তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:34
আজ সারাদিন বাসায়ই কাটল।সবার সাথে গল্প করে।তবে সারাদিনে একবারও মাহিমের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি।এইখানের সবাই এত ভালো তাইতো খুব সহজে আপন করে নিতে পারে।রাতে সবাই একসাথে বসে খেলো।খাওয়া শেষেও আড্ডা গল্প যেনো শেষই হয়না কারো।অপলার খুব ভালো লাগছে সবকিছু।ওর মাকেও খুব আনন্দে দেখে আরও ভালো লাগছে।একসময় আড্ডা শেষ হলো।রাতে থাকার সবরকম ব্যবস্থা লিপি নিজে করে রেখেছে।সবার সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে লিপি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
অপলা আর লুবনা একসাথে ঘুমাবে।এই প্রথম অপলা কারো সাথে বেড share করছে ।লুবনার সাথে টুকটাক কথা বলছে অপলা।অপলা চাচ্ছে মাহিমের বিষয়ে লুবনার সাথে কথা বলতে।তাহলে ওর কি করা উচিৎ যদি লুবনা বলতে পারে।কথার ফাঁকে অপলা বলেই ফেলল,আচ্ছা লুবনা মাহিমকে তোমার কেমন লাগে?লুবনা চমকে গেলো কি জিজ্ঞেস করছে আপু।ইতস্তত করে বলল,ভালোইতো লাগে আপু।জানো লুবনা ছেলেটা ভারী অদ্ভুদ।এইরকম কেনো বলছো আপু?তাহলে সবটা শুনো।বলেই অপলা একে একে মাহিমের সাথে দেখা হওয়া থেকে যা যা ঘটেছে সব বলল।লুবনা খুব অন্যমনস্ক ভাবে সব শুনছে আর ভাবছে,ছি লুবনা তুই কি না বোনের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ভাবিস।এইসব ভাবনা ভাবাও অন্যায়।না আমাকে সামলে রাখতে হবে।আমার মনে যেটা এসেছে সেটা মুগ্ধতা ছাড়া আর কিছু না।আর সেই মুগ্ধতাকেও মনে রাখা যাবেনা বলেই আড়ালে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।অপলা সবটা বলে যখন লুবনার দিকে তাকালো তখন দেখলো ও খুব অন্যমনস্ক হয়ে আছে।কিন্তু কেনো? ও আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।
অপলা অনেকক্ষণ চুপ করে আছে দেখে লুবনা বলল,আপু তুমি কি ভাবছো?অপলা লুবনার দিকে তাকিয়ে বলল,তাইতো বুঝছি না।আপু তুমি এখন ঘুমাও।আমিও ভাবী তোমার আর ভাইয়ার সম্পর্কের সমীকরণটা ঠিক কি?অপলা কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।তবে লুবনা এখনো ভেবেই চলেছে।ওর খুব অপরাধ বোধ হচ্ছে।কিছুক্ষণের জন্য ওর মনে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য।ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।আপুও বুঝে সে অনেক ভালোবাসে ভাইয়াকে কিন্তু বলতে পারছে না।আমি আপুকে বুঝবো। হ্যা,এতে যদি আমার অপরাধবোধ কমে।
মাহিম বিছানায় শুয়ে ছটফট করছে।সে আর তার স্বপ্নচারিণী এক সাদের নিচে।ভাবতেই সারা গায়ে শিহরণ খেলে যাচ্ছে।কবে পাবে সে তার স্বপ্নচারিণীকে নিজের করে?আচ্ছা ওতো এখনো বললো না আমাকে ভালোবাসে কিনা?কবে যে শুনবো ওর মুখ থেকে ভালোবাসি।তবে আমি জানি আমার স্বপ্নচারিণী আমাকে ভালোবাসে।ওকে আমি এইবার সব বলবো যা কিছু আছে আমার মনে।আর দেরি করা যাবেনা।ওর থেকে দূরে থাকা আর সম্ভব না।এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল।
খুব ভোরে অপলার ঘুম ভাঙলো।চোখ খুলে পাশে লুবনাকে না পেয়ে হকচকিয়ে উঠে বসলো।রুমের গেটও খুলে রাখা। এত সকালে মেয়েটা গেলো কই?অপলা দ্রুত বাইরের দিকে পা বাড়ালো।main door ও খোলা।অপলা কিছু না ভেবেই বাইরে চলে গেল।বাগানে লুবনাকে দেখে সস্তির নিশ্বাস ফেলে পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। এত সকালে বাইরে কি করো?অপলার কথা শুনে লুবনা অপলার দিকে তাকিয়ে বলল,প্রকৃতি দেখছি,অনেকদিন সকালের এই বিশুদ্ধ প্রকৃতি দেখা হয়না অপলা চারপাশটা ভালো করে দেখলো আসলেই সুন্দর।আপু এইরকম পরিবেশে প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিলে দেখবে শরীর মন দুটোই চাঙ্গা হয়ে যায়।অপলা চুপচাপ দাড়িয়ে প্রকৃতি দেখছে।আপু একটা কথা বলবো? হ্যা,বলো অনুমতি চাচ্ছো কেনো?তোমার পার্সোনাল ব্যাপারতো তাই।আচ্ছা বলো।তোমাকে আর মাহিম ভাইয়াকে একসাথে খুব মানায়।অপলা লজ্জা পেলো। সত্যি বলছি আপু।তুমি ভাইয়াকে তোমার মনের কথা বলে দেও।লুবনার দিকে তাকিয়ে কি কথা বলবো?বলবে তুমি ভাইয়াকে ভালোবাসো।আমি নিজেইতো বুঝতে পারছিনা আমি ভালোবাসি কিনা।লুবনা অপলার হাত ধরে বলল,আপু তুমি ভাইয়াকে খুব ভালোবাসো যেটা তুমি নিজেও বুঝতে পারছনা বা বুঝতে চাইছো না।অপলা অবাক হয়ে বলল,এত কিছু তুমি বুঝ কিভাবে?আপুর চোখ দুটোই বলছে সব,আর দেরি না করে বলে ফেলো।অপলা লজ্জা পেয়ে ছোট করে hmm বললো।লুবনা আলতো হেসে বললো,আর লজ্জা পেতে হবেনা।এখন ভিতরে চলোতো।তুমি যাও আমি কিছুক্ষণ পরে আসছি।ঠিক আছে আপু।
লুবনা চোখের পানি আড়াল করে মুছে নিয়ে ভিতরে চলে এলো।যেই রুমে ডুকবে তখনই পিছন থেকে ডাক এলো,এই শোনো।লুবনা পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে মাহিম।কি বলবে বুঝতে না পেরে বললো,জি বলুন।মাহিম মাথা চুলকে ইতস্ত করে বললো,অপলা কোথায়? মানে রুমে তো দেখছি না।আপু বাগানে আছে।আপনি যান না আপুর কাছে।ওহ,thank you।লুবনা কিছু না বলে রুমে চলে গেল আর মাহিম চললো তার স্বপ্নচারিণীর দিকে।
চলবে……..
তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:35
অপলা বাগানে হাঁটছে। খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটতে খুব ভালো লাগছে।লুবনার কথাগুলো খুব ভাবাচ্ছে ওকে।মৌনতাও এই কথাগুলো বলেছিল।তবে কি সত্যিই আমি ভালোবাসি মাহিমকে?তাই ওকে নিয়ে এত ভাবী?ওর কাছে থাকলে ভালো লাগে। ওর কথা ভাবলেও ভালো লাগে।ওকে দেখতে ছট ফট করি কি এইজন্যই?লাস্ট এই দেড়মাসএ না চাইতেও অবাধ্য মনতো ওকেই খুঁজতো।সত্যিই ভালোবাসি কি? হ্যা,আমি ভালোবাসি মাহিমকে।
মাহিম কিছুটা দূর থেকে দেখছে তার স্বপ্নচারিণীকে।ঠিক যেনো সকালের মতোই স্নিগ্ধ মায়াময়।অপলা বিমুগ্ধ নয়নে সব কিছু দেখছে ঠিক দেখছে না গভীরভাবে কিছু ভাবছে।আর মাহিম বারবার তার প্রেমে হারিয়ে যাচ্ছে।যেনো নিজের মাঝেই নেই।মাহিম ধীর পায়ে এগুতে লাগলো।আর অপলাও আপন মনে হাঁটছে।হঠাৎই ওর মনে হলো ওর কাধে কারো উষ্ণ নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে।আচমকা এমন হাওয়ায় ও কিছুটা চমকে পিছনে ফিরতে নিলেই কারো পিঠের সাথে ধাক্কা খেল।ভালো করে তাকাতেই মাহিমকে দেখে সস্তির নিশ্বাস ফেললেও প্রচন্ড লজ্জায় চোখ বন্ধ করে বলল কি করছো?অপলার ডাকে বাস্তবে ফিরে এলো মাহিম।কি করছিল ও এইসব।অপলা আবার বললো,কি হয়েছে তোমার?ঠিক আছো তো?
মাহিম অপলার কথার উত্তর না দিয়ে উল্টে অপলার দিকে তাকিয়ে বলল,তোমার মধ্যে কি আছে বলতো?অপলা ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।বলো না কি আছে?অপলা মৃদু স্বরে বলল,কি থাকবে?ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে অপলার দিকে তাকিয়ে আছে।এত মায়াবী কেনো তুমি?অপলা লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাড়ালো।এই ছেলেটার যেনো একটাই কাজ কি করে আমাকে লজ্জা দেওয়া যায়,বিড়বিড় করে বলল।মাহিম ওর কান অপলার দিকে এগিয়ে,কি বলো বুঝি না তো।অপলা আরও লজ্জা পেয়ে চলে যেতে নিল আর মাহিম গিয়ে পথ আটকে দাড়ালো।অপলাকে কিছু বলতে না দিয়ে ওর হাত টেনে ঘাসের উপর বসালো,নিজেও বসলো।
– কি হলো এইভাবে বসালে কেনো?আমি রুমে যাবো।
– শিশির ভেজা নরম ঘাসের উপর বসে গল্প করতে কত ভালো লাগে জানো তুমি?
– না জানিনা।
– এই জন্যই তো বসিয়েছি।
– বসলামতো এইবার যাই?
– গল্পতো এখনো করিনি।
– তো কি করছো?
– আমার স্বপ্নচারিণীকে দেখছি।
– (আবারও লজ্জা পেলো)এই স্বপ্নচারিণীর মানে কি?
– তোমার সাথে পরিচয় হওয়ার আগে থেকে বলতে পারো বুঝ হবার পর থেকেই আমার মনে একটা অবয়ব আপনাআপনিতেই তৈরি হয়।যখন আরও বুঝতে শিখলাম তখন থেকে কল্পনার সেই মানবীর সাথে কথা বলতাম,গল্প করতাম মনে মনে। কত রাত কেটে গেছে শুধু তার স্বপ্ন দেখে।একটা সময় বুঝতে পারলাম আমি সেই কল্পনা মানবীকে ভালোবেসে ফেলেছি।যে কিনা শুধুই আমার স্বপ্নে বিচরন করে আর আমাকে তার মধ্যে বিভোর করে তুলে।সেই থেকেই সে হয়ে উঠে আমার স্বপ্নচারিণী।
– বুঝলাম,তাহলে আমাকে কেনো বলো স্বপ্নচারিণী?
– তুমিই তো আমার সেই কল্পনা মানবী।
– (কপালে ভাঁজ হয়ে গেল)আমি?
– হ্যা,তুমি।
– আমিতো ভেবেই নিয়েছিলাম আমি হয়তো কখনোই আমার স্বপ্নচারিণীকে বাস্তবে খুঁজে পাবো না।কিন্তু আমার সব ধারণা পাল্টে গেল যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি।স্প্রিড বোর্ডে।কিন্তু তারপর আবার হারিয়ে গেলে।তবে আমি আশা ছাড়িনি।একবার যখন দেখেছি খুঁজে আমি পাবই তাকে।
– এত কনফিডেন্ট??
– আমার ভালোবাসার উপর আমার বিশ্বাস আছে।(একটু থেমে)জানো তারপর যখন তোমাকে আবার দেখি সেদিন নিল শাড়িতে হুমায়ূন আহমেদের কাল্পনিক চরিত্র এর রূপা না নিল শাড়িতে আমি আমার স্বপ্নচারিণীকে দেখেছি, খোলা চুল ভোরের স্নিগ্ধ বাতাসে উড়ছে মাতাল করে দিচ্ছিল আমাকে সেদিনই আমি পুরোপুরি তোমাতে বিলীন হয়ে গেছি।খুন করে দিয়েছিলে কাজল আঁকা সেই রাগী চোখের দৃষ্টিতে।
– (লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।ভাবতেই পারছেনা কি বলছে ও।ওর কি বলা উচিত এখন?)
– আমি বারবার তোমাতে হারিয়ে যাই।(অপলার চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে)তোমার মায়ার নেশায় আমি বারবার মাতাল হতে চাই।একবার অধিকার দিয়ে দেখো তোমাকে আমার ভালোবাসায় রাঙিয়ে দিবো।
– (নিশ্চুপ।যেনো নিশ্বাস নিলে তার শব্দে মাহিমের কথা শুনতে পাবেনা)
– কিছু বলছো না কেনো?(পলকহীন দৃষ্টিতে অপলার দিকে তাকিয়ে আছে)
– বলার মত কিছু কি রেখছ?
– তারমানে তুমি চাওনা আমদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হোক?
– আমি কি তাই বলেছি?
– (করুন সুরে)চাও সেটাওতো বলনি?
– সব বলে দিতে হবে?
– তার মানে তুমি চাও……
– জানিনা(অপলা উঠে দ্রুত ভিতরে যেতে পা বাড়ালো)
– আরেরএএএএএ পালাচ্ছ কোথায়…….রেডী থেকো আজকে তোমাকে নিয়ে যাবো সেই জায়গায় যেখানে আমাদের দেখা হয়েছিল।
অপলা শুনেও দাড়ালো না ও যে খুব লজ্জা পাচ্ছে।মাহিম ঘাসের উপর শুয়ে পড়ল।ওর নিজেকে আজ পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে।
চলবে……..