তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:32
অপলাদের ভিতরে নিয়ে লিপি সবাইকে ফ্রেশ হওয়ার ব্যবস্থা করে দিলো।সবার কী প্রয়োজন না প্রয়োজন সব একা হাতেই সামলাচ্ছে।অপলারা ফ্রেশ হয়ে এলে ওদের ড্রয়িংরুমে বসতে দিয়ে ছুটতে নাশতার arrangement করছে।রেহনুমা আহমেদ বলেই ফেললেন,ভাগ্য করে বউমা পেয়েছেন ভাবী।মোমেনা চৌধুরী হেসে বললেন,সবই আল্লাহর ইচ্ছা।আপনিতো এখনো আমার নাতিকেই দেখেনি।মাশাআল্লাহ একদম লিপির মত হয়েছে।মাশাআল্লাহ তবেতো আপনার ভরা সংসার। তা নাতিকে তো দেখছি না আর আপনার ছোট ছেলে মাহিমই বা কই?এসে থেকে দেখছি না।অপলা এতক্ষণ কথা শুনছিল আর মাহিমকে খুঁজছিল।মায়ের কথা শুনে একটু নড়েচড়ে বসল।
ততক্ষণে লিপি নাস্তা নিয়ে আসলো।শাশুড়ি জবাব দেওয়ার আগেই বললো,আর বলবেন না আমার দেবরের কথা আণ্টি সারা রাত আড্ডা দিয়ে সাদেই ঘুমিয়ে পড়েছে।ওর বন্ধুরা উঠে সেই কখন চলে গেছে আর মাহিমের কোনো হুশ নেই।অপলা শুনছে আর অভিমানের বোঝা বাড়ছে।ওরা আসবে আর সে কি না ঘুমাচ্ছে?রেহনুমা আহমেদ বললেন,সারারাত ঘুম হয়নি থাকনা ও ঘুমাক। পরে না হয় দেখা হবে।এইবার লিপি আর রেহনুমা আহমেদ হেসে উঠলেন।বাকিরা অবাক হলো হাসির কী হলো বুঝতে পড়ছেনা।লিপি বলল,এখন কি আর ওর ঘুমের উপায় আছে এতক্ষণে ওর ঘুমের 12টা বাজিয়ে দিয়েছে তার ভাতিজা।এবার সবাই হাসলো।আণ্টি আপনারা নাস্তা করুন আমি ওদের নিয়ে আসি।আচ্ছা যাও মা।
অপলা এতক্ষণে কথা বলল,আমি আপনার সাথে যাবো, মানে জার্নি করেছিত খোলা হাওয়ায় ভালো লাগবে।লিপি ঘুরে বলল না তোমাকেতো নেয়া যাবেনা।অপলা অপরাধী ভঙ্গিতে sorry বললো।লিপি এইবার আরও কঠিন গলায় বললো সরি তে তো হবেনা।সবাই খুব অবাক হল ।সব থেকে বেশি অবাক হলেন মোমেনা চৌধুরী কপাল কুচকে গেলো উনার,এইভাবেতো লিপিকে কথা বলতে শুনেননি তিনি।লিপি এইবার হেসেই দিলো,আমাকে এইরকম আপনি আজ্ঞে করলেতো কথাই বলবো না।এইবার সবাই হেসে উঠলো।শোনো আমাকে ভাবী বা আপু বলবে আর তুমি করে বলবে,আমিতো তোমার বড় বোনের মতো।তাইনা?জি আপু ।
অপলা আর লিপি একসাথে যাচ্ছে।ওরা সাদে গিয়ে দেখে তুমুল কান্ড। চাচা ভাতিজা মিলে মারামারি করছে।অত বড় একটা মানুষ এইটুকু একটার বাচ্চার সাথে মারামারি করছে। এ এর দিকে বালিশ ছুঁড়ছে তো ও অন্যদিক থেকে বালিশ ছুঁড়ছে।অপলার খুব হাসি পাচ্ছে।কিন্তু লিপি আপু হাসতে বারণ করছে। হেসে ফেললে নাকি আসল মজাই দেখা হবে না।লিপি অপলাকে আড়ালে দাঁড় করিয়ে সাদের ভিতর গেলো।
এই পাজি ছেলের দল এইসব কি হচ্ছে শুনি?আম্মু চাচ্চু এখনো ঘুমু দিতচছে।তুই ঘুমাইতে দিলি আর কই শুনি?তুমি সারারাত কি করতছ ঘুমুই তো দিত। হ্যা তোর মততো সারাদিন ঘুমাই আমি।কত্তদিন পরে আচো আরর আমার সাতে এমন করচ।মুখ যেমন চলছে তেমন হাতও দুজনেরই চলছে।যেনো প্রতিযোগিতা চলছে।যেকোনো ভাবেই হোক জয়ী হওয়া চাই তাদের। বালিশ না জানি তার আয়ু হারায় লিপি তাই ভাবছে।অপলা আড়াল থেকে দেখছে আর মুখ টিপে হাসছে।মাহিম পুরো বাচ্চা।ওইটুকু একটা বাচ্চার সাথে কিরকম করছে।ওর খুব হাসি পাচ্ছে সাথে অভিমানগুলো উবে যাচ্ছে।এর সাথে রাগ করা যায় নাকি পাগল একটা।তবে বুঝতে দেয়া যাবেনা।রেগে আছি এমন ভান করে থাকবো।মনে মনে হাসল।
আরে মাহিম তুমিতো থামো।তূর্য তো বাচ্চা ও বুঝেনা,তুমি তো বড় তুমি একটু বুঝ।তূর্য খুব রেগে গেছে ফটফট করে বলা শুরু করলো,আম্মু আমি বড় । তা বাবা এতোই যখন বড় তাহলে কেনো ঝগড়া করছো? চাচ্চুই তো আগে কড়লছে।কি আমি আগে তুইতো সকাল সকাল টানাটানি শুরু করলি।লিপি এইবার খুব রেগে গিয়ে বলল,বাসায় মেহমান আসছে আর তোদের চাচা ভাতিজার কান্ড দেখে কি ভাববে ছি ছি কি বিশ্রি একটা ব্যাপার হলো।মাহিমের ঘুম টুম সব উড়ে গেলো।ভাবী ওরা চলে এসেছে?আসেনি শুধু ওই দেখো তোমাদেরকেই দেখছে।এইবার আর অপলা হাসি চেপে রাখতে পারলনা।শব্দ করেই হেসে ফেললো। লিপিও অপলার দিকে তাকিয়ে হাসছে।বেচারা মাহিম সাদের গেটের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো।ওর খুব লজ্জা লাগছে।এই তুর্যটাও না আর সময় পেলো না দুষ্টুমি করার।তূর্যও হা করে তাকিয়ে আছে।ইসস এই আন্নীটাতো ওকে বাচ্চা ভাববে এখন। চাচ্চুও না,দিল আমার সব শেষ করে। চাচা ভাতিজা অপলার দিকে তাকিয়ে আছে।অপলা কিছু না বলে হাসতে হাসতে ভিতরে গেল।
চলবে…..
তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:33
আমাকে দেখে থেমে গেলে কেনো?আমি ডিস্টার্ব করলাম কি? মাহিমের আগেই তূর্য বললো,না আন্নি কোনো দিত্তাব করনি।আচ্ছা তাই বুঝি?hmm । তুমিতো খুব দুষ্টু।তুর্য মন খারাপ করে বললো,আমি না চাচচু দুষ্ট,ছোট মানুষতো,আমিতো বড় হয়ে গেছি।অপলা তুর্যকে কাছে এনে বললো,তো বাবাইটার নামটাই তো জানা হলো না।আমা নাম তুজ্জ(তুর্য)।বাহ বাবাইয়ের নামটাও বাবাইয়ের মতোই কিউট।আন্নি তুমিও অনেক কিউট। thank you বাবাই।ওয়েলকাম আন্নি।আচ্ছা আন্নি তোমার নাম কি?আমার নাম অপলা।তুর্য অনেক চেষ্টা করেও বলতে না পেরে বললো তোমাকে আন্নিই বলবো।ঠিক আছে বাবাই।লিপি এইবার তুর্যকে বললো, নিচে চলো তোমার একটা নতুন দাদু এসেছে।আমার আরেকটা দাদু এসেছে চলো চলো বলেই মায়ের হাত টেনে হাটা ধরে।লিপি কোনরকমে বলল,মাহিম সবকিছু নিয়ে নিচে নামো আর অপলা থাকো কিছুক্ষণ আমি একটু পর আসছি।ঠিক আছে আপু ।
অপলা লিপির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।আর মাহিম ওর দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।অনেকক্ষণ ভেবে বললো,
– কখন এসেছ?
– অনেকক্ষণ।
– (মাথা চুলকে)কল করনি কেনো?
– কেন?তুমি জানতে না আসবো?
– হুট করে বন্ধুরা চলে আসবে জানতাম না।তাও আমি যেতাম কিন্তু আম্মুই দিলই না।
– সেটা বুঝলাম এইখানে আসার পরও তো তোমার পাত্তাই নেই।
– এইখানে আসার আগে কল করতে পারতে।ঘুম ভেংগে যেত।
– নেটওয়ার্ক ছিলনা।আর থাকলেও তোমাকে কল করে পেতাম না।
– ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।সারারাত ঘুমাইনি।
– hmm
– রাগ করেছো?
– না।
– sorry……
– hmm
– sorry………
– hmm
– (দু কানে ধরে)sorry তো।
– (অপলা হেসে ফেললো)ঠিক আছে। নীচে চলো।
– hmm তুমি যাও আমি সব কিছু গুছিয়ে নামবো।
নিচে নামবে তার আগেই তূর্য আবার এলো।অপলাকে পাশ কাটিয়ে সোজা মাহিমের কাছে গেলো। চাচ্চু নতুন একটা দাদু এসেছে চলো একসাথে যাই।একা যেতে ভয় করছে।অপলা হেসে বলল, বাবাইতা তো কত বড় তাহলে ভয় কেনো পাচ্ছে?তুর্য মাথা চুলকুচ্ছে।কি বলবে এখন।ইসস এই আন্নিটার সামনে আবার লজ্জা পেলো।মাহিম মাথা থেকে তুর্যের হাত সরিয়ে বললো,নতুন দাদুর সাথে কথা বলার আগে এই নতুন আন্নিকে আগে চিনে নেও।তুর্য বিজ্ঞের মত বললো,এই অন্নিকে তো এখন চিনিই আর কি চিনব?এখনো চিনিসনি তাহলে শোন এই আন্নির 2টা নাম।তুর্য ঠোঁট বাঁকিয়ে টেরা চোখে তাকিয়ে আছে।অপলাও তাকিয়ে আছে ও নিজেও কিছু বুঝতে পড়ছেনা।এইভাবে তাকিয়ে না থেকে শোন,যখন সবার সামনে থাকবি তখন বলবি আন্নি আর যখন আমি থাকবো বা আন্নি একা থাকবে তখন কাকিমা বলবি।এখনতো কেউ নেই এখন ডাকতে পারিস।অপলা কপাল কুচকালো,বলে কি এই ছেলে।তুর্য হা করে একবার মাহিমের দিকে একবার অপলার দিকে তাকিয়ে বলল,কাকিমা!!অপলা খুব লজ্জা পেলো।কিছু না বলে চলে গেল।মাহিম সেদিকে তাকিয়ে হাসছে।তুর্য কি হলো বুঝতে না পেরে মাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে।
মাহিম সবার সাথে কথা বলছে। তূর্য অবাক চোখে রুনু ঝুনুকে দেখছে।ওর থেকে একটু বড় দেখতে কিন্তু দুইটা মানুষ অথচ একই রকম দেখতে হয় কিভাবে বুঝতে পড়ছে না।আজ যা যা হচ্ছে দেখছে তাতে ওর মনে হচ্ছে ওর আরও বড় হতে হবে বাবার মত।এখন চাচ্চুর থেকে একটু বড় হয়েছে তাই জন্যই সব বুঝতে পারছে না।বাবার মত হলে সব বুঝতে পারবে । সে এখন রুনু ঝুনুকে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই চলেছে।রুনু ঝুনুরও খুব ভালো লাগছে তুর্যর সাথে কথা বলতে।কথা বলেই শেষ না এসাথে খেলার জন্য দুজনকে নিয়ে চলে গেলো।লুবনা তূর্যের কথা শুনে বলছে,এতটুকু একটা ছেলে অথচ কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলছে।আসলে সবটাই আমার কৃতিত্ব,মাহিম এমনভাবে বলল যেনো এইসবে এভারেস্ট জয় করে এলো।সবাই ওর দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে উঠল।মাহিম কিছুটা বিব্রতবোধ করলো।
লুবনা মাহিমের কথায় মাহিমের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেল।সেই ছেলেটা অপলা আপুর ফ্রেন্ড।উনাদের এইখানেই থাকবো আমরা?সেদিন পার্কে উনাকে দেখে কেমন একটা অনুভুতি হয়েছিল। আজও হচ্ছে।কিন্তু কেনো?ছি ছি উনিতো আপুর বন্ধু আমি কি সব ভাবছি।মাহিম চোখ ঘুরতেই চোখাচোখি হয়ে গেল।লুবনা তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলো।অপলার কাজিন আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেনো?তবে কি নিঝুমকে নিয়ে সবাই আমাকে অন্যকিছু ভাবছে!!ওর খুব অসস্তি হচ্ছে।
চলবে…….