তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:3
ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।নির্জন সন্ধ্যা,চাঁদ যেনো তার অপূর্ব শুভ্র আলো ঢেলে দিচ্ছে পৃথিবীর বুকে।সমস্ত নিসর্গ যেনো তার শুভ্রতায় আত্মনীল হয়ে গেছে।চাঁদের সিগ্ধ আলোয় প্রকৃতির এই শোভা দেখে অভিভূত অপলা।সারাদিনের জার্নির ক্লান্তি যেনো নিমিষেই দূর হয়ে যাচ্ছে।আপন মনেই আপলার মনে পড়ে গেলো রবীন্দ্রনাথ এর সেই গানের লাইন,
”আজ জোৎস্না রাতে
সবাই গেছে বনে
বসন্তেরই মাতাল সমীরণে।”
হঠাৎই মনে হলো গত দুদিন কলেজ যাওয়া হয়নি।কালতো যেতে হবে।মৌনতাকে কল করা দরকার।সেই ভেবেই ফোনটা হাতে নিয়ে কল করলো মৌনতাকে। দুবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলো মৌনতা।
-hello!মৌনতা!
-হ্যা,বল।
-কি করছিস?
-পড়ছি।তুই?
-ছাদে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছি। তুইও যা ভালো লাগবে।
-একা একা চাঁদ দেখে মজা নেই।feel আসেনা বুজলি?
-আমি ওসব বুঝি না।আমার একাই ভাল লাগছে।
-তুই বুঝবি ও কখনো গাঁধী একটা।
-না বুঝাই ভালো।
-ঢাকায় কখন ফিরলি?
-এইতো half an hour হবে।
-কাল কলেজ আসবি তো?
-হ্যা,তাইতো তোকে কল করলাম।
-সেই তুইতো আর গাল গল্প করতে ফোন করবিনা।এই জন্যই তোকে সবাই অহংকারী বলে।
-তুইও?
-হ্যা,আমিও। ছাড় এইসব শোন কলেজ থেকে পিকনিক যাচ্ছে।তুইতো আসিসনি তাই জানিস না। যাবিতো?
-দেখি,কোথায় যাচ্ছে?
-রাজশাহী।
-সবেইতো রাজশাহী থেকে ফিরলাম।
-গেছিস আবার যাবি।না করতে পারবি না।
-hmm ভেবে দেখি।
-তুই ভাব ভেবে হ্যাঁ ই বলবি।কাল দেখা হবে। ওকে bye.
-bye.
অপলা বিড়বিড় করে বলল আবার রাজশাহী।
পরদিন কলেজ এ গিয়ে দেখলো সবাই খুব excited পিকনিক নিয়ে।সবাই যাচ্ছে।এখন অপলা না গেলে আবার সবাই বলবে সে অহংকারী।তাই সেও যাবে।
অপলাদের কলেজ থেকে পিকনিক এ যাচ্ছে রাজশাহী।কোনো একটা ইকো পার্কে,রাজশাহী ইউনিভার্সিটি আর রাতে একটা বাংলো তে উঠবে। পরদিন ঢাকায় ব্যাক করবে। পিকনিকে যাওয়ার preparation চলছে সবাই খুব ব্যস্ত।
এরই মাঝে এসে গেলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। হ্যাঁ,আজ অপলাদের পিকনিক যাওয়ার দিন।সবাই নির্দিষ্ট সময়ে কলেজে উপস্থিত হয়।অপেক্ষা করছে কখন যাবে।সবাই আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে। অপলাও আজ সেজেছে।মৌনতার জোরাজুরি তে সে আজ শাড়ি পড়েছে।নীল শাড়ি।কপালে নীল টিপ,দুহাত ভরে নিল চুড়ি,খোঁপায় বেলি ফুলের মালা।এই প্রথম ও শাড়ি পড়লো।তাই যেনো আরও বেশি সুন্দর লাগছে ওকে।
সকাল 8 টা নাগাদ সবাই বাসে উঠলো ।ওরা রওনা হলো 8.15 মিনিটে।বাসে সবাই খুব আনন্দ করলো।অনেক হাসির কান্ড করলো।অপলা জালনার পাশের সিট এ বসে সব enjoy করছে।তবে মাঝে মাঝেই ওর কেমন যেন একটা অনুভুতি হচ্ছে। যার নাম সে জানেনা ।অনুভূতিটা ঠিক কেমন টা বলা যায়না।কখনো মনে হয় কোনো পিছুটান,কখনো বা নিছকই ভাবনা।
এসব ভাবনার মাঝে কখন যে ওরা পৌঁছে গেলো টেরই পেলনা অপলা।মৌনতার ডাকে ভাবনায় ছেদ ঘটে।বুঝতে পারে ওরা গন্তব্যে পৌঁছে গেছে।তবুও ওর যেনো গন্তব্য শেষ হয় না।
চলবে……..
তুমি আমার স্বপ্নচারিণী
উম্মে হাবিবা তনু
Part:4
স্পট এ পৌঁছেই দুপুর হয়ে এলো।সবাই খুব ক্লান্ত হলেও খুব excited।কোনরকম এ খাবার এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।এই সুযোগে সবাই চারপাশটা ঘুরে দেখছে।অপলা আর মৌনতা একটা সর্ষে ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটছে।ওরা সেখানে কিছু ছবিও তুললো।তারপর ইকো পার্কের ভিতর ঘুরে ঘুরে দেখছে ওরা।খুব একটা বড় না পার্কটা।অল্প কিছু রাইডার আছে।
এইসব ঘুরে দেখতে দেখতে খাবার আয়োজন করা হয়।সবাই একসাথে খেল।খাবার সময় ও অনেক হাস্য কৌতুক হলো।কতভাবে যে একটা তুচ্ছ বিষয়কে বড় বানিয়ে আনন্দ করতে পারে এরা।এইখানে না এলে হয়তো অপলা তা জানতোই না।অপলা বিমুগ্ধ নয়নে সব দেখছে।খুব enjoy করছে ও।সকালের সেই অদ্ভুদ ভাবনাগুলোও ভুলে গেছে।
দুপুরে খেয়ে খানিক বিশ্রাম নিয়ে বিকালে গেলো রাজশাহী ইউনিভার্সিটি।সেখানে ঘুরে ঘুরে সব দেখছে ওরা।কেউ ছবি তুলছে,কেউ তুলে দিচ্ছে,কেউ বিভিন্ন information জানছে,কেউ বা সেগুলি টুকে নিচ্ছে,কেউ কেউ খোশ গল্প,আমোদে মশগুল।অপলা দেখছে সেসব কিছুই।কিছু ভালো লাগা নিয়ে।তবুও কেন যেনো মাঝে মাঝেই উদাস লাগে বুঝেনা তার কারণ সে।
বাংলো তে আসতে আসতে রাত হয়ে গেল। চারপাশ টা আর দেখা হলো না ভালো করে।ফ্রেশ হয়ে সবাই রাতের খাবার খেয়ে আবার আড্ডায় মশগুল হয়ে গেলো।যদিও বেশিক্ষণ ধরে আড্ডা জমলো না।সারাদিনের ক্লান্তি ঝেকে বসেছে।সবাই সবার নির্ধারিত রুমে চলে গেল। সবাই খুব ক্লান্ত থাকায় তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল।
অপলার খুব ভোর ভোর ঘুম ভেঙে গেলো।ফ্রেশ হয়ে ও ভাবলো একটু চারপাশটা দেখে আসবে।বের হয়ে দেখলো ও গত সপ্তাহে ওর বাবার সাথে এসেছিল।তবে খুব ভাল করে কিছু দেখা হয়নি।আসা যাওয়ার পথে যেটুকু দেখছে। ও হাঁটতে হাঁটতে বাংলোর বাইরে চলে আসলো। খুব কাছেই নদী দেখা যাচ্ছে। ওদিকপানে গেলে মন্দ হয়না।অপলার একা ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস আছে।
মাহিম এর মন আজ বড্ড অস্থির হয়ে আছে।স্বপ্নে সে আবার তার স্বপ্নচারিণী কে যে দেখছে।যেনো তার খুব কাছেই আছে তার স্বপ্নচারিণী।হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে দিতে পারবে।সত্যিই কি সে কখনো পারবে?নাকি তার স্বপ্নচারিণী শুধুই স্বপ্ন?না সে তো স্বপ্ন নয়।তাকে তো আমি দেখিছি।সে তো স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর।খুব বলতে ইচ্ছে হয় তাকে তুমি আমার স্বপ্নচারিণী।
নামাজ পড়েই সে নদীর পাড়ে বসে আছে।মনের অস্হিরতা যেনো কাটছেই না।এমন তো তার হয়না কখনো।আজ কি হলো তার!!তবে আজ কিছু ঘটতে চলেছে!!!
কিছুক্ষণ হাঁটার পর বুঝতে পারলো যতটা কাছে ভেবেছিল ততটা কাছে নয়।এখন অনেকটা দূরে।যাবে কি যাবে না বুঝতে পারছে না।আবার এত কাছে এসে সকালের নদীর পাশে যাওয়ার ইচ্ছাটাকেও ছেড়ে দিতে পারছে না।হটাৎ দেখলো কেউ একজন বসে আছে নদীর পাড়ে। দোনমনো ভাবনা বেরে গেল।এত সকালে কেউ কেনো বসে আছে?খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। আশেপাশে কি হচ্ছে কিছুই বলতে পারবেনা বোধ হয়।এত মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছে?জানতে খুব ইচ্ছে হলো অপলার।সে কি যাবে নাকি যাবে না!!ভাবতে ভাবতেই সামনে এগুলো অপলা।।
চলবে…….
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/chayabithi.11/photos/a.158674299705436/158673836372149/?type=3