তুমি নামক প্রাপ্তি’ পর্ব-৪

0
2292

#তুমি_নামক_প্রাপ্তি
#part:4
#Suraiya_Aayat

প্রিয় মানুষের উপস্থিতির আভাস পেয়ে আরূ আরশিয়ান কে নিয়ে আপ্রান ছুটে চলেছে, যত দ্রুত সম্ভব তার কাছে পৌঁছানো যায় ৷ ছোট্ট আরশিয়ান বুঝতে পারছে না হঠাৎ তার মায়ের এভাবে ছুটে যাওয়ার কারণ , আরু শক্ত করে জাপ্টে ধরে জড়িয়ে আছে আরশিয়ানকে ৷
ছেলেকে নিয়ে তাড়াতাড়ি পৌছানোর জন্য লিফট না নিয়ে সিড়ি দিয়েই উঠতে লাগলো , যেন তাতেই ও তাড়াতাড়ি আরিশের কাছে পৌছাতে পারবে ৷ আরশিয়ান বুঝতে পারছে যে তার মায়ের এভাবে তাকে নিয়ে উঠতে কষ্ট হচ্ছে তবুও তার মা যে তাকে ছাড়বে না কখনো , তাই আরশিয়ান ও আরূকে শক্ত করে জাপটে ধরলো ৷ কোনো রকম দৌড়াতে দৌড়াতে আরূ তিতাসের রুমের সামনে গিয়ে আরশিয়ানকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল ,জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে ও, দম আটকে আসার উপক্রম ৷ শেষে একবার জোরে একটা শ্বাস নিতেই আরশিয়ান আম্মু বলে চেচিয়ে উঠলো ৷ আরূ আরশিয়ানের পিঠে হাতে রেখে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো
‘ আমার কিছু হয়নি ৷’
কথাটা বলে আরূ বেশ কিছুখন থেমে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলো ৷ বেশ কয়েকবার জোরে দরজা ধাক্কা দিতেই একজন এসে দরজা খুলে দিতেই আরূ তাকে দেখে কয়েক কদম পিছিয়ে গেল ৷ তাহলে এই লোকটার নামই কি তিতাস ?

লোকটা আরূর দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল
‘ কি চাই ? আর এভাবে ভরদুপুরে দরজা ধাক্কাচ্ছেন যে! ঐখানে একটা কলিং বেল আছে সেটার প্রয়োগ করতে জানেন না?’

আরু যেন চমক’ কাটিয়ে উঠতে পারছে না, ভেবেছিল হয়তো সত্যিই এখানে আরিশ থাকবে কিন্তু তবুও তিতাস নামক লোকটাকে এখনো চোখের সামনে দেখে যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না , যেন বারবার মনে হচ্ছে এখানেই আরিশ কোথাও লুকিয়ে আছে ৷

আরূ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর লোকটার দিকে নিস্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে যেন এই মুহূর্তে এই লোকটাকে অন্তত সেখানে আশা করেনি ও ৷ আরুর এমন দৃষ্টি দেখে লোকটি জিজ্ঞাসা না করে পারলো না
‘ এই যে ম্যাডাম আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি বলছেন না কেন?’

আরু এবার গম্ভীর হয়ে বলল
‘ আমার আরিশ কোথায়?’

লোকটা ওর কথা শুনে খানিকটা অবাক হয়ে গিয়ে বলল
‘কি যা তা বলছেন ! এখানে আরিশ বলে কেউ থাকে না ,আপনি হয়তো কোন ভুল করছেন ৷’

আরু এবার আরশিয়ান কে কোল থেকে নামিয়ে আর একবার জিজ্ঞাসা করল
‘ বলুন আমার আরিশ কোথায়!’

লোকটা এবার খানিকটা রেগে গিয়ে বলল
‘ আমি কি করে জানব আপনার আরিশ কোথায়, আর আজাইরা বিরক্ত করব না তো , যানতো এখান থেকে , কোথা থেকে আসে এসব কে জানে !’

কথাটা শোনা মাত্রই আরূ আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করল না দুই হাত দিয়ে তিতাসকে ধাক্কা মেরে রুমের ভীতর ঢুকে গেল ৷ ও তিতাসকে এতটাই জোরে ধাক্কা মেরেছে যে তিতাস হুড়মুড় করে সোফার কাছে পড়েছে আর সোফার কাঠের পায়ায় ধাক্কা লেগে কপালকা কেটে গেছে অনেকটা ৷

আরূ ঘরের ভিতরে ঢুকে চারিদিকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে আরিশকে, জোরে জোরে চিৎকার করতে করতে বলেছে
‘আরিশ আপনি কোথায়? কোথায় আপনি ?আপনি কি আমার ডাক শুনতে পাচ্ছেন না! কোথায় আপনি!’

আরূ জোরে জোরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর বারবার বলছে
‘আরিশ আপনি কোথায় ? আপনি যেখানেই থাকুন বেরিয়ে আসুন , আপনার এই বিরহ আমার আর সহ্য হচ্ছে না,ভালো লাগছে না এই দীর্ঘ পাঁচ বছরের লুকোচুরি, এ সমাজের কাছে আমি যে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি তা কি আপনি বুঝতে পারছেন না !’

আরূ সারাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজছে যেন কোন মূল্যবান রত্ন হারিয়ে গেছে, আরিশ নামক মানুষটাই যে ওর সব ৷ জিনিসপত্র সমস্ত কিছু হাতড়াতে হাতড়াতে ভেঙ্গে ফেলেছে, অনেক কিছু ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে তিতাসের , ঘরবাড়ির খারাপ অবস্থা ,বিছানার চাদর লন্ডভন্ড , ফুলদানি ভেঙে ফেলেছে, আলমারির ভিতরে আরিশকে খোঁজার জন্য জামা কাপড় গুলো লন্ডভন্ড করেছে, রূমটাকে দেখলে যে কেউ বলবে যে সেখানে দিনে দুপুরে ডাকাতি হয়েছে ৷
তিতাস আরুর কান্ড দেখে, থামানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ওর হুংকারের থেকে আরূর তীব্র গর্জন যেন ওর কানে বেশি আসছে ৷ বারবার গর্জনের শব্দ ভেসে আসছে
‘ আরিশ আপনি কোথায়? ‘
.
তিতাস দেখল যে আরূ আর বেশিক্ষণ এখানে থাকলে ওর ফ্ল্যাটের আর একটা জিনিসপত্রও ঠিকঠাক থাকবে না , তাছাড়া আরূ যেভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করছে তাতে অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন ভাবতেই পারে যে তিতাস তার সাথে কোন খারাপ কাজ করেছে , সেইজন্য আর কোনরকম দেরি না করে তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাটের ল্যান্ড লাইনে ফোন করতেই আবির ফোনটা ধরে উঠলো ৷
আবির সচরাচর ফোন ধরে না, কিন্তু ও ভেবেছিল যে কোন একটা অঘটন আরূ নিশ্চই ঘটাবে ৷ আরূর চোখ-মুখের অবস্থা আর যেভাবে তিতাসের রুমের দিকে ছুটে গেছিল তা দেখে কিছুটা হলেও আবির আন্দাজ করেতে পেরেছিলো , তাই এই কথাটা অন্য কারোর কানে পৌঁছালে আরূর এ ফ্ল্যাটে থাকা দুষ্কর হয়ে যাবে তাই যতটা সম্ভব তিতাস নিজেই ব্যাপারটাকে সামলাবে তার জন্যই ও ল্যান্ড ফোনের কাছে বসে ছিল যদি কোন ফোন আসে ৷

তিতাস ঝটপট করে একনাগাড়ে বলে ফেলল
‘ হ্যালো তাড়াতাড়ি আপনি আমার রুমে আসুন , এসে দেখুন এখানে একটা মহিলা এসে আমার রূমে ঢুকে আমার রুমের দফারফা করে রেখেছে , সব জিনিস ভেঙে চুরমার করছে, ওনাকূ আমি থামাতে পারছিনা,আর শুধু বলছে আরীশ আপনি কোথায় ?’

আবির যেন এতখন এই ঘটনাটির আশঙ্কাই করছিলো, আর কিছু না শুনে ফোনটা কেটে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে চলে এলো 4th ফ্লোরে , সেখানে এসে দেখল রূমের আরশিয়ান দাঁড়িয়ে আছে হতবাক হয়ে ৷ আবির আরশিয়ানকে দেখে ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল
‘ তোমার মাম্মাম কোথায়?’

আরশিয়ান ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ঘরের দিকে ইশারা করতেই আবির ঘরের ভিতরে দৌড়ে ছুটে গেল, গিয়ে দেখল তিতাস মাথায় হাত চেপে ধরে বসে আছে সেখান থেকে টুপটুপ করে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে, আবির বুঝতে পারলো যে তীব্রভাবে কোনকিছু দিয়ে তিতাস আঘাত পেয়েছে ৷

আবির তাড়াতাড়ি তিতাসের কাছে গিয়ে বলল
‘ একি আপনার এমন অবস্থা হলো কি করে?’

‘ওই পাগল মহিলাটা এসে আমার ঘরটা লন্ডভন্ড করে দিয়েছে, আপনি ওনাকে থামান ৷’

আবির থতমত খেয়ে বললো
‘ কোথায় উনি?’

আমার বেডরুমে গিয়ে দেখুন কেমন লন্ডভন্ড করছে, আমি ওনাকে থামাতেই পারছিনা, আপনি তাড়াতাড়ি যান না হলে ঘরের বাদবাকি যে সমস্ত জিনিস আছে সেগুলোও আর একটাও ভালো থাকবেনা ৷

আবির আর কোন রকম দেরি না করে রুমের ভিতরে ঢুকতেই অনেক ভাঙ্গা জিনিস ওর পায়ের কাছে পড়তেই সেগুলো দেখে চমকে গেল, সামনে দিকে তাকিয়ে দেখল আরু পাগলের মত মাটিতে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, তাড়াতাড়ি করে আরুর কাছে ছুটে গিয়ে বলল
‘ আপনার এমন অবস্থা হলো কি করে? আর আপনি ঘরের একি দশা করেছেন ?ওনার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন , এখন যদি উনি আপনার নামে পুলিশের কাছে কমপ্লেইন করে তখন?’

আরু কিছু বলছে না চুপচাপ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদেই চলেছে , যেন আবিরের কোন কথা ওর কানেই যাচ্ছেনা ৷ একটা বীর যোদ্ধার মতো নারীর এমন ভেঙ্গে পড়াটা যেন আবিরের চোখে আর সহ্য হচ্ছে না , তাড়াতাড়ি করে আরুর হাত ধরে তোলার চেষ্টা করলেও আরুকে তুলতে পারলোনা, মেয়েটা শক্ত হয়ে এক জায়গায় বসে আছে হয়তো সে সেখান থেকে যতক্ষণ না উঠতে চাইবে ততক্ষণ তাকে আবিরের পক্ষেও ওখান থেকে তোলা সম্ভব নয় ৷

আবির এবার একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলবো
‘ সমস্যাটা কি আপনার? এই ভর দুপুরে অন্যের ফ্ল্যাটে এসে এভাবে সমস্ত কিছুই ভেঙে চুরমার করেছেন, এখন এখান থেকে যেতে ভললেও যাচ্ছেন না,আপনি কি জানেন এর জন্য উনি আপনাকে পুলিশে দিতে পারে !’

আবিরের এমন কথায় ও আরূর কোন রেসপন্স নেই,
আবিরকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ আরু নিজের উঠে দাঁড়াল , তার পরে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ যাওয়ার আগে তিতাসকে একবার এক পলক দেখে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল , ছোট্ট আশিয়ান কেও সাথে নেওয়ার কথা ভুলে গেছে সে ৷

আবার রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই তিতাস বলল
‘ উনাকে যেন আর কখনও আমার এই ফ্লোরে না দেখি ,তাহলে কিন্তু আমি কিন্তু সোজা পুলিশের কমপ্লেন করবো ৷’

‘না না, প্লিজ এমন কিছু করবেন না, উনি হয়তো বিরাট একটা ট্রমার মধ্যে আছেন তাই হয়তো এমন করছেন , নেক্সটাইম আর এমন হবেনা ৷’

‘ আচ্ছা ,তবে এইবারের মতো ছাড়লাম কিন্ত দ্বীতিয়বার আর ছাড় দেবো না ৷’

‘ওকে ,ধন্যবাদ ৷’
বলে আরশিয়ানকে কোলে নিয়ে আবির চলে গেল ৷
তিতাস ওদের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল
‘ পাগল যতো সব ৷’
কথাটা আবিরের কান অবধি গেলো, তবে বলার কিছু নেই আরু যা করেছে ৷

____

‘ আজকে 10 টা মেয়েকে পাচার করেছি,আর 5জনকে কালকে পাঠাবো ৷’

‘ আর সেই মেয়েটার কি হবে? কি যেনো নাম মেয়েটার! ওহহহ হ্যাঁ , আরুশি ৷ ওই মেয়েটার ডিমান্ড অনেক, তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চালানের ব্যাবস্থা করো ৷’

‘একবার বাগে পাই,দেখবো কি করে পাখি এবার পালাই ৷’

কথাটা শুনে লোকটা হেসে উঠলো হো হো করে ৷

ফোনটা কেটে দিয়ে আরুর ছবির দিকে তাকিয়ে বললল
‘ পাঁচ কোটি ৷’

_______

সন্ধ্যা সাতটা,,,,,,
ঘর অন্ধকার ঘরে করে আছে আরু,আরশিয়ান ঘুমিয়ে পড়েছে, আরু ব্যালকনিতে ঠান্ডা মেঝের উপরে চুপচাপ এক দৃষ্টিতে বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে, হঠাৎ করে কারোর পদধ্বনি শুনেও ওর মধ্যে কোন পরিবর্তন হলো না ৷
আবির আরশিয়ান এর জন্য চকলেট কিনে এনেছিলি আরশিয়ানকে দেবে বলে কিন্তু রুমের ভিতর ঢুকতেই দেখল দরজা খোলা আর রুম অন্ধকার তাই খানিকটা কিন্তকিন্ত করে ঘরে ঢুকলো ৷ ঘর অন্ধকার , রুমের ভীতর ঢুকে দেখল আরশিয়ান ঘুমোচ্ছে, আর ব্যালকনিতে টিপটিপ করে আলো জ্বলছে ৷

আরু নির্বাক হয়ে বসে আছে দেখে ব্যালকনিতে, আবির আরুকে দেখতে পেয়ে চকলেট টা টেবিলের উপর রেখে ঘরের আলো টা জ্বালাতেই আরু সামান্য কেঁপে উঠল তবুও আবিরের দিকে একবারও ফিরে তাকালো না ৷
আবির ধীরপায়ে এগিয়ে আরূর কাছে গিয়ে বলল
‘বসতে পারি?’

আরু গম্ভীর সুরে বলল
‘হমম’

আবির ও আরুর থেকে খানিকটা দূরে বসে বলল
‘ দুপুরে অমন ব্যাবহারের কারন কি?’

আরু নির্বাক , কিছু বলছে না দেখে আবির আবার বলল
‘আমাকে বলতে কি কোন সমস্যা?’

আরু কিছু বললো না ৷

আবির আবার বলল
‘আচ্ছা ওসভ ছাড়ুন ,এই আরিশটা কে সেটা তো বলতে পারবেন নিশ্চয়ই ৷ নাকি ওটাকেও কোন..
.’
আবির আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরু বলে উঠলো তখন আরু বলল
‘ আমার স্বামী ৷’ উনি আমার স্বামী ৷'(আবিরের দিকে ঘুরে)

স্বামী কথাটা শুনে আবিরের একটু খারাপ লাগলো তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
‘ ওনাকে কি আপনি এই ফ্ল্যাটে দেখছেন?’

আরু মাথা নাড়িয়ে বলল
‘হমম ৷’

‘আমাকে কি সবটা বলা যাবে?’

আরু একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,,,,

‘ পাঁচ বছর আগে,,,,

#চলবে,,,,

কালকে বলবো যে ঠিক কি কি হয়েছিলো, আর খুব শিঘ্রই আরিশ ও আসবে, বেশি অপেক্ষা করাবো না আরিশের সাথে আপনাদের পরিচয় করাতে ৷
আর আজকে বিকালেই গল্প দিতাম বাট 1100 word লিখতেই আমার ইন্টারনাল এক্সামের জন্য 2 ঘন্টা লিখতে হলো ৷ তারপর ও আরো 300 word লিখলাম,এখন খুব মাথা ব্যথা ৷ কালকে অনেক বড়ো ধামাকা টাইপস কিছু হবে এটা বলে রাখছি ৷
আল্লাহ হাফেজ ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here