গেলো তার।

প্রান্তিক গম্ভীর কন্ঠে অচেনা মেয়েটিকে ধ’ম’ক স্বরে বললো,

“এই মেয়ে বেরিয়ে আসো…, বেরিয়ে আসো বলছি..”

মেয়েটি ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে। পড়নে তার, নীল রংয়ের টপস আর জিন্স।

প্রান্তিক এক পলক পা থেকে মাথা অব্দি মেয়েটিকে দেখে গম্ভীর মুখে বললো,

“নাম কি তোমার?”

“কার? আমার?”

প্রান্তিক দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“এইখানে কি তুমি ছাড়া আর কেউ আছে?”

“অর্ষা.., আহিয়া মুসকান অর্ষা, আমার নাম।”

২.

সাড়া বাড়ি থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। নিরবতা ভেঙ্গে মিসেস মিরা বললেন,

“ছোট, তুই শান্ত হো। অর্ষাকে খোঁজে বের করার জন্যতো লোক পাঠানো হয়েছে।”

ফ্লোর থেকে নজর সরায় মির্জা বাড়ির ছোট বউ নিশিতা মির্জা। যার ভ’য়ে তটস্থ হয়ে থাকে এই বাড়ির সবাই৷ স্বামী এরশাদ মির্জা চলে যাওয়ার পর এই পরিবার, ব্যবসা সবই তিনি দেখাশোনা করেন। চুলগুলো ছোট ছোট। সবসময় চোখে পড়ে থাকেন সাদা ফ্রেমের চশমা। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,,

“24 Hours এর মধ্যে আমি আমার মেয়েকে, আমার সামনে দেখতে চাই। Only 24 Hours..”

কথাটি বলেই ভদ্র মহিলা সিঁড়ি দিয়ে উপরতলায় উঠেন।

“আফ্রা…”

মায়ের কঠিন কন্ঠে নিজের নাম শুনে ঘা’ব’ড়ে যায় আফ্রা। আমতা আমতা করে মা কিছু বলার আগেই মাকে বললো,

“আমি সত্যি জানিনা মা, অর্ষা কোথায়।”

মিসেস মিরা মির্জা মেয়ে আফ্রাকে পরখ করে দেখলেন এক পলক। ‘নাহ..মেয়ে তার মিথ্যে বলছেনা। তাহলে অর্ষা গেলো কোথায়? আজ বাদে কাল বিয়ে অথচ….” মনে মনে কথাগুলো ভাবতেই চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠছেন তিনি।

৩.

“এই মেয়ে তুমি প্রান্তিক’কে হাসবেন্ড হাসবেন্ড বলছো কেন? কে তুমি?”

সদর দরজার ভে’ত’রে প্রবেশ করতেই ২০/২১ বছরের একটি মেয়ে প্রশ্ন করে উঠে অর্ষাকে। অর্ষা প্রান্তিকের গম্ভীর চেহারা’য় এক পলক তাকালো। তার দৃষ্টি অদৃশ্য। অন্য দিকে তাকিয়ে আছে সে।

“এই মেয়ে বলছোনা কেন?”

মেয়েটির ডাকে পুনরায় অর্ষা তার দিকে তাকালো। তারপর চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে নিয়ে সোফায় বসে পায়ের উপর পা রেখে, পা খানিকটা হেলাতে হেলাতে বললো,

“আমার হাসবেন্ড’কে আমি হাসবেন্ড বলবনাতো কি তুমি বলবে?”

মেয়েটি অবাক নয়নে তাকায় প্রান্তিকের দিকে। সোফা থেকে উঠে প্রান্তিকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর বলে,

“এইসব কি হচ্ছে প্রান্তিক! কে এই মেয়ে?”

“কে আবার? আমার ওয়াইফ।”

চমকে উঠে অর্ষা। অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রান্তিকের দিকে। প্রান্তিকের ঠোঁ/টে ফুটে আছে রহস্য’ময় হাসি।

৪.

“আফ্রা তুই সত্যিই জানিস না? পরী কোথায়?”

পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিল আফ্রা। ভাইয়ের দিকে না তাকিয়েই বই দেখতে দেখতে বললো,

“তোমার কি মনে হয় ভাইয়া? আমি জানি অর্ষা কোথায়?”

“সত্যিই জানিস নাহ?”

“না ভাইয়া সত্যিই জানিনা।”

বিছানায় গিয়ে বসে শাফওয়াত মির্জা। আফ্রার ভাই। শাফওয়াত অর্ষাকে ভীষণ রকম ভালোবাসে। আফ্রা আর অর্ষা তারা উভয়েই তার কাছে সমান। দুজনের মধ্যে কখনো তফাৎ নির্ণয় করেনি সে। আদর করে অর্ষাকে পরী বলে ডাকে শাফওয়াত। শাফওয়াত চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে উঠে,

“কোথায় গেলো পরী? বিয়েটাতো আর হয়ে যাচ্ছিলোনা। আমরাতো ছিলাম। ঠিকিই ছোট মাকে বুঝিয়ে ফেলতাম।”

ভাইয়ের কথার দিকে কর্ণপাত করলোনা আফ্রা। তার ধ্যান ভাইয়ের কথায় নয়, ফোনে। আফ্রা এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে ফোনের স্কিনে। অর্ষাকে মেসেজ করেছে সে। মেসেজে গুটি গুটি করে লেখা: “ঠিকঠাকভাবে পৌঁছে’ছিসতো তুই?”

৫.

“আমি জানি প্রান্তিক তুমি মিথ্যে বলছো। এই মেয়েটা তোমার কেউনা। এই মেয়েটা যদি তোমার রিলেটিভের মধ্যে কেউ হতো, আমি অবশ্যই জানতাম। এই মেয়েটা তোমাকে কোনো বিষয়ে ফাঁ সি য়ে ছে তাইনা? কি হলো প্রান্তিক বলো…”

প্রান্তিক অর্ষার পাশে গিয়ে বসে। ঘা’মে একাকার সে। ব্লেজার খু’লে সোফার এক কোণে রেখে দেয়। এ্যাশ কালার শার্ট’টা ঘা মে ভি’জে একাকার। শার্টের দুটা বোতাম খু’লে কলারটা পেছনে নিয়ে মাথা রাখে সোফায়। অর্ষার দিকে তাকিয়ে টয়াকে বললো,

“না টয়া, আমি মিথ্যে বলছিনা। মেয়েটি সত্যিই আমার ওয়াইফ।”

অর্ষা তাকিয়ে থাকে প্রান্তিকের দিকে। আসলে ছেলেটা কি করতে চাইছে তা বুঝতে পারছেনা তার অভিজ্ঞ নয়নজোড়া।

রাগান্বিত হয়ে প্রান্তিকের দিকে এগিয়ে যায় টয়া। তারপর বলে,

“মজার ছলে কি যা তা বলছো প্রান্তিক? আর ইউ ক্রেজি? আ’ম ইউর ফ্রিয়ন্সি। আর এই মেয়ে, বড়লোক ছেলে দেখলে মাথা ঠিক থাকেনা তাইনা? ঠিকিই কোনো না কোনোভাবে নিজের আওতায় এনেছো প্রান্তিককে। তোমার মতো ছোট লোকদের আমার চেনা আছে।”

“মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ। আমাকে দেখে কি ছোট লোক মনে হয় আপনার? অবশ্য কাকে আর কি বলব? যার মন মানসিকতা এতো নিচু তার সাথে অর্ষা কখনো তর্কে জ’ড়া’য়না।”

প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,

“এইসব কথা কান দিওনা বউ। চলো.. আমরা এখন রুমে গিয়ে একান্ত কিছু সময় কা’টা’য়।”

থতমত খেয়ে যায় অর্ষা। “লোকটা আসলে চাইছেটা কি?”

৬.

“অর্ষাকে পেয়েছো?”

“ম্যাম আসলে..আসলে..মানে..”

“কি মানে মানে করছো? এতো মানে মানে না করে বলো, অর্ষাকে পেয়েছো কিনা।”

নিশাত মির্জার চিৎ কা রে ভ য়ে কুঁকড়ে উঠে কালো পোশাক পরিহিত গার্ডরা। কেউ একজন ভ য়ে ভয়ে বললো,

“অর্ষা ম্যামকে পাইনি ম্যাম। আমাদের হাত থেকে পালিয়ে গেছে।”

কথাটি বলতে না বলতেই যে বলেছে, তার গা লে ক ঠোর আওয়াজ প্রকাশিত হলো।

দ্বিগুণ চি ৎ কার করে বলেন,

“একটা বাচ্চা মেয়েকে ধরতে পারোনি? কিভাবে অর্ষা তোমাদের চোখ ফাঁ কি দিয়ে পালিয়ে গেলো? কিভাবে???

৭.

“একদম আমার কাছে আসবেন না..সরুন, সরুন বলছিইই..”

“কেন সরবো বউ? বউয়ের উপর স্বামীর পূর্ণ অধিকার আছে। তা বুঝি তোমাকে কখনো কেউ শেখায়নি?”

অর্ষা চোখ বন্ধ করে আছে। দেয়ালের সাথে স্পর্শ করে আছে তার পি*ঠ। সামনে দু হাতে ভ র দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রান্তিক।

“দেখুন..আম, আম..আমি ক্ কিন্তু পুলিশ ডাকব?”

প্রান্তিক সরে যায় অর্ষার থেকে। অতপর অর্ষা ভাব নিয়ে মনে মনে ভাবলো,

“পুলিশের ভ য় দেখাতে না দেখাতেই ছেড়ে দিলো? যাক বেঁচে গেলাম।”

ঠিক তখনি অর্ষার ভাবনার মাঝে ১ বালতি পানি ঢেলে দিল প্রান্তিক। অর্ষাকে এক হাত দিয়ে টা ন দিয়ে রহস্য মাখা হাসি দিয়ে বললো,

“তুমি কি ভেবেছো মেয়ে? আমাকে ভ য় দেখালেই আমি ভ য় পাবো? পুলিশ ডাকলে আমার কিছু হবেনা..কিছুনা। কারণ তোমার মত অনুযায়ী তুমি আমার ওয়াইফ। আর হাসবেন্ড হিসেবে আমি তোমাকে অনেক কিছুই করতে পারি। গট ইট?”

“অন্ অনে্্ অনেক কিছু মানে!”

“হাসে প্রান্তিক। নে’শা’ক্ত চাহনি দেয় অর্ষার দিকে। অর্ষার কানের কাছে গিয়ে ফিস’ফি’স করে বলে উঠে, “আমার বউ হওয়ার শখ জেগেছে তাইনা? তাহলে তোমার এই শখটা’তো পূরণ করতেই হয় বউউউ।”

#তুমি_আমার_মুগ্ধতা
#সূচনা_পর্ব
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here