তুমি একমাত্র আমার অধিকার পর্ব-১৪

0
1261

#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব১৪

শুভ্র বলল,তোমার ডিভিশনের উপর আমার সবকিছু নির্ভর করে।আগে শোনো তো।আসলে…
আমি বললাম,আসলে কি!বলো আমাকে। কি কোনো সমস্যা হয়েছে?তুমি আমাকে বলো।
আসলে আমাকে ৬ মাসের জন্য সিংগাপুর যেতে হবে বিজনেস পারপাছে।
শুভ্রর কথা শুনে যেন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।যাকে না দেখে একমুহূর্ত থাকতে পারি না,যাক বুকে মাথা না রেখে ঘুমাতে পারিনা,যেই মানুষটা ব্রেকফাস্ট না খায়িয়ে দিলে খাই না তাকে ছাড়া কীভাবে থাকব আমি?মনে মনে ভাবতে লাগলাম।
শুভ্র নিরবতা ভেঙে বলল, জানি নিরাপাখি তোমার কষ্ট হবে।সেজন্যই তুমি বললে আমি যাবো।তুমি না করলে যাবো না।আমার কাছে সবার আগে তুমি।তোমার ডিসিশনই লাস্ট ডিসিশন। কিন্তু আমার সবকিছু যেন এলোমেলো লাগছে।চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলাম।আর কিছু মনে নেই।
_______________ _______________

চোখ খোলে নিজেকে বিছানাতে আবিষ্কার করলাম।আর পাশে চেয়ারে শুভ্র বসে আছে।বিছনার আরেক পাশে বাবা,আম্মু আর চাচিমা বসে আছে।সম্ভবত আমার অজ্ঞান হওয়ার কথা শুনে ওনারা এসেছে।এমনকি ওইদিন আমি ছাদে উঠতে গিয়ে পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছিলাম। সেজন্য বিকেলের মধ্যে সবাই আমাদের বাসায় হাজির।এগুলো নতুন কিছু না আমার কাছে।

আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে শুভ্র বলল,কি করো তুমি এগুলো বলোতো!ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করো না।তাই দুদিন পর পর মাথাগুরে পরে যাও।এরকম করলে আমার সাথে তোমাকে রাখবো না।আম্মু তুমি যাওয়ার সময় তোমাদের বউমা কে নিয়ে যাবে।কাকিমা পিচ্চি যেদিন থেকে ঠিকমতো খাবে ওই দিন আমাকে ফোন দিবে।আমি গিয়ে ওইদিন ওকে নিয়ে আসবো।আমি ওর ব্যাগগুছিয়ে দিচ্ছি।
ওনার ব্যাগ গুছানোর কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি করে বললাম,তুমি বললেই কি আমি যাবো নাকি!আমার ইচ্ছে হলে আমি যাবো।আর আমি এখানে থাকলে তোমার কি হে?আমি আমার বরের বাসায় থাকি হুহ।আর যেখানর নিজেই ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করে না,নিজের যত্ন নেয় না সেখানে আমার খাওয়ার কথা বলে!হাউ ফানি বলে আমি হাসতে লাগলাম।
শুভ্র আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,বেশ কথা শিখেছিস তো তুই!আজকে আবার সবাইকে দেখে তো দেখছি তোর সাহস ও দেখছি বেড়ে গেছে। আমাদের ঝগড়া দেখে সবাই হাসছে।চাচিমা বললো,ওফ শুভ্র থাম তো এবার।মেয়েটা অসুস্থ। তারপর ও ওকে বকেই যাচ্ছে।
আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,ঠিক বলেছো চাচিমা।তোমার ছেলেটা আস্তো একটা হনুমান।না না শিম্পাঞ্জি শুভ্র। হার্ট জিনিসটা ওর মধ্যে নেই।
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,হুয়াট?
আমি বললাম,ঠিকই বলেছি।নয়তো আমার মতো বাচ্চা নিরিহ মেয়েকে কেউ বকে বুঝি!

____________ ____________

অনেকক্ষন আগেই সবাই চলেগেছে।আর আমি চিন্তা ভাবনা করে দেখেছি শুভ্রের যাওয়া উচিত। ৬ মাসেরই তো ব্যাপার।আমি ঠিক নিজেকে সামলে নিবো।এ ব্যাপারে ওর সাথে কথা বলতে হবে।আমার চিন্তার মাঝে হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। স্কিনে নাম দেখাচ্ছে বেষ্টি।আমি তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করলাম।
কিরে নয়নার বাচ্চা, কি করিস?
দোস্ত আমার সব শেষ রে!আমি এবার কি করবো?
আমি বেশ উৎসুক হয়ে জিজ্ঞের করলাম,কি হয়েছে রে দোস্ত? কে মারা গেছে?আংকেল! সত্যি অনেক কষ্ট হচ্ছে তোর জন্য। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না
তুই থামবি নিরা।কি আজেবাজে কথা বলছিস!বাবা মরতে যাবে কেন!
আমি বললাম,তাহলে!আন্টি!
নয়না দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললাম,তুই থামবি।আমাকে আগে বলতে দে।আমার বিয়ে ঠিক করেছে এক ছেলের সঙ্গে।
আমি অবাক হয়ে বললাম,তুই যেহেতু মেয়ে তোর বিয়েতো ছেলেদের সাথেই হবে সিম্পল।
নয়না বলল,ট্রাস্ট মি নিরা,আজকে তোর কপাল ভালো তুই আমার সামনে নেই নাহলে পায়ের জুতা খোলে তোকে বারি দিতাম।আমি বলেছি যে,আমি চিনি না জানি না এমন একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে।আমি বিয়ে করবো না এখন।আর দেখা করবে বলেছে কালকে।
আমি বললাম,চিল মামা।আমি আছি তো।দেখা করার দিন আমাকে সাথে নিয়ে যাস।তোকে কিছু করতে হবে না।

____________ ___________
আমি শুভ্র মুখোমুখি বসে আছি।আমি শুভ্রকে বললাম,আমি চাই তুমি সিংগাপুর যাও।৬ মাসেরই তো ব্যাপার।সমস্যা নেই।কথাগুলো বলার সময় কথাগুলো যেন গলায় আটকে যাচ্ছিল।কিন্তু খুব কষ্ট করে হলেও কথাগুলো বললাম।
নিরাপাখি তুমি ইদানীং বেশ চালাক হয়ে যাচ্ছো।সবার সাথে চালাকি করো ভালো কথা।কিন্তু ভুলে যেও না আমি শুভ্র। আমি তোমার মনের কথা বুঝতে পারি।১০০% না বুঝতে পারলেও ৮০% বুঝতে পারি। আমি জানি তুমি খুব কষ্ট করে কথাগুলো বলেছো।নেক্সট টাইম এসব ভালো থাকার অভিনয় আমার সাথে করবে না।আর আমি ঠিক করেছি আমি যাবো না।বুঝতে পেরেছো!
আমি কিছুটা রাগ দেখিয়ে বললাম,শুভ্র বাচ্চামো বন্ধ করো।তোমাকে যেতে হবে।হবে মানে হবেই আমার দিব্যি।সবসময় সবকিছু ভেবে পারা যায় না।কিছু সময় ধৈর্য্য ধরতে হয় ভালো কিছুর জন্য।আর ৬ মাসেরই তো ব্যাপার।
কিন্তু নিরাপাখি!
কোনো কিন্তু নয়।তুমি যাবে মানে যাবেই।বলে আমি চলে আসলাম।

(আমি মনে মনে ঠিক করে নিলাম ওর সামনে আমাকে স্ট্রং থাকতে হবে।কারন ওর জন্য যাওয়াটা খুবই দরকার)
ইদানীং যে আমার কি হচ্ছে আমি জানি না।মাঝে মাঝেই চোখে ঝাপসা দেখি।আবার মাথাও ঘুরায়।শরীর দুর্বল লাগে।কিন্তু শুভ্রকে এখন একথা বলা যাবে না।কারন বললে ও সিংগাপুর যাবে না।

________ ___________
রেস্টুরেন্টে বসে আছি আমি আর নয়না।অপেক্ষা করছি ওই ছেলেটার জন্য যার সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে ওই ছেলেটার জন্য। দোস্ত আমি এই মুহূর্তে বিয়ের জন্য প্রিপেয়ার না।যদিও ছেলেটা অনেক স্মার্ট ও লয়াল আর বলেছে আমাকে বিয়ের পর পড়াশোনা করাবে কিন্তু তুইই বল বিয়ের পর কি পড়াশোনা হয়?নয়না বলল।
আমি বললাম,কেন আমি কি পড়াশোনা করছি না!শুভ্র তো বলে যে আগে আমার ক্যারিয়ার তারপর অন্যসব কিছু।
আরে তোর হিসাব তো আলাদা।আর সবাই তো আর শুভ্র ভাইয়া না।ওনার মতো বর পেতে কপাল লাগে।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,হয়েছে হয়েছে।তোকে আর শুভ্রের সাফাই গাইতে হবে না।
কিছুক্ষন পর সেই কাংক্ষিত ব্যক্তিটির দেখা পেলাম।আমার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিনা…….

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here