তুমি নামক প্রাপ্তি’ পর্ব-১৭

0
2004

#তুমি_নামক_প্রাপ্তি
#part:17
#Suraiya_Aayat

আরু উঠে যেতে নিলেই পাশে বসে থাকা মানুষটা ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল, খানিকটা রাগ আর বিরক্তি মিশ্রিত একটা অনুভূতি কাজ করছে এই মুহূর্তে আরুর মাঝে ৷
পিছন থেকে আরিস খানিকটা ফিচেল সুরে বলে “উঠলো চলে যাচ্ছেন , বসবেন না বুঝি ! ইরিটেট হচ্ছেন?”

আরু একইভাবে থেকে আরিশের থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে, নিহানের দিকে ও তাকাবে না , লোকটার উপর অনেক রাগ আছে ওর যেগুলো কোন না কোন একদিন সুদে আসলে উসুল করে নেবে ৷

আরুর এমন ছটফটানি দেখে আরিশ এবার আরুর হাতটা ধরে হ্যাচকা টান দিতেই আরু ওর পাশের সিটে ধপ করে বসে পড়ল , চাইলেই ও আরুকে নিজের গায়ের উপর ফেলতেই পারতে কিন্তু ফেলেনি কারন একে আরুর বিধ্বস্ত মন তার ওপর রেগে গিয়ে যদি গোটা এয়ারপোর্টের মাঝে শোরগোল শুরু করে দেয় তাহলে মানুষজন তাকে যে পাগল বলবে না তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, আর আরুর যা তেজ তাতে আরু কখনোই হাত ধরে টানাটানির মতো এসমস্ত অবিচার মেনে নেবে না ৷ আরুকে পাশে বসিয়ে আরিশ বলল

” আমি মানুষটা কিন্তু বড্ড জেদি, যেটা করতে বাধা দেবেন সেটাই কিন্তু বারবার করবো তাই নেক্সট টাইম যেন আর বলতে না হয় কথাটা ৷”

আরু নিহান নামক লোকটার কাছ থেকে এমন অধিকারবোধ দেখে খানিকটা ভ্রু নাচিয়ে বলল
” এতটা অধিকারবোধ ! ওয়াও !আমি অবাক হচ্ছি আপনার সাহস দেখে ৷ ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু টাচ মি ফারদার ৷ যদি আমাকে আর টাচ করেছেন তো আমি পুলিশ ডেকে আপনাকে এয়ারপোর্ট থেকে বার করে দেব ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ৷”

আরিস আরুর হাতটা ছেড়ে হো হো করে হেসে দিয়ে বললো
” আপনি মানুষটাই এমন খিটিখিকে কেন বলুন তো! আর এত রেগে রেগে কথা বলেন কেন ? মেয়েদেরকে এত রাগী রাগী লুকে দেখতে একদম ভালো লাগেনা, আর আপনি কখনো হেসে কথা বলেন না কেন বলুন তো, আপনি কি জানেন আপনাকে হাসলে কতোটা সুন্দর লাগে , আপনি অন্য সব মেয়েদের মত কেন নন?

আরিস এর দিকে খানিকটা ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আরু বলল
” কারণ আমার জীবনটাও যে অন্য সকলের মত নয় ৷”
কথাটা বলার সময় আরুর গলাটা ধরে এলো, আরিশের প্রতি ওর অভিমান গুলো হয়তো প্রকাশের ব্যার্থ চেষ্টা ৷

আরুর মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর আরিশ বলে উঠলো
“হাউ ফানি , আপনিতো দেখছি এবারও সিরিয়াসলি নিয়ে নিলেন কথাটা ৷ এই শর্ট টা আমি কালকে দেবো শুটিংয়ে তাই আপনাকে দেখে মনে হলো একটু প্যাকটিস করতে চাইছিলাম ,আপনি দেখছি আমার প্রতিটা কথাকে নিজের মনের মাঝে গেথে নেন ,ব্যাপারটা কি বলুনতো ফুলনদেবী !”

আরুর কাছে খানিকটা ঝুকে গিয়ে আরুকে বলল ৷

আরু নিহানের কথার পরিবর্তে বলল
” আমি তো আরিশের ফুলনদেবী , আজকে আরিশ কথাটা বললেন না যে ৷”

আরুর কথা শুনে নিহান বলে উঠলো
” আপনি শুধুমাত্র আরিশের তাই চাইলেও তো এই নিহান আর আপনাকে কেড়ে নিতে পারেনা তাই আরকি ৷ ”

নিহানের কথা শুনে আরু মুচকি হেসে বলল
” সত্তিটা বোঝার ক্ষমতা যে আপনার আছে সেটা জেনে ভালো লাগলো ৷”

কথাটা বলে আরু আর একটা সিট দূরে সরে বসলো ৷ আর মাঝের সিটে ওর ব্যাগটা রাখলো ৷

” সবসময় শারিরীক দূরত্বই যাথেষ্ট হয় না, মানুষটার মনের দূরত্বটা কম থাকলে এগুলো তো কেবলমাত্র একটা অযুহাত ৷”
কথাটা বলে আরিশ সেখান থেকে উঠে গেল ৷

💖

প্রায় এক ঘন্টা ধরে প্লেনে জার্নির পর আরু ঢাকা পৌঁছালো রাত তিনটার দিকে ৷ এত রাত্রে যেহেতু কোনো গাড়ি-ঘোড়া পাওয়া সম্ভব নয় তাই আরু আবিরকে ফোন করেছিল যেন ওকে এয়ারপোর্টে নিতে আসে ৷

এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে আরূ ,আবির এখনো এসে পৌঁছায়নি ৷ আরুর পাশ দিয়ে নিজের লাগেজ গুলো টেনে নিয়ে চলে যাওয়ার আগে আরূর দিকে এক নজর তাঁকালো কিন্ত কোন কিছু বলল না তারপর একটা গাড়ি আসতেই সে গাড়িতে উঠে চলে গেল আরিশ ৷

আরু লক্ষ করেছিলো এয়ারপোর্টে অনেক মানুষই নিহান এর দিকে অদ্ভুত এক দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছিল যার অর্থ নিহান যে তাদের সামনে ক্রাশ নামক এক ধরনের বস্তু তা তাদের দৃষ্টিতেই বোঝা যাচ্ছিল ৷ নিহান ও কিছু কিছু সময় এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল তা দেখে আরু বিড়বিড় করে বলেছে
” নায়ক মানুষ, স্বভাব এর ঠিক নেই ৷”

নিহানকে হুবহু আরিশের মতো দেখতে আর সব মেয়েরা আরিশের দিকে এমন নজরেই দেখতো আর সেই জিনিসটা আরূর একদম পছন্দ হতো না ,তাই সবাই যখন নিহানকে সেই নজরে দেখছিল তখন আরুর কিছুটা হলেও রাগ হচ্ছিলো , যদিওবা জানে এগুলো অযৌক্তিক তাই বারবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছিল ৷

আবিরের গাড়িতে উঠতেই আবির আরুকে হাজার রকম প্রশ্নের মুখোমুখি করলো ৷

“আপনারা এত রাত্রে কেন ফ্লাইটে আসতে গেলেন? আপনি একা কেন আরশিয়ান কোথায় ?আপনাদের কি কোনো বিপদ হয়েছিলো? আপনার সাথে আরশিয়ান কে দেখছি না কেন ?আপনি আমাকে একবারও ফোন করলেন না কেন? আপনি যদি কোনো সমস্যায় পড়ে থাকেন তাহলে আমাকে কেন বলেন নি?”
এই ধরনের হাজারো প্রশ্নে আরু তিতিবিরক্ত হয়ে গেল,একেই মাথাটা ধরে আছে তার ওপরে আবিরের হাজারো রকম প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলেই এখন ওকে নাটাঝামটা খেতে হবে ৷

আরু আবিরের কথা শেষ হতেই বলল
” আপনার কাছে জল হবে?”

আবির আরুর প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুঁচকে বলল
” হ্যাঁ হবে ৷”

বলে গাড়িটা থামিয়ে জলের বোতলটা আরুর সামনে ধরতেই আরু বোতলটা আবিরের কাছ থেকে নিয়ে এক নিমেষেই খেয়ে ফেলল ৷

আবির আরুর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ৷ আরু আবিরের দৃষ্টি উপেক্ষা করে আবিরকে বোতলটা ফিরিয়ে দিয়ে বললো
” এবার আপনি গাড়িটা স্টার্ট দিতে পারেন , আর আমিও প্রস্তুত আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ৷”

আবির ওর ভ্রূ জোড়া প্রসারিত করে জলের বোতলটা সঠিক জায়গায় রেখে দিয়ে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করলো ৷ এবার ও প্রথম থেকে বলতে লাগলো যে ওদের সাথে কি কি হয়েছে ৷

আরুর কথাগুলো বলতে বলতেই আরমান সাহেবের বাসার সামনে গাড়িটা এসে থামলো ৷ আবির গাড়ী থেকে নামছে আর আবির তখন বলছে
” আমার কিন্তু এই নিয়ান নামক লোকটাকে একদম বিশ্বাস হচ্ছেনা, খুব সন্দেহ হচ্ছে তার ওপরে ৷”

আরু একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল
” জানিনা আমার সাথে ঠিক কি হচ্ছে তবে এত জটিলতার মধ্যে আর বাঁচতে পারছিনা একটু প্রাণ খুলে বাঁচতে চাই সুখে শান্তিতে থাকতে চাই আর যদি সেরকম প্রয়োজন হয় তাহলে এইবার সত্যি আরশিয়ানকে নিয়ে এখান থেকে অন্য কোথাও চলে যাবো ৷”

আরু কয়েক পা এগিয়ে যেতে নিলেই আবার পিছু ঘুরে আবিরের গাড়ির কাছে এসে বলল
” আপনি চাইলে আসতে পারেন আমার কোন আপত্তি নেই ৷”

আবির আর বেশি কথা বাড়ালোনা গাড়ি থেকে নেমে আরুর পিছু পিছু হাটা দিল ৷

“এতো রাতে ঘুম নষ্ট করার কি দরকার ছিল ! কালকে সকালে ও তো আসতে পারতিস , তাতে করে তোর ছেলেকে কি আমরা মেরে ফেলতাম ?”

আরু আরমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে রাগী দৃষ্টি নিয়ে বললেন
” একদিন বলেছি না আমার আর আমার ছেলের থেকে তুমি দূরে থাকো, তোমার মুখে ওর নামটাও যেন না শুনি ৷”
কথাটা বলে আফসানা বেগমের কল থেকে ঘুমন্ত আরশিয়ানকে কোলে নিল আরু ছেলেকে জাপ্টে ধরে আছে , আর এদিকে আরমান সাহেব তার বিকৃত মস্তিষ্ক নিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলে চলেছেন ৷

” আমি জানিনা ঠিক কে বা কারা এমনটা করার চেষ্টা করেছে তবে যারা চেষ্টা করেছে তার ফল ভালো হবে না ৷ যদি কখনো জানতে পারি এর আসল অপরাধী কে তাহলে আমি এক একটাকে কেটে পদ্মায় ভাসাবো কথাটা বলে আরূ চলে গেল ৷”

আবির শুধু সকলের ভাবভঙ্গি দেখছে তার বোঝার চেষ্টা করছে এক একজনের মতিগতি ৷

আরমান সাহেব একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন ” একটা মেয়ে মানুষ হয়ে এত তেজ কিসের! একদিন ঐ তেজ ই তো রসাতলে যাবে, সেদিন আমিও দেখবো ৷”
আরমান সাহেবের এমন কথা শুনে আহানের একদম ভালো লাগলো না , ওর বোন এতটা জেদি সাহসী তাতে করে আরমান সাহেভের খুশি হওয়া উচিত তার পরিবর্তে এমন একটা নেগেটিভ ভাবনাচিন্তা ওনার মাথাকে করে আসতে পারে সেটা ভাবেনি আহান ৷ আরমান সাহেবের এমন কথায় ও একদমই খুশি নয় ৷

💖

যে লোকটাকে ধরতে পেরেছো তাকে আজকে রাত্রে আমার ধানমন্ডির বাসায় নিয়ে আসবে , অনেক বোঝাপড়া বাকি ৷

#চলবে,,,,,

নাইস , নেক্সট না লিখে ভালো কিছু লিখতে পারেন যাতে লেখিকা আরো ভালো কিছু লেখার জন্য উৎসাহ পাই ৷ কিন্ত আপনারা তো নাইস আর নেক্সট এ সীমাবদ্ধ তাই কিছু বলার নেই আর ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here