তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-২৫ ২৬

0
850

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:25

আজ অপলার মাকে বাসায় আনা হয়েছে।ডক্টর সব কিছু বুঝিয়ে বললো।রেহনুমা আহমেদ এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো।তবে পুরোপুরি সুস্থ না।তার রিপোর্ট খুব একটা সুবিধার না। হার্ট এর অবস্থা ভালো না।দ্রুত হসপিটালাইজড করা হয়েছে বলে এবার তেমন কিছু হয়নি।আর সব থেকে বেশি যেটা দরকার সেটা হল উনার আবহাওয়া পরিবর্তনের।

অপলা আর ওর বাবা এখন ওর মায়ের রুমে বসে এইটা নিয়েই কথা বলছে।কোথায় যাওয়া যায়।কিন্তু ওর আর সপ্তাখানিক পর এক্সাম ।এই টাইমে তো মা কোথায় যেতে চাইবে না।তাই হিশাম আহমেদ ঠিক করলেন এক্সামতো এক/দের মাসেই শেষ হয়ে যাবে। ততো দিনে রেহনুমা শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে। তারপর না হয় যাবো।কিন্তু বাবা আমরা যাবটা কোথায় ঠিক করেছ?ভাবছি রাজশাহী যাবো।এহসানকে কথা দিয়েছি যাবো।কথা রাখাও হলো।আবার তোর মায়ের আবহাওয়া চেঞ্জ ও হল।অপলা কিছু বলল না।আবারও রাজশাহী, মাহিমদের বাড়ি!আবার সেই অজানা অনুভুতিরা জানান দিচ্ছে।

অপলা নিজের রুমে এলো।ওরা রাজশাহী যাবে। এহসান আংকেলদের বাড়ি মানে মাহিমদের বাড়ি।ভাবতেই কেমন একটা হচ্ছে।ওখানেই তো ওদের প্রথম দেখা হয়।প্রথম দিনের কথা মনে পড়তেই হাসলো।তবে মাহিমতো এখন ঢাকায়। ও যদি না যায় তাহলেতো আর ওর সাথে দেখা হবে না।ভাবতেই কেনো যেনো মন খারাপ হয়ে গেল।

মাহিম ভাবছে কি করবে সে একটা কল করবে?বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই বুঝবে।আমি তো আমার মনের কথা ওকে বলেছি শুধু। ওকেতো ভালোবাসতে বলিনি।নিশ্চয়ই বুঝবে। হ্যা,আমি একটা কল করে দেখি।যা হয় হবে।রিং হচ্ছে। রিসিভ করবে কি!!

অপলার ফোনটা বাজছে।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মাহিম।ওর কথাই তো ভাবছিলাম।আর এখনই কল করলো!আপন মনে হাসলো।

-আস্সালামুআলাইকুম!
– ওয়ালাইকুমুস্সালাম!
– কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ,আপনি?
– আলহামদুলিল্লাহ।তুমি আমাকে আপনি করে কেনো বলছো?এইরকম কথাতো ছিল না।
– আসলে তখন রেগে গিয়ে বলেছি।
– এখনও রেগে আছো?
– জানিনা।
– মানে রেগে আছো?(থমথমে গলায়)
– (ইসস কষ্ট পাচ্ছে আমার কেনো খারাপ লাগছে)না রাগ করিনি।
– বুঝবো কিভাবে?
– জানিনা।
– তাহলে তুমি করে বলো!!!!
– hmm.
– কি hmm বলো।
– আমি আপনাকে আজকে…
– (কথা শেষ করার আগেই বলল)আবার আপনি?
– ওকে তুমি..
– এইবার ঠিক আছে ।
– এখন কথা তো শোনো।
– hmm বলো।
– আমি আজকে তোমাকে কল করতাম।
– কিহহহহ্…সত্যি!!!
– hmm
– ইসসসসস আমি আগেই দিয়ে ফেললাম।
– ভালোই তো হলো।
– hmm হটাৎ কি মনে করে কল দিচ্ছিলে?
– আসলে আমারতো নেক্সট week থেকে এক্সাম তাই ভাবছিলাম তোমার সাথে একবার দেখা করবো।
– (মাহিমের কান যেনো ঠিক শুনলো কিনা দ্বিধায় পড়লো) এএ কি বললে?
– দেখা করবো।
– তোমারতো এক্সাম।
– হ্যা,তাই দেখা করবো।important কথা আছে।
– সত্যিই বলছো?
– হ্যা,সত্যিই বলছি।
– কবে দেখা করছো?
– আসলে এখনতো পড়ার অনেক প্রেসার আর বাসায় একটু ক্রাইসিস চলছে তাই ভাবছি পরশুতো অ্যাডমিট আনতে কলেজে যাওয়া লাগবে সেদিনই না হয়..
– কোনো ব্যাপার না।তুমি আমাকে বলে দিও কখন আসতে হবে।
– ওকে।মেসেজ এ বলে দিবো।
– ঠিক আছে। অপেক্ষায় রইলাম ।
– এখন রাখছি?
– এখনই???
– হ্যা,কেনো কিছু বলবে তুমি?
– অনেক কিছুই তো বলতে চাই।
– হ্যা,বলো।
– দেখা হলে বলবো।
– ওকে রাখছি?
– ওকে bye.
– bye.

ফোন কেটে মাহিম কি করবে বুঝতে পারছে না।তার স্বপ্নচারিণী রেগে নেই আর।দেখা করতে চাইছে।মাহিম এর মনে তো সুখের বন্যা বইছে।পারেনা নাচতে।না আর পারছিনা।মাহিম এলোমেলো ভাবে নাচতে লাগলো………তার খুব আনন্দ হচ্ছে।আবার তার স্বপ্নচারিণীর সাথে দেখা হবে। তাও তার স্বপ্নচারিণীর ইচ্ছে তে দেখা হবে।

নাম রেখেছি বনলতা যখন দেখেছি
হয়তো বা সেই ক্ষণেই তোমায় ভালোবেসেছি।

চলবে…….

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:26

মাহিম এতোই আনন্দিত কি করবে বুঝতে পারছে না। নেচেই চলেছে।নিঝুম আড়াল থেকে দেখলো।ও জানে এই আনন্দের কারণ।ভালোবাসি বলার আগেই হারিয়ে গেলো ওর ভালোবাসা।সব ভালোবাসায় তো আর প্রাপ্তি থাকে না।ওর চোখ জোড়া ভিজে উঠলো।তাই সেখান থেকে চলে গেলো।ভালো থাকুক সবার ভালোবাসার মানুষগুলো।

অহনা কিছু একটা পড়ার শব্দ শুনে ছুটে এলো মাহিমের রুমে।গিয়ে দেখে পুরো ঘরটা এলোমেলো।যা হাতের কাছে পাচ্ছে তাই নিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচছে। টেবিল ক্লক ফ্লোরে পড়ে ভেঙ্গে কয়েক টুকরো হয়ে আছে।অহনা মাহিমকে থামাতে চাইছে।কে শুনে কার কথা।অহনা আর সেখানে দাড়ালো না।বুঝলো এ ছেলে এখন থামবে না। নিঝুমকে ডেকে আনি।ওকে দেখে লজ্জা পেয়ে থামতে পারে।কিন্তু নিঝুম কোথায় এত হইহল্লা করছে।তাও এলো না!রুমেও তো নেই।বারান্দায় উকি দিয়ে দেখলো নিঝুম বারান্দায়। ও নিঝুম তুমি এইখানে,মাহিমের কান্ড দেখেছো?নিঝুম চোখ মুছতে মুছতে বলল,আমার অধিকার নেই ভাবী এইসব দেখার।অহনা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থেকে বললো,তুমি কাদঁছো?ভাবী আমাকে একটু একা থাকতে দিবে?প্লিজ!!অহনা আর কথা বাড়ালো না।সে জানেনা কি হয়েছে তবে আঁচ করতে পারছে।সেকি তার ভাইকে এইখানে এনে ভুল করেছে?তার বোনের মতো ননদের কষ্টের কারণ কি তার ভাই??

ফোনটা কেটে দিয়ে অপলার বিস্ময়ের ঘোর কাটে। এত সহজে দেখা করার কথা বলে দিলাম?আমিতো ফোনেও বলতে পারতাম।কি না কি ভাবলো ও।তবে কি আমার মন চাইছে দেখা করতে?আমি কি সত্যিই ওকে ভালোবেসে ফেলেছি??খুব লজ্জা পাচ্ছে ও।ইসস না জানি মাহিম কি ভাবলো?কিন্তু ওর অজান্তেই লাজুক হাসিতে সারা মুখ ছেয়ে গেলো।

আজ এডমিট এর জন্য কলেজে যাচ্ছে অপলা।মাহিমকে একটা মেসেজ করে দিতে হবে।কখন আসতে বলবো?3 টায় কলেজে যাব।কাজ শেষ করতে 1 hour লাগবে না?হ্যা, 4 টায় আসতে বলি।মাহিমকে মেসেজ করে অপলা বের হলো।আজও সে রিকশায় যাবে।অফ হোয়াইট এর উপর হালকা গোল্ডেন কাজ করা থ্রিপিস পড়েছে আজ। চুল গুলো একপাশ করে সামনে কাধের উপর ছড়িয়ে রেখেছে।চোখে কাজল দিয়ে হালকা করে লেপ্টে রেখেছে।মৌনতা বারবার জিজ্ঞেস করছে হটাৎ এতো সাজগোজের কারণ কি?মাহিম ভাইয়া আসবে নাকি?এখন ওর লজ্জা লাগছে। ও আজ এত সেজেছে কেনো?মাহিম আসবে বলে কি?

4 টা বাজবে কখন সেই অপেক্ষায় পার্কে বসে আছে মাহিম।সে অনেক আগেই এসেছে।তার যেনো তর সইছে না।কখন আসবে অপলা!!আমি না হয় আগে এসেছি।সে কেনো আসছে না?এখনতো 4.17 বাজছে। লেট করছে কেনো?মাহিম ভাবলো একবার কলেজের সামনে যাবে কিনা?কিন্তু অপলা মেসেজ করে বলেছিল ওর কলেজের সামনে যেনো না যাই।তাহলে ওকে একটা কল করে দেখবো? হ্যা,তাই করি।বলে ফোনটা বের করে কল দিয়ে যেই কানে ধরবে তখনই ওর চোখ দুটো আটকে গেলো।তার স্বপ্নচারিণী আসছে।কি অপূর্ব লাগছে।মায়াবতী বললেও কম হবে।মাহিম এর খুব ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ওর স্বপ্নচারিণীর ভালোবাসায় ডুব দিতে।মাহিম যেনো ওর মধ্যে নেই।একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল।যেখানে শুধু ওর আর ওর স্বপ্নচারিণীর একান্ত বিরাজ।

Sorry sorry লেট হয়ে গেল।আসলে মৌনতা বারবার বলছিল কোথায় যাচ্ছি। এইখানে আসবো লজ্জায় বলতে পারছিলাম না।তাই ও যাওয়ার পর আসছি। একদমে বলে অপলা মাহিমের দিকে তাকালো।কিন্তু একি মাহিম ওর দিকে তাকিয়ে আছে কেনো?কোনো কিছু বুঝার আগেই মাহিম ওর দিকে এগিয়ে আসছে।যেনো কোনো ঘোরের মধ্যে আছে।ওর চোখে যেনো নেশা লেগে আছে।যে নেশায় মাতাল করে দিতে চাইছে অপলাকে।অপলা চেয়েও পারছে না উপেক্ষা করতে সেই গভীর দৃষ্টি।

চলবে….…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here