#তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (২৫)
নবনী নিজের কৌতূহল কিছুতেই নিবৃত করতে পারছে না।মেঘকে বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলো কিভাবে মেঘ এসব জেনেছে।
মেঘ নবনীর এরকম উৎসাহ দেখে চুপ করে রইলো।নবনীর কথা শুনতে মেঘের কাছে ভীষণ ভালো লাগছে।বারবার জিজ্ঞেস করে বিরক্ত হয়ে নবনী উঠতে যাচ্ছিলো সেই মুহুর্তে সাহস করে মেঘ নবনীর হাতটা টেনে ধরে বসিয়ে দিল।
নবনীর মনে হলো ২২০ ভোল্টের শক লেগেছে তার।মেঘ চোখ বন্ধ করে লম্বা করে শ্বাস নিলো। নবনীর হাত ছাড়লো না,নিজের হাতের মুঠোয় ধরে রাখলো। যেনো ছেড়ে দিলেই নবনী হারিয়ে যাবে তার কাছ থেকে।তারপর বললো, “নবনীতা,আমি তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি সেদিনই তোমার পিছন পিছন এসে তোমার বাসা দেখে গেছি।তারপর থেকে আমার একটা রুটিন হয়ে গেলো তোমার বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকার।তোমার বাসার উল্টো দিকের রাস্তার সব ভিক্ষুকেরাও আমাকে চিনে নবনীতা। তোমার জন্য এতো পাগল হলাম আর এটুকু জানবো না?
আমি প্রথমে তোমাদের বিল্ডিংয়ের দারোয়ানের থেকে শুনেছি। আমার বিশ্বাস হয় নি।ওভাবে পাত্তা দিই নি। তারপর আবারও ওই দারোয়ান আমাকে সব বলে। সেদিন আমি সিদ্ধান্ত নিই তোমাকে আর কষ্ট পেতে দিবো না।
কিন্তু একদিন তামিম সাহেব নিজেই আমাকে সব বললেন। আমাকে সবসময় এখানে দেখে ওনার মনে হয় সন্দেহ হয়।একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করতেই আমি বলে দিলাম আমি তোমাকে ভালোবাসি,তাই এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকি।আমার ভালো লাগে দাঁড়িয়ে থাকতে।শুনে আমাকে নিয়ে চায়ের দোকানে বসলেন।চা খেতে খেতে সব বললেন,দারোয়ান আমাকে তামিম সাহেবের নাম বলে নি।তামিম সাহেবের থেকে জানলাম আমি উনি ছিলেন তোমার প্রাক্তন স্বামী। তবে সেদিন এটাও বুঝলাম তখন ওনার মনের এক কোণে এখনো তোমার জন্য দুর্বলতা রয়ে গেছে।
আমার তখন মনে হয়েছে যতো দ্রুত সম্ভব তোমাকে আমার করে নিতে হবে।আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার মনের সব কষ্ট দূর করে দিবো।আমি যে তোমার বাসায় এভাবে আসি এটা কিন্তু আমার প্ল্যান ছিলো না। আমার বাবার প্ল্যান জানো।
বাবাকে আমি বাসায় গিয়ে সব জানালাম।বাবা শুনে আমাকে বুদ্ধি দিলেন তোমার সাথে বেশি বেশি কথা বলার চেষ্টা করতে,তোমার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করতে।এতে করে না-কি তুমি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাবে সহজেই।
বাবা তো জানে না তোমার মন লোহায় গড়া।আমি সারাদিন তোমার বাসায় শুয়ে থাকলেও তুমি আমার দিকে করুণা করে হলেও তাকাবে না।তবুও আমি বাবার বুদ্ধি কাজে লাগালাম।কেননা, বাবা আমার সব ব্যাপারে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে। ”
নবনীর মনে হলো সে যেনো এখনো শকের উপর আছে!
নবনী হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনার বাবা চিনেন আমাকে? ”
মেঘ বললো,”সে তো আমি বাবাকে বলেই দিয়েছি তুমি অফিসে জয়েন হবার পর।আর তার ১ সপ্তাহ পর বাবাকে দেখিয়ে দিয়েছি তোমাকে।”
নবনী আর বলার মতো কথা খুঁজে পেলো না। মেঘ নবনীর হাতে আলতো চাপ দিয়ে বললো, “নবনীতা, আমি বেশি কিছু চাই না।তোমার এই হাতটা আজীবন এভাবে ধরে রাখার সুযোগটুকু তুমি আমাকে দাও শুধু।আমি কথা দিচ্ছি,মরন পর্যন্ত তোমার হাত আমি ধরে রাখবো। একটা সুযোগ দাও নবনীতা। অতীত আঁকড়ে ধরে রেখে কি লাভ বলো?
নিজে কি সুখ পেয়েছ এতে করে?
পাও নি তো,বরং কষ্ট বেড়েছে আরো।এর চাইতে ভালো জীবনকে আরেকটা সুযোগ তুমি দাও।আমি আমার ভালোবাসার চাদরে তোমাকে মুড়িয়ে রাখবো নবনীতা।”
নবনী নিজেকে আর মানাতে পারলো না। এতো দিন ধরে নিজের কাছ থেকে নিজে অনেক লুকিয়ে বেড়িয়েছে,মনকে নানাভাবে শাসিয়ে এসেছে।আজ যেনো নিজের মন ও নবনীর সাথে বিদ্রোহ শুরু করে দিলো।নবনী মেঘের দিকে তাকালো জলভরা নয়নে।
টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। মেঘ অপলক তাকিয়ে রইলো নবনীর দিকে। তারপর বললো, “ভালোবাসি নবনীতা ”
নবনী মাথা নিচু করে ফেললো। এর জবাবে কি বলবে সে?
মেঘ উঠে বললো,”চলো,কোথাও বসি,তোমার দুপুরের খাবার খাওয়া হয় নি।”
নবনী মাথা নিচু করে বললো, “না বাসায় গিয়ে খাবো।”
মেঘ জোর করলো না আর।রিকশায় করে নবনীকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এলো।
আসার সময় বললো,”তোমার সাথে যে আমার সারাক্ষণ কথা বলতে ইচ্ছে করে নবনীতা। ”
নবনী হেসে নিজের ফোন থেকে মেঘের ফোনে একটা কল দিলো। তারপর আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ছুটে পালিয়ে এলো। লজ্জায়, উত্তেজনায় নবনীর বুক ধুকপুক করতে লাগলো।
কেমন একটা অচেনা অনুভূতি!
বাসায় ফিরে নবনী মা’কে বললো খাবার দিতে।হাত মুখ ধুয়ে নবনী খেতে বসলো। খাবার খেতে বসে নবনী ভালো মতো খেতে পারলো না। গলায় বারবার খাবার আটকে যাচ্ছে। নবনীর মনে হলো পুরো দুনিয়া যেনো কাঁপছে। কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছে ওর।
নবনী খাবার না শেষ করেই উঠে গেলো। রাবেয়া বেগম মেয়ের অস্থিরতা দেখে জিজ্ঞেস করলেন,”কি হইছে নবনী?”
নবনী চমকে গেলো মা’য়ের প্রশ্ন শুনে।আমতাআমতা করতে লাগলো।
রাবেয়া বেগম অবাক হলেন।এতো বিচলিত লাগছে কেনো নবনীকে!
নবনী চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো আবার। তারপর বললো, “মা আমাকে একটু লেবুর শরবত বানিয়ে দাও।আমার কেমন যেনো লাগছে।”
রাবেয়া বেগম মেয়ের জন্য শরবত বানাতে গেলেন।নবনী বারবার নিজের ফোনের দিকে তাকাচ্ছে।
মেঘের কল এলো রাত ১০ টার পর।নবনী তখন ফাল্গুনীর পড়া দেখছে।কল আসতেই নবনী চমকে উঠলো। তারপর তাড়াহুড়ো করে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় বসে পড়লো। কল রিসিভ করবে কি করবে না এই ভাবতে ভাবতে নবনীর গলা শুকিয়ে গেলো। হাত পা থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
টিন এজে প্রথম প্রেমে পড়লে মানুষের যেমন অবস্থা হয়,নবনীর তাই হয়েছে। নবনীর বুকের ভেতর কেমন একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি কাজ করছে।মেঘ আবারও কল দিলো। কাঁপতে কাঁপতে নবনী কল রিসিভ করে হ্যালো বললো।হ্যালো বলতে গিয়ে নবনী টের পেলো কেমন আটকে যাচ্ছে তার কথা।
মেঘ হেসে ফেললো নবনীর এরকম জড়তা দেখে।
————–
সকালে মেঘের ঘুম ভাঙলো দেরিতে। ঘড়িতে সকাল সাড়ে দশটা।গতরাতে নবনীর সাথে কথা বলতে বলতে কখন যেনো রাত ২ টা বেজে গেছে টের পায় নি দুজনে।
মিষ্টি মধুর একটা অনুভূতি নিয়ে মেঘের দিন শুরু হলো। নিজেকে কেমন হালকা লাগছে আজ মেঘের।
নাশতা না করে মেঘ ছুটলো অফিসের জন্য। মাসুমা বেগম সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু দেখছেন।মেঘকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে দেখে মাসুমা বেগম মেঘকে থামালেন।তারপর উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এতো কিসের তাড়া তোর?টয়লেটে চাপ দিয়েছে না-কি প্রবল বেগে?ওয়াশরুম তো তোর রুমেই আছে,বাহিরে ছুটছিস কেনো তাহলে এরকম ফাইভ জি স্পিডে?”
মেঘ থেমে গিয়ে বললো, “অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে মা।যেতে হবে।তাছাড়া ওর সাথে দেখা করা লাগবে খুব দ্রুত।”
মাসুমা বেগম সরু চোখে বললেন,”বাপের স্বভাব তো পুরোপুরি পাইছস,অফিস শেখাতে আসছে আমাকে।বস এখানে,আমার জুয়েলারি পছন্দ করে দে আগে।আগামী মঙ্গলবার কি পরবো তার একটা ব্যাপার আছে না?”
মেঘ অবাক হয়ে বললো, “মঙ্গলবার কি?”
মাসুমা বেগম হতভম্ব হলেন ছেলের প্রশ্ন শুনে।তারপর বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠে স্বামীকে কল দিলেন।শফিক আহমেদ ফ্যাক্টরিতে যাচ্ছিলেন।স্ত্রীর কল পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিসিভ করলেন কল।
শফিক আহমেদকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মাসুমা বেগম কেঁদে উঠে বললেন,”আমি তো চলে যাচ্ছি। এই দুনিয়ায় আর বেঁচে থাকার ইচ্ছে নেই আমার।তুমি কোথায়,শেষবারের মতো তোমার একটা ছবি পাঠাও তো।যাবার সময় তোমার মুখটা দেখে আমি মরতে চাই।কার জন্য নিজের জীবনের সব শখ আহ্লাদ ত্যাগ করলাম।আমার ছেলে কি-না আমাকে জিজ্ঞেস করে মঙ্গলবারে কি?এই ছেলের জন্য কি-না আমি পিএইচডি করার জন্য দেশের বাহিরে যাই নি,এর একা থাকতে হবে বলে। সেই ছেলে আজ মায়ের কথা ভুলে গেছে।কোন লম্বা হাতওয়ালা শাকচুন্নির সাথে কথা বলে আমাকে তাগাদা দেখাচ্ছে তার সাথে দেখা করতে যাবে আমার সাথে কথা বলার সময় না-কি তার নেই।”
শফিক আহমেদ নিজেও ভেবে পেলেন না,তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আশ্চর্য, ঘটনা কি বলবে তো তুমি আগে।আর মঙ্গলবার কি সেটা তো আমি নিজেও জানি না।”
মাসুমা বেগম এবার বিলাপ করলেন আরো জোরে। ফোন কেটে দিয়ে পরনের শাড়ি দিয়ে নিজের নাক মুছলেন।শফিক আহমেদ বুঝতে পারলেন একটা ঝামেলা হয়েছে, ড্রাইভার কে গাড়ি ঘুরাতে বললেন আবার।
শফিক আহমেদ বাসায় এসে দেখলেন মেঘ সোফায় স্থানু হয়ে বসে আছে। মাসুমা বেগম লাগেজ গোছাতে গোছাতে শিমলাকে কল দিয়ে বললেন,”শিমলা রে মা,মামীকে ক্ষমা করে দিস তুই।মামী তো চলে যাচ্ছি। আজকেই এই দেশ ছেড়ে চলে যাবো। এই স্বামী, সন্তান,সংসার কেউই আমার না।এজন্যই তো বলি,আমার স্বামী এভাবে বদলে যাচ্ছে কেনো,সে যে এখনো তার প্রাক্তন প্রেমিকার কবে জ্বর হলো কবে সর্দি হলো সেই খবর রাখতেই ব্যস্ত। বউয়ের কথা মনে থাকবে কেনো তার এখন!তোর মামার প্রাক্তন প্রেমিকার কথা মনে আছে তো তোর,ওই যে চাইনিজদের মতো ছোট ছোট চোখ, ধলা চামড়ার সেই বিলাতী ছেমরি। যে তোর মামার সাথে বিদেশে থাকতে সিগারেট ভাগাভাগি করে খেতো।”
তারপর কল কেটে দিলেন।
মেঘ বিরক্ত হয়ে বললো, “মা,আমাকে যেতে হবে।তোমার হবু বউয়ের সাথে গতরাতে মাত্র কথা হলো,আজ যদি তার সাথে দেখা না করি তবে কেমন দেখায় বলো?তুমি তোমার কান্নাকাটি এখন স্টপ করে রাখো,আমি সন্ধ্যায় আসলে তারপর না হয় শুরু করে দিও।”
মাসুমা বেগমের কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো।সোফার হাতলে মাথা ঠেকিয়ে বললো,”এই ছেলে তো আমার না গো,কাল একটা মেয়ের সাথে কথা হতে না হতে আজকেই এই ছেলে মা’কে ভুলে গেলো?
ও আল্লাহ, ওই মেয়ে এই বাড়ির বউ হয়ে এলে তো এই ছেলে আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে।এই বাড়িতে একটা গাছ কে ও মূল্য দেওয়া হয়,শুধু আমাকে ছাড়া।আমি আজকেই ল’ইয়ারের কাছে যাবো,এক রাতে একটা মেয়ের সাথে কথা বলে যে ছেলে এরকম একটা দিনের কথা ভুলে যেতে পারে তার সাথে আমার সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিবো।ওই মেয়েকে আমি কিছুতেই ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিবো না।
আমার ফোন কই,শিমলাকে আবারও কল দিতে হবে।”
এদিক ওদিক তাকিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললেন,”গাধার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো,আমার ফোন এনে দে।শিমলাকে কল দিতে হবে আমার।আমার এই দুরবস্থা শিমলা ছাড়া কেউ বুঝবে না।”
মেঘ টেবিলের উপর থেকে ফোন এনে দিয়ে বাবাকে বললো,”তোমার স্ত্রীকে তুমি সামলাও বাবা,আমি যাই তাড়াতাড়ি। ”
শফিক আহমেদ ছেলেকে যেতে বলে নিজে স্ত্রীর পাশে এসে বসলেন।শান্ত স্বরে বললেন, “কি হয়েছে তোমার? ”
মাসুমা বেগম নাক ঝেড়ে শিমলাকে কল দিয়ে বললেন,”আমি আর বেশিদিন নেই এই সংসারে।তোর ছেলের জন্য একটা খেলনা বাইক কিনেছি,ওটা তার হাতে পৌঁছে দিলেই আমার দায়িত্ব শেষ ।জল তো অনেক দূর গড়িয়েছে রে শিমলা।সব এখন আমার কাছে একেবারে মিনারেল ওয়াটারের মতো পরিস্কার।
আমার গাধা ছেলেটা একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে সব ভুলে গেছে।আর তোর মামা,সে তো তার পুরনো প্রেমিকার কথা ভাবতে ভাবতে সব ভুলে গেছে।”
শিমলা বললো, “ঘটনা কী মামী?”
মাসুমা বেগম চোখ মুছে বললেন,”প্রথম থেকে বলছি শোন,সকালে আমি বসে জুয়েলারি দেখছি।মেঘ অফিসের জন্য বের হচ্ছে তাড়াহুড়ো করে। আমি ওকে বললাম কি,এদিকে আয় তো বাবা।আমাকে একটু জুয়েলারি পছন্দ করে দে।মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে পরবো।তুই তো জানিস,মঙ্গলবার কি?”
শিমলা নিজেও জানে না মঙ্গলবার আসলে কী?রিস্ক নিয়ে বললো,”হ্যাঁ মামী,জানি তো আমি। ”
মাসুমা বেগম শুকনো চোখ আবারও মুছলো,তারপর বললেন, “দেখলি মা,তোর মনে আছে মঙ্গলবার আমাদের বিবাহবার্ষিকী, অথচ আমার নিজের পেটের পোলা,স্বামী কেউ মনে রাখে নি।”
শিমলা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।মাসুমা বেগম আবার বলতে লাগলেন,”আমার ছেলে কি-না আমাকে জিজ্ঞেস করে, মঙ্গলবার কি মা।তুই বল কেমন লাগে তখন?এরপর আমি মনের দুঃখে তোর মামাকে কল দিলাম ঘটনা জানাতে।তোর মামা কি বললো,শুনবি?
তোর মামা আমাকে জিজ্ঞেস করে, মঙ্গলবার কি?
তুই বল,এখন আমার কি করা উচিৎ।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি,আজকেই আমি এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো।তোর ভাই যেই নাগিনীর প্রেমে পড়েছে সেই নাগিনীকে নিয়ে সুখে থাকতে বলিস।তোর ভাই বিন বাজাবে আর নাগিনী তালে তালে নাচবে।আমার ভাগ্য খারাপ, আমি সেই নাচ দেখতে পারবো না শুধু।
আর তোর মামাকে কিছু বলার নেই।লোকটা তার প্রাক্তন প্রেমিকার শোকে দিন দিন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।আমার রান্না তার মুখে রোচে না।আজকাল আমার রান্নার খুঁত ধরে, কবে ওই মহিলা নাকি তোর মামাকে পাঙ্গাশ মাছ ফ্রাই করে খাইয়েছে,সেই স্বাদ তোর মামার মুখে লেগে আছে আজও।তোর মামার নজর এখনো পাঙ্গাশ মাছে আটকে আছে।আমার রান্না খেলে নাকি তার পেট খারাপ হয়ে যায়। আমি তোর বাসায় আসছি মা।নীড় সোনার খেলনাটা ওকে দিয়ে ওর থেকে বিদায় নিয়ে সোজা চলে যাবো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। আপাতত ওরাই আমার আপনজন।
তোর মামা বিদেশ চলে গেলে তোরা কেউ আপত্তি করিস না।বেচারা এক জীবন বাপ্পারাজের গান শুনে এসেছে,শেষ বয়সে যদি ওই বিদেশিনীর দেখা পায় তবে মন্দ কি।তবে শুন,আমার একটা শাড়ি,গহনা যেনো ওই মহিলাকে না দিতে পারে। এই বাড়িটা আমার নামে।আমি এই বাড়ি কোনো সংগঠনকে দিয়ে যাবো।স শাড়ি,গহনার কথা স্ট্যাম্প পেপারে লিখে যাবো।তোর মামার সই নিবি তুই।সবকিছু তোকে দিয়ে গেলাম।আমার ছেলে যেনো তার পিরিতের পেত্নীর জন্য একটা সুতাও না নিতে পারে সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকবি।”
শিমলা একটা দম নিয়ে বললো,”মামী,সত্যি কথা আমি বলি।মামা,মেঘ মিলে প্ল্যান করেছিলো তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার।এজন্যই তো ওনারা তোমাকে বলে নি মঙ্গলবার কি? ”
মাসুমা বেগম চোখ ছোট করে স্বামীর দিকে তাকালেন।শফিক আহমেদ মনে মনে ইয়া নাফসি পড়তে লাগলো।
মাসুমা বেগম ফোন রেখে দিয়ে স্বামীর পাশে এসে বসলেন।তারপর মধুর সুরে বললেন,”তুমি আগে বলো নি কেনো তুমি যে জানতে আমাদের বিবাহবার্ষিকীর কথা?আমার ছেলেও যে জানতো,আগে বলো নি কেনো?আমি তো ভেবেছি আমার ছেলে একটা শাকচুন্নির প্রেমে পড়ে সব ভুলে গেছে। ”
শফিক আহমেদ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।তারপর কপট অভিমান দেখিয়ে বললেন,”ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দিবো তোমাকে,তোমার জন্য তো এখন তা আর হলো না।”
মাসুমা বেগম আহত মনে বললেন,”আহারে,আমি তো ভেবেছি তোমরা সবাই ভুলে গেছো।আচ্ছা,যা হবার হলো।এবার আসো,আমরা প্ল্যানিং করি অনুষ্ঠানের।আচ্ছা শুনো, তোমার অফিসের সবাইকে কিন্তু ইনভাইট করবে।”
শফিক আহমেদ ছেলেকে টেক্সট করে সারসংক্ষেপে জানিয়ে দিলেন সব।তারপর স্ত্রীর দিকে তাকালেন।একটু আগে হওয়া রণমুর্তি এখন কেমন শান্ত হয়ে তার পাশে বসে আছে। যেনো কিছুই হয় নি।শফিক আহমেদ স্ত্রীর এক হাত নিজের হাতে টেনে নিয়ে বললেন, “আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তুমি এমনই থেকো,বিশ্বাস করো,এই আধা পাগলী, মেজাজী,খামখেয়ালি মহিলাটিকে আমি প্রচন্ডরকম ভালোবাসি। ”
মাসুমা বেগম লজ্জা পেয়ে স্বামীর বাহুতে মুখ লুকালেন।
চলবে…..
রাজিয়া রহমান