#তুমি_নামক_প্রাপ্তি
#part:15
#Suraiya_Aayat
জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ, শান্ত দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে বেশ অনেক্ষণ হয়ে গেল ,ডাক্তারের ইনজেকশন দেওয়ার পরও আরুর জ্ঞান ফিরল না তার সেই কথাটা ভেবে আরিশ রীতিমতো বিরক্ত ৷ এই মুহূর্তে ডক্টরকে সামনে পেলে হয়তো রিভলভারের গুলিটায় ওনার শরীরটা ঝাঝরা করে দিতো ৷
এদিকে আরিশের টিমের লোকজনও আর্শিয়ানের কোন খবর দিল না এখনো , সবকিছু নিয়ে একরাশ বিরক্তির সাথে রাগটাও কাজ করছে খুব বেশি ৷
.
হঠাৎ করে হাতে থাকা ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠতেই ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল তাতে মিহির নামটা ভেসে উঠছে ৷ মিহির হলো ওদের টিমের সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য একজন , যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারে আরিশ ৷ মিহিরের কলটা আসার সাথে সাথে আরিশের আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে মিহির কি কারনে ফোন করেছে মিহিরকে কোন কাজ দিলে মিহির সেই কাজটা অত্যন্ত দায়িত্ব সহকারে করে তা আরিশ এই কয়েক বছরে ভালোই বুঝতে পেরেছে ৷
ফোনটা কানে দিতেই ওপাশ থেকে মিহির সামান্য উত্তেজনা নিয়ে বলে উঠলো
” আর্শিয়ানকে আমরা পেয়েছি ৷ আপনার ছেলে এখন আমাদের কাছে আছে ,ওর কোন আঘাত পৌঁছাতে দিইনি আমরা ৷ আর আসল অপরাধীকে আইমিন যে আর্শিয়ানকে ধরে নিয়ে যেতে চাইছিল আমরা তাকে পেয়েছি ৷ ”
কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মিহির থেমে গেল আর তাতে আরিশের অবশ্য বুঝতে বাকী রইল না যে মিহির কিছু একটা বলতে বাধা পাচ্ছে ৷
মিহির কিছু বলছোনা খানিকটা নিস্তব্ধতায় রেখেছে নিজেকে ৷ ওর নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে আরিশ বলে উঠলো
” যেটা বলতে পারছোনা বলে ফেলো তাড়াতাড়ি৷”
আরিশের কথা শুনে এবার নির্লিপ্তভাবে বলল
” স্যার ওদের দলের মধ্যে বেশি জন ছিলো না কেবলমাত্র 2 জন মতো ছিল আমরা একজন কে ধরতে পেরেছি আর একজন কে ধরতে পারিনি সে পালিয়েছে , আমরা তাকে ধরার চেষ্টা করছি ৷ আর আহাদ sir লোকজন পাঠিয়েছেন ধরার জন্য ,আপাতত নতুন কোনো আপডেট নেই, এখন শুধু মাত্র একটাই চিন্তা যে তারা যদি আপনার গোপনীয়তা সবাইকে জানিয়ে দেয় তাহলে কি হবে !
আরিশ খানিকটা মুচকি হেসে বলল
” তুমি অজান্তেই একটা ভালো কাজ করে ফেলেছো মিহির , বাদ বাকিটুকু আমাকে সামলাতে দাও ৷ অপরাধী যদি নাই জানতে পারে যে তার শত্রু বেঁচে আছে তাহলে তাকে পুনরায় মারার জন্য হামলা করবে কি করে !”
কথাটা শুনে আরিশ একটা মুচকি হাসলো ৷
আরিশের মুখ থেকে এমন একটা কথা শুনে মিহির একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল , আরিশ যতক্ষণ এমন একটা কথা বলেছে তার মানে আরিসে নিশ্চিত কোন কিছু ভেবেছে আর তার একটা সমাধান করবে ৷
মিহির একটা দম ছাড়া নিঃশ্বাস নিয়ে বলল
” স্যার মনের ব্যাথাটা হালকা করলেন ৷আচ্ছা স্যার আমি আর্শিয়ানকে আপনার কাছে পাঠাচ্ছি আপনি কোন চিন্তা করবেন না ৷”
আরিশ তখনই বলে উঠলো
” উহু একদম নয়, এখানে পাঠিওনা আর্শিয়ানকে মিহির ৷”
মিহির খানিকটা অবাক হয়ে বললো
” স্যার আপনার আর ম্যাডামের কাছে আর্শিয়ান কে পাঠাবো না তো কোথায় পাঠাবো ?”
“আর্শিয়ানকে তুমি তার নানাজানের বাসাও পাঠাও, সেও তার কলিজার টুকরা নাতিকে একটু দেখুক না হয় , আমার শ্বশুর মশাই তার জন্য এতো ভেবে ফন্দি আটে আর তার ফলাফলটাও তো ওনাকে জানাতে হবে না !”
কথাটা শুনেই মিহির দাঁত বার হেসে বলল
” আচ্ছা স্যার পাঠাচ্ছি ৷”
” হমম ৷”
কথাটা বলে আরিশ ফোনটা কেটে দিলো ৷”
ফোনটা কেটে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখল আরু ছুটে এসে ওর গলায় ছুরি ধরেছে ৷
আরিশের গলায় ছুরি ধরে বলল
” বলুন কোথায় আমার আর্শিয়ান ? কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন ওকে ! আমি জানি আমার আর্শিয়ান কে আপনি লোকজন দিয়ে কিডন্যাপ করিয়েছেন কারণ আপনি তো আমাকে সহ্য করতে পারেন, আর না আমার ছেলেকে ৷ প্রথম দিন থেকেই আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না তাই এমনটা করেছেন তাইনা ! ভালোই ভালোই বলুন আমার আরশিয়ান কোথায়, নাহলে আমি এক্ষুনি আপনাকে শেষ করে দেবো , আপনার বাঁচার আর কোনো পথ নেই নিহান ৷”
নিহান নামটা শুনে আরিশ একটু স্বস্তি পেল ,ও ভেবেছিল আরু হয়তো ওর সমস্ত কথা শুনতে পেরেছে, এতবছর পর এত সহজে সব খেলা শেষ না করে ও আরুর সামনেও ধরা দিতে চায় না ৷ হয়তো এখনো তার উপযুক্ত সময় হয়ে উঠেনি তাই , যেদিন উপযুক্ত সময় হবে সেদিন নিজেই আরিশ আরুর কাছে আত্মপ্রকাশ করবে , তার আগে যে ওর অনেক কাজ বাকি ৷
আরু আরিশের গলায় চাকুটা ধরে আছে আর আরিশ ওর ডানহাতটা ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আরুর কোমরটা জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো, হঠাৎ আচমকা এভাবে আরিশের ছোঁয়া পাওয়ায় আরুর হাত থেকে ছুরি টা পড়ে গেল ৷
আরিশ ওকে কাছে টেনে নিয়ে বলল আরুকে ঘুরিয়ে জানালার সাথে চেপে ধরে ওর চোখের ওপর ফু দিয়ে বলল
” এই নিহান আবরার কখনো আপনার ক্ষতি চাইনা,তিনি আপনার শুভাকাক্ষীই বলতে পারেন,আর্শিয়ানকে আমি আমার চ্যাম্প বলি ,আমি কেনো ওর কোন ক্ষতি করবো,আর এই যে আরিশের ফুলনদেবী সবসময় এভাবে আমার দিকে ছুরি তাক করা বন্ধ করুন অন্যথায় আমি কোন অনর্থ ঘটিয়ে বসবো আর যার ফলে আপনি বলবেন যে আমি লুচ্ছা ৷😉”
নিহানের কথাটা শুনে আরুর রাগ হয়ে গেল , বুঝতে পারছে যে আরিশ নামক নিহান মজার ছলেই কথাগুলো বলছে ৷ রেগে আরু আরিশকে চড় মারতে যাবে তখনি আরিশ আররু হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আরুর দুই হাত ওর নিজের হাতের মুঠিতে ভরে নিলো , আরু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে তবুও আরিশ ছাড়ছে না, আরু রেগে ঝলসে উঠছে , রাগে আরুর নাকের ডগাটা লাল টকটক করছে, আরিশ আরুর বন্দী অবস্থার সুযোগে আরুর নাকে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াতেই আরুর সমস্ত কাপাকাপি বন্ধ হয়ে গেল ৷
আরিশ একটা দুষ্টু হেসে বলল
” রেগে গেলে আপনাকে এত সুন্দর লাগে পুরো টুইটুই ,তা আপনাকে আজকে না রাগালে বোঝাই যেত না ৷আপনার এই লুকটা দেখার জন্য মাঝেমাঝে আপনাকে রাগানো যায় দেখছি ৷
এমনিতেই আপনার যা তেজ তাতে মাঝে মাঝে ঝলসে যাই !😉
খানিকটা মজার ছলে কথা গুলো বলছে আরিশ তা আরুর বুঝতে বাকি নেই ৷
আরু দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” আমার আরশিয়ান কোথায়? ওর যদি আপনি কোন ক্ষতি করেছেন তাহলে আপনাকে আমি ছাড়া ছাড়বো না বলে দিলাম , আপনাকে শেষ করার জন্য আমি একাই যথেষ্ট ৷”
বলে এক ঝটকা মেরে আরিশের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ালো ৷
আরু আরিশের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই আরিশ বলে উঠলো
” আপনার ছেলে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল, পুলিশি তদন্ত করার ফলে পুলিশ তাকে পেয়েছে ৷ আপনার ছেলে আপনার হোটেলের ঠিকানা টা জানেনা তাই আপনার ধানমন্ডির বাসার ঠিকানা দিয়েছে , আর আপনি প্রায় 6 থেকে 7 ঘন্টার মত ঘুমিয়ে ছিলেন , এতক্ষণে আপনার ছেলে হতো তার বাসায় পৌঁছে গেছে তাই অযথা বেশি বাড়াবাড়ি না করে, আর বেশি ছোটাছুটি না করে ঢাকায় ফিরে যান , আর আমার কথা বিশ্বাস না হলে আমার কিছু করার নেই ৷”
বলে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে জানালার ধারে মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো ৷
এই মুহূর্তে নিহানকে যেন আরূর অবিশ্বাস করতে ইচ্ছা না , তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে ছুটে গেল ৷ এই মুহূর্তে বাসে বা ট্রেনে যাওয়ার মতো সময় ওর কাছে নেই ,প্লেনে এমারজেন্সি টিকিট কেটে ঢাকা যাবে ৷
আরিশের হোটেলের রুম থেকে বেরিয়েই তাড়াতাড়ি ওর নিজের হোটেলে ফিরে গেল ৷ এমারজেন্সি ফ্লাইট এর টিকিট কেটে ঢাকা রওনা দেবে ও , নিহানের কথা শুনে ঢাকা ফিরে যাচ্ছে যদি ঢাকা গিয়ে জানতে পারে যে নিয়ান যা বলেছে মিথ্যে তাহলে নিহানকে কেটে টুকরো টুকরো করে ওকে জলে ভাসিয়ে দেবে আরু ৷
আরিশ দেখছে যে আরু হন্তদন্ত হয়ে হোটেল থেকে বেরোচ্ছে ,তা দেখে মুচকি হাসছে, কিভাবে ওকে থ্রেট দিয়ে গেল ভেবে আরিশের হাসি পাচ্ছে ৷আগে যে আরু একা পথ চলতে ভয় পেতো এখন তার মধ্যে এতোটা সাহস দেখে আরিশ মুগ্ধ হচ্ছে ৷
ও নিজেও চেয়েছিলো আরু নিজেকে কঠিন করে তুলুক যাতে সহতে কেউ আঘাত হানতে না পারে ৷
ফোনটা কানে ধরে মিহিরেকে ফোন করে বলল
” যে লোকটাকে ধরেছেন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসুন ৷”
💕
আরমান সাহেব বেশ আয়েশ করে মুখে পানটা গুঁজে সোফাতে পা টা ছড়িয়ে দিয়ে বসলেন ৷ ফোনটা করার আগে একবার দরজার দিকে তাকিয়ে নাশ্চিত হয়ে গেলেন যে কেউ আছে কি না ৷
কাউকে দেখতে না পেয়ে ফোনটা কানে ধরে কলটা করলেন
অপর পাশ থেকে ইলমাজ কঠিন স্বরে বলে উঠলো
” কি চাই আপনার, আপনার বাসা থেকে অপমান করে বার করে দিয়েও কি আপনার শান্তি হয়নি নাকি এখন আমার মন থেকে আরুকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এখন হুমকি দিতে এসেছেন ৷”
ইলমাজের কথা শুনে আরমান সাহেব গালভর্তি পান নিয়ে হো হো করে হেসে বললেন
” এই যে ছেলে দেখি রাগ করে ৷ তোমরা পোলাপাইন ,তোমাদের এতো রাগ করলে চলে নাকি বাপু, গুরূজনরা তোমাদের কে কি আর এমনি বকাবকি করে, তারা তো ভালোর জান্যই বা দেই সেটা তো বোঝো ৷”
ওনার কথা শুনে ইলমাজ ভ্রু জোঁড়া কুচকে বলল
” কি বলতে চাইছেন কি আপনি ৷”
” আমি যা বলতে চাইছি তা খুব সহজ বাবা ,তুমি তো আরুকে বিয়ে করতে চাও তাইনা !”
ইলমাজ দৃঢ কন্ঠে বলে উঠলো
” হমম, আর এটা কি আপনি যানেন না !”
ফিকফিক করে হেসে বলল
” বেশি না,মাত্র পাঁচ লাখ টাকা ৷”
” মানেটা কি ?”
” পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে আমি আরুর সাথে তোমার বিয়ে দেবো যদি তুমি রাজি হও ৷”
ইলমাজ গর্জে উঠে বলল
” আপনার সাহস হয় কিভাবে আরুকে টাকার দাড়ি পাল্লায় মাপার ৷ নিজের মেয়েকে টাকার বিনিময়ে দিতে চাইছেন, ছিঃ লজ্জা করে না আপনার !”
” লজ্জা ! কি যে বলোনা, টাকা পয়সার জন্য আবার লজ্জা ! এত কিছু শুনতে চাইনা বাপু সহজ সহজ বলো টাকা দিতে পারবে কি না, টাকা দিলে আরু তোমার নাহলে কখনো আরুকে তুমি পাবানা এটা মনে রেখো ৷”
.কথাটা বলে ইলমাজের কলটা কেটে দিলো ৷
ইলমাজ হতভম্ব ওনার কথা শুনে, মানুষ কতোটা যঘন্য হয় সেটা ওনাকে না দেখলে বোঝাই যেতো না ৷
#চলবে,,,,
এইকদিন নিহান লিখতে গিয়ে কতোবার যে আরিশ লিখেছিলাম ঠিক নেই তবে আজকে আরিশ নামটা মনের মতো করে লিখতে পেরে খুশি লাগছে😌৷
আর কয়েক পূর্বের মধ্যেই ফাটাফাটি মারপিট আর রহস্য উন্মোচন হবে, বি রেডি ৷ তারপর একটু আধটু রোমান্স হবে🙆🏻🤭৷ উইইমা টুইটুই🙈