তুমি আমার স্বপ্নচারিণী পর্ব-৫৪ ৫৫

0
2613

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:54

চাঁদের আলোয় চোখের পানি চিকচিক করছে।চাঁদের স্বিন্ধ্যতা আর চোখের পানির এ বিষণ্ণতা মিলেমিশে পরিবেশটা থমথমে হয়ে আছে।অপলা ঝাপসা হয়ে যাওয়া চোখের পানি মুছে ডাইরি পড়তে শুরু করলো।

হিশাম আহমেদ ও তার স্ত্রী দুজন আমাকে ছুটে আসতে দেখে এগিয়ে আসে।আমাকে তারা প্ল্যাটফর্মের ভিতর নিয়ে যান।তারা আমাকে প্রথমে একটু শান্ত করে।তারপর আমার কাছে জানতে চান আমি এইভাবে কেনো পালাচ্ছি?আমি একটু ইতস্তত করছিলাম।যদি সব শুনে তারা আমাকে ঘৃনা করে,যদি আমাকে প্ল্যাটফর্মের বাইরে বের করে দেয়!!তাহলেতো আমরা ধরা পরে যাবো!অনেক ভেবে দেখলাম যদি না বলি তাহলেও তো উনারা অন্য কিছু ভাববে।তখন উনারা আমাকে অভয় দিলেন।তারপর উনাদের একদম প্রথম থেকে সব খুলে বলি।সেদিন উনারা আমাকে অবাক করে দিয়ে এগিয়ে এসেছিল।বাড়িয়ে দিয়েছিল তাদের সাহায্যের হাত।তারপর আমাকে নিয়ে যায় একটা বৃদ্ধাশ্রমে।সেখানে আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছিলাম তোকে নিয়ে।যদি খুঁজতে খুঁজতে আমাকে পেয়ে যায় ওরা তবেতো ওরা আমার সাথে সাথে তোকেও ছাড়বে না।সেদিন আমি বাধ্য হয়ে তোকে উনাদের কাছে দিয়ে দেই।আমি বুঝতে পারি তোকে উনারা ভালো রাখবেন।কারণ হিশাম আহমেদ এর স্ত্রী খুব ভেঙ্গে পড়েছিলেন একটি সন্তানের জন্য।তোকে সেদিন পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নিয়েছিল।আমি তখন নিশ্চিন্ত হতে পারি।অনেক বছর পর শুনি ওনাদের সন্তান হয়েছিল।তখন ভেবেছিলাম হয়তো তোকে আর ভালোবাসবে না।খুব ভয় পেয়েছিলাম।কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিল।উনারা নিজের সন্তানের থেকে তোকে বেশি ভালোবাসতো।

তারপর আমাকে নার্সিং কোর্স করানো হয়।তারপর থেকে আমি এই জীবন্ত স্বর্গের মানুষগুলোর সেবা করার কাজ পাই।তোকে দেখতে খুব ইচ্ছে হতো।কিন্তু কি করে দেখবো?কি পরিচয়ই বা দিবো?মন চাইলেও পারছিলাম না তোকে চোখের দেখাটাও দেখতে।তবে এইখানে দিনগুলো ভালোই চলছিলো।কিন্তু আমার গায়ে যে পাপ লেগে আছে।আমার শরীরে বাসা বেধেছে এক ভয়ঙ্কর রোগ।অসুখের কথা টের পেতে অনেক দেরি হয়ে গেছিলো।ততদিনে সারাগায়ে রোগ ছড়িয়ে গেছে।ডাক্তার বলেছে বেশিদিন বাঁচবো না।হিশাম আহমেদ অনেক চেষ্টা করেছেন বাঁচানোর।কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।আমার সময় দ্রুত শেষ হয়ে আসছিল।আমার মনে তখন একটাই চাওয়া ছিল আমার মেয়েটাকে একবার দেখা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরা।

একদিন ভাবলাম যদি কখনো আমার কথা আমার মেয়ে জানতে পারে তখন তার মনে অনেক প্রশ্ন থাকবে।তাই অনেক ভেবে এই ডাইরিতে সব লিখলাম।জানি না কখনো তুই এই ডাইরিটা পাবি কিনা।যদি পাস পরে নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পাবি।ঘৃনা করবি আমাকে?বিশ্বাস কর মা আমার কিছু করার ছিল না।আমি ভালোবেসে ঠকে গেছি।আর আমাকে ঘৃনা করিস বা ভুল বুঝিস আমার দুঃখ নাই।কিন্তু হিশাম আহমেদ ও উনার স্ত্রীকে কখনো কষ্ট দিস না।উনাদের জন্য আমরা নতুন জীবন পেয়েছি।উনাদের কখনো কষ্ট দিস না রে মা।আর পারলে তোর এই অভাগী মাকে ক্ষমা করে দিস।

তারপরের সব পাতাই ফাঁকা।কোথাও কিছু লিখা নেই।অপলা অঝোরে কাদঁছে।ওর অতীতটা এতটা ভয়ঙ্কর!হয়তো না জানলেই ভালো হতো।তবে ওর থেকেও ওর মা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়ে গেছে।আর ও এতটাই হতভাগা যে মায়ের কষ্টের ভাগীদার হতে পারলো না।ভোরের আলো ফুটে উঠছে অপলা চোখের পানি মুছে উঠে দাড়ালো।ডাইরিটা আগের জায়গায় রেখে।ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে এসে নামাজে দাড়ালো।মোনাজাতে হাত তুলে সে আবার ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো।জায়নামাজ উঠিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো।আর কাঁদবে না ওর মা বাবাকে আর কষ্ট দিবে না।এইখানে এসেছিল আনন্দ করতে।ওর মাকে আনন্দে রাখতে।আজ থেকে তাই করবে।কালই তো চলে যাবে।শুধু এই একটা দিন সবার সাথে আনন্দে কাটাবে।শুরু হলো এক নতুন দিন।

এহসান চৌধুরী দোটানায় পরে গেলেন।একদিকে এতদিনের বন্ধুত্ব,নিজের ছেলে আর অন্য দিকে লোকে কি বলবে?তার ছোট ছেলের বউয়ের জন্ম পরিচয় নিয়ে কথা উঠবে।কি করবেন উনি?সম্পর্কটা কি সামনে আগাবেন নাকি ভেঙে দিবেন?তিনি বুঝতে পারছেন না।এই ব্যাপারে কারো সাথে কথা বলতেও অসস্তি হচ্ছে।কিছুটা বিবেকহীন স্বার্থপরও মনে হচ্ছে নিজেকে।কিন্তু সন্তানের কথা ভেবে মাঝেমাঝে বাবা মাকে যে স্বার্থপর হতে হয়।তিনি সারারাত ধরে ভেবেছেন।এখনও ভাবছেন।কিন্তু কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না।এই ব্যাপারে একমাত্র অপলাই পারবে বুঝতে।তিনি ওর সাথে এইটা নিয়ে কথা বলবেন।অপলাই পারবে মাহিমকে আর হিশামকে বুঝাতে।আর দেরি করা যাবেনা এখনই কথা বলতে চান তিনি।অপলাদের ঘরের দিকে গেলেন।ঘরে শুধু লুবনা আছে।অপলা নেই।এত সকালে মেয়েটা কোথায় গেলো?বাগানে নয়তো?তিনি বাগানের দিকে গেলেন।

বাগানে রেহনুমা আহমেদ অপলার পাশে বসে কাদছেন।বাবাদের হয়তো কাদা বারণ তাই হিশাম আহমেদ পাথর হয়ে বসে আছেন।অপলা মাকে সামলাতে চাইছে।ও চায়না এই মানুষ দুটোকে কষ্ট দিতে।তার যে অনেক ঋণ এদের কাছে।রেহনুমা আহমেদ অপলার হাতটা ধরে বললেন,তোর এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী হ্যাঁ রে আমি এই আমিই দায়ী।তোর যত খুশি তুই আমাকে বক আমার দুঃখ নাই এটা আমার প্রাপ্য।কিন্তু তোর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবনারে।তুই তোর বাবার কথা ভেবে দেখ একদিনে মানুষটা কি হয়ে গেছে।অপলা বাবার দিকে তাকালো একবার।তারপর ওর আরেকটা হাত মায়ের হাতের উপর রেখে বলল,মা আমি আর কষ্ট পাচ্ছিনা।আর তোমাদের কাছেতো আমি ঋণী কোনো অভিযোগ নেই তোমাদের উপর মা।অপলার মুখ থেকে কথা ছিনিয়ে নেয়ার মত করে রেহনুমা আহমেদ বললেন,মা বাবার কাছে সন্তানের কিসের ঋণ?কোন ঋণ থাকতে পারে না।না মা ঋণ থাকতে পারে।অপলা রেহনুমা আহমেদকে আর কিছু বলতে না দিয়ে হিশাম আহমেদ এর তাকিয়ে বলল,বাবা আমার জন্ম হয়েছিল brothel’s এ তাই না বাবা?হিশাম আহমেদ চমকে উঠলেন।হয়তো ভাবেনি এইরকম কিছু অপলার মুখে শুনবেন।তিনি কিছু বলার আগেই অপলা আবার বললো,আমার মা একজন প্রস্টিটিউট ছিল,আমার বাবা কে আমার মাও তা জানে না তাই না বাবা?হিশাম আহমেদ কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন।রেহনুমা আহমেদও নির্বাক।কিন্তু অপলা বড্ড স্বাভাবিক ঘটনা এমনভাবে বলল।মা বাবা দুজনকেই চুপ থাকতে দেখে ও বলল,আমার এতে কোনো আক্ষেপ নেই।হিশাম আহমেদ এইবার মুখ খুললেন।তোকে এইসব বাজে কথা কে বলছে?অপলা বলল,আমি মায়ের ডাইরিটা পেয়েছি,সেখানেই সব জানতে পারি।এইবার হিশাম আহমেদ খুব চটে গেলেন।হয়তো বুঝতে পারছেন কে ডাইরিটা দিয়েছে।তিনি কাওকে ফোন করতে ফোনটা হাতে নিতেই অপলা আটকালো।না বাবা তুমি কাউকে কিছু বলবে না।আমি আমার কোনো অতীতই মনে রাখবো না।ওর মা বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।অপলা আবার বললো,তোমরা আমার জীবনের এত বড় সত্যিটা জেনেও আমাকে বুকে টেনে নিয়েছ,একবারের জন্যও আমাকে কিছু বুঝতেও দেওনি,সুস্থ সুন্দর নতুন একটা জীবন দিয়েছ।সেই তোমাদের কথা ভেবেও তো আমি আমার অতীত হাসতে হাসতে ভুলে যাবো।হিশাম আহমেদ আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না।অপলাকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন।

এহসান চৌধুরীর চোখেও পানি।কিন্তু তিনিও যে বাবা।তাকেও যে একটা কঠিন সিদ্বান্ত নিতে হবে।তবে ভয় কিছুটা কমে গেলো।মেয়েটা বড্ড সাহসী সব সামলে নিতে পারবে।তিনি না হয় কিছুক্ষণ পর কথা বলবেন।ওরা তিন জন এখন থাকুক কিছুক্ষণ।ওদেরও হালকা হতে হবে।এইসব ভেবেই এহসান চৌধুরী বাগান থেকে চলে গেলেন।

চলবে…………

তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:55

কাল ওল্ডহোম থেকে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাহিম অপলার সামনে একবারও আসেনি।কে জানে ওর কি হয়েছে।অপলা উপরে উপরে স্বাভাবিক থাকলেও তার ভেতরটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে।একমাত্র মাহিমের সাথেই সে মন খুলে কথা বলতে পারে কিন্তু তারই কোনো খবর নেই।

অপলা আর লুবনা ঘরেই বসে আছে।লুবনা এটাসেটা বলছে আর অপলা চুপ করে শুধু শুনছে।হুট করেই তখন রিজভী এলো।গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।লুবনার দিকে তাকিয়ে বলল,আসবো?লুবনা অস্পষ্ট শব্দে কিছু একটা বলল।রিজভী কী বুঝলো কে জানে সাথে সাথে ভিতরে ঢুকে গেল।লুবনা কেমন একটা লজ্জা পাচ্ছে।কিন্তু অপলা যেভাবে বসে ছিল সেভাবেই বসে আছে।রিজভী কোনো ভনিতা ছাড়াই অপলার দিকে তাকিয়ে বলল,ভাবী তুমি এইদিকে কষ্ট পাচ্ছ আর এইটা দেখে মাহিমও কষ্ট পাচ্ছে।তোমার সামনে আসতেও পারছে না তোমার এই অবস্থা দেখে।অপলা কোনো কথা বলল না।শুধু শুনলো।রিজভী কিছুক্ষণ থেমে বলল,মাহিম তোমাকে বলছে বিকেলের দিকে একবার নদীর পাড়ে যেতে।কি নাকি ইমপরটেন্ট কথা বলবে।অপলা তখনো চুপ হ্যাঁ বা না কিছুই বলল না।ভাবী তুমি কিন্তু অবশ্যই যাবে।অপলাকে চুপ থাকতে দেখে রিজভী কিছুক্ষণ বসে অপেক্ষা করল যদি কিছু বলে।কিন্তু না অপলা কিছুই বললো না।রিজভী চলে যেতে নিয়েও আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,মাহিম কাল থেকে এখনো কিছু খায়নি।তোমার এই কষ্ট ও আর নিতে পারছে না।তোমার মনের অবস্থা কেমন আমি জানি না,কিন্তু বুঝতে পারছি।এটাও বুঝতে পারছি মাহিমের চেয়ে তোমার মনের অবস্থা হাজার গুণ বেশি খারাপ।তবু বলবো তুমি একবার যেও,শুধু কি বলে শুনবে।মাহিম তোমার জন্য অপেক্ষা করবে।

রুনু ঝুনু অপলার দুহাত ঝাপটে বসে আছে।আপু তোমার কি হয়েছে?রুনু বললো।ঝুনু বললো,তোমার মন খারাপ হলে যে আমাদেরও কষ্ট হয়।অপলা দুহাতে রুনু ঝুনু কে বুকের কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে আদর করলো।কিন্তু মুখে কিছু বলল না।তূর্যরও খুব মন খারাপ হচ্ছে।সবাই কেমন দুঃখী দুঃখী মুখ করে আছে কি এমন হয়েছে যে এমন হয়ে থাকতে হবে।সত্যিই ও বুঝে না।শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে।

এহসান চৌধুরী অপলার সাথে কথা বলার সুযোগই পাচ্ছেন না।কেউ না কেউ অপলাকে ঘিরে থাকছে।উনার নিজের কাছে নিজেকে বড্ড ছোট মনে হচ্ছে আবার এইটাও তো ঠিক হয়তো ভবিষ্যতে এইরকম একটা অতীতের জন্য তার ছেলেকেও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে।তার চেয়ে এখন নিজের কাছে নিজে ছোট হওয়াও ভালো।বাচ্চারা বেড়িয়ে যাওয়ার পরও লুবনা রয়ে গেছে।তবুও তিনি ভিতরে গেলেন।চা এর বাহানায় লুবনাকে তিনি সেখান থেকে সরালেন।অপলা একটু নড়ে বসলো।ওর কেনো যেনো মনে হচ্ছে এহসান চৌধুরী এখন যা বলবে তা হয়তো খুব একটা সুখকর হবে না।এহসান চৌধুরী খুব ইতস্তত করছেন।কিছুতেই বলে উঠতে পারছেন না।অপলা ব্যাপারটা সহজ করে দিলো যাতে উনার এই অসস্তি না হয়।
– কিছু বলবেন আংকেল?
– আসলে তেমন কিছু না…
– তাহলে?
– তুমি কিভাবে নিবে….
– আমি বোধহয় বুঝতে পারছি আপনি কি বলতে চাইছেন!
– (অপরাধীর ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলেন)
– আমার জন্ম পরিচয় নিয়ে ভাবছেন তো?
– আসলে মা…আমিও যে বাবা…সন্তানের কথা…
– আর বলতে হবে না আংকেল।বিয়েটা হচ্ছে না এইতো?
– রাগ কর না..
– না না আংকেল রাগ করছি না।
– হিশাম ব্যাপারটা কিভাবে নিবে সেটাই ভাবছি!!
– এইসব নিয়ে একদম ভাববেন না আমি মা বাবা কে বুঝবো।
– কিন্তু মাহিমকে তো বুঝানো যাবে না।ও তো মানতে চাইবে না।
– (চোখের পানি আটকে বহু কষ্টে বলল)আমাকে কি করতে হবে?
– যদি তুমি মাহিমকে বুঝাও ও ঠিক মেনে নিবে।
– (মুখে একটা মিথ্যে হাসি রাখার চেষ্টা করলো)আমি মাহিমকে সবটা বুঝিয়ে বলব আংকেল।

এহসান চৌধুরী কি বলবে বুঝতে পারছে না।এইটুকু একটা মেয়ে অথচ কি সহজভাবে সবটা মেনে নিল।উনি সারাজীবনেও হয়তো এই অনুশোচনা বোধ থেকে বের হতে পারবেন না।তিনি আর সেখানে থাকতে পারলেন না।নিরবে বেরিয়ে গেলেন।

খুব কান্না পাচ্ছে অপলার।না চাইতেও যেনো ঝরঝর করে পানি পড়ছে।দুটো দিনে সব কিছু ভেঙ্গে চুরে শেষ হয়ে গেলো।সব হারিয়ে ফেললো সব।নিজের বলে আর কি রইলো ওর?পরক্ষণেই দুহাতে চোখের পানি মুছে নিলো।না ও কাদবে না।ও কাদলে যে ওর মা বাবা কষ্ট পাবে তাদেরতো কষ্ট দেওয়া যায় না।অপলা উঠে দাড়ালো।লিপির ঘরের দিকে গেলো।আজ সে মাহিমের পছন্দের রঙে সাজবে।লিপি আপুর কাছে নীল রঙের শাড়ি আছে কিনা জানতে চাওয়ায় যতটা না অবাক তার চেয়ে বেশী অবাক হল লিপি আপু যখন শুনলো অপলা শাড়িটা পড়ার জন্য চাইছে।পরক্ষণেই লিপি ভাবলো হয়তো মন ভালো করার জন্য সাজবে বা মাহিমের সাথে ঘুরবে।তাই সে পুরো আলমারিটাই খুলে দিল।কি আশ্চর্য্য একটা পুরোপুরি নীল শাড়ি পেলো না।একটা যাও পেলো তার আবার লাল পাড়।সেটাই নিল অপলা।

অনেকক্ষণ সময় নিয়ে অপলা শাড়িটা পড়লো।কিন্তু খুব এলোমেলো হয়ে আছে ঠিক ওর মনের মত।একটু অসাবধান হলেই শাড়িটা খুলে যাবে।লুবনা এগিয়ে এসে শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে তারপর সেফটি পিন লাগিয়ে দিল,এবার আর খুলে যাবে না।এখন একদম ঠিক আছে।অনেক সময় ধরেই অপলা রেডী হচ্ছে।কি এত করছে বুঝা যাচ্ছে না।মুখে হালকা করে পাউডার দিল।গাঢ় করে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিলো।গাঢ় করে চোখে কাজল দিলো।চোখের উপর আইলাইনার এর মত করে কাজল দিলো।চোখের নিচেও কাজলটা লেপ্টে দিলো।চুলগুলো একপাশে সিথি করে ডান কাঁধের উপর রাখলো।কপালে একটা নীল টিপ পড়লো।কানে মাঝারি সাইজের ঝুমকা পড়লো।দুহাত ভরে নীল আর লাল রঙের চুড়ি পড়লো।তারপর আয়নায় নিজেকে ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো।কি জানি মনে হচ্ছে নেই।হ্যাঁ বেলি ফুলের গাজরা।কিন্তু কোথায় পাবে এখন?তারপর কিছু একটা ভেবে লুবনাকে বলল,বাগান থেকে একটা ফুল এনে দিতে।লুবনা হাসি মুখে বেরিয়ে গিয়ে বাগান থেকে একটা টকটকে লাল গোলাপ এনে দিলো অপলাকে।অপলা সেটা বামপাশে কানের কাছে গুঁজে নিলো।লুবনা ফুলের উপর ক্লিপও লাগিয়ে দিল যাতে খুলে না যায়।তারপর আবার নিজেকে দেখতে লাগলো।কেমন যেন অদ্ভুদ লাগছে ওকে।লুবনা হা করে তাকিয়ে আছে।লুবনার কাছে মনে হচ্ছে অপলা এই পৃথিবীর কেউ না যেনো অন্য কোন গ্রহের কেউ ভুল করে পৃথিবীতে চলে এসেছে।

অপলা যখন বের হচ্ছে সবাই খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মেয়েটার হটাৎ কি হল কখনো তো এইভাবে সাজে না।আর একাই বা কোথায় যাচ্ছে?মনে প্রশ্ন জাগলেও মুখে কেউ কিছু বললো না।কোনো বাঁধাও দিলো না।ওরও হালকা হাওয়া দরকার।অপলা বের হয়ে গেল।সবাই ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তূর্য কেমন যেন হা হয়ে গেল।আন্নিটাকে একদম পুতুল পুতুল লাগছে।মাটির পুতুলের মতো।মানুষকে মাটির পুতুলের মতো কি করে লাগতে পারে এই ব্যাপারটা ও ঠিক বুঝছে না।

মাহিম নদীর পাড়ে বসে আছে।নদীর পানির দিকে তাকিয়ে আছে।বিকেল থেকেই বসে আছে।যখন ওর খুব মন খারাপ হয় এইখানে আসলে কিছুক্ষণের মধ্যে মন ভালো হয়ে যায়।কিন্তু আজ হচ্ছে উল্টোটা।কিছুতেই মন ভালো হচ্ছে না।সন্ধ্যে হয়ে আসছে তবুও অপলা এলো না।ওর মন খারাপ যেনো আরো বেড়ে যাচ্ছে।অপলা না আসলে ও আজ এইখান থেকে যাবে না।দরকার পড়লে সারারাত অপেক্ষা করবে।শুধুমাত্র অপলা এলেই ও এইখান থেকে যাবে।

সূর্যটা রক্তিম লাল বর্ণ ধারণ করেছে।হয়তো আর কিছুক্ষণ পরই সূর্যটা পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়বে।সূর্যের তেজস্বী তাপ আস্তে আস্তে খুব সন্তর্পনে মিলিয়ে যাবে নদীর পানির সাথে।খুব সুন্দর লাগছে সময়টা।হঠাৎই তখন কারো উপস্থিতি টের পেল মাহিম।পিছন ঘুরে তাকাবে কি ও?
চলবে…….

সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/chayabithi.11/photos/a.158674299705436/158673836372149/?type=3

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here